নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম ?

নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম। কাজেই পাত্রী দেখার আয়োজনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সংকলনেঃআলেমা রহিমা আক্তার হূর
====================================

হযরত মুগিরা বিন শোবা রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ
এর কাছে গিয়ে এক নারীকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, আগে যাও, তাকে দেখে নাও(খোজ খবর নাও) । কারণ এ দেখাদেখি(খোজ খবর নেয়া) তোমাদের বন্ধনকে অটুট রাখতে সহায়ক হবে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
বিয়ের আগে প্রথমে পাত্রীর দ্বীনদারি জীবনযাপন সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। এ ব্যাপারে আশানুরুপ সংবাদ পাওয়া গেলে তারপর কনে দেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।তবে যদি পাত্রী পক্ষ এ ছেলের ব্যাপারে নিজেদের সম্মতি প্রকাশ করে তাহলে দেখতে যাওয়া বৈধ হবে। নিজের বিশ্বস্ত কোনো নারী যেমন মা অথবা বোনের মাধ্যমে ওই মেয়ের চরিত্র এবং গঠন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়া দরকার। তারপর উভয়ে উভয়ের পছন্দ হলে বিয়ের প্রস্তাব এবং অতঃপর বিয়ে।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ” আল্লাহ পাক যখন কারো মনে কোনো নারীকে বিয়ের জন্য ইচ্ছা ঢেলে দেন, তখন ওই পুরুষের জন্য তার পাত্রীকে দেখে নেওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই”। (ইবনে মাজাহ শরীফ)
ইসলামী শরীয়ত পাত্রী দেখাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে কনের কোন কোন অংশ দেখা যাবে, তা নিয়ে সামান্য মতভেদ থাকলেও প্রায় সবাই একমত যে, পাত্রের জন্য পাত্রীর শুধু চেহারা এবং দু’হাত দেখা যাবে। তবে একাকী মেয়ে এবং ওই ছেলেকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার কোনও কথা ইসলামে নেই। কারণ তখনও তারা একে অপরের জন্য বেগানা (গায়রে মাহরাম)। বরং দেখাদেখির সময় সঙ্গে মুরব্বি অথবা অল্পবয়সী কেউ উপস্থিত থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।
সবসময় কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তা হলো:
১. পাত্র-পাত্রী দু’জনই দু’জনের জন্য উপযুক্ত এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল হতে পারে- এমন সম্ভাবনা থাকলে তখনই কেবল পাত্রীকে দেখার প্রস্তাব দেওয়া যাবে। পাত্র কিংবা পাত্রী- কারো পক্ষ থেকে যদি কোনোই সম্ভাবনা না থাকে, তবে এমন ক্ষেত্রে পাত্রী দেখার আয়োজন করা উচিত নয়।
২. পাত্রী দেখার সময় পাত্র বা ছেলের মনে যেন কোনো কুধারণা কিংবা কামনা না থাকে। ছেলেরও এ ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার যে, মেয়েটিকে পছন্দ হলে সে তাকেই বিয়ে করবে। শুধু দেখার জন্য দেখা নয়, এটা মনে রেখে সামনে আগাতে হবে। বিড়ম্বনা যেন না ঘটে।
৩. দেখার মজলিসে অন্য কোনো পুরুষ যার সঙ্গে মেয়ের দেখা সাক্ষাত জায়েজ নেই, এমন কেউ থাকা যাবে না। চাই সে ছেলের বাবা কিংবা মামা-চাচা যেই হোন না কেন। শুধুমাত্র ছেলে গ্রুপের মহিলারা থাকতে পারবে।
৪. পাত্রী মাথা নিচু করে বসে থাকবে আর পাত্র তাকে দেখবে- মুরব্বিরা তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবে, পাত্রীকে হাঁটতে বলা হবে, হাসতে বলা হবে- এসব করা ঠিক হবে না । নারী বিয়ের পণ্য নয় যে তাকে এভাবে সবার সামনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। পাত্রী দেখার নামে পশুর মত আচরণ কখনই করা যাবে না। কোনও কিছু জানার থাকলে পরে খোজ নিতে হবে। তখন ছেলের সামনে মেয়ের সাথে বেশি কথা বলা উচিত নয়।
৫. ইচ্ছা করলে পাত্রীও তার পাত্রকে দেখে নিতে পারবে। তাই ছেলের চেহারা এবং গঠন দেখার অধিকার রয়েছে পাত্রীর।
বিয়ের আগে পুরুষের যেমন নারীর কিছু বিষয় দেখে নেওয়ার রয়েছে, তেমনি নারীরও অধিকার রয়েছে তার সঙ্গীকে দেখে বেছে নেওয়ার।
মনে রাখতে হবে, মেয়ের পরহেজগারীতা ও মেজাজ মর্জি সম্পর্কে জানতে হলে বাড়ির নারীদের মাধ্যমে আগে থেকেই খোঁজখবর নেওয়া ভালো। সবকিছু ঠিকঠাক হলে তারপর পাত্রী দেখার আয়োজন। এর আগে নয়। কারণ মেয়ে দেখা তো আর ছেলেখেলা নয়। তবে প্রথমবার দেখে আসার পরও যদি কোনো সন্দেহ কিংবা সংশয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সুরাহা করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আবারও পাত্রীকে সামনাসামনি দেখার অবকাশ ইসলামে রয়েছে।
পাশাপাশি পাত্রীর আসল রং আড়াল করার উদ্দেশে অথবা অন্য কোনো দোষ ঢেকে রাখার জন্য অথবা অন্য একটি মেয়েকে দেখিয়ে ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া জায়েজ নয়। মানুষ হিসেবে মহান আল্লাহ পাক যেভাবে যাকে সৃষ্টি করেছেন, সেটিই তার যোগ্য। বিয়ের মজলিসে সামান্য লুকোচুরি পরবর্তী জীবনে অসামান্য বিবাদ ও অসহনীয় দ্বন্দ্ব বয়ে আনার কারণ হয়ে থাকে। এমনটি কারো দ্বারা যেন না ঘটে তা খেয়াল রাখতে হবে।
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “ তোমাদের কেউ যেন অন্যের বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় নতুন করে প্রস্তাব না পাঠায়।” ( বুখারি শরীফ)
পাত্রীকে দেখতে আসা উপলক্ষে মিষ্টিমুখ কিংবা কিছু খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে একে উপলক্ষ করে যেন নারী-পুরুষের বেপর্দা সমাগম না হয়, সেদিকেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
ইসলামই সর্বপ্রথম শিখিয়েছে, নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম। করুণার দৃষ্টি থেকে রেহাই দিয়ে রাসূল সাঃ নারীদের সবচেয়ে সম্মানিত অবস্থানে বসিয়েছেন। কাজেই পাত্রী দেখার আয়োজনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.