আল্লাহ্‌ যে আছে আমাকে তার প্রমান দেন মুমিন ?

প্রশ্নঃ আল্লাহ্‌ যে আছে আমাকে তার প্রমান দেন মুমিন।
লিখেছেনঃ মোঃ নাসির শেখ 

#Ans:
আপনি যে কাজ সম্পাদন করতে চেয়েছিলেন তাকে ইসলামি ভাষায় যিনা করা (বড় ধরণের গোনাহ) বলা হয়। সে ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা করাটা কি বোকামির পরিচায়ক নয়? যিনা করার অনুমতি চেয়ে এক ব্যক্তির রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে অনুমতি চাওয়ার একটি ঘটনা আছে। 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে তো শুধু সৎকাজেরই অনুমতি চাওয়া যায়। অসৎকাজের অনুমতি চাওয়ার কল্পনাও করা সম্ভব নয়। কিন্তু এক যুবক তাই করল। সরাসরি নবীজীর কাছে এসে ব্যভিচারের মত জঘন্য অপরাধের অনুমতি চেয়ে বসল। যুবক এসে বলল, আমাকে যিনার অনুমতি দিন। অন্যরা ধমকাতে লাগল- এই তুমি কার সামনে কী বলছ? চুপ কর! নবীজী ধমক দিলেন না। কাছে ডেকে নিলেন।
বললেন,

-তোমার মায়ের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কক্ষনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না।

-কোনো মানুষই তার মায়ের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। তোমার মেয়ের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কক্ষনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না।
-কোনো মানুষই তার মেয়ের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। তোমার বোনের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কক্ষনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না।
-কোনো মানুষই তার বোনের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। তোমার ফুফুর সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?
-আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কক্ষনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না।

-কোনো মানুষই তার ফুফুর সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। তোমার খালার সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-আল্লাহ্র কসম, আপনার উপর জান কোরবান হোক! কক্ষনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না।

-কোনো মানুষই তার খালার সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। নবীজী তাকে আরো কাছে টানলেন। তার গায়ে হাত রেখে দুআ করে দিলেন-
اللهُمّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ.

আল্লাহ! আপনি তার গুনাহ ক্ষমা করে দিন। হৃদয়টা পবিত্র করে দিন। লজ্জাস্থানকে (অন্যায় কাজ থেকে) হেফাজতে রাখুন।
বর্ণনাকারী আবু উমামা রা. বলেন, এরপর সে আর কোনোদিন ব্যভিচারের দিকে ফিরেও তাকায়নি। [মুসনাদে আহমদ ৫/২৫৬-২৫৭ ]

অর্থাৎ, নবীজী তার মানসিকতার পরিশোধন করলেন- নিজের মা-বোন, মেয়ে, খালা-ফুফুর জন্য যা তোমার পছন্দ নয়, অন্যের মা-বোন, মেয়ে, খালা-ফুফুর সাথে তা কীভাবে পছন্দ করবে?

ভাবতে কি পারেন আপনার মায়ের সাথে (আপনার বাবা ব্যাতিত) যেকোন পুরুষকে? কি রক্ত গর্জে উঠলো? কি ইচ্ছে করছে? তাকে ছিড়ে ফেলতে? আপনার মাকেও ঘৃণা করতে ইচ্ছে হচ্ছে?

এখন হয়তো আসিফ মহিউদ্দিনদের মত তর্কে জিততে বা উদারতা দেখাতে গিয়ে বলবেন, রাজি থাকলে বা মতের মিল হলে তারা (আপনার স্বজনেরা) যিনা করতে পারবে? ভাই বলা সহজ, বাস্তবে কোন সুস্থ-স্বাভাবিক এমনটি মানুষ চাইতে পারেনা। যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বাস্তবতার নিরীখে বুঝিয়েছেন। এগুলো মানুষের জন্য, বোধদয়ের জন্য যথেষ্ট। আর অন্যথায় (মানুষ ব্যতিত পশু হলে) ভিন্ন কথা।

আপনি না হয় উদারতার শিক্ষায়, মুক্তমনা হয়ে উপভোগ করলেন বা মেয়েটিকে উপভোগ করতে চাইলেন তার অনাগত শিশু বড় হলে কি মেনে নিতে পারবে তার মায়ের জন্য এমন অতীত ইতিহাস?

যিনা বা ব্যভিচারের ফসল (নবজাতক বাচ্চা) আজ ড্রেন, নর্দমা, জানালা, টয়লেট ইত্যাদিতে দেখতে পাই। এমনটি কি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে কাম্য হতে পারে? এখন তো সন্দেহ হচ্ছে আপনার ব্যাপারে! কিছু মনে করবেন না যেনো আবার।
এমন অমানবিক ও পাশবিক কাজ করতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করছেন সাথে কোন কারণে তা আপনার প্রতিকূলে যাওয়ায় তার (আল্লাহর) অস্তিত্ব অস্বীকার করতেছেন। এও বললেন যে "মুমিন তোমার আল্লাহ যদি থেকেই থাকবে তাহলে কেন আমার কথা রাখলো না?কোথাই তোমার আল্লাহ?

আমার প্রিয়ার যদি কিছু হই তাহলে বুঝবো আসলেই আল্লাহ নাই, মহাশক্তিকে তোমরা কল্পনা করো শুধু শুধু। তোমার আল্লাহ যে আছে এর প্রমান দেখাউ।।"

এখানে আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, আল্লাহ কি আপনাকে কথা দিয়েছেন আপনার প্রেম রক্ষা করার? উত্তর যদি না হয় তবে কেন কথা না রাখার প্রশ্ন? আল্লাহ তার অস্তিত্ব প্রমানের জন্য কাউকে কোন কথা দিয়ে রাখেন নাই। নিদর্শনসমূহ দেখতে বলছেন যা আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমানের যথেষ্ট। আমার আপনার মত যদু-মধু আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করলে কিচ্ছু এসে যায় না। তিনি পুরো দুনিয়াকে মাছির ডানার সমানও মূল্য দেন না। সেখানে আমি আপনি তো কিছুই না। আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে পেলে বা তার দেখা পেলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষ ফেরেস্তাদের মত হয়ে যেত। নিজস্ব বিচার-বিশ্লেষণ কাজে লাগাইতো না, সর্বদা আল্লাহর হুকুম পালন করতে ব্যস্ত হয়ে পরতো। অন্যদিকে নিজের ইচ্ছা বিলীন হয়ে যেত। কেন ব্যস্ত হয়ে পরতো যেহেতু আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেছে ও নিজ কর্ণে তার হুকুম শুনছে। একটা উদাহরণ দিই-

আমাদের সম্মানীত শিক্ষক বা শিক্ষকেরা কোন কাজের অর্ডার দিলে সেই কাজকে অনেকগুণে ভালো কাজ ও সম্মানের মনে করে তা এমনভাবে পালন করি যেন অন্যদিকে তাকানোর সময় থাকে না। আর যদি প্রধানমন্ত্রী এসে বলে তাহলে তো কথাই নেই। আল্লাহ তো ইনাদের থেকেও অনেক বেশী মর্যাদাবান। একইভাবে যদি আল্লাহ সরাসরি বলতেন তবে কি হত? কোন স্বাধীনতা থাকতো কি? নিজস্ব জ্ঞান ও বিবেক কাজে লাগানোর সুযোগ থাকতো কি? না, সোজা ফেরেস্তাদের মত চোখ-কান বুজে কাজ করতে হত। তাহলে আমার জ্ঞান বুদ্ধির বিচার করার কোন পথ খোলা থাকতো না। যেহেতু নিজের সিদ্ধান্তে কিছুই করা হত না সেহেতু মন্দ কোন কিছুই হত না। মন্দ জিনিস না থাকলে ভালোর অস্তিত্ব বোঝা যেত না। মোট কথা ব্যক্তির নিজস্ব অবস্থা (ভালো/মন্দ) পাওয়া যেত না। যা পাওয়া যেত তা বাধ্য হয়ে করা কৃতকাজ (আল্লাহর হুকুমে ও অবশ্যই ভালো)। অন্ধকার আছে বলেই আলোর প্রয়োজন পরে। নাহলে আলোর অস্তিত্ব উপস্থিত সত্ত্বেও কেউ তা অনুধাবন করতে পারতাম না।

আপনার লেখা পড়ে যা বুঝতে পারলাম তাহলো আপনি প্রেমিকাকে হারিয়ে চরম হতাশার ভেতর আছেন। হতাশা থেকে বের হয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। বেশী চাপ নেয়ার প্রয়োজন নেই। সবকিছু ভালোভাবে ফেস করুন। দেখবেন (ভিন্ন উপায়ে হলেও) সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.