মানুষ মাটি-পানি দিয়ে তৈরি ?
মানুষ মাটি-পানি দিয়ে তৈরি ?
লিখেছেনঃ আফিফ আলী সাদাফ
নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী অনেক এমন নাস্তিক আছে যারা এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চায় । মানুষ মাটি দিয়ে তৈরি এটা আমাদের মত সাধারণ মানুষেরা আছেন যারা বিশ্বাস করে ফেলেন যে , মানুষ মাটি দিয়ে সৃষ্টি । শুধু এক দুইটা নয় বরং অনেক মানুষ আছেন যারা এই নিয়ে কোন সংশয় প্রকাশ করেন না । কিন্তু মানব দেহ কি আসলেই মাটি দিয়ে তৈরি ? বিজ্ঞান তো বলছে যে , মানবদেহ হল অক্সিজেন , কার্বন ইত্যাদি সমন্বয় গঠিত । কিন্তু কুরআন বলছে মাটি দিয়ে তৈরি আবার বলছে পানি দিয়ে তৈরি । এই নিয়ে আমাদের সমাজের কিছু তরুণ বা অনেক Mature মানুষ পর্যন্ত এইসব প্রশ্ন শুনে হতবম্ব হয়ে যায় । কিন্তু গভীর চিন্তা , পর্যবেক্ষণ না থাকার কারণে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে ভুল পথে পা দিয়ে দেয় । চলুন এর মাঝে অর্থাৎ কুরআনের এই মাটি , পানি এবং বিজ্ঞানের অসাধারন গভীর সম্পর্ক বা মিল দেখে আসি ।
পবিত্র কুরআন মাজিদে অনেক জায়গায় এই মাটির , পানির বর্ণনা এসেছে যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ
⦁ هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ ثُمَّ قَضَىٰ أَجَلًا ۖ وَأَجَلٌ مُسَمًّى عِنْدَهُ ۖ ثُمَّ أَنْتُمْ تَمْتَرُونَ
⦁ :তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি থেকে তারপর নির্ধারণ করেছেন একটি কাল, আর তাঁর কাছে আছে একটি নির্দিষ্ট কাল, তারপর তোমরা সন্দেহ কর। [1]
এবং আরও বলা আছে ,
⦁ وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا ۗ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا
⦁ আর তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার রব হল প্রভূত ক্ষমতাবান।[2]
তাহলে এখানে আমরা পেলাম দুটি উপাদান কুরআন অনুসারে একটি হল মাটি আর অপরটি হল পানি । এখন বিজ্ঞান বলছে মানবদেহ বিভিন্ন উপাদান যেমন অক্সিজেন , কার্বন ইত্যাদি সমন্বয় গঠিত । কিন্তু কুরআন বলছে মানবদেহ মাটি আর পানি দিয়ে তৈরি । "তাহলে কি কুরআন ভুল বলছে ? " মোটেও না !
মূলত পৃথিবীর সকল মানুষ মাটি দ্বারা সৃষ্টি হয়নি বরং শুধুমাত্র আদম আঃ কে আল্লাহ মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন এরপর আদম আঃ এবং হাওয়া আঃ এর মিলনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হয়েছে । আল্লাহ কুরআনে বলেছেন ,
⦁ إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
⦁ নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মত, তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাকে বললেন, ‘হও’, ফলে সে হয়ে গেল।
অথচ এমন কোন সহিহ হাদিস নেই যা স্পষ্ট বলছে যে , আল্লাহ পৃথিবীর সকল মানুষকেই মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন । আর শুধুমাত্র আদম আঃ কে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করায় আজও মানবদেহে মাটির প্রায় প্রতিটি রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান ।
আজকের বিজ্ঞান মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানব দেহে ৬০% পানি থাকে, যা ওজন ও আয়তন উভয় দিক থেকেই শরীরের মোট উপাদানের অনেক বড় একটি অংশ। পানির পরিমাণ বয়সভেদে বিভিন্ন হয়, যা নবজাতকের ক্ষেত্রে ৭৫% এবং স্থূলকায় ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৪৫%। (এই সংখ্যাগুলো প্রয়োজন অনুসারে পরিসংখ্যানিক গড় হিসাব।)[3] এই তথ্যসমুহ কুরআনের আয়াতের সাথে মিলে গেল যেখানে বলা হয়েছে ,
⦁ وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا ۗ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا
⦁ আর তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার রব হল প্রভূত ক্ষমতাবান।[2]
কেননা বিজ্ঞান মতে তো পানির অস্তিত্ব দেহে বিদ্যমান ।
এখন মাটিতে আসা যাক ।
এর আগের আয়াতের সাথে যদিও আমরা মিল পেয়ে যাই খুব সহজে বিজ্ঞানের সাথে কুরআনের । কিন্তু সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হয় এই মাটি নিয়ে । কেননা বিজ্ঞান বলছে এক কথা আর কুরআন বলছে মাটির কথা । মুলত কুরআনে মাটির কথা বলা হয়েছে শুধু এটা দেখে বসে থাকলে হবেনা । এর সাথে বিজ্ঞানের এক গভীর সম্পর্ক আছে কেননা আজকের বিজ্ঞান বলছে একটি মানবদেহে ( প্রাপ্তবয়স্ক ) ৬০% ই হল পানি । এছাড়া বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে আছে অক্সিজেন , কার্বন ইত্যাদি । নিচের লিঙ্কে চিত্রে সব সুন্দর করে দেয়া আছে । ছবি সুত্রঃ উইকিপিডিয়া
উপরে তো আমরা দেখেই নিলাম যে , একজন মানুষের দেহে কি কি উপাদান বা Elements আছে [3] । এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে ,
" এখানে মাটির সাথে মিল কোথায় ? " কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে আজকের বিজ্ঞান অনুযায়ী মাটির মধ্যে এই সকল উপাদান সম্পূর্ণরূপে বিদ্যমান । কেননা বিজ্ঞান বলে যে , মাটিতে উদ্ভিদ সুন্দরভাবে উৎপন্ন হবার জন্য ১৬ টি অপরিহার্য উপাদান প্রয়োজন । এগুলোকে বিজ্ঞানের ভাষায় ( Essential Elements ) বলা হয়ে থাকে । সেই ১৬ টি উপাদান হচ্ছে
" এখানে মাটির সাথে মিল কোথায় ? " কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে আজকের বিজ্ঞান অনুযায়ী মাটির মধ্যে এই সকল উপাদান সম্পূর্ণরূপে বিদ্যমান । কেননা বিজ্ঞান বলে যে , মাটিতে উদ্ভিদ সুন্দরভাবে উৎপন্ন হবার জন্য ১৬ টি অপরিহার্য উপাদান প্রয়োজন । এগুলোকে বিজ্ঞানের ভাষায় ( Essential Elements ) বলা হয়ে থাকে । সেই ১৬ টি উপাদান হচ্ছে
⦁ Carbon , Hydrogen , Oxygen , Phosphorus , Potassium , Nitrogen ,
⦁ Sulfur , Calcium , Iron , Magnesium , Boron , Manganese ,
⦁ Copper , Zinc , Molybdenum , Chlorine [4]
⦁ Sulfur , Calcium , Iron , Magnesium , Boron , Manganese ,
⦁ Copper , Zinc , Molybdenum , Chlorine [4]
এই ১৬ টি উপাদান মাটিতে থাকা আবশ্যিক । কেননা এটা উদ্ভিদের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ । আর মানবদেহে যে সকল উপাদান আছে তা এই ১৬ উপাদানেরই অন্তর্ভুক্ত । যা আমরা উপরের ছবিটার দিকে নজর বুলালেই দেখতে পাবো ।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে , " আচ্ছা মেনে নিলাম সব যুক্তি কিন্তু আল্লাহ কেন এই উপাদান গুলোর নাম নেন নি কুরআনে ? "
এর সহজ জবাব হচ্ছে পবিত্র কুরআন হল সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব । আর এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলে দিয়েছেন
আল্লাহ এই কুরআনে এমন জিনিস দিয়েছেন যাতে করে সব কালের মানুষ এটাকে ঠিক করে বুঝে নিতে পারে । এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন ,
আল্লাহ এই কুরআনে এমন জিনিস দিয়েছেন যাতে করে সব কালের মানুষ এটাকে ঠিক করে বুঝে নিতে পারে । এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন ,
⦁ هَٰذَا بَيَانٌ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِلْمُتَّقِينَ
⦁ এটা মানুষের জন্য স্পষ্ট বর্ণনা ও হিদায়াত এবং উপদেশ মুত্তাকীদের জন্য। [ 5 ]
এমনভাবে সৃষ্টি করেন নি যে , এক প্রজন্মের মানুষেরা বুঝবে আরেক প্রজন্মের মানুষেরা বুঝবেনা । আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে যদি কাউকে সোডিয়াম , অক্সিজেন বলা হলে তারা বুঝতে পারতো ? কখনই না । তাই আল্লাহ তাদের সহজে বুঝাবার জন্য এক শব্দে মাটি ব্যাবহার করেছেন ।
আমরা জানি , যুগ এগোতে থাকলে মানুষ নিজে নিজেই ( Upgrade ) হয় । আর যুগ এগোলে মানুষ নিজেই অক্সিজেন , হাইড্রোজেন এসব উপাদানের নাম জানতে পারবে আর এসব মাটিতে বিদ্যমান সেটাও জানতে পারবে । যদি আল্লাহ মাটির পরিবর্তে অক্সিজেন , সোডিয়াম ব্যাবহার করতেন তাহলে ১৪০০ বছর আগের মানুষেরা বুঝতে পারতোনা কিন্তু ১৪০০ বছর পরের মানুষেরা অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারতাম । ফলস্বরূপ এক প্রজন্ম শিখতে পারলনা আরেক প্রজন্ম শিখে গেল । কিন্তু মাটি শব্দ ব্যাবহার করার ফলে দুই প্রজন্মের মানুষরাই বুঝতে পেরেছে ।
আমরা জানি , যুগ এগোতে থাকলে মানুষ নিজে নিজেই ( Upgrade ) হয় । আর যুগ এগোলে মানুষ নিজেই অক্সিজেন , হাইড্রোজেন এসব উপাদানের নাম জানতে পারবে আর এসব মাটিতে বিদ্যমান সেটাও জানতে পারবে । যদি আল্লাহ মাটির পরিবর্তে অক্সিজেন , সোডিয়াম ব্যাবহার করতেন তাহলে ১৪০০ বছর আগের মানুষেরা বুঝতে পারতোনা কিন্তু ১৪০০ বছর পরের মানুষেরা অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারতাম । ফলস্বরূপ এক প্রজন্ম শিখতে পারলনা আরেক প্রজন্ম শিখে গেল । কিন্তু মাটি শব্দ ব্যাবহার করার ফলে দুই প্রজন্মের মানুষরাই বুঝতে পেরেছে ।
তথ্যসূত্রঃ
1. সুরা আল-আন'আম আয়াত ২
2. সুরা ফুরকান আয়াত ৫৪
3. Wikipedia - Human Body
4. Wikipedia - Soil
5. সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৮
1. সুরা আল-আন'আম আয়াত ২
2. সুরা ফুরকান আয়াত ৫৪
3. Wikipedia - Human Body
4. Wikipedia - Soil
5. সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৮
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.