পরিপূর্ণ পর্দা না করার পেছনে অধুনা মুসলিম নারীদের ১০টি অজুহাত

পরিপূর্ণ পর্দা না করার পেছনে অধুনা মুসলিম নারীদের ১০টি অজুহাত - পর্ব ১ (৫ টি অজুহাত)
MD SHAHID BHUIYAN·WEDNESDAY, DECEMBER 28, 2016
কেন পর্দা করেন না? প্রশ্নটি করা হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নারীদের কাছে। যেসব কারণ তারা দেখিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দশটি কারণ আমরা চিহ্নিত করেছি। চেষ্টা করেছি এগুলোর উত্তর খোঁজার। কারণগুলো নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করে আমরা খুঁজে পেয়েছি এসব অজুহাতগুলোর দুর্বলতা।
প্রিয় মুসলিম বোন, আমাদের এই গবেষণা-পুস্তিকায় আমরা গুরুত্ব অনুসারে সেসব কারণ এবং সংক্ষেপে এই কারণগুলোর ব্যাপারে আমাদের আলোচনা উপস্থাপন করেছি। যারা পরিপূর্ণ পর্দার ব্যাপারে আগ্রহী নন, কিংবা পর্দার গুরুত্ব বোঝা সত্ত্বেও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে পর্দা শুরু করতে পারছেন না আশা করি সবার জন্যই এই লেখাটি কাজে দেবে।
এক নজরে দশটি কারণ:
১. হিজাবের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নই। ২. ইসলামিক পোশাকের ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমার বাবা-মা আমাকে হিজাব পড়তে বারণ করেন। বাবা-মা’র নিষেধাজ্ঞা না মানলে আমি কি জাহান্নামে যাব না? ৩. আসলে আমি যাদের সাথে যে সমাজে চলাফেরা করি, সেখানে আমার বর্তমান ড্রেসআপ বাদ দিয়ে ইসলামিক পোশাক মেনে চলা সম্ভব না। ৪. এত গরম আমাদের দেশে, একদমই সহ্য করতে পারি না। এত গরমে কীভাবে হিজাব করব? ৫. আমার ভয় হয়, আমি হয়তো আজকে হিজাব করে কাল আবার ছেড়ে দেব। কারণ, আমি অনেককেই দেখেছি হিজাব করে আবার ছেড়ে দিতে! ৬. হিজাব করলে কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। তাই, বিয়ে করার আগ পর্যন্ত আমি হিজাব করব না। ৭. সুন্দর রেশমি চুল আর আকর্ষণীয় যে সৌন্দর্য দিয়ে আল্লাহ আমাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন আমি সেটা কীভাবে আবৃত রাখি? ৮. আমি জানি পরিপূর্ণ পর্দা বা হিজাব করা নারীদের জন্য ফরজ, তবে আল্লাহ যখন আমাকে হেদায়েত করবে আমি তখনই হিজাব করব। বা বয়স হলে হজ করার পর পর্দা করব। ১০. হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা করলে লোকজন আমার গায়ে বিভিন্ন ইসলামিক দলের তকমা লাগিয়ে দেবে। আর আমি এসব দলাদলি মোটেও পছন্দ করি না।
অজুহাত ১:
“হিজাবের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নই।”
১. এই অজুহাত যিনি দেখান, তাঁকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কি ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত?
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এর উত্তর হবে, “হ্যাঁ”। কারণ, তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য উপাসনার যোগ্য নয়। এর মানে তিনি ইসলামিক বিশ্বাসের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত। এরপর তিনি যখন বলেন, “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থাৎ মুহাম্মাদ আল্লাহর বার্তাবাহক-রাসূল। এ কথার মধ্য দিয়ে তিনি ইসলামিক শারী‘আহ ও এর বিধিবিধানের ব্যাপারেও সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস স্থাপন করেন। অতএব বলা যায়, এই কালিমা যিনি ঘোষণা করেছেন দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হিসেবে তিনি ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত। তিনি বোঝেন যে ইসলামিক জীবনব্যবস্থাই সেই জীবনব্যবস্থা যার অনুসরণে একজন মানুষের জীবনের সকল কাজ সম্পন্ন হওয়া উচিত।
২. হিজাব কি ইসলামিক বিধিবিধান তথা শারী‘আহর অংশ? আর এটা কি নারীদের জন্য খুব দরকার?
আমাদের এই বোনটি যদি নিয়্যাতের ব্যাপারে সৎ ও আন্তরিক হন এবং সত্য জানার উদ্দেশ্যে বিষয়টি বিবেচনা করেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন যে হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা অবশ্যই ইসলামিক শারী‘আহর অংশ এবং নারীদের জন্য এটা অবশ্যপালনীয়। স্রষ্টা, পালনকর্তা, প্রভু হিসেবে যে-আল্লাহকে তিনি মেনে নিয়েছেন, সেই আল্লাহই তাঁর ঐশী গ্রন্থ কুরআনে হিজাবের আদেশ দিয়েছেন। যে-নাবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কথা তিনি সত্য বলে স্বীকার করেন, সেই নাবী তাঁর সুন্নাহয় নারীদের হিজাবের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, “বিশ্বাসী মুসলিম নারীদের বলবে, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে; তাদের সতীত্ব রক্ষা করে; (মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি) বাদে তাদের দেহের অন্যান্য অংশ উন্মুক্ত না করে; চাদর দিয়ে সারা শরীর মুড়ে নেয় এবং নিজেদের স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ছেলে, সৎ ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, মুসলিম নারী, মালিকানাধীন দাসী, অধীনস্থ বৃদ্ধ এবং নাবালক শিশুদের ছাড়া অন্যদের কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” [সূরা আন-নূর, ২৪:৩১] “হে নাবী! তুমি তোমার স্ত্রী-কন্যাদের ও বিশ্বাসী মুসলিম পুরুষদের স্ত্রীদের বলো, তারা যেন নিজেদের গায়ে আবরণ টেনে দেয়। এতে তারা সম্ভ্রান্ত মহিলা হিসেবে পরিচিতি পাবে, ফলে তাদের উত্যক্ত হওয়ার আশংকা কম থাকবে।” [সূরা আল-আহযাব, ৩৩:৫৯]
সংক্ষেপে: আমাদের এই বোন যদি প্রকৃত অর্থেই ইসলামের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন, দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে আদর্শ মানেন, তাহলে তিনি কীভবে ইসলামের বিধিবিধানের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না?
অজুহাত ২:
“ইসলামিক পোশাকের ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমার বাবা-মা আমাকে হিজাব পড়তে বারণ করেন। বাবা-মা’র নিষেধাজ্ঞা না মানলে আমি কি জাহান্নামে যাব না?”
এই অজুহাতের উত্তর বহু আগেই দিয়ে গেছেন আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ নাবী মুহাম্মাদ (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। প্রজ্ঞাগুণে অল্প কয়েকটি কথায় তিনি এর উত্তরে বলেছেন, “যে কাজে স্রষ্টার অবাধ্যতা করা হয়, সেই কাজে স্রষ্টা বাদে অন্য কারও বাধ্য হওয়া যাবে না।” (আহমাদ : ১০৪১)
সন্দেহ নেই, ইসলামে মা-বাবার মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। বিশেষ করে মা’কে দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। আল্লাহর ইবাদাহ ও তাওহীদের মতো ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো বিষয়ের সঙ্গে একই আয়াতে মা-বাবার সাথে ভালো আচরণের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন,
“আল্লাহর উপাসনা করো, তাঁর সাথে কাউকে শরিক করো না। আর মা-বাবার সাথে ভালো আচরণ করো।” [সূরাহ আন-নিসা, ৪:৩৬] তাই সকল ক্ষেত্রেই মা-বাবার বাধ্য থাকতে হবে, কেবল একটি মাত্র ক্ষেত্র ছাড়া। সেটা হচ্ছে মা-বাবা যদি কখনো এমন কোনো কাজ করতে বলেন, যেটা আল্লাহর বিধিনিষেধের নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করে।
আল্লাহ বলেছেন, “কিন্তু তারা যদি এই চেষ্টা করে, যাতে তুমি আমার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না...” [কুরআন ৩১:১৫]
অন্যায় কাজে তাদের অবাধ্য হওয়ার মানে এই না যে, আমরা তাদের সাথে ভালো আচরণ করব না, তাদের যত্ন নেব না। কারণ, এই একই আয়াতের পরের অংশে আল্লাহ বলে দিয়েছেন, “তবে পার্থিব জীবনে তাদের সাথে ভালো আচরণ করবে।” সংক্ষেপে: মা-বাবাকে উপযুক্ত সম্মান করবেন, তাদের সাথে ভালো আচরণ করবেন; কিন্তু তাই বলে এমন কোনো কাজে তাদের বাধ্য হওয়া যাবে না, যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে হয়।
অজুহাত ৩:
“আসলে আমি যাদের সাথে যে সমাজে চলাফেরা করি, সেখানে আমার বর্তমান ড্রেসআপ বাদ দিয়ে ইসলামিক পোশাক মেনে চলা সম্ভব না।” এ ধরনের কথার পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে:
হিজাবের ব্যাপারে তিনি হয়তো আন্তরিক ও সৎ কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় হিজাব নিয়ে দোনোমনায় ভুগছেন। আবার এমনও হতে পারে, হালফ্যাশনের সাথে তাল মেলাতে যেয়ে তিনি শুধু মাথায় রংচঙা স্কার্ফ পড়েন; পরিপূর্ণ পর্দার ব্যাপারে মোটেও আন্তরিক নন।
পারিপার্শ্বিক অবস্থান ও মানসম্মানের ভয়ে যে বোনটি পর্দা করতে পারছেন না, তাঁর প্রতি আমাদের পরামর্শ: বোন, আপনি কি এটা জানেন না যে, পরিপূর্ণ পর্দার শর্ত পূরণ না করে কোনো অবস্থাতেই একজন নারীর ঘর থেকে—যে কোনো প্রয়োজনেই হোক—বের হওয়ার অনুমতি আল্লাহ দেননি? প্রতিটা মুসলিম নারীরই দায়িত্ব ইসলাম তাঁদের কী মর্যাদা দিয়েছে, ইসলাম তাঁদের কী করতে বলেছে সেগুলো জানা; সর্বোপরি ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম বেসিক জ্ঞান অর্জন করা। প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় করে আপনি কত কিছু শিখে নিচ্ছেন, কিন্তু যে জ্ঞান আপনাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখবে, মৃত্যুর পর আল্লাহর ক্রোধ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে, সেই জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারেই আপনার যত অবহেলা?
আল্লাহ কি বলেননি, “যদি তোমাদের জানা না থাকে, তাহলে জ্ঞানী ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করো।” [সূরা আন-নাহ্ল, ১৬:৪৩]
কাজেই পরিপূর্ণ পর্দার জন্য কী কী প্রয়োজন সেটা শিখুন। কোনো কাজে বা বিশেষ প্রয়োজনে যদি বাইরে যেতে হয়, তাহলে অবশ্যই যাবেন। তবে সঠিকভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়ে বের হবেন। শয়তানের কূটচালকে ধ্বংসের নিমিত্তে এগিয়ে যাবেন। কারণ যে প্রয়োজনে আপনি বের হচ্ছেন, তার চেয়ে নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শনের ফলে সমাজে সেটা যে পরিমাণ দূষণ ছড়াবে তা অনেক অনেক বেশি মারাত্মক।
বোন, আপনি যদি আপনার নিয়্যাতের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হন, এবং পরিপূর্ণ পর্দার ব্যাপারে আসলেই আন্তরিক হন, তাহলে মানসিকভাবে দৃঢ় হন। একবার যখন ইসলাম মানা শুরু করবেন তখন দেখবেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য হাজারো হাত এগিয়ে আসছে। আপনার মন যদি ইসলামের কোনো বিধানের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে আল্লাহ আপনার কাজ সহজ করে দেবেন। কারণ তিনিই তো বলেছেন,
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য সংকট থেকে বের হওয়ার পথ করে দেবেন। আর তাকে এমন জায়গা থেকে জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবেন যা সে কখনো কল্পনাও করতে পারে না।” [সূরা আত-তালাক, ৬৫:২-৩]
অন্যদিকে আমাদের যে বোনটি হালফ্যাশনের জালে আটকা পড়েছেন তার জন্য আমাদের পরামর্শ: সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার মালিক আল্লাহ তা‘আলা। পোশাকের আভিজাত্য, হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এগুলো কারও সম্মান ও মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারে না। কেবল আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহকের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর শারী‘আহর বিধিবিধান মেনে পরিপূর্ণ পর্দার মাধ্যমেই নিজের আত্ম-মর্যাদা ও সম্মান নির্ধারিত হয়। শুনুন এ ব্যাপারে আল্লাহ কী বলছেন, “তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক, আল্লাহর কাছে সে-ই সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী।” [সূরা আল-হুজুরাত, ৪৯:১৩]
কাজেই সেই দিনকে ভয় করুন, যেদিন আজকের কথিত প্রগতিশীল, মর্যাদাসম্পন্ন নারীদের ডেকে আল্লাহ বলবেন, “আজকের এই শাস্তি উপভোগ করো! পৃথিবীতে তো নিজেকে খুব শক্তিশালী সম্ভ্রান্ত মনে করতে! এটাই সেই শাস্তি, যে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ করতে।” [সূরা আদ-দুখান, ৪৯:৫০]
সংক্ষেপে: আল্লাহর বিধিনিষেধ অমান্য করে, তাঁর ক্রোধ অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব না। সম্ভব না জান্নাতে পৌঁছা। পৃথিবীতে কে আপনাকে সম্মান দিল, আর কে দিল না, কোন পোশাকে লোকে আপনাকে সুন্দর বলল, আর কে বলল না, এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা করুন কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়ার জন্য।
অজুহাত ৪:
“এত গরম আমাদের দেশে, একদমই সহ্য করতে পারি না। এত গরমে কীভাবে হিজাব করব?”
গরমের তীব্রতা কত মারাত্মক হতে পারে এ ব্যাপারে আল্লাহ বলছেন, “ওদের বলো, জাহান্নামের আগুন আরও বেশি গরম; যদি তারা বুঝত!” [সূরা আত-তাওবাহ, ৯:৮১]
নরকের আগুনের তীব্রতার সাথে এই দুনিয়ার তাপমাত্রার তুলনা কীভাবে সম্ভব! বোন, জেনে রাখুন—শয়তান আসলে আপনাকে এমন এক ফাঁদে ফেলেছে, এমন এক জাল বুনেছে আপনার সামনে, যে জাল ছিঁড়ে গেলে পৃথিবীর এই সামান্য উত্তাপ থেকে আপনি গিয়ে পড়বেন জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনে। শয়তানের এই ফাঁদ থেকে বেড়িয়ে আসুন। সূর্যের উত্তাপকে নিগ্রহ না ভেবে মহান আল্লাহর একটা অনুগ্রহ হিসেবে ভাবুন। কেননা সূর্যের এই উত্তাপ আপনাকে সেই সত্যকে মনে করিয়ে দেয় যে, জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা এর চেয়ে আরও কত লক্ষ কোটি গুণ বেশি! যে গরম আপনি এখন সহ্য করছেন, জাহান্নামের উত্তাপের তুলনায় তা কিছুই নয়। তাই পার্থিব আয়েশ ত্যাগ করে ফিরে আসুন আল্লাহর আনুগত্যের ছায়াতলে। গায়ে তুলে নিন নিরাপত্তার আবরণ। নিজেকে বাঁচান জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে। যে শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,
“সেখানে তারা কোনো ঠাণ্ডা বস্তুর স্পর্শ পাবে না; ফুটন্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ছাড়া অন্য কোনো পানীয়ের স্বাদ পাবে না।” [সূরা আন-নাবা, ৭৮:২৪-২৫]
সংক্ষেপে: জান্নাতের চারপাশ ঘিরে আছে কষ্ট, সংগ্রাম আর কঠোর পরিশ্রম, অন্যদিকে জাহান্নামের চারপাশে ছড়ানো আছে কামনা-বাসনার প্রলোভন। সবচেয়ে মহামূল্যবান পুরস্কার পেতে একটু ঘাম না ঝরালে কি হয়?
অজুহাত ৫ :
“আমার ভয় হয়, আমি হয়তো আজকে হিজাব করে কাল আবার ছেড়ে দেব। কারণ, আমি অনেককেই দেখেছি হিজাব করে আবার ছেড়ে দিতে!”
এই বোনকে আমি বলব: সবাই যদি আপনার এই যুক্তি প্রয়োগ করে তাহলে হয়তো এরা এভাবে আস্তে আস্তে পুরো ‘দ্বীন’কেই ছেড়ে দেবে। কারণ কেউ হয়তো ভবিষ্যতে ‘সালাত’ ছেড়ে দেওয়ার ভয়ে ‘সালাত’ ধরবেই না। বুড়ো বয়সে রামাদানের ‘সিয়াম’ পালন করতে পারব না, এই ভয়ে তারা হয়তো যুবতী বয়সেও সিয়াম পালন করবে না। আপনি কি টের পাচ্ছেন না, শয়তান কীভাবে আপনাকে তার ফাঁদে ফেলছে। সঠিক পথ থেকে আপনাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
আপনার পালন করা কাজটি যত ছোটই হোক না কেন—হোক সেটা নফল কিংবা সুন্নাহ—কাজটা যদি আপনি সবসময় নিয়মিত করেন, তাহলে আল্লাহ তাতেই সবচেয়ে বেশি খুশি হন। সেক্ষেত্রে হিজাবের মতো অবশ্যপালনীয় একটা কাজে আল্লাহ কতটা খুশি হবেন, ভাবা যায়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাজ যতই ছোট হোক, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ‘আমাল সেটাই, যে কাজটা কেউ নিয়মিত করে।” [বুখারী, ১১/১৯৪]
যে মানুষগুলো একসময় হিজাব করা ছেড়ে দিয়েছে, আপনি কি কখনো তাদের এই ছেড়ে দেওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছেন, যাতে করে আপনি এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেন? যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সত্যকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেন আপনি এই সত্য পথনির্দেশের ব্যাপারে পরিপূর্ণ আস্থা অর্জনের কারণ ও যুক্তিগুলো খুঁজে দেখছেন না? সত্য ও সঠিক পথের উপর অবিচল থাকার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে পারি। যাতে করে আল্লাহর দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থার সাথে আপনার সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠে। সালাতে আমরা বেশি বেশি দু‘আ জানাতে পারি, কারণ আল্লাহ বলেছেন,
“ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে (আল্লাহর) কাছে সাহায্য চাও।” [সূরা আল-বাকারাহ, ২:৪৫]
সঠিক পথের উপর অবিচল থাকার আরেকটা উপায় হচ্ছে ইসলামিক বিধিবিধানগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা; পূর্ণাঙ্গভাবে সেগুলো মেনে চলা। এর মধ্যে হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা অন্যতম। আল্লাহ বলেছেন,
“তাদের যা বলা হয়েছে, তারা যদি সেটা মেনে চলত, তাহলে এটা তাদের জন্যই ভালো হতো। উপরন্তু এটা তাদের ঈমানকে আরও মজবুত করত।” [সূরা আন-নিসা’, ৪:৬৬]
সংক্ষেপে: সঠিক পথ ও সত্যের উপর অবিচল থাকার জন্য অন্যতম প্রধান যে দুটো উপায় আছে, আপনি যদি সে দুটো উপায় অবলম্বন করেন, তাহলেই আপনি পাবেন ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ। এরপর আপনার মনে আর কখনোই একে ছাড়ার ইচ্ছা জাগবে না।



No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.