নবী কি অমুসলিমদের হত্যা করে ইসলাম সৃষ্টি করেছেন ?

1400 বছর আগে আমাদের
নবীজি কুপিয়ে কুপিয়ে
বিরোধী দলকে দমন
করতেন। আলহামদুলিল্লাহ।
অথচ বিজ্ঞান কিছুদিন
আগে আবিষ্কার... 

লিখেছেনঃ মোঃ নাসির শেখ

#Ans:
মহান আল্লাহর দ্বীন ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে নবী (সা.)-কে বেশ কিছু ছোট-বড় যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু এসব যুদ্ধ প্রচলিত যুদ্ধ-সংঘর্ষ থেকে আলাদা। কারণ মুহাম্মদ (সা.)-এর যুদ্ধগুলো প্রচলিত সামরিক অভিযান ছিল না, সাম্রাজ্য বিস্তার বা ধন-সম্পদ উপার্জনও লক্ষ্য ছিল না। বেশির ভাগ যুদ্ধই ছিল মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর প্রধান কাজ ছিল প্রতিরোধমূলক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বাহিনীকে আগে আক্রমণ করতে নিষেধ করতেন।

ঐতিহাসিকদের মতে, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় ২৭টি বড় ধরনের যুদ্ধ (গাজওয়া), ৬০টি ছোটখাটো দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ (সারিয়া) সরাসরি পরিচালনা করেছেন। (ইসলামী বিশ্বকোষ, পূর্বোক্ত) মুফতি শাফি (রহ.) লিখেছেন, বড় যুদ্ধ গাজওয়া ২৩টি এবং ছোটখাটো যুদ্ধ (সারিয়া) ৪৩টি। (মুফতি শাফি : সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৮৫)

এসব যুদ্ধে মুসলিম-অমুসলিম মিলে নিহতের সংখ্যা ১০১৮ (বিভিন্ন মতে সর্বোচ্চ ১৮০০ জন)। এতোগুলো ছোট-বড় যুদ্ধে নিহতের এই সংখ্যা সমকালের ইতিহাসেও একেবারে নগণ্য। এর বিপরীত দিকটিও দেখতে হবে। আর তা হলো, এসব নিহতের বিনিময়ে বেঁচে গেছে লাখো মানুষ।

নবুয়তের পুরা সময়কালে একজন লোকও এমন পাওয়া যাবে না, যে ব্যক্তি কেবলমাত্র ধর্মীয় কারণে মুসলমানদের হাতে নিগৃহীত হয়েছে। যতক্ষণ না সে মুসলমানদের উপরে চড়াও হয়েছে, কিংবা ষড়যন্ত্র করেছে। সে মূর্তিপূজারী হোক বা ইহুদী-নাসারা হোক।

রাসূল (সাঃ) যুদ্ধকে পবিত্র জিহাদে পরিণত করেন। কেননা জিহাদ হ’ল অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সে যুগের যুদ্ধনীতিতে সকল প্রকার স্বেচ্ছাচার সিদ্ধ ছিল। কিন্তু ইসলামী জিহাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসৃত হয়। যা মানবতাকে সর্বদা সমুন্নত রাখে এবং যা প্রতিপক্ষের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। যে কারণে সারা আরবে ও আরবের বাইরে দ্রুত ইসলাম বিস্তার লাভ করে মূলতঃ তার আদর্শিক ও মানবিক আবেদনের কারণে।

যুদ্ধবন্দীর উপরে বিজয়ী পক্ষের অধিকার সর্বযুগে স্বীকৃত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নীতি এক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করে। প্রতিপক্ষ বনু হাওয়াযেন গোত্রের ১৪ জন নেতা ইসলাম কবুল করেন। ফলে তাদের সম্মানে ও অনুরোধে হোনায়েন যুদ্ধের ছয় হাজার যুদ্ধবন্দীর সবাইকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিনা শর্তে মুক্তি দেন। এমনকি বিদায়ের সময়ে তাদের প্রত্যেককে একটি করে মূল্যবান ক্বিবতী চাদর উপহার দেন।

ইসলামের দেওয়া যুদ্ধ নীতিতে যোদ্ধা ও বিচারে দন্ডপ্রাপ্ত ব্যতীত কাউকে হত্যা করার যেমন কোন অনুমতি নেই। তেমনি শরীয়াতের দেওয়া নিয়মনীতির বাইরে কোনরূপ স্বেচ্ছাচারিতার অবকাশ নেই। নিচেয় যুদ্ধ নীতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল,

১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে অর্থাৎ রাষ্ট্রের অনুগত কোন অমুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করে, তবে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধি ৪০ বছরের দূরত্ব হ’তে লাভ করা যাবে’। (বুখারী হা/৩১৬৬; মিশকাত হা/৩৪৫২)

২. অন্য হাদিসে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যুদ্ধে চুক্তিভঙ্গ করবে না, মৃতদেহ বিকৃত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, শিশু-কিশোরদের হত্যা করবে না, গীর্জার অধিবাসী কোন পাদ্রী-সন্ন্যাসীকে, কোন মহিলাকে এবং কোন অতি বৃদ্ধকে হত্যা করবে না। (বায়হাক্বী, আহমাদ হা/২৭২৮, হাসান লি গাইরিহী)

খাদ্যের প্রয়োজন ব্যতীত কোন উট বা গাভী যবেহ করবে না ...। যুদ্ধের প্রয়োজন ব্যতীত কোন ভৌতকাঠামো বিনষ্ট করবে না বা কোন বৃক্ষ কর্তন করবে না। তোমরা দয়া প্রদর্শন কর। আল্লাহ দয়াশীলদের পসন্দ করেন’।

আর সেকারণেই মক্কা বিজয়ের পর দুশমননেতা আবু সুফিয়ানকে, তার স্ত্রী হেন্দাকে যিনি ওহোদ যুদ্ধে শহীদ হযরত হাসান (রাঃ)-এর নাক-কান কেটে গলার হার বানিয়েছিলেন ও তার কলিজা চিবিয়েছিলেন, অন্যতম নেতা আবু জাহলের ছেলে ইকরিমা প্রমুখ শত্রুনেতা সহ সকলকে ক্ষমা করেছিলেন। কারু প্রতি সামান্যতম প্রতিহিংসামূলক আচরণ করেননি। আর এই উদারতার কারণেই তারা সবাই ইসলাম কবুল করেন ও শত্রুতা পরিহার করে রাসূল (সাঃ) এর দলভুক্ত হয়ে যান।
৩. তিনি সর্বদা সৈনিকদের বলতেন, يَسِّرُوْا وَلاَ تُعَسِّرُوْا وَسَكِّنُوْا وَلاَ تُنَفِّرُوْا ‘সহজ করো, কঠিন করো না। শান্ত থাক, ঘৃণা করো না’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭২৩)

তিনি কখনো রাতে কাউকে হামলা করতেন না। কাউকে আগুনে পোড়াতে তিনি কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলতেন, কোন আহতকে আক্রমণ করবে না, পলাতককে ধাওয়া করবে না, বন্দী এবং কোন দূতকে হত্যা করবে না, লুটতরাজ করবে না।

৪. মক্কা বিজয়ের দ্বিতীয় দিনের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা হত্যা করা থেকে নিবৃত্ত হও। কেননা এর দ্বারা কোন লাভ হ’লে এর সংখ্যা বেড়ে যেত’। অতএব এরপরে যদি কেউ হত্যা করে, তবে তার উত্তরাধিকারীদের জন্য দু’টি এখতিয়ার থাকবে। তারা চাইলে হত্যার বদলে হত্যা করবে, অথবা রক্ত মূল্য গ্রহণ করবে’।

উপরে আলোচিত যুদ্ধ নীতিতে দেখলাম যেখানে বিরোধী মতকে পুরোপুরি ছাড় দেয়া হয়েছে, কোপানোর জন্য নয়। তারা তাদের স্বাধীনমত থাকতে পারবে ইসলাম কবুল না করেও। ইসলাম কবুল না করার জন্য ও বিনা কারণে হত্যা হত্যা ইসলামের অনুমতি নেই। একটা প্রমাণ দেখাতে পারবেন না যে ইসলাম গ্রহন না করায় কাউকে হত্যা করা হয়েছে। শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম ব্যবস্থা নেয় যারা যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে এবং মুসলমানদের যুদ্ধ উপর চাপিয়ে দেয়। এমন অবস্থায় কেউ চুপ থাকতে পারে না।

আর নাস্তিক ও অমুসলিমদের হাতে যুদ্ধ ও বিনাযুদ্ধে নির্বিচারে কোটি কোটি মানুষের জীবন গেছে। নাস্তিকরা পারলে যেন (নাস্তিক) স্টালিনের এক কোটি মানুষ হত্যার হিসাব মিলিয়ে দিয়ে যায়। অনেকগুলো হত্যার ইতিহাস আছে। শুধু একটা হিসাব মেলানোর দাবি করে গেলাম।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.