কুরআন কি বলে পৃথিবী সমতল ?
আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে রাখুনঃ https://bit.ly/2VVS44A
ধন্যবাদান্তে - আরিফ আজাদ
প্রথমত কুরআনের কোথাও পৃথিবীর আকার নিয়ে স্পষ্ট বলা হয়নি শুধু মাত্র ইঙ্গিত প্রদান করে দেয়া হয়েছে । কিন্তু অনেক জায়গায় বিছানা কিংবা সমতল বলা হয়েছে । তাই বলে নেয়া ভালো যে , নিজের মত করে কুরআন পড়লে বুঝলে হবেনা বরং সাহাবি , তাবেই , সালফে সলেহীনেরা যেভাবে বুঝেছে সেভাবে বুঝতে হবে । কুরআনের ৫১ নাম্বার সূরার ৪৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ,
⦁ وَالْأَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُونَ
⦁ আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী![1]
এই আয়াত সম্পর্কে ১৩০১ খ্রিষ্টাব্দ এর একজন তাফসিরবীদ ইমাম ইবনে কাসির বলেন ,
* ইবনে কাসিরঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ যমীনকে আমি আমার সৃষ্টজীবের জন্যে বিছানা। বানিয়েছি আর একে বানিয়েছি অতি উত্তম বিছানা। এখানে একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন যে , কি বলা হয়েছে আল্লাহ পৃথিবীর যমিন কে সৃষ্টিকূলের জন্য বিছানা বানিয়েছেন । এখানে পৃথিবীর বাহ্যিক আকৃতির কথা বলা হচ্ছেনা । [ 2 ]
৬০৪-৬১০ হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে জন্ম নেয়া ইমাম কুরতুবি তাঁর তাফসির আল কুরতুবি তে বর্ণনা করেন ,
* কুরতুবিঃ مَاهِدُونَ শব্দের অর্থ দু'টি। এক. বিছানার মত সুন্দরভাবে বিছিয়ে দেয়া। দুই, সুন্দর ব্যবস্থাপনা তৈরী করা এই কথাটি তাফসীর ড আবু বকর যাকারিয়া তেও এসেছে । এখানে স্পষ্ট যে , আল্লাহ পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের জন্য সুন্দর ব্যবস্থাপনা করেছেন । এখানে স্পষ্ট বুঝা যায় যে , কোথায় ইঙ্গিত করা হচ্ছে পৃথিবীর বাহ্যিক নাকি পৃথিবীর অভ্যন্তর ( ফাতহুল মাজীদ ) । [ 3 ]
অর্থাৎ বিজ্ঞানমনস্কদের জন্য এটি লজ্জাজনক যে , শত শত বছর আগের মানুষেরা বুঝে গেলো কোথায় ইঙ্গিত করা হয়েছে । কিন্তু তারা এটি বুঝতে পারলো না ।
শুধু একটি দুইটি আয়াত নয় সমস্ত আয়াতে যে কথাটা বলা হয়েছে চলুন দেখে আসি আয়াতগুলো ,
⦁ وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا
⦁ এবং পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন। [ 5 ]
অনেকে বিস্তৃত দিয়ে বুঝায় যে , সমান বা সমতল সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু স্বয়ং ইবনে আব্বাস রাঃ যিনি কিনা সাহাবি ছিলেন উনি বলেন ,
ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর ব্যাখ্যা এইভাবে করেছেন যে, সৃষ্টি করা এক জিনিস এবং دَحَى যার মূল হল, دَحْوٌ (বিস্তৃত করা বা বিছানো) আর এক জিনিস। অর্থাৎ, পৃথিবী সৃষ্টি আসমানের পূর্বে হয়েছে। যেমন, এখানেও বলা হয়েছে এবং دَحْوٌ অর্থাৎ, পৃথিবীকে বসবাসের যোগ্য বানানোর জন্য এর মধ্যে পানির ভান্ডার রাখা হয়, তাকে প্রয়োজনীয় জিনিস উৎপাদনের ক্ষেত্র বানানো হয়। ﴿اَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَاهَا﴾ এতে পাহাড়, নদ-নদী এবং নানা প্রকার ধাতু ও খনিজ পদার্থ রাখা হয়। এ সব কাজ সুসম্পন্ন হয় আকাশ সৃষ্টির পর অন্য দুই দিনে। এইভাবে পৃথিবী ও তার সংশ্লিষ্ট সমস্ত জিনিসের সৃষ্টি চার দিনে পরিপূর্ণ হয়। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা হা-মীম সাজদাহ)
অর্থাৎ বিস্তৃত শব্দ দিয়ে আল্লাহ বুঝিয়েছেন বসবাসের উপযোগী বা বাস যোগ্য । এখানে পৃথিবীর বাহ্যিক আকৃতির কথা কখনই বলা হচ্ছেনা । কারণ স্বয়ং ইবনে আব্বাস রাঃ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন । এছাড়া তাফসীরে আহসানুল বায়ানে বলা আছে
[1] পূর্বে হা-মীম সিজদার ৯ আয়াতে উল্লেখ হয়েছে যে, خلق (সৃষ্টি করা) এক জিনিস এবং دحى (সমতল, বিস্তৃত ও বাসোপযোগী করা) করা অন্য এক জিনিস। পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে আকাশের পূর্বে। কিন্তু তাকে বিস্তৃত করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পর। এখানে সেই তত্ত্বই বর্ণিত হয়েছে। সমতল ও বিস্তৃত করার মানে হল, পৃথিবীকে সৃষ্টির বাসোপযোগী করার জন্য যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। যেমন, যমীন থেকে পানি নির্গত করলেন অতঃপর তা হতে নানা খাদ্যসামগ্রী উৎপন্ন করলেন। পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ মজবুতভাবে যমীনে গেড়ে দিলেন যাতে যমীনটা না হিলে। যেমন, আগামী আয়াতসমূহে এর বর্ণনা রয়েছে।
তাহলে এখন প্রশ্ন হল যে , তাহলে পৃথিবীকে সমতল না বলা হলে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন ,
⦁ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
⦁ তিনি যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাতকে দিনের উপর এবং দিনকে রাতের উপর জড়িয়ে দিয়েছেন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন সূর্য ও চাঁদকে। প্রত্যেকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলছে। জেনে রাখ, তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।
উপরের আয়াতটিতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হলো “يُكَوِّرُ”। যার অর্থ কোন জিনিসকে প্যাঁচানো বা জড়ানো, যেমনটা মাথার পাগড়ির ক্ষেত্রে বুঝানো হয়। অবিরত প্যাঁচানোর পদ্ধতি- যাতে এক অংশ আরেক অংশের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। আমরা ভালোভাবেই জানি, পাগড়ি কিভাবে গোলাকারভাবে প্যাঁচানো হয়। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, রাত ধীরে ধীরে ক্রমশ দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিনও ধীরে ধীরে রাতে রূপান্তরিত হয়। আপনাদের কি মনে হয় যে , একটি সমতল কোন জিনিসকে পাগড়ির মত গোলাকারভাবে প্যাঁচানো যেতে পারে ? নিশ্চয়ই না । পৃথিবী গোলাকার হলেই এমনটা সম্ভব । [ 8 ]
এই ব্যাপারে আরও বহু আলেম উলামাদের ফতুয়া আছে যারা পৃথিবীর আকৃতি এপোলো মিশন সম্পন্ন হবার আগেই ফতুয়া দিয়ে গেছেন পৃথিবীর আকৃতির সম্পর্কে । এবং স্বয়ং ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য আছে যিনি আজ থেকে প্রায় ৭৫৬ বছর আগের ।
Imam Abu’l-Husayn Ahmad ibn Ja‘far ibn al-Munaadi narrated from the prominent scholars who are well known for knowledge of reports and major works in religious sciences, from the second level of Ahmad’s companions, that there was no difference of opinion among the scholars that the sky is like a ball.
He said: Similarly they were unanimously agreed that the Earth, with all that is contains of land and sea is like a ball. He said: That is indicated by the fact that the sun, moon and stars do not rise and set over those who are in different parts of the earth at the same time; rather that occurs in the east before it occurs in the west.
দলিলঃ End quote from Majmoo‘ al-Fataawa (25/195)
এখানে ইবনে তাইমিয়া বলছেন যে, পৃথিবী হল অনেকটা বলের মত এবং এর বায়ুমণ্ডলও তাঁকে আবৃত করে রেখেছে
এছাড়া ৬০০ - ৭০০ বছর আগের স্কলার রা বলেছেন যে , পৃথিবী হচ্ছে ডিমের মত
আবু মুহাম্মাদ ইবনে আযাম বলেন পৃথিবী হল অনেকটা গোল
দলিলঃ End quote from al-Fasl fi’l-Milal wa’l-Ahwa’ wa’l-Nihal (2/78)
Because the Earth is huge and its curvature cannot be seen from a short distance, it appears to be spread out and one cannot see anything that would make one fear living on it, but this does not contradict the fact that it is round, because it is very big. However they say that it is not evenly round; rather it is indented or pushed in at the north and south poles. Hence they say that it is egg-shaped.
দলিলঃ End quote from Fataawa Noor ‘ala ad-Darb
Thus it is known that the Earth is round, and that is not contradicted by the fact that it is like an egg. Rather the false view is that which claims that it is flat, as the Church used to believe and for that reason used to curse and burn those scientists who said that it was round.
দেখুনঃ al-‘Almaaniyyah: Nash’atuha wa Tatawwuruha (1/130)
আল্লাহ আরও বলেন ,
⦁ “আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে ‘অর্ন্তদৃষ্টি-সম্পন্নগণের’ জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে।” [ 9 ]
⦁ “নিশ্চয়ই মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং ‘রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে’ জ্ঞানবান লোকদের জন্য।” [ 10 ]
আল্লাহ্ কেন বললেন অন্তর্দৃষ্টির কথা? কেন বললেন না বাহ্যিক দৃষ্টির কথা? আমরা বাহ্যিকভাবে দেখি, সূর্য উদিত হয় বা অস্ত যায়। আসলেই কি তাই? ‘রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে’- কি এমন ‘বিশেষ’ জিনিস রয়েছে যাতে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দিতে হবে? অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখার আর পাগড়ির মত প্যাঁচানোর কথা বলে এখানে ইঙ্গিতে পৃথিবীর স্ফেরিক্যাল শেপ এবং ঘূর্ণায়মানতার কথা বলা হয়েছে।
এখন আমরা সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারি যে , কুরআনে পৃথিবীকে সমতল বলা হয়নি বরং গোলাকার ই ইঙ্গিত করা হয়েছে । আশা করি উত্তর পেয়েছেন ।
এখন আমরা সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারি যে , কুরআনে পৃথিবীকে সমতল বলা হয়নি বরং গোলাকার ই ইঙ্গিত করা হয়েছে । আশা করি উত্তর পেয়েছেন ।
তথ্যসূত্রঃ
1. সুরা আয যারিয়াত আয়াত ৪৮
2. তাফসীর ইবনে কাসির / সুরা আয যারিয়াত আয়াত ৪৮
3. তাফসীর আল কুরতুবি , ফাতহুল মাজিদ / সুরা আয যারিয়াত আয়াত ৪৮
4. সুরা তহা আয়াত ১০৬
5. সূরা ইন্শিক্বাক্ব আয়াত ৩
6. Mokrane Guezzou, Pg. 835, Tafsir Ibn Abbas Great Commentaries on the Holy Quran, ISBN 9781891785177
7. https: //www.nasa.gov/topics/earth/features/earth20110816.html
8. Wikitionary / كور
9. সুরা নুর আয়াত ৪৪
10. সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৯০
2. তাফসীর ইবনে কাসির / সুরা আয যারিয়াত আয়াত ৪৮
3. তাফসীর আল কুরতুবি , ফাতহুল মাজিদ / সুরা আয যারিয়াত আয়াত ৪৮
4. সুরা তহা আয়াত ১০৬
5. সূরা ইন্শিক্বাক্ব আয়াত ৩
6. Mokrane Guezzou, Pg. 835, Tafsir Ibn Abbas Great Commentaries on the Holy Quran, ISBN 9781891785177
7. https: //www.nasa.gov/topics/earth/features/earth20110816.html
8. Wikitionary / كور
9. সুরা নুর আয়াত ৪৪
10. সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৯০
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.