ইসলামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান★

ইসলামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান★
===================================== মানুষ ভুলত্রুটির উর্ধে নয় এই কে না বিশ্বাস করে....?
হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ. قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ (فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِىَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ) ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সুখ-সম্ভার প্রস্ত্তত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শুনেনি, মানুষের হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি’। রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ বিষয়ে তোমরা চাইলে পাঠ কর, ‘কেউ জানেনা তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী কি কি বস্ত্ত লুক্কায়িত রয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ’ (সাজদাহ ৩২/১৭)।
বুখারী হা/৪৭৭৯; মুসলিম হা/২৮২৫; মিশকাত হা/৫৬১২।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত টুঙ্গিপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ব পুরুষ ছিলেন দরবেশ শেখ আউয়াল। (শেখ মুজিবুর রহমান,পিতা শেখ লুৎফুর রহমান, পিতা শেখ আব্দুল হামিদ, পিতা শেখ তাজ মাহমুদ, পিতা শেখ মাহমুদ ওরফে তেকড়ী শেখ, পিতা শেখ জহির উদ্দিন,পিতা দরবেশ শেখ আউয়াল।) তিনি হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর প্রিয় সঙ্গী ছিলেন।

১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি বাগদাদ থেকে বঙ্গে আগমন করেন। পরবর্তীকালে তাঁরই উত্তর-পুরুষেরা আধুনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। জাতির জনক হচ্ছেন, ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম অধঃস্তন বংশধর। বঙ্গবন্ধুর মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। নানার নাম ছিল শেখ আব্দুল মজিদ। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমানের (মৃত্যু : ১৯৭৪ খ্রি:) সুখ্যাতি ছিল সূফী চরিত্রের অধিকারী হিসেবে। জাতির জনক নিজেও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও ইসলামী তরীকা অনুযায়ী জীবন যাপনে অভ্যস্ত।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭১-এর ৭ মার্চ যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তাতেও ছিল মহান স্রষ্টার স্মরণ। ঐতিহাসিক সেই ভাষণটির একস্থানে বুলন্দ আওয়াজে তিনি বলেছিলেন,,,,

★‘এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ★’।
এই আত্মপ্রত্যয়ের পেছনে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থাই যে কাজ করেছিল, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তারপর আসে মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ। সেই মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল ইমানের বলে বলীয়ান বীর বাঙালিরা। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম তার এক লেখার শুরুতে লিখেছেন, ‘দেশপ্রেম ইমানের অংশ। নষ্ট-ভ্রষ্টরা কখনো মুক্তিযুদ্ধ করে না। পৃথিবীর সর্বত্র সর্বকালে দেশপ্রেমিক ইমানদাররা মুক্তিযুদ্ধ করেছে।’
(দৈনিক আমার দেশ, ১৮ মার্চ ২০১৩)।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস আই এম নূরুন্নবী খান বীর বিক্রম তার ‘রাধা নগরের যুদ্ধ’ শীর্ষক স্মৃতিচারণার এক স্থানে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার উদ্দীপনার উৎস সম্পর্কে লিখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘আমাদের ভরসা ছিল মহান আল্লাহ তা’য়ালা … মুক্তিযোদ্ধারা ‘আল্লাহু আকবার’ আর ‘জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংকার টু বাংকার ফাইট করে সামনে এগিয়ে যান।’
(দৈনিক প্রথম আলো, ২৬ মার্চ ২০১৩)।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শনের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে জ্যোতি সেনগুপ্ত তার বইয়ের এক স্থানে লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যখন বাংলাদেশ থেকে সংগৃহীত মাটি, কুরআন (বাইবেল বা গীতা) এবং বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে শপথ গ্রহণ করত, তখন তাদের অনেকে শিশুর মতো কেঁদে ফেলত।’ (হিস্ট্রি অব ফ্রিডম মুভমেন্ট ইন বাংলাদেশ, ১৯৪৭-১৯৭৩, সাম ইনভল্বমেন্ট, নয়া প্রকাশ, কলকাতা ১৯৭৪, পৃ. ৪০০)।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুসা সাদিক লিখেছেন, ‘রাত ৮-২০ মিনিটের দিকে হানাদারদের মুখোমুখি থেকে ওয়্যারলেসে সুবেদার মেজর ফজলুর রহমান জানালেন যে, তিনি নিজ বাংকারে আহত হয়েছেন। আমাদের স্বাধীন করে যাবে। ওয়্যারলেসে সুবেদার মেজর ফজলুর রহমানের কণ্ঠস্বর থেমে গেলে পুনরায় ওয়্যারলেসে তার নাম ধরে ডেকে কয়েকবার কালেমা শরিফ শোনান হলো। শেষবারের মতো ওয়্যারলেসে তার জড়ানো কণ্ঠস্বর ভেসে এলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ…’ এরপর থেমে গেল তার স্বর।’
(দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৬)।

যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন, তারা শহীদ হিসেবে শ্রদ্ধা শ্লাঘার পাত্র সবার কাছে। এই যে ‘শহীদ’ শব্দটি, সেটিও তো ইসলামের দান। কিংবা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যে ‘সালাম’ নিবেদন করা হয়, সেটিও ইসলামি সংস্কৃতি-জাত একটি শব্দ। আবদুল জাব্বারের গাওয়া একটি বিখ্যাত গানও তো আছে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ নামে। কবি শামসুর রাহমান স্বাধীনতাকে সুদর্শন করেছেন এই বলে, ‘স্বাধীনতা তুমি মায়ের কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।’ বোঝাই যাচ্ছে, ইসলামি সংস্কৃতি ও বিশ্বাস কীভাবে মিশে আছে এ দেশের মানুষের মনে ও মননে। বাংলাদেশে ইসলামের প্রভাব বিষয়ে বলতে গিয়ে জেমস জে. নোভাক তার বইতে লিখেছেন, ‘ইসলাম ছাড়া বাংলাদেশকে ভাবা যায় না। ইসলামের মূল্যবোধ থেকে সামাজিক নির্ভরশীলতার চেতনা এসেছে মানুষের মধ্যে।… বাংলাদেশের ধর্ম যে ইসলাম, এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় প্রাপ্তি; কেননা ইসলাম এমন ধর্ম, স্বভাবের দিক থেকে যা আন্তর্জাতিক এবং চরিত্রগতভাবে বহির্মুখী। ইসলাম বর্ণবাদ বিরোধী এবং ইসলাম যথার্থই আন্তর্জাতিক ধর্ম।’
(বাংলাদেশ জলে যার প্রতিবিম্ব,- জেমস জে. নোভাক, বাংলা অনুবাদ ১৯৯৫, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা, পৃ. ৯০-৯২)।

মিথ্যার মেঘ সত্যের সূর্যকে আড়াল করার যতই অপচেষ্টা করুক না কেন, আদতে তা অসম্ভব। কেননা সত্য তার স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। সব অপচেষ্টার অন্ধকার ভেদ করে সত্য নামক সূর্যের আলো এক সময় ঠিকই হেসে ভেসে ওঠে পৃথিবীর প্রান্তরে। এই উজ্জ্বল সত্যিটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ভারতের সাবেক সেনা প্রধান ফিল্ড মার্শাল মানেকশ’ও। তিনি বলেছেন, ‘যদি বাংলাদেশকে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাহলে ভারতের আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। যেদিন আমার সৈনিকরা বাংলাদেশকে মুক্ত করে সেদিনই আমি একথা উপলব্ধি করি।’ (স্টেটসম্যান, ২৯ এপ্রিল ১৯৮৮, কলকাতা)।

কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন পাশের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অনমনীয় অবস্থান :
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। একথার জবাবে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য, আমরা লেবাস সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইসলাম, যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের প্রবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বারবার যারা অন্যায়, অত্যাচার ,শোষণ-বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদের বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জনই মুসলমান সে দেশে ইসলাম বিরোধী আইন পাশের কথা ভাবতে পারেন তারাই, ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়াটা ফারস্থা করে তোলার কাজে।”

ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় :
১৯৭২ সালের ৪ অক্টোবর খসড়া সংবিধানের ওপর আলোচনার জন্য আয়োজিত সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবসুলভ দৃঢ়কন্ঠে ঘোষণা করেন: “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম-কর্ম করার স্ব-স্ব অধিকার অব্যাহত থাকবে। আমরা আইন করে ধর্ম চর্চা বন্ধ করতে চাইনা এবং তা করবওনা। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রের কারো নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবেনা, বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না। আমাদের আপত্তি হলো এইযে, ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবেনা। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব,ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে”।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা :
ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা, প্রচার-প্রসার ও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামগ্রিক জীবনকে মহান ইসলামের কল্যাণময় স্রোতধারায় সঞ্জীবিত করার মহান লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধান মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ জারি করে এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। “বায়তুল মোকাররম সোসাইটি ” এবং “ইসলামিক একাডেমী ” নামক তৎকালীন দু’টি সংস্থার বিলোপ সাধন করে এই ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারী অর্থে পরিচালিত অন্যতম একটি বৃহৎ সংস্থা হিসেবে নন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ যাবত পবিত্র কুরআনের বাংলা তরজমা,তাফসীর, হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবন ও কর্মের উপর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী আইন ও দর্শন,ইসলামী অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহাবী ও মনীষীগণের জীবনী ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় সহ সারা দেশের ৬৪টি জেলা কার্যালয়, আর্ত-মানবতার সেবায় ২৮টি ইসলামিক মিশন, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। বৃহত্তর কলেবরে ২৮ খন্ডে ইসলামী বিশ্বকোষ, ১২ খন্ডে সীরাত বিশ্বকোষ প্রকাশ করে ধর্মতাত্ত্বিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে।

সীরাত মজলিশ প্রতিষ্ঠা :
বঙ্গবন্ধু দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সীরাত মজলিশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। সীরাত মজলিশ ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে রবিউল আউয়াল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহণ করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন।হজ্জ্ব পালনের জন্য সরকারী

অনুদানের ব্যবস্থা :
পাকিস্তান আমলে হজ্জ্বযাত্রীদের জন্য কোন সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা ছিলনা। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম হজ্জ্বযাত্রীদের জন্য সরকারী তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন এবং হজ্জ্ব ভ্রমন কর রহিত করেন। ফলে হজ্জ্ব পালনকারীদের আর্থিক সাশ্রয় হয়। বঙ্গবন্ধু শাহাদাত লাভের পর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা কথায় কথায় নিজেদেরকে ইসলামের সেবক দাবী করলেও তাদের আমলে সরকারী অনুদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। যা এদেশের অনেকেই হয়ত জানেন না।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুণর্গঠন :
ইসলামী আকীদা ভিত্তিক জীবন গঠন ও দ্বীনি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুণর্গঠন করেন। পূর্বে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্ত শাসিত ছিলনা। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে স্বায়ত্ত শাসন প্রদান করে এর নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।’ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুণর্গঠন বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ প্রসারের এক মাইল ফলক। জাগতিক শিক্ষার সাথে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকীকরণের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করণ এবং মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সরকারী চাকুরীর নিশ্চয়তা ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করেছিলেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসান তার “বঙ্গবন্ধু: যেমন দেখেছি” গ্রন্থে উলে¬খ করেন, মাদ্রাসার জন্য সরকারী অনুদান বন্ধের একটি প্রস্তাব সম্বলিত নথি বঙ্গবন্ধুর নিকট উপস্থাপন করা হলে বঙ্গবন্ধু ফাইলে লিখেন যে, “মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য যে বরাদ্দ এতদিন ছিল, সেটাই থাকবে। তবে ভবিষ্যতে এ বরাদ্দ আরো বাড়ানো যায় কিনা এবং কতটা বাড়ানো যায়, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।”
বেতার ও টিভিতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত প্রচার :
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তারই নিদের্শে সর্ব প্রথম বেতার ও টেলিভিশনে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পবিত্র কুরআন ও তার তাফসীর এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার করার সুব্যবস্থা করেন।

সরকারী ছুটি ঘোষণা :
ধর্মীয় দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে সরকারী ছুটি ঘোষণা করেন এবং উলে¬খিত দিবসসমূহের পবিত্রতা রক্ষার্থে সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
মদ,জুয়া ও ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করণ :
ইসলামের নাম নিয়ে পাকিস্তানিরা দেশ পরিচালনা করলে ও তাদের সময়ে মদ,জুয়া,নিষিদ্ধ ছিলনা। অথচ বঙ্গবন্ধু সরকার আইন করে মদ,জুয়া ও ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোড়দৌড়ের নামে জুয়া,লটারী এবং গেট-এ-ওয়ার্ড প্রভৃতি ইসলাম বিরোধী অনুষ্ঠানাদিতে বিদেশীদের জন্য মদ পরিবেশন বন্ধ করে দেন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এ প্রসঙ্গে প্রণিধান যোগ্য “আমাদের দেশে পাকিস্তান আমলে ইসলাম বিরোধী বহু কাজ হয়েছে। রেসের নামে জুয়া খেলা রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃত ছিল। আমি ক্ষমতায় এসে প্রথমেই ঘোড়দৌড় বন্ধ করে দিয়েছি,পুলিশকে তৎপর হতে বলেছি, শহরের আনাচে কানাচে জুয়ারীদের আড্ডা ভেঙ্গে দিয়েছি। আমি ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলি, ধর্ম নিরেপেক্ষতা ধর্মবিরোধীতা নয়। আমি মুসলমান। আমি ইসলামকে ভালবাসি। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন,দেখবেন এদেশে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড কখনোই হবেনা”
(সৈয়দ আলী আহসান,বঙ্গবন্ধু:যে রকম দেখেছি,পৃ;১৬)

আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষ সমর্থন ও সাহায্য প্রেরণ :
১৯৭৩ সালে আরব ইসলারইল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষ সমর্থন করেন এবং এই যুদ্ধে বাংলাদেশ তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমর্থনে ১লক্ষ পাউন্ড চা,২৮ সদস্যের মেডিকেল টিমসহ একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী প্রেরণ করা হয়।
ও আই সি সম্মেলনে যোগদান ও মুসলিম বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সাথে সু সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ও আই সি) অধিবেশনে যোগদান করেন এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশকে এই সংস্থার অন্তর্ভূক্ত করার মধ্যদিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মাঝে বাংলাদেশের স্থান করে নেন। ও আই সি সম্মেলনে যোগদান করে ইসলাম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু মুসলিম নেতৃবৃন্দেরস সামনে যে বক্তব্য তুলে ধরেন এতে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দের সাথে সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে ওঠে।

কিছু মানুষের উদ্দেশ্যে বলছি নেতিবাচক মানসিকতা ত্যাগ করে নিরব থাকুন অথবা বিবেকের কাছে ইনসাফ করে দেখুন আপনি আমি ইসলামের জন্য কি করেছি,
করলাম এবং করবো.....ধন্যবাদ......................


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.