ইসলাম অনুসারে বিয়েতে নারীর মতামতের কোন অধিকার নেই ?

হাদিস নিয়ে নাস্তিকের অপব্যাখ্যা ও তার জবাবঃ-
*******************************************
প্রশ্নঃ- ইসলাম অনুসারে বিয়েতে নারীর মতামতের কোন অধিকার নেই। চুপ থাকাই তাদের সম্মতি।

জবাবঃ-
অপব্যাখ্যাই নাস্তিকদের একমাত্র পাথেয়। ইসলামই একমাত্র জীবন বিধান যেখানে নারীকে দিয়েছে মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা।
প্রাচীন গ্রীক সভ্যতায় নারীকে ব্যবসায়ী পণ্য মনে করা হত। পরিবারের পুরুষদের ছিল ইচ্ছা করলেই তাকে বিক্রি করার আইনগত অধিকার। রোমান জাস্টিয়ান কোডে নারীকে সবধরনের অধিকারের অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। তাই তার ছিল না কোন নাগরিক ও সামাজিক অধিকার। হামুরাবি কোডে নারীকে মেষপালের সাথে তুলনা করা হয়। বিকৃত ইহুদী ধর্মে নারীকে মনে করা হয় সৃষ্টার অভিশাপ! আর ৫৮৬ খৃষ্টাব্দে খৃষ্ট-ধর্মের পোপদের মধ্যে নারীদের মনুষত্য নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়, শেষ পযন্ত তাদের মনুষত্য শিকার করা হয়। তবে তাদের সৃষ্টি হয়েছে পুরুষের ভোগের জন্য। তাই তার কোন আর্থিক অধিকার ছিল না। এমনকি ১৮০৫ সাল পযন্ত বৃটিশ আইনে স্ত্রীকে বিক্রির অধিকার ছিল স্বামীর! ফরাসি আইনে ১৯৩৮ সাল পযন্ত মেয়েদের সম্পদে মালিকানার কোন অধিকার ছিল না। আর হিন্দু আইনের কথা তো সবার জানা। হিন্দু ধর্মে বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পদে মেয়ের যৌতুক ব্যাতীত বেশিভাগ ক্ষেত্রে কোন অধিকার থাকে না। তাদের মধ্যে গত শতাব্দী পযন্ত সতিদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। এমনকি এখনো ভারতের কোন অঞ্চলে এর প্রচলন রয়েছে। আরব জাহিলিয়াতের যুগে নারীকে অত্যন্ত লজ্জার বিষয় মনে করা হত। তাই তাদের অনেক গোত্রই নিজেদের শিশুকন্যাদের জীবন্ত মাটি চাপা দিত।একমাত্র ইসলামই দিয়েছে নারীর পুর্ণ মর্যাদা ও সম্মান।

ইসলামি নিয়মে বিয়ে কিঃ-
************************
বিয়ে হচ্ছে একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ে ওঠে। বিয়ে শুধু নারী-পুরুষের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক নয়, সুস্থ্য ও স্বাভাবিক সমাজ গঠনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে বিয়ে।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা, তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।” (বুখারী : ৫০৬৬; মুসলিম : ৩৪৬৪)
এ জন্যই আলিমগণ বলেছেন, সাগ্রহে বিবাহ করা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম।

ইসলামী শরিয়াহ মতে নিম্মোক্ত ৪টি শর্তসমুহ পালিত হলেই বিবাহ বৈধ হবে। ১। পাত্র ও পাত্রীকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। ২। পাত্রী কর্তৃক ধার্য্যকৃত মোহরানা পাত্রকে নগদে পরিশোধ করতে হবে ( পাত্রীর সম্মতিতে মোহরানার অংশ বিশেষ বাকী রাখা যাবে তবে এর নিশ্চয়তা পত্র কন্যাকে দিতে হবে )। ৩। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের বিবাহে সম্মতি থাকতে হবে। ৪। প্রাপ্তবয়স্ক দুই জন পুরুষ বা ১জন পুরুষ ও ২জন মহিলা সাক্ষী থাকতে হবে।

বিয়েতে কন্যার অনুমতি অপরিহার্যঃ-
***********************************
মেয়ের অনুমতির বাইরে ইসলামী মতে বিয়ে দেয়া বৈধ নয়।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। {মুয়াত্তা মালিক ৮৮৮, সহীহ মুসলিম ১৪২১)।

যে হাদিস খানাকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে পিতা বা অভিভাবক কুমারী অথবা বিবাহিতা মেয়েকে তাদের সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দিতে পারে না!
হাদিস হচ্ছে-
মু’আয বিন ফদালা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া শাদী দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া শাদী দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেমন করে তার অনুমতি নেব। তিনি বললেন, তার চুপ করে থাকাটাই তার অনুমতি।(৪৭৬০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=5066

এই হাদিস নিয়ে নাস্তিকরা অপব্যাখ্যায় মেতে উঠেছে। মূলত কুমারী মেয়েরা বিয়ের ব্যাপারে লজ্জাশীল হয়।এজন্যই বলা হয়েছে যদি তারা অসম্মতি জ্ঞাপন না করে চুপ থাকে তবে বুঝতে হবে তারা রাজী আছে।
এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন- অলী বিবাহিত ও অবিবাহিত মেয়েকে কোন নির্দিষ্ট ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারে না। অতএব পূর্বে বিবাহিত মেয়েদের কাছ থেকে বিয়ের জন্য রীতিমত আদেশ পেতে হবে এবং অবিবাহিত বালেগ মেয়ের কাছ থেকে যথারীতি অনুমতি নিতে হবে। এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম হাদীস বর্ণনা করেছেন- পূর্বে বিবাহিত মেয়েরা তাদের নিজেদের বিয়েতে মত জানানোর ব্যাপারে তাদের অলী অপেক্ষাও বেশি অধিকার রাখে। আর পূর্বে অবিবাহিত মেয়েদের নিকট তাদের পিতা বিয়ের মত জানতে চাইলে তাদের চুপ থাকাই তাদের অনুমতিজ্ঞাপক কারন তারা লজ্জাশীলতার কারনে চুপ থাকে।

যদি কোন ব্যক্তি তার কন্যার অনুমতি ব্যতীত তাকে বিয়ে দেয়, সে বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে হাদিস হচ্ছে --
ইসমাঈল (রহঃ) ... খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, যখন তিনি বয়স্কা ছিলেন তখন তার পিতা তাকে শাদী দেন। এ শাদী তার পছন্দ ছিল না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলে তিনি এ শাদী বাতিল করে দেন।(৪৭৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=5068
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। কুমারী মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছে, তখন রাসূল সাঃ সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, [যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে]। {মুসনাদে আহমাদ ২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ ১৮৭৫, সুনানে আবু দাউদ ২০৯৬)।

আশাকরি বুঝতে পেরেছেন একমাত্র ইসলামই নারীর বিয়ে সহ প্রতিটি অধিকারের ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছে যা আগে কখনোই ছিলনা।
আল্লাহ্‌ নাস্তিকদের অপব্যাখ্যা থেকে আমাদের হেফাজত করুন,আমিন।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.