ইসলামে নারী অধিকার নিয়ে নাস্তিকের মিথ্যাচার ও জবাবঃ-
ইসলামে নারী অধিকার নিয়ে নাস্তিকের মিথ্যাচার ও জবাবঃ-
***********************************************************
প্রশ্নঃ-
১. নারীর অবস্থান পুরুষের নিচে ( 4:34, 2:228)
২. তাদের একমাত্র কাজ পুরুষের সেবা করা (Mishkat al-Masabih, Book 1,
জবাবঃ-
আধুনিক যুগে আজও নারীরা তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে শোষিত আর বঞ্চিত হচ্ছে অথচ ইসলাম ১৪০০বছর আগে শুনিয়েছে নারী মুক্তির বার্তা।
আল্লাহ তা‘আলা যখন ফিরেশতাদের সামনে ঘোষণা করলেন-
إني جاعل في الأرض خليفة
পৃথিবীতে আমি খলীফাহ বানাতে চাই। (সূরা বাকারা (২) : ৩০)
তখন প্রকৃতপক্ষে সেটা শুধু একজন পুরুষ (বা হযরত আদম আ.)কে সৃষ্টি করার ঘোষণা ছিলো না, বরং নর ও নারী সম্মিলিতরূপে যে ‘মানব’ সেই মানব সৃষ্টির ঘোষণা ছিলো। কারণ পৃথিবীতে মানবজাতির বিস্তার ও খেলাফত শুধু পুরুষ দ্বারা সম্ভব ছিলো না।
আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-
هو الذي خلقكم من نفس واحدة و جعل منها زوجها ليسكن إليها
তিনি ঐ সত্তা যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি ‘নফস’ থেকে এবং বানিয়েছেন তার থেকে তার জোড়া যেন সে তার কাছে স্বস্তি লাভ করে। (সূরা আরাফ : ১৮৯)
সুতরাং বোঝা গেলো, পৃথিবীর প্রতিটি স্ত্রী তার স্বামীর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে একটি পবিত্র উপহার।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন মানুষকে তার খলিফা হিসেবে মনোনীত করেছেন। আর এই খেলাফত পরিচালনার জন্য নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। তিনি পারষ্পরিক সহযোগিতার জন্য তাদের মধ্যে দিয়েছেন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
নারী ও পুরুষ শারীরিক অবয়বের দিক থেকে যেমন ভিন্ন, মানসিক গঠনের দিক থেকেও তেমনি তাদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক।
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির কল্যাণে নারী-পুরুষ মস্তিষ্কের ভিন্নতা বা পার্থক্য সম্পর্কে বিচিত্র সব তথ্য বের হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারী এবং পুরুষের মস্তিষ্কে গঠনগত দিক দিয়ে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
বাহ্যিকভাবে এ পার্থক্য যতই নগণ্য হোক না কেন, এ সামান্য পার্থক্যই নারী-পুরুষের আচার-আচরণ এবং মানসিক গড়নে ব্যাপক পার্থক্য তৈরি করে।
আল্লাহ্ নারী পুরুষকে দিয়েছেন দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং সেই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দ্বায়িত্ব।
তিনি পুরুষকে দিয়েছেন সমাজ,সংসার তথা পরিবার পরিচালনার সকল আর্থিক দায়ভার আর নারীকে করেছেন সকল আর্থিক দায় থেকে মুক্তি। তিনি নারীকে দিয়েছেন সেই দ্বায়িত্ব যা কোন পিতার পক্ষেই সুচারু রূপে করা অসম্ভব।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন নারীকে দিয়েছেন সন্তানকে যোগ্য ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলার এবং পুরুষকে সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়ার দ্বায়িত্ব।
এ এক অতি কঠিন দায়িত্ব যা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জটিল।সেই জন্যই তিনি আর্থিক দায়মুক্তি দিয়েছেন নারীকে।তবে নারীরা চাইলে পর্দার সাথে চাকরী বা ব্যাবসা করতে পারে এতে কোন নিষেধ নাই।
পশ্চিমা নারীবাদীরা চাইছে নারীদের সমানাধিকার।
তাদের দৃষ্টিতে সমান অধিকারের অন্যতম অর্থ হল ঘরের বাইরে নারী ও পুরুষের জন্য চাকরির অধিকার নিশ্চিত করা। যে নারী কেবলই গৃহবধূ তাকে পশ্চাদপদ বলে মনে করে নারীবাদীরা। এভাবে পাশ্চাত্য নারীকে কেবলই আর্থিক ভূমিকায় ব্যস্ত রেখে তাদের মাতৃত্ব ও স্ত্রীর ভূমিকাকে বিলুপ্ত করছে। ফলে নারী ও মায়েদের ওপর মানসিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে ইসলাম কি নারীকে কোনভাবে অবমূল্যায়ন করেছে?
না, কখনোই নয়।
আমরা যদি কোরআন ও হাদিসের দিকে তাকাই তবে দেখি ইসলাম নারীকে অবমূল্যায়নতো করেই না বরং দিয়েছে বিশেষ অধিকার ও মূল্যায়ন।
ইসলাম ঘোষণা করেছে, সর্বোত্তম মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে আচার-আচরণে ভাল। স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত তার সম্পদ গ্রহণ করাকে নিষিদ্ধ করেছে।
এ বিষয়ে আল্লাহ্র বলেন-
“তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৯]
“আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা নিসা, আয়াত: ২২৮]
আল্লাহ আরো বলেন: -
“আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি।”[সূরা আহক্বাফ, আয়াত: ১৫]
“আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে ও মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল। আর মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪]
এখানে কি স্বামী বা পিতাকে কোন বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে?
অবশ্যই না!
রাসুল(সাঃ) বলেন---
সহিহ বুখারী (৫৯৭১) ও সহিহ মুসলিমে (২৫৪৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকার কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার পিতার।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা নারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করার ব্যাপারে ওসিয়ত গ্রহণ কর।”[সহিহ বুখারী (৩৩৩১) ও সহিহ মুসলিম (১৪৬৮)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।”[সুনানে তিরমিযি (৩৮৯৫), সুনানে ইবনে মাজাহ (১৯৭৭), আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
ইসলাম স্বামীদেরকে নির্দেশ দিয়েছে স্ত্রীর সাথে ভাল আচরণ করার, জীবন ধারণের ক্ষেত্রে নারীর প্রতি ইহসান করার। ইসলাম জানিয়েছে স্বামীর যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি স্ত্রীরও অধিকার রয়েছে; তবে স্বামীর মর্যাদা উপরে। যেহেতু খরচের দায়িত্ব স্বামীর এবং পারিবারিক বিষয়াদির দায়িত্বও স্বামীর।
ইসলাম শুধু মাতা বা স্ত্রীকেই সম্মানিত করেনি কন্যাকেও মূল্যায়িত করেছে সৌভাগ্যের প্রতিক হিসেবে। ইসলাম মেয়ে সন্তান প্রতিপালন ও শিক্ষা দেয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। মেয়ে সন্তান প্রতিপালনের জন্য মহা প্রতিদান ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হচ্ছে-
“যে ব্যক্তি বালেগ হওয়া পর্যন্ত দুইজন মেয়েকে লালন-পালন করবেন সে ও আমি কিয়ামতের দিন এভাবে আসব (তিনি আঙ্গুলসমূহকে একত্রিত করে দেখালেন)”।[সহিহ মুসলিম (২৩১)]
কেউ যদি ইসলামে নারীর অধিকারগুলোর সাথে জাহেলি যুগে নারীর অধিকারগুলো তুলনা করে দেখে কিংবা অন্য সভ্যতাগুলোর সাথে তুলনা করে দেখে তাহলে বুঝতে পারবে ইসলামে নারীকে যে মহান মর্যাদা দেয়া হয়েছে অন্য কোথাও সে মর্যাদা দেয়া হয়নি।
৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে নারীকে নিয়ে গবেষণার জন্য একটি সেমিনার ডাকা হয়: নারীর কি রূহ আছে, নাকি নেই? যদি নারীর রূহ থাকে সে রূহ কি পশুর রূহ; নাকি মানুষের রূহ? সবশেষে তারা সিদ্ধান্ত দেয় যে, নারী মানুষ! তবে, নারীকে শুধুমাত্র পুরুষের সেবার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
অষ্টম হেনরির শাসনামলে ইংরেজ পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করে, সে আইনে নারীর জন্য ‘নিউ টেস্টমেন্ট’ পড়া নিষিদ্ধ করা হয়; কারণ নারী নাপাক।
ইংরেজ আইনে ১৮০৫ সাল পর্যন্ত পুরুষের জন্য নিজের স্ত্রীকে বিক্রি করে দেয়া বৈধ ছিল। স্ত্রীর মূল্য নির্ধারণ করা হয় ছয় পেনি।
[দেখুন: আউদাতুল মারআ (২/৪৭-৫৬)]
নারীর এ অবস্থার সাথে ইসলামে নারীর মর্যাদাকে কিভাবে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে ইসলাম নারীর সাথে সদ্ব্যবহার করা, তার প্রতি দয়া করা, তাকে সম্মান করা ও তার জন্য খরচ করার নির্দেশ দিয়েছে?
প্রকৃতপক্ষে ইসলাম নারীর মর্যাদা সমুন্নত করেছে। বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীকে সমান অধিকার দিয়েছে। আখিরাতে প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রেও নারী পুরুষের সমান। নারীর রয়েছে মালিকানার অধিকার- নারী ক্রয়-বিক্রয় করবে, পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হবে, দান-সদকা করবে, কাউকে উপঢৌকন দিবে। নারীর অনুমতি ছাড়া কারো জন্য তার সম্পদ গ্রহণ করা জায়েয নয়। নারীর রয়েছে সম্মানজনক জীবন যাপনের অধিকার। নারীর উপর অন্যায়, অত্যাচার করা যাবে না। নারীর রয়েছে জ্ঞানার্জনের অধিকার। এরপরেও যারা বলে ইসলাম নারীকে অবমূল্যায়ন করেছে তারা আসলে নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের অবাধ ভোগের অধিকার ছাড়া অন্য কিছুই চাইছেনা।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সত্যকে জানার ও বুঝার তৌফিক দান করুন,আমিন।
***********************************************************
প্রশ্নঃ-
১. নারীর অবস্থান পুরুষের নিচে ( 4:34, 2:228)
২. তাদের একমাত্র কাজ পুরুষের সেবা করা (Mishkat al-Masabih, Book 1,
জবাবঃ-
আধুনিক যুগে আজও নারীরা তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে শোষিত আর বঞ্চিত হচ্ছে অথচ ইসলাম ১৪০০বছর আগে শুনিয়েছে নারী মুক্তির বার্তা।
আল্লাহ তা‘আলা যখন ফিরেশতাদের সামনে ঘোষণা করলেন-
إني جاعل في الأرض خليفة
পৃথিবীতে আমি খলীফাহ বানাতে চাই। (সূরা বাকারা (২) : ৩০)
তখন প্রকৃতপক্ষে সেটা শুধু একজন পুরুষ (বা হযরত আদম আ.)কে সৃষ্টি করার ঘোষণা ছিলো না, বরং নর ও নারী সম্মিলিতরূপে যে ‘মানব’ সেই মানব সৃষ্টির ঘোষণা ছিলো। কারণ পৃথিবীতে মানবজাতির বিস্তার ও খেলাফত শুধু পুরুষ দ্বারা সম্ভব ছিলো না।
আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-
هو الذي خلقكم من نفس واحدة و جعل منها زوجها ليسكن إليها
তিনি ঐ সত্তা যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি ‘নফস’ থেকে এবং বানিয়েছেন তার থেকে তার জোড়া যেন সে তার কাছে স্বস্তি লাভ করে। (সূরা আরাফ : ১৮৯)
সুতরাং বোঝা গেলো, পৃথিবীর প্রতিটি স্ত্রী তার স্বামীর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে একটি পবিত্র উপহার।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন মানুষকে তার খলিফা হিসেবে মনোনীত করেছেন। আর এই খেলাফত পরিচালনার জন্য নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। তিনি পারষ্পরিক সহযোগিতার জন্য তাদের মধ্যে দিয়েছেন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
নারী ও পুরুষ শারীরিক অবয়বের দিক থেকে যেমন ভিন্ন, মানসিক গঠনের দিক থেকেও তেমনি তাদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক।
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির কল্যাণে নারী-পুরুষ মস্তিষ্কের ভিন্নতা বা পার্থক্য সম্পর্কে বিচিত্র সব তথ্য বের হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারী এবং পুরুষের মস্তিষ্কে গঠনগত দিক দিয়ে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
বাহ্যিকভাবে এ পার্থক্য যতই নগণ্য হোক না কেন, এ সামান্য পার্থক্যই নারী-পুরুষের আচার-আচরণ এবং মানসিক গড়নে ব্যাপক পার্থক্য তৈরি করে।
আল্লাহ্ নারী পুরুষকে দিয়েছেন দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং সেই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দ্বায়িত্ব।
তিনি পুরুষকে দিয়েছেন সমাজ,সংসার তথা পরিবার পরিচালনার সকল আর্থিক দায়ভার আর নারীকে করেছেন সকল আর্থিক দায় থেকে মুক্তি। তিনি নারীকে দিয়েছেন সেই দ্বায়িত্ব যা কোন পিতার পক্ষেই সুচারু রূপে করা অসম্ভব।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন নারীকে দিয়েছেন সন্তানকে যোগ্য ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলার এবং পুরুষকে সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়ার দ্বায়িত্ব।
এ এক অতি কঠিন দায়িত্ব যা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জটিল।সেই জন্যই তিনি আর্থিক দায়মুক্তি দিয়েছেন নারীকে।তবে নারীরা চাইলে পর্দার সাথে চাকরী বা ব্যাবসা করতে পারে এতে কোন নিষেধ নাই।
পশ্চিমা নারীবাদীরা চাইছে নারীদের সমানাধিকার।
তাদের দৃষ্টিতে সমান অধিকারের অন্যতম অর্থ হল ঘরের বাইরে নারী ও পুরুষের জন্য চাকরির অধিকার নিশ্চিত করা। যে নারী কেবলই গৃহবধূ তাকে পশ্চাদপদ বলে মনে করে নারীবাদীরা। এভাবে পাশ্চাত্য নারীকে কেবলই আর্থিক ভূমিকায় ব্যস্ত রেখে তাদের মাতৃত্ব ও স্ত্রীর ভূমিকাকে বিলুপ্ত করছে। ফলে নারী ও মায়েদের ওপর মানসিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে ইসলাম কি নারীকে কোনভাবে অবমূল্যায়ন করেছে?
না, কখনোই নয়।
আমরা যদি কোরআন ও হাদিসের দিকে তাকাই তবে দেখি ইসলাম নারীকে অবমূল্যায়নতো করেই না বরং দিয়েছে বিশেষ অধিকার ও মূল্যায়ন।
ইসলাম ঘোষণা করেছে, সর্বোত্তম মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে আচার-আচরণে ভাল। স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত তার সম্পদ গ্রহণ করাকে নিষিদ্ধ করেছে।
এ বিষয়ে আল্লাহ্র বলেন-
“তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৯]
“আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা নিসা, আয়াত: ২২৮]
আল্লাহ আরো বলেন: -
“আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি।”[সূরা আহক্বাফ, আয়াত: ১৫]
“আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে ও মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল। আর মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪]
এখানে কি স্বামী বা পিতাকে কোন বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে?
অবশ্যই না!
রাসুল(সাঃ) বলেন---
সহিহ বুখারী (৫৯৭১) ও সহিহ মুসলিমে (২৫৪৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকার কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার পিতার।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা নারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করার ব্যাপারে ওসিয়ত গ্রহণ কর।”[সহিহ বুখারী (৩৩৩১) ও সহিহ মুসলিম (১৪৬৮)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।”[সুনানে তিরমিযি (৩৮৯৫), সুনানে ইবনে মাজাহ (১৯৭৭), আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
ইসলাম স্বামীদেরকে নির্দেশ দিয়েছে স্ত্রীর সাথে ভাল আচরণ করার, জীবন ধারণের ক্ষেত্রে নারীর প্রতি ইহসান করার। ইসলাম জানিয়েছে স্বামীর যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি স্ত্রীরও অধিকার রয়েছে; তবে স্বামীর মর্যাদা উপরে। যেহেতু খরচের দায়িত্ব স্বামীর এবং পারিবারিক বিষয়াদির দায়িত্বও স্বামীর।
ইসলাম শুধু মাতা বা স্ত্রীকেই সম্মানিত করেনি কন্যাকেও মূল্যায়িত করেছে সৌভাগ্যের প্রতিক হিসেবে। ইসলাম মেয়ে সন্তান প্রতিপালন ও শিক্ষা দেয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। মেয়ে সন্তান প্রতিপালনের জন্য মহা প্রতিদান ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হচ্ছে-
“যে ব্যক্তি বালেগ হওয়া পর্যন্ত দুইজন মেয়েকে লালন-পালন করবেন সে ও আমি কিয়ামতের দিন এভাবে আসব (তিনি আঙ্গুলসমূহকে একত্রিত করে দেখালেন)”।[সহিহ মুসলিম (২৩১)]
কেউ যদি ইসলামে নারীর অধিকারগুলোর সাথে জাহেলি যুগে নারীর অধিকারগুলো তুলনা করে দেখে কিংবা অন্য সভ্যতাগুলোর সাথে তুলনা করে দেখে তাহলে বুঝতে পারবে ইসলামে নারীকে যে মহান মর্যাদা দেয়া হয়েছে অন্য কোথাও সে মর্যাদা দেয়া হয়নি।
৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে নারীকে নিয়ে গবেষণার জন্য একটি সেমিনার ডাকা হয়: নারীর কি রূহ আছে, নাকি নেই? যদি নারীর রূহ থাকে সে রূহ কি পশুর রূহ; নাকি মানুষের রূহ? সবশেষে তারা সিদ্ধান্ত দেয় যে, নারী মানুষ! তবে, নারীকে শুধুমাত্র পুরুষের সেবার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
অষ্টম হেনরির শাসনামলে ইংরেজ পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করে, সে আইনে নারীর জন্য ‘নিউ টেস্টমেন্ট’ পড়া নিষিদ্ধ করা হয়; কারণ নারী নাপাক।
ইংরেজ আইনে ১৮০৫ সাল পর্যন্ত পুরুষের জন্য নিজের স্ত্রীকে বিক্রি করে দেয়া বৈধ ছিল। স্ত্রীর মূল্য নির্ধারণ করা হয় ছয় পেনি।
[দেখুন: আউদাতুল মারআ (২/৪৭-৫৬)]
নারীর এ অবস্থার সাথে ইসলামে নারীর মর্যাদাকে কিভাবে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে ইসলাম নারীর সাথে সদ্ব্যবহার করা, তার প্রতি দয়া করা, তাকে সম্মান করা ও তার জন্য খরচ করার নির্দেশ দিয়েছে?
প্রকৃতপক্ষে ইসলাম নারীর মর্যাদা সমুন্নত করেছে। বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীকে সমান অধিকার দিয়েছে। আখিরাতে প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রেও নারী পুরুষের সমান। নারীর রয়েছে মালিকানার অধিকার- নারী ক্রয়-বিক্রয় করবে, পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হবে, দান-সদকা করবে, কাউকে উপঢৌকন দিবে। নারীর অনুমতি ছাড়া কারো জন্য তার সম্পদ গ্রহণ করা জায়েয নয়। নারীর রয়েছে সম্মানজনক জীবন যাপনের অধিকার। নারীর উপর অন্যায়, অত্যাচার করা যাবে না। নারীর রয়েছে জ্ঞানার্জনের অধিকার। এরপরেও যারা বলে ইসলাম নারীকে অবমূল্যায়ন করেছে তারা আসলে নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের অবাধ ভোগের অধিকার ছাড়া অন্য কিছুই চাইছেনা।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সত্যকে জানার ও বুঝার তৌফিক দান করুন,আমিন।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.