ইসলামের সত্যতার প্রমান কি ?

ইসলামের সত্যতার প্রমান( পর্ব ১) সংগৃহিত পোস্ট।
ধারাবাহিক ৩ টি পর্ব দেখব।


*************************************
কুরআনের সাইন্টিফিক মিরাকলগুলো
আগেই বলে নিচ্ছি, কুরআন কোন বৈজ্ঞানিক
(scientific) গ্রন্থ নয়। বরং এটি হল আল্লাহর কিছু
Signs এর কিতাব। এখানে কথা প্রসঙ্গে কিছু
বৈজ্ঞানিক তথ্য এসেছে মাত্র। সেগুলোই আমরা
এই লেখাতে উল্লেখ করছি। আর সুপারফিসিয়াল
সাইন্টিফিক ব্যাপার, যা বুঝা একটু কষ্টকর, এমন
প্রুফগুলো এই লেখাতে উল্লেখিত হয়নি, শুধু
কংক্রিট ক্লিয়ার প্রুফগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে।
শুরু করা যাক-
এক
আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এই ইউনিভার্স
(মহাবিশ্ব) সুস্থির, মানে তারকাগুলো নিজ নিজ
অবস্থানে ফিক্সড। ১৯২৯ সালে এডউইন হাবল,
সর্বপ্রথম তার অবসারভেশন হতে ডিসকভার করেন,
যে এই ইউনিভার্স প্রতিনিয়ত এক্সপান্ড অর্থাৎ
সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার মানে প্রতিটা তারকা প্রতিনিয়ত
অন্য তারকাগুলো হতে দূরে সরে যাচ্ছে, একটা
ফুটকিওয়ালা বেলুন ফুলালে এর ফুটকিগুলো
যেভাবে পরস্পর হতে দূরে সরে যায় ঠিক
সেভাবে। কিন্তু আলবার্ট আইনস্টাইন সহ সমসাময়িক
বিজ্ঞানীরা হাবলের রিসার্চকে মেনে নিতে
পারেন নি।
পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে বিজ্ঞানী আর্নো
পেনজিয়াস এবং রবার্ট উইলসন ‘কসমিস
মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড
রেডিয়েশন’ (সংক্ষেপে CMB[১]) আবিষ্কার
করেন।এই CMB radiation থেকে তারা খুব
সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দেন যে মহাবিশ্ব
ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে[২], সমগ্র বিশ্ব তাঁদের
এই আবিষ্কারকে মেনে নেয়। ১৯৭৮ সালে তারা
এজন্য নোবেল প্রাইজও পান। এখন দেখুন,
কুরআন এ ব্যাপারে কি বলছে-
সূরা দারিয়াত(৫১), আয়াত ৪৭
And the heaven We constructed with
strength,
and indeed, We are [its] expander. [Sahih
International]
AND IT IS We who have built the universe
with
[Our creative] power; and, verily, it is We who
are steadily expanding it. [Muhammad Asad]
আমিই স্বীয় ক্ষমতাবলে মহাবিশ্ব নির্মাণ করেছি
এবং আমিই এর সম্প্রসারক। [বঙ্গানুবাদ]
[আরবীতে ‘আমি’ এই কথাটার উপর জোর দিলে
‘আমরা’ (প্লুরাল ) ব্যবহৃত হয়। এর প্রকৃত অর্থ
‘আমরা’ নয়, প্রকৃত অর্থ হল ‘আমিই’, একারণে
ইংরেজী আক্ষরিক অনুবাদে ‘We’ বা ‘আমরা’
ব্যবহৃত হয়েছে]
মানে ১৪০০ বছর আগে কুরআন বলে দিয়েছে,
মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।
দুই
এখন চিন্তা করুন, যে যদি মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত
হতে থাকে, তাহলে অতীতে কি অবস্থা ছিল?
অতীতে নিশ্চয় তারকাগুলো পরস্পরের অনেক
কাছে ছিল, রাইট? তারও অতীতে, আরও কাছে …
এভাবে চিন্তা করলে আপনি বুঝে যাবেন যে
আসলে সকল তারকাপুঞ্জ আসলে একটি একক
পদার্থ ছিল, এবং সেই একক পদার্থটি সম্প্রসারিত
হয়েই আজকের এই মহাবিশ্ব হয়েছে। এটাই
আসলে বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব, যেটাতে আজকালকার
পদার্থবিদরা ভরসা রাখেন। ভালভাবে বুঝতে দেখুন-
space.com ও big-bang-theory.com
এবার অবাক হয়ে দেখুন, কুরআন কি বলছে-
সূরা আম্বিয়া(২১), আয়াত ৩০
Have those who disbelieved not considered
that the heavens and the earth were a joined
entity, and We separated them and made from
water every living thing? Then will they not
believe? [Sahih International]
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে,
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী একক বস্তু ছিল, অতঃপর
আমি উভয়কে আলাদা করলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু
আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস
স্থাপন করবে না? [বঙ্গানুবাদ]
দেখুন, সমগ্র মহাবিশ্ব যে একটি একক বস্তু ছিল তা
কুরআন উল্লেখ করেছে ১৪০০ বছর আগে।
এমেইজিং নয়কি?
আরও একটা ব্যাপার, যেকোন লিভিং অবজেক্ট
‘কোষ’ দ্বারা গঠিত এবং কোষের ৭০-৮০ ভাগই পানি।
তার অর্থ প্রাণবন্ত সবকিছুই আসলে পানি দ্বারা সৃষ্টি,
তাইনা? এই কথাটাও এই আয়াতে বলে দেয়া
হয়েছে: “প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি
করলাম।”
এখন চিন্তা করুন, যদি মুহাম্মদই (সঃ) কুরআন লিখে
থাকবেন, তাহলে তিনি কেন মরুভূমিতে বসে
মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে কি হচ্ছে না, মহাবিশ্ব
একক বস্তু ছিল কি ছিল না তা চিন্তা করতে যাবেন?
আর তা কেনই বা ক্বুরআনে উল্লেখ করতে
যাবেন, আর তা কেনই বাস্তবতার সাথে এভাবে
মিলে যাবে?
যারা নাস্তিক তারা বলবে মুহাম্মদ (সঃ) ঝড়ে বক
মারছে। আচ্ছা, ঠিক আছে, তাহলে সামনে আগাই …
[এখানে আর একটি প্রশ্ন আসতে পারে, সেটা হল,
বর্তমান কুরআন কি সেই কুরআন যা মুহাম্মদ (সঃ) এর
উপর নাযিল হয়েছিল? নাকি তাতে অন্যকারও হাত
পড়েছে? এর উত্তরে কুরআন সংরক্ষণের
ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। আসলে
মুহাম্মদ (সঃ) এর সময় থেকেই কুরআনের
সূরাগুলো লিখে রাখা হয়েছিল, পাতায়, চামড়ায় বা অন্য
কোন লিখনীয় বস্তুতে। (তখন কাগজ ছিল না)।
পরবর্তীতে ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান(রা)
এর আমলে একটি পূর্ণাঙ্গ কুরআন লিখে তার কপি
তৈরী করে সাম্রাজ্যের সকল জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া
হয়। অধুনা উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দে
এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুলে কুরআনের সেই
এনশিয়েন্ট কপি পাওয়া গেছে এবং তা বর্তমান
কুরআনের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়েছে, কোন
পার্থক্য পাওয়া যায় নি, সবই আইডেন্টিকাল। এছাড়াও শুরু
থেকেই মুসলিমরা কুরআন সম্পূর্ণ মুখস্থ করে
রাখার অভ্যাস রপ্ত করেছে। কাজেই কুরআন বিকৃতির
কোন সম্ভাবনা নেই। [দেখুন: tripod.com ]
তিন
আমরা কি জানি, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে লোহা
ব্যবহার করি তার উৎস কি? সূর্য? না, পৃথিবী বা অন্য
কোন গ্রহ বা সূর্যে এই লোহা তৈরী হয়নি। কারণ,
অধুনা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে নিউক্লিয়ার ফিউশন
বিক্রিয়ার মাধ্যমে আয়রণ তৈরী হতে কয়েকশ
মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা লাগে, যেখানে
সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাত্র ৬০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
এবং সূ্র্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা মাত্র ১৫ মিলিয়ন
ডিগ্রি সেলসিয়াস। একারণে এই সৌরজগতে থাকা
আয়রন এই সৌরজগতে তৈরী নয়।
মূলত, আয়রণ তৈরী হতে দরকার সূর্যের থেকে
বড় গ্রহ যা আরো বেশী উচ্চ তাপমাত্রা
একোমডেট করে। যা একসময় রেড জায়ান্ট,
এরপর ডোয়ার্ফ, এরপর রেড সুপার জায়ান্ট, এরপর
নোভাতে পরিণত হয়। এই নোভা স্টেজ এই
ফিউশন বিক্রিয়ায় আয়রণ তৈরী হয়। এই নোভা
একসময় বিস্ফোরিত হয় এবং তাতে উৎপন্ন লৌহ
আউটার স্পেস এ মেটিওর আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
যে কারণে আর্কিওলোজিস্টদের ধারণায়
পৃথিবীতে থাকা লোহা পৃথিবীর নিজস্ব নয়। বরং
আউটার স্পেস থেকে বিভিন্ন লৌহ মিটিওর (উল্কা)
পৃথিবীতে আসার কারণে আমরা এখন লৌহ পাচ্ছি। তার
মানে, বিজ্ঞান বলে যে লৌহ বা আয়রণ পৃথিবীর
বাহির থেকে এসছে, তাইনা? দেখুন-
elnaggarzr.com ও miraclesofthequran.com
এখন দেখুন কুরআন কি বলছে-
সূরা হাদীদ(৫৭), আয়াত ২৫
And We sent down iron, wherein is great
military might and benefits for the people.
[Sahih International]
আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে
প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার।
[বঙ্গানুবাদ]
এই আয়াতগুলোর বর্ণনাভঙ্গি এরকম, যে
লোহাকে উপর থেকে নাযিল করা হয়েছে। চিন্তা
করেন, ১৪০০ বছর আগে প্রকাশিত বইয়ে এসব
তথ্য কিভাবে এলো?
চার
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে পৃথিবীটা গোল।
গোল পৃথিবী নিজ অক্ষের চারিদিকে ঘুরছে। নিজ
অক্ষের চারিদিকে ঘুরার সময় পৃথিবীর যেই পৃষ্ঠটা
সূর্যের দিকে থাকে, সেই পৃষ্ঠে দিন থাকে, এবং
অপজিট পৃষ্ঠে রাত থাকে। পৃথিবী ঘুরতে থাকে,
আর একদিকে দিন রাতের ভিতর প্রবেশ করতে
থাকে এবং অপরদিকে রাত দিনের ভিতর প্রবেশ
করতে থাকে। এভাবে দিন-রাত ক্রমাগত পরিবর্তন
হয়। তাইনা? মূলকথা কেউ যদি না জানে যে প্রসেসটা
কি সে কিন্তু এটা বুঝবেনা, কিভাবে দিন রাত্রির
আবর্তন হয়, রাইট? দেখুন কুরআন কি বলছে-
সূরা লোকমান (৩১), আয়াত: ২৯
Do you not see that Allah causes the night to
enter the day and causes the day to enter the
night? [Sahih International]
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে
প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট
করেন? [বঙ্গানুবাদ]
সূরা জুমুর (৩৯), আয়াত: ৫
He created the heavens and earth in truth.
He
wraps the night over the day and wraps the day
over the night. [Sahih International]
তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন
যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত
করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।
[বঙ্গানুবাদ]
কুরআনের বর্ণনাভঙ্গি থেকে এটা খুব স্পষ্ট, যে
যিনি এই কিতাবের রচয়িতা, তিনি জানেন, কিভাবে দিন এবং
রাত আবর্তন করে।
পাঁচ
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, সূর্যের ভিতর প্রতিনিয়ত
নিউক্লিয়ার রিএকশন ঘটছে, এবং তার কারণে সূর্য
প্রতিনিয়ত তাপ ও আলো বিকিরণ করছে। তার মানে
সূর্যের আলো, তার নিজস্ব আলো।
কিন্তু চাঁদের যে আলো আমরা দেখি, তা আসলে
চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নয়; বরং সূর্যের
আলো চাঁদে পড়ে তা প্রতিফলিত হয় পৃথিবীতে
আসে, এবং আমরা উজ্জ্বল চাঁদ দেখতে পাই। তার
মানে চাঁদের আলো আসলে প্রতিফলিত আলো।
কুরআন বলছে-
সূরা ফুরকান(২৫), আয়াত ৬১
Blessed is He who has placed in the sky
great
stars and placed therein a [burning] lamp and
luminous moon. [Sahih International]
কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি
করেছেন এবং তাতে রেখেছেন প্রদীপ ও
দীপ্তিময় চন্দ্র। [বঙ্গানুবাদ]
সূরা নূহ(৭১), আয়াত ১৬
And made the moon therein a [reflected]
light
and made the sun a burning lamp. [Sahih
International]
এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন
আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন
প্রদীপরূপে। [বঙ্গানুবাদ]
সূরা ইউনুস(১০), আয়াত ৫
It is He who made the sun a shining light and
the moon a derived light and determined for it
phases – that you may know the number of years
and account [of time]. Allah has not created this
except in truth. He details the signs for a people
who know. [Sahih International]
তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে
উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো
বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন
এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে
পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু
এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি
প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের
জন্য যাদের জ্ঞান আছে। [বঙ্গানুবাদ]
(কুরআন সূর্যকে প্রদীপ এবং চন্দ্রকে
দীপ্তিময় /স্নিগ্ধ আলো বা ডেরাইভড লাইট
বলছে)
ইন্টারেস্টিং, তাইনা? কুরআন ভুল করছে না কোথাও,
রাইট?
ছয়
৭০ দশকের শেষ দিকের কথা, কানাডার ইউনিভার্সিটি
অব টরোন্টো’র হেড অব ডিপার্টমেন্ট অব
এ্যানাটমি হলেন ড. কিথ মূর। ওই সময় তিনি সমগ্র
দুনিয়াতে এমব্রায়োলজির (মানব ভ্রূণ বিদ্যা)হাইয়েস্ট
অথরিটির একজন। ওই সময় কিছু আরব স্টুডেন্ট,
কুরআনে বিদ্যমান এমব্রায়োলজি সংক্রান্ত
আয়াতগুলোকে জড়ো করলো এবং তা ড. কিথ
মূরের কাছে উপস্থাপন করলো।
ড. কিথ মূর কিছু কিছু আয়াতকে সঠিক বললেন, আর
কিছু আয়াতকে বললেন, “এ সম্বন্ধে আমি জানিনা।”
সেরকম একটি আয়াত হল:
সূরা আলাক (৯৬), আয়াত ১-২
Recite in the name of your Lord who created

Created man from a clinging substance. Created
man from ‘Alaqa’.
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি
করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাকা’
থেকে। [বঙ্গানুবাদ]
এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন, যে তিনি মানুষকে
আলাকা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন প্রশ্ন
হচ্ছে, আলাকা কি?
আরবীতে ‘আলাকা’ শব্দটির তিনটি অর্থ আছে। ১.
জোঁক সদৃশ বস্তু, ২. এমন কিছু যা অন্যকিছুর গায়ে
লেগে থাকে (Clinging Substance) ৩. জমাট
রক্তপিন্ড।
ড. কিথ মুর চেক করতে চাইলেন, মানব ভ্রুণ কি
জোঁকের মতন কিনা? তিনি খুব শক্তিশালী
মাইক্রোসকোপ এর নীচে মানব ভ্রুণ রেখে
পরীক্ষা করলেন; তিনি হতবাক হয়ে দেখলেন,
যে মানবভ্রুণ দেখতে হুবহু জোঁকের মতন।
নীচের ছবিতে দেখুন, জোঁক এবং মানবভ্রুণকে
একসাথে:
তার মানে মানবভ্রুণের সাথে জোঁকের এনালজিটা
এমেইজিং।
এছাড়াও ভ্রুণটি মাতৃগর্ভে খুব শক্তভাবে লেগে
থাকে, তাই এটাকে Clinging Substance বললে
অত্যুক্তি হয় না। আর ভ্রুণ জোঁকের মতই কাজ
করে, মাতৃদেহ থেকে এটা ব্লাড শোষক করে
বলে এটাকে লাল জমাট রক্তপিন্ডের মতন দেখায়।
যে কারণে এটা যদি ‘জমাট রক্তপিন্ড’ বলা হয়, তাও
ভুল নয়। তবে, ‘জোঁক সদৃশ বস্তু’ – এটা ‘আলাকা’
এর সবচে ভাল অনুবাদ।
মানব জন্মপ্রকৃয়া নিয়ে কুরআনে এত ডিটেইলস
আলোচনা একুরেটলি আছে, যে শুধু এর উপর
বেইস করেই ড. কিথ মুর বলে দেন যে কুরআন
মুহাম্মদ (সঃ) এর লিখা বই নয়, বরং এটি আল্লাহর কাছ
থেকে আসা কিতাব। ড. কিথ মুরের এ ভিডিওটি
দেখতে আমি আপনাদের বিনীতভাবে অনুরোধ
জানাচ্ছি, যেখানে তিনি খুব ডিটেইলসে কুরআনে’র
এমব্রায়োলজী নিয়ে আলোচনে করেছেন
(মাত্র এক ঘন্টার ভিডিও)।
আসুন দেখি, খুব সংক্ষিপ্তভাবে কুরআন আর কি কি
বলছে?
সূরা হাজ্জ (২২), আয়াত ৫
O mankind! if ye have a doubt about the
Resurrection, (consider) that We created you out
of dust, then out of Nutfah, then out of a Alaqa,
then out of a Mudghah, partly formed and partly
unformed, in order that We may manifest (our
power) to you;
হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের
ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি
তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি।
এরপর নুতফাহ থেকে, এরপর আলাকা থেকে,
এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মুদগাহ
থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে।
[বঙ্গানুবাদ]
[এখানে মূল অনুবাদ না লিখে আরবী আসল শব্দটি
আমি লিখেছি, আলোচনার সুবিধার্থে।]
তার মানে মানুষকে (আদম আঃ কে) প্রথমে মাটি
থেকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর আদম থেকে
আবার আদম হওয়ার প্রকৃয়ায় মানুষ প্রথমে থাকে
নুতফাহ, এরপর হয় আলাকা, এরপর হয় মুদগাহ।
এখন দেখি, নুতফাহ, আলাকা এবং মুদগাহ মানে কি?
নুতফাহ মানে Minute Quantity of fluid, বা খুব অল্প
পরিমান তরল। তার মানে এখানে মানব বীর্যের কথা
বলা হচ্ছে্। প্রথমে মানুষ হয় বীর্য। এরপর মানুষ
হয় আলাকা মানে leech like substance জোঁক সদৃশ
বস্তু। এটাকে আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এরপর
মানুষ হয় মুদগাহ যার অর্থ Chewed like lump বা
চাবানো পিন্ডের মতন।
তার মানে এখানে আলাকার পরের স্টেজ বলা
হয়েছে, তা হল মুদগাহ বা চাবানো পিন্ডের মতন।
তাহলে আমরা দেখি, মানবভ্রুণ কি সত্যি সত্যি চাবানো
পিন্ডের মতন হয়, জোঁক সদৃশ আউটলুকের
পরের স্টেজে? নীচের ছবিটা দেখুন, এটা হল
আলাকার পরের স্টেজ-
এই স্টেজটি আলাকার পরের স্টেজ, এই স্টেজে
ভ্রুণটি সত্যি সত্যি চাবানো পিন্ডের মতন আকৃতি ধারণ
করে। ভ্রূণের মেরুদন্ডটিকে আসলে দাঁতের
দাগের মতন দেখায়।
আরও ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, এই মুদগাহ স্টেজে
অরগানগুলোর কিছু কিছু ফর্ম করে, আর কিছু কিছু
ফর্ম করেনা। কুরআনে সূরা হজ্জের ৫নং আয়াতে
ঠিক সেই কথাটাই বলেছে “Mudghah, partly
formed and partly unformed” বা “এরপর
পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মুদগাহ।” (ড. কিথ
মুরের ভিডিও থেকে, দেখে নিন)
কথা হল, মুহাম্মদ (সঃ) কিভাবে জানলো যে শুরুতে
ভ্রুণ জোঁকের মতন থাকে, এরপর এটা চাবানো
পিন্ডের মতন হল? মুহাম্মদ (সঃ) কিভাবে জানলো,
যে এক্সাক্টলি মুদগাহ স্টেজেই
অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো কিছু ফর্ম করে আর কিছু ফর্ম
করেনা?
আরো দেখুন, সূরা সাজদাহ(৩২) এর ৮নং আয়াত-
And made his progeny from a quintessence
of
the nature of a fluid despised: [Yusuf Ali]
অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির
নির্যাস (সুলালা) থেকে। [বঙ্গানুবাদ]
এখানে বলা হয়েছে মানুষকে তিনি ‘তুচ্ছ পানির সুলালা’
থেকে সৃষ্টি করেছেন। সুলালা মানে হল কোন
কিছুর নির্যাস বা ‘The Best Part of a whole’। মূলত
স্পার্ম বা শুক্রাণু হল বীর্যের Best Part, এবং তা
থেকেই মানুষ জন্ম লাভ করে। এজন্য ‘তুচ্ছপানির
সুলালা’ বলতে ‘বীর্যের Best Part’ বুঝানো
হয়েছে।
প্রশ্ন হল এটা মুহাম্মদ (সঃ) কিভাবে জানলো?
তৎকালীন যুগের সাইন্স কখনওই এত এডভান্সড ছিল
না, আর খুব শক্তিশালী মাইক্রোসক্রোপ ছাড়া
যেটা উনবিংশ শতাব্দীতে এসছে এসব বের করা
কারোপক্ষেই সম্ভব না।
আরো দেখুন, সূরা আজ জুমুর (৩৯) এর ৬নং আয়াত-
He created you (all) from a single person:
then
created, of like nature, his mate; and he sent
down for you eight head of cattle in pairs: He
makes you, in the wombs of your mothers, in
stages, one after another, in three veils of
darkness. That is Allah, your Lord and Cherisher:
to Him belongs (all) dominion. There is no god
but He: then how are ye turned away (from your
true Centre)? [Yusuf Ali]
তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই
ব্যক্তি
থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি
করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার
চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি
তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের
মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ
অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা,
সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।
অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ? [ বঙ্গানুবাদ]
কুরআনে র বক্তব্য অনুসারে মাতৃগর্ভে ভ্রুণ
‘three veils of darkness’ (মানে তিনটি পর্দার
অন্ধকারে) থাকে? হ্যাঁ ব্যাপারটা এক্সাক্টলি তাই।
মাতৃগর্ভে ভ্রুণকে প্রটেক্ট করার জন্য আসলেই
এক্সাক্টলি তিনটা পর্দা থাকে-
১. ইনটেরিয়ার এবডোমিনাল ওয়াল
২. ইউটেরিয়ান ওয়াল এবং
৩. এমরিওকরিয়নিক মেমব্রেইন। (ড. কিথ মুরের
ভিডিও থেকে)
এবার আসা যাক সূরা মূ’মিনুন(২৩) এর ১২-১৪নং আয়াতে-
Man We did create from a quintessence (of
clay); Then We placed him as Nutfah in a place
of rest, firmly fixed; Then We made the Nutfah
into a Alaqa; then of that Alaqa , we made a
Mudghah ; then we made out of that Mudghah
bones( Izm) and clothed the bones with flesh
( Lahm ); then we developed out of it another
creature (Ansha) . So blessed be Allah, the best
to create! [Yusuf Ali]
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।
অতঃপর আমি তাকে নুতফাহ রূপে এক সংরক্ষিত
আধারে স্থাপন করেছি।এরপর আমি নুতফাহকে
আলাকারূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আলাকাকে
মুদগাহে পরিণত করেছি, এরপর সেই মুদগাহ
থেকে অস্থি (ইজম) সৃষ্টি করেছি, এবং অস্থিকে
মাংস (লাহম) দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে
নতুন এক সৃষ্টি রূপে (আনশা) দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। [বঙ্গানুবাদ]
এখানে মুদগাহ এর পরের স্টেজ আলোচনায়
এসছে। বাস্তবে কুরআনে যেভাবে বর্ণিত
হয়েছে সেভাবেই মুদগাহ স্টেজ শেষ হবার
পরেই হাড় (ইযম) তৈরী হওয়া শুরু হয়, (এটা হয়
৪২-৪৩ তম দিন হতে)। এবং হাড় মাংস(লাহম) দ্বারা আবৃত
হয়ে যায় (এটা শুরু হয় ৪৮-৪৯ তম দিন হতে)। এই
আয়াতের শেষে বলা হয়েছে “অবশেষে
তাকে নতুন এক সৃষ্টিরূপে দাঁড় করিয়েছি।”- এর
মানে কি?
আসলে হাড়, যখন মাংস দ্বারা আবৃত হয়ে যায়, তখন
মানুষের ভ্রুণ অন্য প্রাণীগুলোর (গরু, ছাগল,
মহিষ, বাঘ, সিংহ) ভ্রুণ থেকে দেখতে আলাদা
হয়,দেখতে মানুষের মতন লাগে, এর আগ পর্যন্ত
সব প্রাণীর ভ্রুণই এক রকম দেখতে। এজন্যই
আল্লাহ বলেছেন, “another creature” বা “নতুন
সৃষ্টি রুপে”। এমেইজিং নয় কি?
নাস্তিকরা বলতে চায় যে, মুহাম্মদ (সঃ) নাকি কোন
গ্রীক বিজ্ঞানী গ্যালেন থেকে নকল করে
এমব্রায়োলজী নিয়ে আয়াতগুলো লিখেছে।
তো, গ্যালেন কিন্তু শুধু ‘পুরুষের বীর্য’ এবং
‘মহিলাদের বীর্য’ এর মিশ্রন থেকে মানুষ হয় তা
বলেছে। এই কথা কুরআনে আছে সত্য (তর্ক
হবে বলে আমি তা উল্লেখ করিনাই)। কিন্তু মানুষ
যে জোঁকের মতন হয়, চাবানো পিন্ডের মতন
হয়- এটা মুহাম্মদ (সঃ) কিভাবে জানলো? অত্যন্ত
শক্তিশালী মাইক্রোসকোপ যা বিংশ শতাব্দীর
আবিষ্কার, তা ছাড়া তো এটা বের করা অসম্ভব। আর
ঠিক মুদগাহ স্টেজে যে মানুষের অঙ্গসমূহের কিছু
পূর্ণতা পায়, কিছু পায়না- তা মুহাম্মদ (সঃ) কিভাবে
জানলো?
ভ্রুণ যে এক্সাক্টলি তিনটি পর্দার অন্ধকারে থাকে,
তা কিভাবে জানলো মুহাম্মদ (সঃ)?
লাহম স্টেজের পর মানুষের ভ্রুণ যে ভ্রুণ অন্য
ভ্রুণ থেকে আলাদা হয়ে যায়, তা কিভাবে গেস
করলো মুহাম্মদ (সঃ)? এগুলো তো তৎকালীন
গ্রীক কেন পুরো পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানীই
জানতো না?
একমাত্র গ্রহণযোগ্য এক্সপ্ল্যানেশন হল যে,
মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রসূল, এবং মানুষের সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহ মুহাম্মদ (সঃ) এর ওহী নাযিল করেছেন।
পর্ব ০১ এখানেই শেষ হল। দ্বিতীয় পর্ব দেখার
আমন্ত্রণ রইলো; দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে
ওয়াটার সাইকেল, সমুদ্রের নীচের অন্ধকার, দুই
সমুদ্রের মাঝে অন্তরাল, পর্বতমালা
পেরেকস্বরূপ, মৌমাছির চলার পথ, আকাশ সুরক্ষিত
ছাদ, রক্ত ও গোবর হতে দুগ্ধ, আঙ্গুলের ছাপ,
চামড়ার পেইন রিসেপটার এবং ব্যাকবোন ও রিবস।
[১] http://www.aps.org/programs/outreach/
history/historicsites/penziaswilson.cfm
[২] [link| http://skyserver.sdss.org/dr1/en/astro/
universe/universe.asp| http://skyserver.sdss.org/
dr1/en/astro/universe/universe.asp
পর্ব ০২
Physics Outreach
www.aps.org


Space.com
Get the latest space exploration, innovation and astronomy news. Space.com celebrates humanity\'s ongoing expansion across the final frontier.
SPACE.COM


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.