আগুন দিয়ে প্রাণী সৃষ্টি করা যায় ?

নাস্তিক-মুক্তমনাগণ প্রশ্ন তোলেন যেঃ আগুন যেহেতু কোন উপাদান বা পদার্থ নয় কাজেই এটি জিন বা কোন প্রাণী সৃষ্টির উপাদান হতে পারে না। কাজেই কুরআনে জিন জাতি সম্পর্কিত তথ্য অত্যন্ত ‘অবৈজ্ঞানিক’।
এর জবাবে আমরা মুসলিমরা বলবঃ আপনাদের চিন্তা অত্যন্ত সংকীর্ণ। আপনাদের কেন এমন চিন্তা হল যে মহাবিশ্বের সকল প্রাণই পৃথিবীর প্রাণের মত কোন উপাদান দ্বারা গঠিত হতে হবে? এ থেকে ভিন্ন কোন মেকানিজমে মহাবিশ্বের কোন প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে না এ নিশ্চয়তা আপনাদের কে দিল? সত্যিকারের বিজ্ঞানীরা কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিরা কখনোই এটা কল্পনা করে না যে মহাবিশ্বের সকল প্রাণীই পৃথিবীর প্রাণীর ন্যায় তৈরি। বরং অনেক ধরণের প্রাণের সম্ভাব্যতায় একজন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি বিশ্বাস করতে বাধ্য।
বিজ্ঞানী G. Feinberg এবং R.Shapiroতাঁদের ‘LIFE BEYOND EARTH’ বইতে(প্রকাশক William Morrow and Co., Inc., New York) উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের পৃথিবীর বাইরে প্রাণের বিস্তার সব থেকে বেশি সম্ভব সূর্য বা অন্য কোন নক্ষত্রে প্লাজমার মাঝে। প্লাজমার মাঝে উদ্ভুত সম্ভাব্য সেই প্রাণীদেরকে তাঁরা ‘Plasmabeasts’ বা প্লাজমা-জন্তু বলে অভিহীত করেছেন।
সমান সংখ্যক ইলেক্ট্রন ও ধণাত্মক আয়নযুক্ত উচ্চ আয়নিক গ্যাসকে প্লাজমা বলা হয়। আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতে বিশেষ করে সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসসমূহ উচ্চ আয়নিত অবস্থায় থাকে, তাই সেখানে প্লাজমা অবস্থা বিরাজ করে। এ ছাড়া পরীক্ষাগারে ক্ষরণ নলে কিংবা তাপ নিউক্লিয় রিএক্টরে প্লাজমা অবস্থা সৃষ্টি করা যায়। প্লাজমা অবস্থা তৈরির জন্য ৫০,০০০ K থেকে বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। আন্তঃনাক্ষত্রিক প্লাজমাকে সহজেই “ধোঁয়াবিহীন শিখা” বলে অভিহীত করা যায়। জ্ঞানী G. Feinberg এবং R.Shapiroপ্লাজমাকে বলেছেন ‘Plasmabeasts’ গঠনের উপাদান।
একেবারে সাম্প্রতিক সময় ২০০৭ সালে V.N. Tsytovich এর নেতৃত্বে General Physics Institute of the Russian Academy of Science এর বিজ্ঞানীদের একটি দলও মত প্রকাশ করেছে যেঃ প্লাজমা অবস্থা থেকে প্রাণের বিকাশ হওয়া খুবই সম্ভব। [6]
বিজ্ঞানী Robert A. Freitas মহাবিশ্বে ‘নন-বায়োলজিক্যাল’ প্রাণের সম্ভাব্যতার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে এ ধরণের প্রাণ ব্যবস্থায় বিপাক ক্রিয়া চারটি ধাপ দ্বারা হতে পারে। যথাঃ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম, শক্তিশালী নিউক্লিয় বল(strong nuclear force), দুর্বল নিউক্লিয় বল(weak nuclear force), এবং মহাকর্ষ। এই সম্ভাব্য জীবন প্রক্রিয়ার নামকরণ করা হয়েছেঃ Chromodynamic, Weak Nuclear Force And Gravitational Life। পৃথিবীর প্রাণীকূল কার্বনভিত্তিক। বিজ্ঞানী Robert A. Freitas এর মতে Chromodynamic life শক্তিশালী নিউক্লিয় বলভিত্তিক। এ ধরণের প্রাণের বিকাশের পরিবেশ থাকতে পারে কেবল নিউট্রন স্টারে। তিনি আরো বলেন যেঃ মহাকর্ষীয় প্রাণী(Gravitational creatures) এর অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব যারা সরাসরি মহাকর্ষীয় বল থেকে শক্তি আহরণ করতে পারে।
Robert A. Freitasসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা মহাশূণ্যে প্রাণের বিস্তার ও এর সম্ভাব্যতার ব্যাপারে এছাড়াও অনেকগুলো তত্ত্ব দিয়েছেন। [7]
সেগুলোর সবগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলে একটা বই হয়ে যেতে পারে।
মহাবিশ্বে সম্ভাব্য প্রাণের বিকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের উত্থাপিত অল্প কিছু তত্ত্ব উপরে আলোচনা করা হল। আমরা বলব না বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বগুলোই কুরআনে বর্ণিত জিনদের বর্ণণা; কেননা বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বগুলো এখনো প্রমাণিত নয়। তবে এখানে লক্ষ্যনীয় যে, বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে সম্ভাব্য প্রাণ সম্পর্কে এমন সব তত্ত্ব দিয়েছেন যার সঙ্গে পৃথিবীর প্রাণীদের কোন মিল নেই। প্লাজমা থেকে প্রাণের উদ্ভবের তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন, কিন্তু তা দেখে কেউ কিন্তু এটা বলেনি যেঃ "প্লাজমা অবস্থার ভয়ানক তাপে কিভাবে প্রাণের বিকাশ হতে পারে??" শক্তিশালী নিউক্লিয় বলভিত্তিক প্রাণ এমনকি মহাকর্ষীয় প্রাণীর প্রস্তাবনা পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন যারা কিনা সরাসরি মহাকর্ষ বল থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি পেতে পারে। বাংলার নাস্তিক-মুক্তমনাকূলকে কিন্তু কোন বিজ্ঞানীকে কটাক্ষ করে বলতে দেখা গেল না যেঃ "শক্তিশালী নিউক্লিয় বল কিংবা মহাকর্ষ – এর কোনটাই উপাদান/পদার্থ নয়। তাহলে এ থেকে কিভাবে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে?"
কিন্তু ৭ম শতাব্দীতে নাজিলকৃত গ্রন্থ আল কুরআনে যখন এক বিশেষ ধরণের অগ্নি(ধোঁয়াহীন আগুনের শিখা) থেকে গঠিত প্রাণীর কথা উল্লেখ করা হয়, তখন তাদেরকে কটাক্ষ করে বলতে দেখা যায় যে--"রিঅ্যাকশনারী কেমিক্যাল প্রসেস থেকে কিভাবে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে??"
এটা কি দ্বিমুখিতা নয়? এটা কি চিন্তার সংকীর্ণতা নয়?
সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন
http://response-to-anti-islam.com/…/%E0%A6%86%E0%A6%97%E…/61


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.