ইসলামে নারী অধিকার এবং ভ্রান্ত সমালোচনা

ইসলামে নারী অধিকার এবং ভ্রান্ত সমালোচনা
→→→→→→→→→→→→→→→→
ইসলামে নারীদের মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে
বিশ্বব্যাপী এমনভাবে অপপ্রচার চালানো
হয়েছে যেন সবগুলো ধর্মের মধ্যে ইসলামেই
নারীদেরকে সবচেয়ে বেশী অবমাননা করা
হয়েছে এবং সবচেয়ে কম অধিকার দেওয়া
হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই এই অপপ্রচারকে
বিশ্বাসও করা শুরু করেছে। অথচ বাস্তবতা
কিন্তু ঠিক তার বিপরীত। প্রকৃতপক্ষে,
কোরআনে নারীদের নিয়ে আলাদাভাবে
আলোচনা করতে যাওয়া মানে তাদেরকে
বরং হেয় করা। কেননা কোরআনে নারী-
পুরুষকে তো আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা
হয়নি। যে দু-চারটি তুচ্ছ বিষয়কে ফুলিয়ে-
ফাঁপিয়ে সমালোচনা করা হয় সেগুলো
বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুই না।
সামান্য যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে
সেগুলোকে খুব ভালো ভাবেই ডিফেন্ড করা
সম্ভব। তাছাড়া কোরআনে কিছু কিছু
ক্ষেত্রে যেমন নারীকে বিশেষ মর্যাদা ও
অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে তেমনি আবার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের উপর অতিরিক্ত
বোঝাও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব,
সবকিছু যোগ-বিয়োগ করে এবং নারী-পুরুষের
মধ্যে যে প্রকৃতিগতভাবে কিছু পার্থক্য
আছে সেটা বিবেচনায় রেখে কোরআনে
নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করা খুবই কঠিন।
তবে কোরআনের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হতে
হবে। এক্ষেত্রে আবেগের কোনো স্থান নেই।
কোরআন হচ্ছে মানব জাতির ইতিহাসে প্রথম
লিখিত গ্রন্থ যেটি নারী-পুরুষকে মানুষ
হিসেবে সমান মর্যাদা দিয়ে নারীদের
পক্ষেও অবস্থান নিয়েছে। পুরুষ মানেই
পুরুষের পক্ষে এবং নারীদের বিপক্ষে –
হাজার বছরের এই ট্যাবু বা মানসিকতাকে
কোরআনই প্রথম ভেঙ্গে দিয়েছে। নিচের
আয়াতগুলোতে দেখুন তো কোরআনে নারী-
পুরুষের মধ্যে আদৌ কোনো পার্থক্য করা
হয়েছে কি-না।
“হে মানব-জাতি! তোমরা ভয় কর তোমাদের
রবকে, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের এক
আত্মা থেকে এবং যিনি সৃষ্টি করেছেন তার
থেকে তার জোড়া, আর ছড়িয়ে দিয়েছেন
তাদের দু’জন থেকে অনেক নর ও নারী।” (আন-
নিসা ৪:১)
“যে ব্যক্তি ভাল কাজ করবে, হোক সে পুরুষ
কিংবা নারী, এবং সে ঈমানদার হবে, এরূপ
লোক জান্নাতে দাখিল হবে, আর তাদের
প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে
না।” (আন-নিসা ৪:১২৪)
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি এই যে,
তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের
মধ্যে থেকে সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে
তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ কর এবং
সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও
দয়া।” (আর-রূম ৩০:২১)
“আমি বিনষ্ট করি না তোমাদের কোন
পরিশ্রমকারীর কর্ম, তা সে হোক পুরুষ
কিংবা নারী। তোমরা একে অন্যের
সমান।” (আল-ইমরান ৩:১৯৫)
“বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী একে
অপরের বন্ধু। তারা ভাল কাজের নির্দেশ দেয়
এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা
সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং
আনুগত্য করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। এদেরই
উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করবেন।” (আত-তওবা
৯:৭১)
“তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা
তাদের পোশাক।” (আল-বাকারা ২:১৮৭)
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি
একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে এবং
তোমাদেরকে পরিণত করেছি বিভিন্ন
জাতিতে ও বিভিন্ন গোত্রে, যাতে তোমরা
পরস্পরকে চিনতে পার। নিশ্চয় আল্লাহর
কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক
মর্যাদাবান সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে
সর্বাপেক্ষা অধিক মোত্তাকী।” (আল-হুজরাত
৪৯:১৩)
“যে ভাল কাজ করে এবং বিশ্বাসী, হোক সে
পুরুষ কিংবা নারী, আমি তাকে অবশ্যই দান
করব এক পবিত্র শান্তিময় জীবন এবং তারা
যা করত তার জন্য তাদেরকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার
দান করব।” (আন-নাহল ১৬:৯৭)
“যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে সে কেবল তদনুরূপ
প্রতিফল পাবে। আর যে ব্যক্তি ভাল কাজ
করে সে পুরুষই হোক কিংবা নারীই হোক, সে
যদি বিশ্বাসী হয় তবে এরূপ লোকেরাই
জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেথায় তাদেরকে
দেয়া হবে বেহিসাব রিযিক।” (আল-গাফির
৪০:৪০)
“আমি মানুষকে তার মাতা-পিতা সম্বন্ধে
নির্দেশ দিয়েছি তাদের সাথে সদাচরণ
করতে। তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে
তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দু’বছরে তার
দুধ ছাড়ানো হয়। সুতরাং শোকরগুজারী কর
আমার এবং তোমার মাতা-পিতার।” (লুকমান
৩১:১৪)
“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, ঈমানদার
পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত
নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী,
ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ
ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল
নারী, রোজাদার পুরুষ ও রোজাদার নারী,
স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাযতকারী পুরুষ ও স্বীয়
লজ্জাস্থান হেফাযতকারী নারী এবং
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক
স্মরণকারী নারী–এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত
রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান।” (আল-
আহযাব ৩৩:৩৫)
“সেদিন আপনি দেখতে পাবেন ঈমানদার পুরুষ
ও ঈমানদার নারীদেরকে যে, তাদের নূর
ছুটাছুটি করছে তাদের সামনে ও তাদের
ডানে। তাদেরকে বলা হবে: আজ তোমাদের
জন্য সুসংবাদ এমন জান্নাতের, যার নিম্নদেশ
দিয়ে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ, সেখানে তোমরা
অনন্তকাল থাকবে। ইহাই মহা সাফল্য।” (আল-
হাদীদ ৫৭:১২)
“পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ
এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য
অংশ।” (আন-নিসা ৪:৩২)
“পুরুষদের জন্য অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা
পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়;
এবং নারীদের জন্যও অংশ আছে সে
সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-
আত্মীয়রা রেখে যায়, হোক তা অল্প কিংবা
বেশী। তা অকাট্য নির্ধারিত অংশ।” (আন-
নিসা ৪:৭)
“হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য বৈধ
নয় নারীদের জবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য
করা। আর তাদের আটকে রেখ না তাদের যা
দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করতে,
কিন্তু যদি তারা কোন প্রকাশ্য ব্যভিচার
করে তবে তা ব্যতিক্রম। তোমরা তাদের
সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করবে।” (আন-
নিসা ৪:১৯)
“যারা কোন ভাল নারীর প্রতি অপবাদ
আরোপ করে, তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত
করে না তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে
এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না।
এরাই প্রকৃত দুষ্ট ও মিথ্যাবাদী।” (আন-নূর
২৪:৪)
“এ কথা সত্য যে, নারীদের উপর পুরুষের যেমন
কিছু অধিকার আছে তেমনি পুরুষের উপরও
নারীদের কিছু অধিকার আছে।” (মুহাম্মদ
সাঃ)
এগুলো ছাড়াও আরো কিছু আয়াত আছে। তবে
বাস্তবতা দেখলেন তো! এই পৃথিবীর দ্বিতীয়
কোনো গ্রন্থে নারী-পুরুষকে এতো বেশীবার
পাশাপাশি সম্বোধন করা হয়নি এবং
নারীদেরকে এভাবে সরাসরি মর্যাদা ও
অধিকারও দেওয়া হয়নি।
এবার আসা যাক কোরআনে নারীদের
বিরুদ্ধে বহুল প্রচলিত অভিযোগগুলো নিয়ে।
তার আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়,
যেটা অনেকেই কৌশলে এড়িয়ে যায়, সেটা
হচ্ছে যেভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে
সেভাবেই যদি ইসলামে নারীদেরকে দেখা
হতো তাহলে তো পশ্চিমা বিশ্বের নারীরা
ইসলামের দিকে ফিরেও তাকাত না। অথচ
পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে
নারীদের সংখ্যাই বেশী!


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.