কল্পনা করুন!

কল্পনা করুন!

কল্পনা করুন যে একটি স্যাটালাইট ফোন (১) সমুদ্রে ভেসে আসল একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের উপকূলে। এখানে বসবাসকারী গোত্র কখনোই আধুনিক সভ্যতার সংস্পর্শে আসে নি। গোত্রের কিছু লোক ডায়াল প্যাডের নাম্বার টেপাটিপি শুরু করল। নির্দিষ্ট সিকুয়েন্সের নাম্বার চাপতেই তারা বিভিন্ন কণ্ঠ শুনতে পেল। প্রথমে তারা মনে করেছিল এই যন্ত্রটিই এমন শব্দ তৈরি করছে। গোত্রের আরেকটু বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা, মানে গোত্রের বিজ্ঞানী আর কি, তারা ঠিক একই রকম একটা যন্ত্র তৈরি করে ফেলল এবং আগের সিকুয়েন্সগুলো অনুযায়ী নাম্বার চাপল। এবারও তারা ঠিক একই কণ্ঠগুলো শুনতে পেল। তাদের কাছে (এখন) বিষয়টি পরিষ্কার। কাঁচ, ধাতু আর রাসায়নিক পদার্থের এই বিশেষ সমন্বয়ই মানুষের কণ্ঠের মত শব্দ তৈরি করছে। এর মানে হল, এই কণ্ঠগুলো কেবলই যন্ত্রটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু গোত্রের প্রাজ্ঞ ঋষি বিজ্ঞানীদের আলোচনার জন্য ডেকে বসল। সে ব্যাপারটা নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে গভীর চিন্তাভাবনা করেছে। তার সিদ্ধান্ত হলো: যন্ত্রের ভেতর থেকে আসা কণ্ঠগুলো অবশ্যই তাদের মত কোন মানুষের, যারা প্রাণ ও চেতনাসম্পন্ন যদিও তারা অন্য কোন ভাষায় কথা বলছে। তাই কণ্ঠগুলো কেবলই এই যন্ত্রটির বৈশিষ্ট্য এই অনুমান করার বদলে তাদের এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা উচিত যে কোন রহস্যময় যোগাযোগব্যবস্থার মাধ্যমে তারা অন্য কোন মানুষের সংস্পর্শে এলো কিনা। হয়তো এ পথে গবেষণা করার মাধ্যমে তারা তাদের দ্বীপের সীমার বাইরে আরও বড় পরিসরে এই পৃথিবীকে অনুধাবন করতে পারবে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ঋষির কথা পুরোপুরি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল: দেখো, যখন এই যন্ত্রটাকে আমরা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ফেলব, কণ্ঠগুলো আসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই, নি:সন্দেহে লিথিয়াম ধাতু, সার্কিট বোর্ড ও আলো নি:সরণকারী ডায়োড এর অসাধারণ সমন্বয়ের ফলে শব্দগুলো তৈরি হয়েছে। এর বাইরে কিছুই নেই।
এই গল্প থেকে আমরা বুঝতে পারি আগে থেকে মাথায় ঢুকে থাকা তত্ত্বগুলো কত সহজে আমাদের তথ্যপ্রমাণ (Evidence) দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে দেয়, তথ্যপ্রমাণ আমাদের তত্ত্বগুলোকে গড়ে তোলার বদলে। তাই একটি কোপার্নিয় লাফ হাজারো টলেমিয় এপিসাইকেল দ্বারা বাধার সম্মুখীন হয়। (২) এবং এতে আমার মতে অদ্ভুত বিপদ রয়েছে, তা হলো ধর্মে পরিণত হওয়া নাস্তিক্যবাদের সর্বজনিক ক্ষতি। যেমন এই উক্তিগুলো বিবেচনা করুন: "আমাদের এই ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া উচিত নয়, এটা কীভাবে সম্ভব যে মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল; এটা অস্তিত্বশীল, ব্যাস এতটুকুই যথেষ্ট।" অথবা "যেহেতু আমরা প্রাণের উৎস হিসেবে অতিপ্রাকৃত কিছু মেনে নিতে পারি না, তাই আমরা অসম্ভবকে বিশ্বাস করব বলে বেছে নিই: আর তা হল প্রাণ আকস্মিকভাবে জড় পদার্থ থেকে উৎপত্তি হয়ে গেছে"


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.