ইসলাম যদি পরিপূর্ণ হয় তাহলে কুরানের বাকি আয়াত কেন নাজিল হল ?


#Qn: নিশ্চয়ই আল্লাহ মিথ্যাবাদী, ভাঁওতাবাজ বা মাথাখারাপ টাইপের কোন পাগল নন। তাহলে কোরানের ০৫ঃ০৩ আয়াতে 'দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ' করে দেবার পরের ৫৫৬৪টি আয়াতগুলি কখনোই  কোন সঠিক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বানী হতে পারেনা। কারণ পূর্ণাঙ্গ করে দেওয়া বা শেষ হয়েছে  বলার পরে আবার কি কখনো কিছু বাকী থাকতে পারে?
 
০৫. সূরাতুল মায়েদাহ
০৩. ...... আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি
আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং
ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। .....
বর্তমান কোরানে থাকা ০৫ঃ০২ আয়াতের পরের
৫৫৬৪টি আয়াতগুলি কার বানী?

উত্তর লিখেছেনঃ মোঃ নাসির শেখ

কোরআনে বেশিরভাগ সূরার আয়াতসমূহ একবারে নাযিল হয়নি। প্রথম পূর্ণাঙ্গ সুরা আল ফাতিহা এবং অল্প কয়েকটি সূরা আছে যার আয়াতগুলো একত্রে নাযিল হয়েছে। সূরা আল-মায়িদা কোরআনে ৫ নাম্বারে যায়গা পেলেও তা অবতীর্ণের অনুক্রমিক নাম্বার ১১২। অনুক্রমিক সংখ্যা থেকেও বোঝা যাচ্ছে সুরাটি শেষ দিকের। কেননা মোট সুরা ১১৪টি। তাহলে চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় ততোদিনে দ্বীন ব্যবস্থা বা জীবন ব্যবস্থা কেমন হবে তা পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেছে। এছাড়া তাফসীর থেকে পাই দ্বীন ব্যবস্থার শেষ আয়াত এটিই ছিলো। তারপর যে কয়েকটি আয়াত এসছিলো তা ভয়-ভীতি ও সুসংবাদ সম্পর্কিত। মানুষের জীবন পরিচালনার নির্দেশনা দিয়ে আর কোন আয়াত নাযিল হয়নি এরপর। এই আয়াতের প্রেক্ষাপট ছিলো বিদায় হজ্জ। অর্থাৎ ৬৩২ সালে।

আরো দুটি উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন যে সুরা অবতীর্ণের ক্রমধারা ও সংকলিত কোরআনের ধারা এক না। তবে সুরাতে আয়াতসমূহের অবস্থানের ক্রমধারা ঠিক আছে। যদিও তা একবারে নাযিল হয়নি।

সবাই জানে সর্বপ্রথম নাজিলকৃত কোরআনের আয়াত হলো সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত। যা কোরআনে ৯৬ নাম্বারে যায়গা পেয়েছে। কোরআনের সর্বশেষ আয়াত হচ্ছে সুরা বাকারার ২৮১ নাম্বার আয়াত। তাতে বলা হচ্ছে, সে দিনের ব্যাপারে সদা সতর্ক ও সাবধান থাকা জরুরী যখন তোমরা আমার সামনে নীত হবে। সেদিন তোমাদের কৃতকর্ম অনুসারে তোমাদেরকে শাস্তি বা পুরষ্কার দেয়া হবে। সায়ীদ ইবনে জুবাইর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াত সবশেষে নাযিল হয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৯ দিন জীবিত ছিলেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মতে এর পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাত্র ৩১ দিন জীবিত ছিলেন। [ইবনে কাসীর]

এখানে খেয়াল করেন সুরার আয়াত প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নাযিল হয়েছে। সংকলিত কোরআনের সুরার ক্রমধারা অনুযায়ী নয়। এছাড়া শেষ আয়াত দ্বীন সম্পর্কেও বলা হয়নি। ভয়-ভীতি সম্পর্কিত আয়াত। মোট কথা সুরা মায়িদার ইতিহাস থেকে জানতে পারি দ্বীন ব্যবস্থা বা জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কিত শেষ আয়াত।

দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেবার অর্থই হচ্ছে এর মধ্যে জীবনের সমস্ত প্রশ্নের নীতিগত ও বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এখন আর কোন অবস্থায়ই তার বাইরে যাবার প্রয়োজন নাই। সুতরাং এ নবীর পরে কোন নবী নেই। এ শরীআতের পরে কোন শরীআত নেই। এ শরীআতে যা যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে সত্য ও ইনসাফপূর্ণ। আল্লাহ বলেন, “সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার রব-এর বাণী পরিপূর্ণ। তার বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নেই”। [সূরা আল-আন’আম: ১১৫] [ইবন কাসীর]

আয়াতের এ অংশটি নাযিলের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আরাফার দিন। এ দিনটি পূর্ণ বৎসরের মধ্যে সর্বোত্তম দিন। ঘটনাক্রমে এ দিনটি পড়েছিল শুক্রবারে। এর শ্ৰেষ্ঠত্বও সর্বজনবিদিত। স্থানটি হচ্ছে ময়দানে-আরাফাত। এ স্থানটিই আরাফার দিনে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত নাযিল হওয়ার বিশেষ স্থান। সময় আছরের পর-যা সাধারণ দিনগুলোতেও বরকতময় সময়। বিশেষতঃ শুক্রবার দিনে। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, এ দিনের এ সময়েই দো'আ কবুলের মূহুর্তটি ঘনিয়ে আসে। আরাফার দিনে আরও বেশী বৈশিষ্ট্য সহকারে দোআ কবুলের সময়। হজ্জের জন্যে মুসলিমদের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক সমাবেশ। প্রায় দেড় লক্ষ সাহাবায়ে-কেরাম উপস্থিত। রাহমাতুল্লিল-আলামীন সাহাবায়ে-কেরামের সাথে আরাফার সে বিখ্যাত পাহাড়ের নীচে স্বীয় উষ্ট্রী আদ্ববার পিঠে সওয়ার। সবাই হজ্জের প্রধান রোকন অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানরত। এসব শ্রেষ্ঠত্ব, বরকত ও রহমতের ছত্রছায়ায় উল্লেখিত পবিত্র আয়াতটি নাযিল হয়। [দেখুন, তিরমিযীঃ ৩০৪৪]

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এ আয়াত কুরআনের শেষ দিকের আয়াত। এরপর বিধি-বিধান সম্পর্কিত আর কোন আয়াত নাযিল হয়নি। বলা হয় যে, শুধু উৎসাহ প্রদান ও ভীতি প্রদর্শনমূলক কয়েকখানি আয়াত-এর পর নাযিল হয়েছে। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র একাশি দিন পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন। কেননা, দশম হিজরীর ৯ই যিলহজ্জ তারিখে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং একাদশ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত পান। [ইবন কাসীর]

এখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি দ্বীন বা জীবন -ব্যবস্থা সম্পর্কিত শেষ আয়াত ০৫ঃ০৩। সেই মোতাবেক দ্বীন পূর্ণাঙ্গের কথা ভুল হতে পারে না। প্রশ্নকারী বঙ্গজ বিহঙ্গ বলছেন এই আয়াতের পরের আয়াত সঠিক কোন আল্লাহর বানী নয়। এখন বলি এই সুরা ও আয়াত নাম্বার যদি কোনক্রমে এক হত তাতেও দোষের কিছু ছিলো না। কেননা, পুরো দ্বীন ব্যবস্থা জানিয়ে দেয়ার পর এটি নাজিল হয়েছে। আমাদেরকে দেখতে হবে কখন, কোথায় ও কেন নাযিল হয়েছিলো। অল্প পড়াশোনা করলে বঙ্গজ বিহঙ্গ হওয়া অস্বাভাবিক কিছুই না।

কোরআন পড়বেন এর ইতিহাস জানবেন না, বুঝতে চেষ্টা করবেন না, আয়াত পাবেন আর আন্দাজে লেখা শুরু করবেন তাতো হতে পারে না। কোরআনে আল্লাহ বুঝে বুঝে পড়তে বলছেন। এইভাবে কোরআনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে গেলে পদে পদে অপদস্ত হবেন। আর বুঝে পড়লে প্রশ্ন করার অবকাশই পাবেন না।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.