মৃত মানুষ মারা গেলে কান্না করা কি ইসলামে নিষেধ ?

প্রশ্নঃনাস্তিকদের একটি প্রশ্ন হলো যে আমরা মুসলিমরা মানুষ মারা গেলে কাদতে নিষেধ করি। মানুষ মারা গেলে আমাদের কলিজা ফেটে জায়। অথচ ইসলাম এটা নিষেধ করে। কি নিষ্ঠুর ধর্ম ইসলাম। একজন মানুষ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেবে আর আমরা কাদ তে পারবোনা এর চেয়ে নিষ্ঠুর ধর্ম হয়?

লিখেছেনঃ মাওলানা রুহুল আমিন সিরাজি।

উত্তরঃ উত্তর টি জানতে হলে আমাদের সর্ব প্রথম হাদিস গুলো দেখে নিতে হবে।আসুন হাদিস গুলো দেখে নেইঃ
আবূ বুরদাহ বলেন, একদা (তার পিতা) আবূ মূসা আশআরী (রঃ) যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। আর (ঐ সময়) তার মাথা তার স্ত্রীর কলে রাখা ছিল এবং সে চিৎকার করে কান্না করতে লাগল। তিনি (অজ্ঞান থাকার কারণে) তাকে বাঁধা দিত পারলেন না। সুতরাং যখন তিনি চেতনা ফিরে পেলেন, তখন বলে উঠলেন, ‘আমি সেই মহিলা থেকে সম্পর্কমুক্ত, যে মহিলা থেকে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) সেই মহিলার থেকে সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন, যে শোকে উচ্চস্বরে মাতম করে কান্না করে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।’ ৪৭১ (বুখারী ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “ মাতামকারিনী মহিলা যদি মরনের পূর্বে তওবাহ না করে, তাহলে আল-কাতারের পায়জামা এবং পাঁচড়ার জামা পরিহিতা অবস্থায় তাকে কিয়ামতের দিনে দাঁড় করানো হবে।” ৪৭২ (মুসলিম)

উক্ত হাদিস গুলো থেকে আমরা কি বুঝতে পারলাম ইসলাম নিষ্ঠুর?। ইসলাম মানবতা হিন? অবশ্যই না।
আসুন যুক্তির মানদন্ডে জাছাই করি।

মানুষ মারা গেলে তার পরিবারে সবাই প্রচুর শোকাহত হয়।এটা বলে বুঝানো সম্ভব না। জার ফলে মানুষ পাগল হওয়ার সম্ভবনা থাকে।যখন নিজের হাত পা নেরে নেরে থাপরাইতে থাকে। অনেকে হুশ হারায়া ফেলে। কেওবা পাগোল হয়। একজন মানুষ বিদায় নিলে কি ফিরে আসবে? কখনো না।তাইলে যুক্তির দাবি হল মানুষ এর এই অনার্থক আর্তনাদ এর কোন ফায়দা নেই। বরং মানুষ আরো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন কেও পাগোল হচ্ছে কেও শরি থাবরিয়ে জখম করছে। যা নিতান্তই যুক্তি হিন কাজ।মানুষ এর ক্ষতি থেকে বাচাতে অতিরঞ্জিত আর্তনাদ নিষেধ করেছেন। এবং ধর্য ধারণ করতে বলেছেন। আল্লাহ আয়াতে বলেনঃ‘আমি তোমাদিগকে কিছু

ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা

তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ‘আমরা তো আল্লাহর এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী’। (পারা: ২, সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।
উক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে বিপদে পরলে যেন ধৈর্য ধারণ করে। ধৈর্য এমন জিনিস যা আপনার মনে প্রশান্তি যোগায়। সুন্দর পৃথিবি পরিবার ও সোমাজ উপহার দেয়। ধৈর্য না ধরলে কেও পাগোল হয় আবার কারো অনেক ক্ষতি হয়। তাই ইসলাম নিয়ে একটু নিরেপক্ষ চিন্তা করুন। বিবেচনা করুন। 

আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেঃমহামহিমান্বিত তিনি সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদিগকে পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (পারা: ২৯, সূরা-৬৭ মুলক, আয়াত: ১-২)।

উক্ত আয়াতে বলা হচ্ছেঃ

জন্ম মৃত্যু আল্লাহর সৃষ্টি সুতরাং তুমরা আমাদের ভালো কাজ করতে বলা হয়েছে। তাই আশুন আমরা অনার্থক নিজের ক্ষতি না করি। এরকম থাবরিয়ে শুর করে না কাদি।আমাদের আরেকটা জিনিস জানতে হবে, যে জাহেলিয়াত এর যুগে মানুষ মারা গেলে। তারা লোক ভারা করে এনে জোরে জোরে কান্না করাইতো। এখানে একটা বিষয় হচ্ছে মানুষ মারা গেলে লোক ভারা করে কান্নার আসোর করা মানে মৃত্যু ব্যাক্তিকে হেও প্রতিপন্ন করা।তাই মানুষের এই অবস্থার জন্য রাসুল এই রুপ কান্না করতে নিষেধ করেছেন। 

এখন প্রশ্ন তাইলে আমরা কতটুকু কান্না করতে পারবো?ইসলাম ততটুকু কান্না করতে জায়েজ বলেছেন যতটুকু শালিনতা বজায় রাখেঃআশুন উক্ত বিষয় হাদিস থেকে জেনে নেই কোথায় কিরুপ কাদবেঃসন্তানের শোকে কান্না
আনাস রা. বলেন— আমি (নবী-পুত্র) ইবরাহিমকে দেখেছি নবীজির সামনে সামনে মৃত্যুপ্রায় অবস্থায়। নবীজির দু’চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো। তিনি বললেন, চোখ অশ্রু ঝরায়, হৃদয় বিষণ্ন হয়। আমার প্রতিপালক যে কথায় সন্তুষ্ট, তা-ই আমরা বলি। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত। ১

আনাস রা. বলেন— আমি নবীজির এক মেয়ের (দাফনের) সময় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কবরের পাশে বসে ছিলেন। দেখলাম, তার দু’চোখ গড়িয়ে অশ্রু ঝরছে। ২

পরিবারের মৃত্যুতে কান্না

ওসামা ইবনে যায়েদ রা. বলেন— নবীজির কন্যা তার নিকট সংবাদ পাঠিয়েছেন, তার সন্তান মৃতপ্রায়। তিনি কয়েকজন সাহাবিসহ সেখানে গেলেন। শিশুটিকে নবীজির কোলে তুলে দেওয়া হলো, তখনো শিশুটির প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে; (বর্ণনাকারী বলেন,) আমি ধারণা করছি তিনি বলেছিলেন— মনে হয় যেনো একটি চামড়ার পাত্র। তারপর তার দু’চোখ অশ্রু ঝরাতে লাগলো। সাদ রা. বললেন, আল্লাহর রসুল, এটা কী? নবীজি বললেন— এটাই মমতা, যা আল্লাহ তার বান্দাদের অন্তরে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা তার দয়ালু বান্দাদেরই দয়া করেন। ৩

সাহাবিদের ভালোবাসায় কান্না

আনাস রা. থেকে বর্ণিত— রাসুল সা. যায়েদ ও তার সাথিদের শাহাদাতের সংবাদ দিয়ে বললেন, যায়েদ পতাকা তুলে নিয়েছে। সে শহিদ হলো। তারপর জাফর পতাকা ধরেছে। সে-ও শহিদ হয়ে গেলো। এবার আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা পতাকা হাতে নিয়েছে। সে-ও শহীদ হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজির দু’চোখ তখন অশ্রু ঝরাচ্ছিল। ৪
কখনো তিনি এতো বেশি বেদনাহত হতেন যে, হৃদয়ে তার ছাপ তার থেকে যেতো। একসাথে অনেক ক্বারীর শাহাদাতের ঘটনা সম্পর্কে আনাস রা. বলেন— নবীজিকে এর চেয়ে বেশি বেদনাহত হতে আমি আর দেখি নি। ৫
নামাজে কান্না

নামাজে প্রায়ই নবীজিকে কাঁদতে দেখা যেত। কখনও সাহাবিরা জানতে পারতেন, কখনও বুঝতেও পারতেন না যে, নবীজি কাঁদছেন—কেবল তার দু’চোখ ছাপিয়ে অশ্রু ঝরে যেতো। আবার কখনও নামাজে তেলাওয়াতের সময় কান্নায় গলা ভারী হয়ে আসত।

আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখির রা. তার পিতার বর্ণনা নকল করেন যে, একবার নবীজির কাছে গিয়ে দেখলাম, তিনি নামাজ পড়ছেন, আর তার বুক থেকে কান্নার এমন শব্দ বের হচ্ছে, যেন চুলায় রখা পানির পাত্র টগবগ করে ফুটছে।
কখনও আবার সেজদায় পড়েও কাঁদতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন— একবার সূর্য গ্রহণের সময় নবীজি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন। দীর্ঘ রুকু-সেজদা করলেন। সেজদায় গিয়ে মনে হলো তিনি আর উঠবেন না। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন আর কাঁদছিলেন। দোয়ার মধ্যে বরছিলেন, হে আমার প্রতিপালক, আপনি কি আমাকে এই প্রুতশ্রুতি দেন নি যে, আমার উপস্থিতিতে উম্মতকে শাস্তি দেবেন না। ৬

কুরআন শ্রবণে কান্না

কুরআনে আজাবের আয়াত পাঠকালে কাঁদা নবীজির সুন্নাত ছিল। সাহাবিদের থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনেও তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বলেন— নবীজি একদিন আমাকে বললেন, আমাকে কোরআন পড়ে শোনাও। ইবনে মাসউদ রা. বললেন, কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে আপনার ওপর আর আমি আপনাকে পড়ে শোনাব? নবীজী বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছি। ইবনে মাসউদ রা. সূরা নিসা তিলাওয়াত করলেন। যখন এ-আয়াতে এলেন, فَکَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّجِئْنَا بِکَ عَلٰی هٰؤُلَآءِ شَهِیْدًا (তখন কী অবস্থা হবে, যখন আমি ডেকে আনব প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে সাক্ষী এবং আপনাকে ডাকব তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে)। ৭ আমি দেখলাম নবীজির চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। ৮
আবেগ ও বিনয়ের কান্না

কিছু কিছু সময়ে নবীজীর মাঝে বিশেষ আবেগ ও বিনয় কাজ করত। তার মধ্যে অন্যতম হলো, হাজরে আসওয়াদ। নবীজী একবার হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করলেন। ফিরে এসে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন। তখন কান্নায় তার অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। ৯

এ-ছাড়া যখন আবু তালিব কাফেরদের পীড়াপীড়িতে নবীজিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বললেন, তখনও তিনি চাচা আবু তালিবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কেঁদে ফেলেছিলেন। ১০

১(বুখারি, হাদিস ১৩০৩) ↵
২(বুখারি, হাদিস ১২৮৫) ↵
৩(মুসলিম, হাদিস ৯২৩) ↵
৪(বুখারি, হাদিস ৩০৬৩) ↵
৫(মুসলিম, হাদিস ৬৭৭) ↵
৬(নাসায়ি, হাদিস ১২১৪) ↵
৭(সূরা নিসা, আয়াত ৪১) ↵
৮(বুখারি, হাদিস ৪৬৮২) ↵
৯(বাইহাকি, হাদিস ৭২৩৪) ↵
১০(সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস 
৩৬৭৫)

উক্ত হাদিসে যেই পদ্ধতি তে কাদার কথা বলা হয়েছে একটু চিন্তা করুন কতটা সুন্দর। যার মাধ্যমে আপনার মনের কষ্ট দূর করতে পারবেন আবার আপনার ক্ষতিও হবে না আলহামদুলিল্লাহ। ইসলাম কতো সুন্দর একটু চিন্তা করুন বিবেচনা করুন।আল্লাহ আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন।

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.