হিজাবের নামে জালিয়াতি

হিজাবের নামে জালিয়াতি, উম্মাহর নারীদের বর্তমান ফ্যাশন এবং রাসুল (সাঃ) এর ভবিষ্যতবাণীর বহিঃপ্রকাশ!!!

বোরকা পড়ে চুল খোলা রাখলে যেমন পর্দা হয়না ঠিক তেমনি তথাকথিত হিজাব পড়ে আঁটসাঁট পোষাক পরিধান করলে তাকে পর্দা বলা যায় না। নাউজুবিল্লাহ!!!

ইহুদী-নাসারাদের ফাদে পড়ে উম্মাহর নারীরা এখন গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করছে। তারা যাকে ইবাদত বলছে বা পর্দা বলছে তাকেই আমরা বিনাধিদ্ধাই ইবাদত মনে করছি। আঁটসাঁট পোষাক এবং মাথায় উটের কুজের মত চুল বেধে এক টুকরো কাপড় প্যাঁচানোকে উম্মাহর নারীরা এখন পর্দা মনে করছে। দাজ্জালের প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে মুসলিম নারীদের বেপর্দা করে ঘর থেকে বের করা। এসব নারীরাই দাজ্জালের অন্যতম অনুসারী হবে। তাই মডার্ন হিজাবের নামে উম্মাহর নারীদের পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ফ্যাশনের নামে এই তথাকথিত হিজাব। উড়বে নারী, ভাসবে নারী, পন্য হবে নারী এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের বেশ্যা বানানোয় ইহুদী-নাসারা তথা দাজ্জালের এজেন্টদের প্রধান কাজ। পশ্চিমাদের তথাকথিত নারীর ক্ষমতায়নের ধোঁকায় পড়ে মুসলিম নারীরা ইসলামি পদমর্যাদা ভুলে যাচ্ছে। এখন তারা মডার্ন হিজাব পরিধান করে নাচে, গায়, সাতার কাটে এমনকি ফুটবল বা ক্রিকেট মাঠে দাপিয়ে বেড়ায়।

আবু সাঈদ (রাযি) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সাঃ) বলিয়াছেন, "তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করবে প্রতি গজে গজে এবং প্রতি বিঘতে বিঘতে। এমনকি তারা যদি গুই সাপের গর্তেও প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)! আপনি কি ইহুদী ও নাসারাদের কথা বলছেন? তিনি বললেন, তবে আর কার কথা? বূখারী।

হে উম্মাহর বোনেরা!!! আপনি এক টুকরো কাপড় মাথায় পেছিয়ে মনে করছেন ইসলামের ফরজ বিধান পর্দা সঠিকভাবে করছেন কিন্তু এই পর্দা করা আর না করার মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি???

আল্লাহ বলেন, "হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। সূরা আহযাব-৫৯।

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমন্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে। ফাতহুল বারী ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪।

ইবনে সীরিন বলেন, আমি (বিখ্যাত তাবেয়ী) আবীদা (সালমানী রাহ.) কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কাপড় দ্বারা মাথা ও চেহারা আবৃত করবে এবং এক চোখ খোলা রাখবে।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, "তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ"। সূরা আহযাব-৫৩।

এই আয়াত থেকেও বোঝা যায়, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দা-বিধানের বাইরে নয়। উম্মুল মুমিনীনগণের আমলও তা প্রমাণ করে।

মুমিন নারীদেরকে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, "(হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে"। সূরা নূর-৩১।

এই আয়াত অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা অপরিহার্য।

"তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। ..."। সূরা নূর-৩১।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির নারীদের প্রতি দয়া করুন। আল্লাহ তায়ালা যখন উক্ত আয়াত নাযিল করলেন তখন তারা নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করেছিলেন। সহীহ বুখারী-৭০০।

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা’ অর্থ তারা মুখমন্ডল আবৃত করেছেন। ফাতহুল বারী ৮/৩৪৭

আল্লামা আইনী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা বিহা’ অর্থাৎ যে চাদর তারা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন তা দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল আবৃত করলেন। উমদাতুল কারী ১৯/৯২।

আল্লামা শানকীতী রাহ. বলেন, এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, উপরোক্ত মহিলা সাহাবীগণ বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মুখমন্ডল আবৃত করারও আদেশ করেছেন। তাই তারা আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালনার্থে নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল আবৃত করেছিলেন।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে। আলমুজামুল আওসাত, তবারানী।

উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা (রা.) ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?! তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না? সুনানে আবু দাউদ-৪১১২; জামে তিরমিযী-২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ-২৯৬; শরহুল মুসলিম, নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, আমরা যখন রাসূল (সাঃ) এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।-মুসনাদে আহমাদ-৩০; ইবনে মাজাহ-২৯৩৫।

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা আবশ্যক।

আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত করে রাখতাম। ...-মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, সাহাবা-যুগের সাধারণ মহিলারাও গায়র মাহরাম পুরুষ থেকে নিজেদের চেহারা আবৃত করতেন। কারণ আসমা বিনতে আবি বকর (রা.) এখানে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। যা প্রমাণ করে উম্মুল মুমিনগণ ছাড়া অন্য নারীরাও তাদের মুখমন্ডল আবৃত রাখতেন।

ফাতিমা বিনতে মুনযির (রাহ.) বলেন, আমরা আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম। মুয়াত্তা, ইমাম মালেক-৩২৮; মুসতাদরাকে হাকেম-৪৫৪।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে ইহাই পরিস্কার হয়ে যায় যে, নারীদের মুখমণ্ডলও পর্দার ভিতরে। বর্তমানে মাথায় পট্টি বেধে আঁটসাঁট বোরকা পড়ে যে ফ্যাশন দেখা যাচ্ছে তাকে কোনভাবেই পর্দা বলা যাবেনা। বর্তমান হিজাবের নামে যে জালিয়াতি শুরু হয়েছে তা পর্দার নামে পুরুষদের সুড়সুড়ি তথা আকর্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই সকল নারীদের পরিনতি সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "দু শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামে যাবে, যাদের আমি এখনো দেখি নি। (অর্থাৎ নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে তাদের আত্মপ্রকাশ হয় নি)। এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মত লাঠি। এরা তা দিয়ে জনগণকে প্রহার করবে এবং ঐ সকল জামাকাপড় হীন বা ছোট ছোট জামাকাপড় পরা নারী যারা (নিজেদের চলাফেরা ও বেশ-ভূষায়) মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথায় উটের মত উঁচু এবং একপাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো কেশ রাশি শোভা পাবে। এসমস্ত নারী জান্নাতে তো যাবেই না বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ এত এত দূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।” সহীহ মুসলিম-২১২৮।

হে সম্মানিত মা-বোনেরা!!! আপনিই কি সেই নারী নন যার কথা প্রানপ্রিয় রাসুল (সাঃ) ১৪৫০ বছর আগে বলে গেছেন???

আপনার পরিধান করা কাপড় এবং মাথায় বাধা চুলের সাথে মিলিয়ে দেখুন আর পরকালের পরিনতির কথা চিন্তা করতে থাকুন!!!

হে আল্লাহ!! উম্মাহর নারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন।





No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.