আমি কেন নাস্তিকধর্ম বিশ্বাস করি না ? part 19

খ্রিস্ট ধর্মে উত্তর না পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন রুশ নারী
-----------------------------------------------------

২০১৬ সালের ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় ২৩ বছর বয়সী রাশিয়ান নারী কাতিয়া কোতোভা প্রথমবারের মতো মস্কোর ক্যাথেড্রাল মসজিদে প্রবেশ করেন। তার মিশন হচ্ছে ইসলাম গ্রহণ করা।

এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কাতিয়া কোনো মসজিদের ভিতর পা রাখেন। প্রথমটি ছিল সেই শৈশবেই। সেই সময় তার নানী ৩ বছর বয়সী কাতিয়াকে তাদের স্থানীয় বাশকোরটোস্টানের একটি মসজিদে নিয়ে গিয়েছিলেন।

অতীত সেই স্মৃতি স্মরণ করে কাতিয়া বলেন, ‘আমি এখনো স্পষ্টভাবে সেই দৃশ্যটি স্মরণ করতে পারি। নারীরা উপরের তলায় প্রার্থনা করছিল এবং আমি সিঁড়ির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর গ্রাউন্ড ফ্লোরে মুসলিম পুরুষদের নামাজ আদায় দেখছিলাম।’

বাশকোরটোস্টানের অর্ধেকেরও বেশি ‘জাতিগত’ মুসলিম জনগোষ্ঠীর। এর অর্থ হচ্ছে তারা ঐতিহাসিক কারণেই সর্বদা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। আধুনিক রাশিয়ার সোভিয়েত যুগের অতীত নাস্তিকতার আলোকে এটি একটি সাধারণ পরিস্থিতি।

কাতিয়ার বাবা-মা দুজনেই ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। তার বাবা রাশিয়ান এবং ‘জাতিগত’ অর্থডক্স এবং তার মা তাতার জনগোষ্ঠীর ‘জাতিগত’ মুসলিম। তাদের দুজনের কেউই ধর্মীয় আচারনিষ্ঠ নয়।

তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম অনেক বেশি ধর্মীয় মনস্তাত্বিক ছিল। কাতিয়ার মুসলিম নানী তাকে ইসলামিক রীতিনীতির বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেন। অন্যদিকে, তার খ্রিস্টান বাবার দাদী তাকে খ্রিস্টান রীতির বিভিন্ন বিষয়ে দীক্ষা দেন। কাতিয়া নামাজের আয়াত সমূহ মুখস্থ বলতে পারেন। যদিও তিনি এসবের অর্থ না বুঝেই মুখস্থ করেছিলেন।

এসম্পর্কে কাতিয়া বলেন, ‘শৈশবে যখন কোনো কারণে আমি ভয় পেতাম, তখন আমি নামাজের আয়াত সমূহ স্মরণ করতাম।’

শৈশবজুড়ে কাতিয়ার ঘুমের সময় কেটেছে উভয় ধর্মের প্রার্থনার বাণী পড়ে বা শুনে। এটি যে সাধারণ রীতি নয় সেসম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন না।

১৩ বছর বয়সে তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি যা করেছেন তা সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্য নয়। এছাড়াও, কাটিয়াকে অর্থডক্স খ্রিস্টান হিসাবে তালিকাভূক্ত করা হয়। তাই তিনি মুসলিম প্রার্থনা পরিত্যাগ করার এবং ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তি পরিধান করার সিদ্ধান্ত নেন। কাতিয়ার বড় ভাইও অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ওই দিনগুলোতে খ্রিস্টান বিশ্বাসের রীতি দৃঢ়ভাবে মেনে চলেন।

এসময় কাতিয়ার মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয় কিন্তু কেউ তার জবাব দিতে পারত না। উদাহরণস্বরূপ, যিশু বা ঈসা মসিহ কোনো নবী নন, তিনি হলেন স্বয়ং ঈশ্বর-খ্রিস্ট ধর্মের এই ধারণাকে তিনি স্বীকার করতে পারেননি এবং পবিত্র ধ্বংসাবশেষের উপাসনার মতো অর্থোডক্সের কিছু রীতিনীতির সঙ্গে একমত হননি।

এসব চিন্তাধারা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। ১৮ বছর বয়সী কাতিয়া মস্কোতে আসেন। একজন আইনজীবী বা একজন তদন্ত কর্মকর্তা হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তিনি ‘অল রাশিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটি অব জাস্টিস’ এ ভর্তি হন।

একজন মুসলিম তরুণীর সঙ্গে কাতিয়া তার হোস্টেল কক্ষ শেয়ার করেন এবং তারা প্রায়ই ধর্ম সম্পর্কে যুক্তি-তর্কে লিপ্ত হতেন। নিজের পক্ষে উপযুক্ত যুক্তি দাঁড় করাতে কাতিয়া অর্থোডক্স এবং ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়ন শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের প্রতি তার আগ্রহ বাড়তে থাকে এবং এটি গ্রহণের জন্য দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন।

স্নাতক শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে কাতিয়া ‘তদন্ত কমিটি’ বিষয়ে একটি ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেন এবং সেখানে কাজ শুরু করার অভিপ্রায়ে কাতিয়া ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে সবাইকে অবাক করে দেন।

হিজাব পরে তদন্ত কমিটিতে কাজ করার বিষয়টি প্রশ্নের বাইরে ছিল না। তাই কাতিয়া তার ভবিষ্যতের অপশনগুলো বিবেচনা করার জন্য একটি ছোট বিরতির সিদ্ধান্ত নেন। এটি ছিল তার জীবনের কঠিন মুহূর্ত।

বর্তমানে তিনি দাগেসস্তানের একটি হালাল ক্যাফেতে একজন ওয়েট্রেস হিসাবে কাজ করছেন। দাগেসস্থানে রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস। বাড়ি ফিরে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান।

কাতিয়া বলেন, ‘মস্কোতে আমি নিরাপদ বোধ করি। হিজাব পরিধান নিয়ে আমি ভীত নই। এটা ঠিক যে হিজাবের কারণে প্রায়ই আমাকে মৌখিক অপব্যবহারের শিকার হতে হচ্ছে, তবে কোনো ধরনের শারীরিক আগ্রাসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। আপাতত মস্কো ছেড়ে যাবার কোনো পরিকল্পনা আমার নেই। ভবিষ্যতে যদি মস্কো ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেই, তবে আমি তাতারস্থানে যেতে চাই; যেখানে অনেক বেশি মুসলমানের বাস। সেখানে অনেক বেশি হিজাবি নারী এবং অনেক হালাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে।’

তিনি দৃঢ় ইচ্ছার স্বাধীন নারীদের গল্পে অনুপ্রাণিত হন। আলাপকালে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে আইরিনা সেন্ডলারের কখা বলেন। আইরিনা সেন্ডলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘ওয়ারশ ঘেটো’ থেকে প্রায় ২,৫০০ জন শিশুকে রক্ষা করেন।

এছাড়াও, প্রথম নারী মহাকাশচারী সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালেন্তিনা তেরেশকোভা এবং পাকিস্তানি তরুণী মানবাধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই এর গল্প তাকে দারুনভাবে অনুপ্রাণিত করে। নারী ও শিশুদের সাহায্য এবং পরিবারের সঙ্গে কাজ করার জন্য অদূর ভবিষ্যতে তিনি মানবাধিকার কর্মকাণ্ডে ফিরে যাবার আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘রুশ মানসিকতা বলে যে, প্রকাশ্যে আপনার নোংরা লিনেন কাপড় ধোয়া উচিত নয়। এর অর্থ হচ্ছে- পারিবারিক সহিংসতাসহ পারিবারিক সমস্যাসমূহ যা লোকজন প্রকাশ্যে বা অকপটভাবে বলতে চায় না। এটা নারীদের জন্য একটি সমস্যা। আমি বিশ্বাস করি পারিবারিক সংঘাতের বিষয়টি উভয় দিকেই জড়িত থাকা উচিত।’

কাতিয়া বলছেন যে ইসলামে নারীরা মুক্ত। ইসলামের গৎবাধাঁ চিন্তাধারা মুসলিম নারীদেরকে দুনিয়া থেকে আলাদা করে রেখেছে। তাদেরকে বাড়িতে পাখির খাঁচার মতো আবদ্ধ করে রাখছে। আর এটি করছে প্রথমত তাদের বাবা-মা এবং তারপর তাদের স্বামীরা।

তিনি বলেন, ‘ইসলাম অনুযায়ী, একজন স্ত্রী যদি চায় তবে, সে বাইরে কাজ করতে পারে এবং তা অবশ্যই হালালের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে। সেক্ষেত্রে তার স্বামী তাকে সমর্থন করতে বাধ্য। আমি মনে করি একজন নারীর উদ্দেশ্য হল তার পরিবারে শান্তি আনয়ন করা।’

এই মুহূর্তে কাতিয়ার প্রধান কাজটি হচ্ছে তার পরিবারকে শান্ত করা। তার ইসলামে ধর্মান্তর এবং হিজাব পরিধান করার সিদ্ধান্তে তার বাবা-মা আনন্দিত নয় এবং এজন্য কাতিয়াকে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করতে হতে পারে বলে তাদের ভয়।

তিনি বলেন, ‘ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমার বাবা-মা অবগত আছেন। আমার রক্ষণশীল পোশাক পরিধান এবং তাতার নারীদের মতো হিজাব পরিধান এর সব কিছুই তারা জানেন।’

তার বাবা-মা বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। ছুটিতে তিনি তার বাবা-মা’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করছেন।

রাশিয়া বিওয়ন্ড অবলম্বনে Edited by... MD Wãhiduzzaman Mãsum
==============================================================
ড. মুরিস বুকাইলী যেভাবে মুসলিম হলেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিত্রা ১৯৮১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আশির দশকের শেষের দিকে ফিরাউনের মমিকে নিয়ে প্রত্নতাত্তিক গবেষণার জন্য মিসরের কাছে অনুরোধ জানালেন। মিসরের সরকার তাতে রাজি হলে কায়রো থেকে ফিরাউনের লাশ এল প্যারিসে। প্লেনের সিড়ি থেকেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তার মন্ত্রীবর্গ ও ফ্রান্সের সিনিয়র অফিসারগণ মাথা নিচু করে ফিরাউনকে স্বাগত জানালেন।


ফিরাউনকে জাঁকালো প্যারেডের মাধ্যমে রাজকীয়ভাবে বরণ করে ফ্রান্সের প্রত্নতাত্তিক কেন্দ্রের একটা বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সার্জনরা রয়েছে আর তারা ফিরাউনের মমির ময়নাতদন্ত করে সেটা স্টাডি করবে ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন করবে।

মমি গবেষণার প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর ড. মরিস বুকাইলি। থেরাপিস্ট যারা ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন (ক্ষত অংশগুলো ঠিক করা) করতে চাচ্ছিল, আর ড. মরিস বুকাইলি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন যে কিভাবে ফিরাউন মারা গেল! পরিশেষে, রাতের শেষের দিকে ফাইনাল রেজাল্ট আসলো। যাতে বলা হয়েছে তার শরীরে লবণের অংশ আছে আর ইহাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে সে (ফিরাউন) ডুবে মারা গিয়েছিল আর মৃত্যু বরণের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র (লোহিত সাগর) থেকে তোলা হয়েছিল তারপর লাশ দ্রুত মমি করা হয়েছিল। এখানে ফিরাউনের মমিটি প্রফেসর মরিসকে হতবুদ্ধি করে দিল, যে কিভাবে এই মমি অন্য মমিদের তুলনায় সুরক্ষিত অবস্থায় থাকল, যা এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে। কারণ আদ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে আর প্রতিটি আদ্র বস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করে দিয়ে থাকে।

ড. মরিস ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করল যাতে তিনি বললেন: এটা একটা নতুন আবিস্কার। সেই সময় তাকে কেউ ফেরাউনের এই ডুবে যাওয়া মমি সম্পর্কে প্রকাশ্যে আলোচনা না করার পরার্মশ দেন, কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে এর প্রতিবাদ করে বললেন যে, এরকম একটা বিশাল আবিস্কার যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সহায়তা করবে সেটা জানানো যাবেনা!!

কেউ একজন তাকে বলল যে কুরআনে ফিরাউনের ডুবে যাওয়া ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা এসেছে। এই ঘটনা শুনে ডা. মরিস বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন, এটা কিভাবে সম্ভব?? এই মমি পাওয়া গিয়েছে মোটে ১৮৮১ সালে, আর কুরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে!! আর প্রাচীন আরবেরা তো মমি করার পদ্ধতিই জানতো না, মাত্র কয়েক দশক আগে তা আমাদের হাতে আবিস্কৃত হয়!! ড. বুকাইলি ফিরাউনের লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীরভাবে ভাবছিলেন যে, মুসলিমদের কুরআনে কিভাবে ফিরাউনের লাশ সংরক্ষণের কথা এসেছে??

ফিরাউনের মমি করা লাশের ভিডিও লিংক:- http://youtu.be/IXxCi7qPy4A

বাইবেলে ফিরাউন কর্তৃক মুসা (আ.)-এর পিছু নেয়ার কথা বলা আছে কিন্তু ফিরাউনের লাশের পরিনতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা নাই। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন আর ভাবতে ছিলেন যে, এটা কিভাবে ধারণা করা যায় যে, এই মমি যার সে মুসার (আ.)-এর পিছু নিয়েছিল? আর এটা কেমন করে সম্ভব যে, মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগেই এটা সম্পর্কে জানতেন?? এবং আরো অনেক কিছু…….।

ডা. মরিস সেই রাতে ঘুমাতে পারলেন না, তিনি তোরাহ (তাওরাত) আনালেন এবং সেটা পড়লেন। তোরাহতে বলা আছে, পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল, যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের কেউই বাঁচতে পারল না। ড. বুকাইলি আশ্চার্য হয়ে দেখলেন যে, তাওরাতে লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু বলা নাই!!

অতপার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম ময়নাতদন্তে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন ও আলোচনা করবেন। তিনি তথায় পৌছে ফিরাউনের লাশ ডুবে যাওয়া পরবর্তী সংরক্ষণের যে রেজাল্ট পেয়েছেন তা নিয়ে আলেচনা করেন, তখন একজন মুসলিম বিশেষজ্ঞ পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ড. বুকাইলিকে শুনালেন যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেনঃ-
““অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।”” [আল-কুরআন; সুরাঃ ১০, আয়াতঃ ৯২]

তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত ও অভিভূত হয়ে তখনি ইসলাম গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চ কন্ঠে ঘোষনা করলেন যে, আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং আমি এই কুরআনে বিশ্বাসী। [সুবহানাল্লাহ] ইসলাম গ্রহনের পর তার রচিত বই- বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান, এর তিনি ব্যাখ্যা দেন। ভিডিও লিংক:- http://youtu.be/crkq8HVvdm8

পোস্টের বাকি অংশ নিম্নের লিংকে...

http://rtn24.net/islami/12031
=====================================================
ডক্টর প্রমোদ কেশওয়ানী-এর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হৃদয়স্পর্শী কাহিনী♣
মাওলানা কলীম সিদ্দীকী ( দাঃ বাঃ ) অমুসলিমদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর এক গৌরবান্বিত নাম। ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফর নগর জেলার ফুলাত গ্রামের অধিবাসী তিনি। সেখানে তিনি দ্বীনি দাওয়াতের কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। তাঁর মাধ্যমে ভারতের বহু হিন্দু ইসলামের সত্যতায় আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন।
তাঁর ফুলাতস্থ ইসলামী কেন্দ্র থেকে ‘আরগুমান’ নামে উর্দু ভাষায় এক দাওয়াতী পত্রিকা বের হয়। তাঁর সুযোগ্য পুত্র মাওলানা আহমদ আওয়াহ নদভী নওমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতকার গ্রহণ করে ধারাবাহিকভাবে উক্ত পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। এখানে ডক্টর মুহাম্মদ কাশেম ( পূর্ব নাম- প্রমোদ কেশওয়ানী )-এর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সাক্ষাতকার প্রকাশ করা হল।
আহমদ আওয়াহঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আহমদ আওয়াহঃ ডক্টর সাহেব! আব্বার কাছে প্রায়ই আপনার কথা শুনেছি, তিনি দাওয়াতী অভিযানের আলোচনা করতে গিয়ে আপনার কথা আলোচনা করেছেন। তাই আপনার সাথে সাক্ষাতের খুব ইচ্ছা ছিল। আজ মন ভরে কথা বলা যাবে।
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ হ্যাঁ! আমারও মাওলানা সাহেবের পরিবারের লোকদের সাথে সাক্ষাতের খুব ইচ্ছা ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, আজ সেই ইচ্ছা পূরণ হল।
আহমদ আওয়াহঃ আপনার সম্ভবত জানা আছে যে, আমাদের ফুলাত থেকে ‘আরগুমান’ নামে একটি উর্দু পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এতে প্রায় দু’বছর থেকে দাওয়াতী কর্মীদের উপকারার্থে ইসলাম গ্রহণকারী নওমুসলিম ভাই-বোনদের সাক্ষাতকার প্রকাশ করা হচ্ছে। আপনার একটি সাক্ষাতকার নেয়ার খুবই ইচ্ছা। তাই আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ আমার কথা যদি দাওয়াতী কর্মীদের উপকারে আসে, তাহলে তাকে আমি আমার সৌভাগ্য বলবো।
আহমদ আওয়াহঃ আপনার জীবন সত্যিই আমাদের জন্য ঈর্ষাযোগ্য। প্রথমে আপনার পরিচয় দিন।
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ আমার পূর্ব নাম ছিল প্রমোদ কেশওয়ানী। আমি গুহটির কাস্ত পরিবারে ১৭ জানুয়ারী ১৯৭৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার বাবার নাম শ্রী হিনসরাজ কেশওয়ানী।
আমি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করি। এরপর গুহটি থেকে কম্পিউটার সাইন্সে বিএসসি পাশ করি। অতঃপর দিল্লী থেকে এমএসসিতে গোল্ড মেডেল পাই এবং নিউইয়র্কে কম্পিউটার সফটওয়্যারে পিএইচডি করি। আমার বড় ভাই অনুদ কেশওয়ানী খুব ভাল সার্জন। তিনি নিউইয়র্কেই থাকেন।
আমার পিতা বিজ্ঞানের লেকচারার ছিলেন। আমার নিউইয়র্কে অবস্থানকালীন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে আমেরিকার একটি সফটওয়্যার কোম্পানীর গাড়গাওয়া শাখার পরিচালক।
আল্লাহ তা’আলা আমাকে নিজ হেদায়েতের কারিশমা দেখিয়েছেন। এই জমীন থেকে উপরে পৃথক এক জগতে ৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৩ সালে আমাকে হেদায়েতের নেয়ামত দান করেছেন। আমি এমন স্থানে ইসলাম গ্রহণ করেছি সম্ভবত পুরো দুনিয়ায় আমরা দু’জন ছাড়া আর কেউ সেখানে হেদায়েত পেয়েছেন কিনা আমাদের জানা নেই।
আহমদ আওয়াহঃ সেই ঘটনা কী- আপনি কি অনুগ্রহ করে শোনাবেন?
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ আমরা ছোটবেলা থেকেই ধার্মিক হিন্দু পরিবারে লালিত হয়েছি। আমার দাদা মূলতঃ লক্ষৌর অধিবাসী ছিলেন। তিনি চাকরীর জন্য গুহাটি আসেন এবং এখানকার বাসিন্দা হয়ে যান। দীর্ঘদিন গুহাটি থাকা সত্ত্বেও আমাদের পরিবারে উর্দু বিশেষত লক্ষৌর কালচারের বেশ প্রভাব ছিল। তবে ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়ার দরূণ ধর্মের সাথে সম্পর্ক কিছুটা দূর্বল ছিল। আর দিল্লীতে থাকাকালীন এমন পরিবেশে ছিলাম- যেখানে ধর্মের কথা বললে গোঁয়া ও পশ্চাদপদ মনে করা হত। এরপর আমি নিউইয়র্কে চলে যাই। সেখানে তো ধর্ম-কর্মের নাম-গন্ধও ছিল না। সবার সাথে আমিও ছিলাম তথাকথিত আধুনিক।
আমার নিউইয়র্কে অবস্থানকালীনই ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা থেকে টিভি, পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য মিডিয়াসমূহ মুসলমানদের প্রতি সন্ত্রাসের অপবাদ লাগায়, ইসলামী সন্ত্রাস বলে খুবই অপপ্রচার করে।
মুসলমানদের ব্যাপারে আমার শুধু এতটুকুই ধারণা ছিল, ‘মুসলমান পুরোনো যুগের অবাস্তব কিচ্ছা-কাহিনীর বিশ্বাসী এক জাতি’। কিন্তু ১১ই সেপ্টেম্বরের পর মুসলমান বলতে যে বিরাট শক্তির কিছু আছে, ইসলাম কী? মুসলমান কারা? ইসলামের অনুসারীদের ধর্মের সাথে এত সম্পর্ক থাকে কেন? এবং কিভাবে তারা এত বড় কাজ করল, বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলমানদের দ্বারা বিশ্বের কি ক্ষতি হতে পারে এবং তারা কিভাবে বিশ্বনিরাপত্তার জন্য হুমকি? পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষ করে আমেরিকার লোকজনের মাঝে এ ধরণের নানা প্রশ্ন জাগছিল। একসময় তো মিডিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখে এমন কোন আমেরিকান দাঁড়িওয়ালা কোন মুসলমানকে দেখলেই ভয় পেত।
আমার ইসলাম গ্রহণের ৬ দিন পূর্বের ঘটনা। আমি নিউইয়র্কে ছিলাম। আমার ভাতিজাকে নিয়ে এক পার্কে ঘুরতে যাই। সেখানে একজন দাঁড়িওয়ালা মুসলমানকে দেখা গেল। আমার ভাতিজা তাকে দেখে ভয়ে আমার কাছে ছুটে এল। বলতে লাগল, আংকেল! ওই দেখ ওসামা। বালকটির এই বাক্যটি থেকেই আমার মানসিকতা এবং পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের চিন্তা-চেতনা অনুধাবন করা যাতে পারে।
এরপর আমি কোম্পানীর এক কাজে হেড অফিসে যাই। ইন্ডিয়া বিমানে আমার টিকেট কাটা ছিল। দুবাই থেকে অফিসের জন্য কিছু কেনা-কাটা করে কোম্পানীর একটি শাখায় জমা দেয়ার কাজ ছিল।
পাঁচদিন দুবাইয়ে অবস্থানের পর ৬ জানুয়ারী ২০০৩ ইন্ডিয়ার বিমানে উঠলাম। প্রায় শেষ পর্যন্ত আমার পাশের সিটটি খালিই ছিল। একেবারে শেষ মুহূর্তে বিমান আকাশে উঠার বিশমিনিট পূর্বে আপনার পিতা ( মাওলানা কালীম সিদ্দীকী দাঃ বাঃ ) আমার পাশের সিটে বসলেন।
আমি তাঁর সাথে হ্যান্ডশেক করলাম এবং তাঁর পরিচয় জানতে চাইলাম। তিনি নিজের নাম বললেন কালীম সিদ্দীকী। ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিলেন, দিল্লীর পাশেই থাকি। আমি উস্কানীমূলকভাবে এবং মজা করার জন্য তাঁকে বললাম, ভেরি গুড, খুব ভাল। আমার নাম বললাম উসামা। সম্ভবত আমার হাব-ভাব দেখে তিনি আমার ঠাট্টাকে অনুমান করতে পেরেছেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নাম উসামা? আমি বললাম, আসলে চার-পাঁচ দিন পূর্বে আমি নিউইয়র্কে ছিলাম। আমার ভাতিজাকে নিয়ে এক পার্কে ঘুরতে যাই। সেখানে এক দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তি এলেন। ভাতিজা তাকে দেখে ভয়ে দৌঁড়ে এসে বলল, আংকেল! দেখ উসামা আসছে। তাই একটু মস্করা করলাম আর কি!
মাওলানা সাহেব পরে আমাকে বলেছিলেন যে, আপনার কথা শুনে কিছুটা ব্যথিত হয়েছিলাম। কিন্তু চিন্তা করলাম যে, তিনঘন্টা তো এক সাথেই থাকবো, আল্লাহ যদি সম্মান রাখেন, তাহলে তাকে উসামা বানিয়েই বিমান থেকে নামবো ইনশাআল্লাহ।
তারপর বিমান আকাশে উঠার পূর্বেই আমার প্রকৃত পরিচয় দিলাম। অতঃপর মাওলানা সাহেবের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন, উজমান (ইউয়াইএ) একটি আরবী ও ইসলামী সেন্টার পরিচালনা করেন। আমি তাঁকে বললাম, আপনি তো তাহলে ইসলাম সম্বন্ধ ভাল জ্ঞান রাখেন। বহুদিন যাবত ইসলাম সম্বন্ধে জানার জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের সন্ধান করছি। ভালই হল, আপনার থেকে কিছু জানা যাবে। মাওলানা সাহেব বললেন, ইসলাম তো অনেক বড় জিনিস। এ সম্পর্কে সবকিছু জানাও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে যতটুকু সম্ভব আপনার স্পৃহা মেটাতে চেষ্টা করব।
বিমান আকাশে উঠতে শুরু করলো, আমিও কথা চালিয়ে গেলাম। মাওলানা সাহেবকে প্রশ্ন করলাম, বলুনতো- ধর্মওয়ালারা বলেন যে, এই পৃথিবীর স্রষ্টা ও পরিচালনাকারী এক ভগবান (ঈশ্বর)। তিনিই পৃথিবীর স্রষ্টা এবং তিনিই সকল কাজ পরিচালনা করছেন। এখন তো সাইন্সের যুগ। প্রত্যেকটি চিন্তা-ভাবনাকে যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। আপনার কাছে কি এর কোন প্রমাণ আছে যে, পৃথিবীর একজন স্রষ্টা আছেন?
মাওলানা সাহেব বললেন, আপনি কম্পিউটার সাইন্সে ডক্টর হওয়া সত্ত্বেও পুরোনো যুগের এক বৃদ্ধার মত কথাও আপনি বুঝছেন না। সেই বৃদ্ধাকে কোন ব্যক্তি আপনার মতো একটি প্রশ্ন করল যে, মা! বলুন তো এই পৃথিবীর স্রষ্টা কি আছেন এবং স্রষ্টা কজন? তিনি উত্তর দিলেন, অবশ্যই এই পৃথিবীর স্রষ্টা আছেন এবং স্রষ্টা মাত্র একজনই আছেন। প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি এ কথা কিসের ভিত্তিতে বলছেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমার তাঁত (চরখা) আমাকে এ কথা বলেছে। জিজ্ঞাসাকারী জানতে চাইল, এ আবার কিভাবে? তিনি বললেন, আমি যখন তাঁত পরিচালনা করি, তখন সুন্দরভাবে চলতে থাকে। যদি চালানো বন্ধ করে দেই, তাহলে বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমার বুঝে আসল, যদি একটি সাধারণ তাঁত কারও চালানো ছাড়া চলতে না পারে, তাহলে এই সারা বিশ্ব, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-তারা, রাত-দিন, শীত-গরম ইত্যাদি কোন পরিচালক ছাড়া কিভাবে চলবে? সুতরাং, এর পিছনে অবশ্যই কোন পরিচালক আছেন। তিনিই তা পরিচালনা করছেন।
অপরদিকে আমার তাঁতে যদি একটি বাচ্চাও সুতায় হাত লাগায়, তাহলে সুতো পৃথক হয়ে যায় এবং পুরো ব্যবস্থা উলট-পালট হয়ে যায়। এতে বুঝা যায়- এ পৃথিবী ও গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদি সকলকিছুর স্রষ্টা ও পরিচালক মাত্র একজনই। এ জন্য যে, আমার তাঁতে ছোট একটি বাচ্চা তার একটু আঙ্গুল লাগানোর ফলে আমার পুরো তাঁতের অবস্থা উলট-পালট হয়ে যায়। তেমনি যদি একজন প্রতিপালক না হয়ে কয়েকজন থাকত, তাহলে এই বিশ্বের ব্যবস্থাপনাও সব উলট-পালট হয়ে যেত।
এরপর মাওলানা সাহেব বললেন, কুর’আনে হাকীম এ কথাটি এভাবে বর্ণনা করেছে যে, “ আল্লাহ ব্যতীত যদি আরও প্রভু থাকতেন তাহলে এই আসমান ও জমীনে ফাসাদ সৃষ্টি হত ”। অর্থাৎ যদি নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য থাকতেন, তাহলে উভয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব হত। একজন বলতেন, আজকের দিনটি বড় হবে; অন্যজন বলতেন, না, আজকের দিনটি ছোট হবে। একজন বলতেন, এখন শীত হবে; অন্যজন বলতেন, না, এখন গরম হবে। একজন বলতেন, এখন বৃষ্টি হবে; অন্যজন বলতেন, না, রোদ উঠবে। তেমনি কোন একজন তাঁর উপাস্যদের সাথে কোন কিছুর ওয়াদা করে ফেলতেন; অন্যজন তার প্রতিবাদ করতেন। এভাবে সৃষ্টিজগতে বিশৃংখলা দেখা দিত। কিন্তু আমরা দেখছি যে, এই দুনিয়া সুন্দর ও সঠিক পদ্ধতিতে নির্বিঘ্নে চলছে। এই পুরো একক নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিই বলছে যে, এর স্রষ্টা ও পরিচালক একজন মাত্র। তিনি একমাত্র আল্লাহ। এই এক মালিক ও স্রষ্টা মহান আল্লাহ-ই পুরো দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনাকারী।
অতঃপর মাওলানা সাহেব বললেন, আল্লাহ তা’আলা মানুষের ফিতরাতে বা নেচারে এই বৈশিষ্ট্য রেখেছেন যে, কোন তৈরী করা জিনিস দেখে তার প্রস্তুতকারককে চিনতে পারে এবং তার বীরত্বকে বুঝতে পারে। একটু খেয়াল করুন, আপনি যখন কোন ভাল খাবার খান, তখন ওই খাবারের স্বাদ থেকে আপনার মন প্রথমে ঐ দিকে যায় যে, এই খাবার কে রান্না করেছে? কোন ভাল সেলাইকৃত কাপড় দেখেই আপনার মনে প্রশ্ন জাগে যে, এই কাপড় কোন টেইলার সেলাই করেছে? কোন কারুকার্যময় বিল্ডিং দেখে প্রথমে মনে এই প্রশ্ন জাগে, ওই বিল্ডিংটি এরূপ সুন্দর করে কে বানিয়েছেন? মোটকথা কোন কারিগরী জিনিস দেখলে মানুষ তার কারিগরকে চেনার এবং সৃষ্টিকে দেখে তার স্রষ্টাকে জানার আগ্রহ জন্মগতভাবেই পোষণ করে। এই বিশাল পৃথিবীর এত সুন্দর সুন্দর জিনিস, এই তারকাসজ্জিত আলোকময় আকাশ, চন্দ্র-সূর্য, আসমান-জমীন, ফুল-ফল, পাহাড়-সমুদ্র, জীব-জন্তু ও কীট-পতঙ্গ এবং দিন-রাতের পরিক্রমা সবকিছুই সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং আপনার-আমার অন্তরও এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এসব বস্তুর স্রষ্টা কোন প্রজ্ঞাময় ও সর্বশক্তিমান মালিক অবশ্যই আছেন। আর তিনিই হলেন মহান আল্লাহ।
মাওলানা সাহেবের এই সাদামাটা উদাহরণের মাধ্যমে বড় একটি বিষয় এত সহজে বুঝিয়ে দেয়ায় আমি ভিতর থেকে খুবই প্রভাবিত হলাম। মনে মনে বললাম, লোকটি তো ভাল জ্ঞানী। খুবই যুক্তি-প্রমাণের সাথে আলোচনা করেন।
এরপর আমি তাঁর যুক্তির ভিত্তি ধরেই প্রশ্ন উত্থাপন করলাম যে, আপনি বলেছেন, আপনার আমার অন্তরও সাক্ষী দেয় যে, এই ধরার স্রষ্টা ও পরিচালক একজন আছেন। সেটা না হয় মানলাম। কিন্তু সেইজন্য কোন কিতাব বা ধর্ম মানতে হবে কেন? নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা চিন্তা-ভাবনা করে মানলেই তো হয়। এতে অসুবিধা কী?
মাওলানা সাহেব উত্তরে বললেন, বাহ! ডঃ সাহেব, আপনি দেখি খুব আশ্চর্য মানুষ! আপনি বাজপেয়ীকে ( তৎকালীন ভারতের সরকার ) মানবেন যে, ভারতের কোন পরিচালক আছেন, কিন্তু ভারতের সংবিধান মানবেন না, এ আবার কেমন কথা! সরকারকে মানলে তো সংবিধানকেও মানতে হয়। তেমনি এই পৃথিবীর একজন মালিক যেহেতু মানা হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই তার সংবিধানও মানতে হবে। পৃথিবীর সেই মালিক নিজের পক্ষ থেকে মানুষের জীবনযাপনের জন্য যেই নিয়ম-কানুন প্রদান করেছেন, তাকেই ধর্ম বলে এবং তাঁর এ সংক্রান্ত পাঠানো বার্তাকে কিতাব বলে। সুতরাং, এই ধর্ম ও ধর্মের কিতাবকে মানা ব্যতীত পৃথিবীর মালিক অর্থাৎ স্রষ্টা আল্লাহকে মানাও অকল্পনীয়।
এরপর মাওলানা সাহেব বললেন, ডক্টর সাহেব! এই বিষয়টি আপনার বুঝা খুবই জরুরী যে, ঐ মালিক যিনি আপনাকে এবং সকল মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি এই দুনিয়ার একক মালিক ও মহান বাদশাহ। ঐ মালিক যেহেতু এক, তাঁর পক্ষ থেকে পাঠানো সত্যধর্ম ও সংবিধান একটিই। মানুষকে আল্লাহ তা’আলা বুদ্ধি দিয়েছেন। এটা মানুষের দায়িত্ব যে, সে ঐ সত্য ধর্মকে জানবে এবং মানবে। ঐ আল্লাহ তা’আলা তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ পবিত্র কুর’আনে স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন- সেই সত্যধর্ম একমাত্র ইসলাম। মানুষের সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামই একমাত্র সত্যধর্ম। যে ব্যক্তি এক মালিককে এবং তাঁর প্রদত্ত একমাত্র সত্যধর্ম ইসলামকে না মানবে, সে এই দুনিয়ায় স্রষ্টাদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার এই পৃথিবীর কোন জিনিস থেকে উপকৃত হবার অধিকার নেই। সে আল্লাহর জমীনে থাকার নাগরিকত্ব পাবে না। রাষ্ট্রদ্রোহীর শাস্তি হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তেমনি সেই মালিকের কাছেও ঈমানহীন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জাহান্নামের জেল। তদুপরি দুনিয়াতেও তিনি যে কোন সময় শাস্তি দিতে পারেন। অন্যথায় মৃত্যুর চেকপোস্টে যখন মানুষ ইহকাল ত্যাগ করে পরকালের জীবনে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তা’আলার ইমিগ্রেশন স্টাফ ফেরেশতাগণ সর্বপ্রথম তার ঈমানের চেক করবেন। তখন ঈমান না থাকলে সেখানে সে আটকা পড়ে যাবে। আর পরিণামে নিক্ষিপ্ত হবে মহাশাস্তির চিরস্থায়ী জাহান্নামে। সুতরাং ঈমান ব্যতীত পরকালে মুক্তির কোনই উপায় নেই।
এ পর্যন্ত বলে মাওলানা সাহেব আমার হাত ধরে বসলেন এবং বললেন, ডঃ সাহেব! আপনি আমার সাথে সফর করছেন। আর এ কথার উপর আমার বিশ্বাস আছে যে, আমরা সকলেই আদি হিসেবে এক মা-বাবার সন্তান এবং রক্তের সম্পর্কের ভাই। তদুপরি এখন তো আপনি আমার সফরসঙ্গী। আর সফরসঙ্গীর প্রতি অনেক দায়িত্ব থাকে। তাই আপনার প্রতি ভালবাসার দাবিতে অন্তর থেকে বলছি যে, মৃত্যুর কোন ঠিক-ঠিকানা নেই, কখন চলে আসে জানা নেই, সুতরাং ঈমান কবুল করা এখনই প্রয়োজন। তাই অনুরোধ করছি, আপনি কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে যান।
আমি মাওলানা সাহেবকে বললাম, আপনার কথাতো খুবই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে। আমি অবশ্যই এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবো। তবে ধর্ম পরিবর্তন করা এতো সাধারণ ব্যাপার নয় যে, এত দ্রুত ধর্ম পরিবর্তন করে ফেলবো।
মাওলানা সাহেব বললেন, এই সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই নেয়া দরকার। আগেই বলেছি, মৃত্যুর কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। আপনি চিন্তা-ভাবনা করার জন্য যে হায়াত পাবেন সেই গ্যারেন্টিও নেই। তাই ডঃ সাহেব! আপনি আমাকে কষ্ট দিবেন না। এখনই কালেমা পড়ে নিন।
আমি মাওলানা সাহেবকে বললাম, আমাকে কিছু সময় দিন। মাওলানা সাহেব বললেন, সময় ক্ষেপনে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই এখনই কালেমা পড়ে নিন। কেননা, চারদিন পূর্বে আমেরিকা থেকে লিবিয়া যাওয়ার সময় একটি বিমান এক্সিডেন্ট হয়ে পড়ে যায়। আল্লাহ না করুন, আমাদের বিমানও যদি নামার সময় কোন এক্সিডেন্ট হয়, তাহলে আর সময় থাকবে কোথায়? তখনতো ঈমানহারা হয়ে পরকালে যেতে হবে।
এমনি করে দীর্ঘ সময় ধরে মাওলানা সাহেব আমাকে বুঝাতে থাকেন এবং বারবার অস্থির হয়ে বলতে থাকেন, দেরী করবেন না! জলদি মুসলমান হয়ে যান। জানি না, আপনার মৃত্যু চলে আসে, না আমিই মারা যাই।
মাওলানা সাহেব আমাকে যুক্তি দিয়ে বুঝালেন যে, ইসলামই একমাত্র সঠিক ও পালনীয় ধর্ম। আর আল্লাহর প্রেরিত অন্যান্য ধর্মকে সঠিক বলে বিশ্বাস করা হলেও সেগুলো এখন পালন করা যাবে না। পালন করা হবে একমাত্র ইসলামকে। এর প্রমাণ করা হিসেবে মাওলানা সাহেব আমাদের দেশ ভারতের রাষ্ট্র পরিচালনার উদাহরণ দিলেন যে, এখন থেকে পূর্বের সকল প্রধানমন্ত্রী সঠিক ছিলেন এ কথা সবাই বিশ্বাস করেন, কিন্তু সকলে এখন বাজপেয়ীর বিধান মেনে চলেন। কারণ, তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তেমনি পূর্বের সকল নবীর ধর্মকে সঠিক বলে বিশ্বাস করার পাশাপাশি শুধু বর্তমান নবীর ধর্মকেই মানতে হবে। অন্য কোন ধর্ম মানা যাবে না। এভাবে যুক্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করে তিনি আমার অন্তরকে পরিতৃপ্ত করে দিলেন।
মৃত্যুর পর বেহেশত-দোযখ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠালাম যে, মৃত্যুর পরে মানুষ পচে গলে যাবে। পুনরুত্থিত হয়ে বেহেশতে-দোযখে যাবে-তা কে গিয়ে দেখেছে? তিনি এর জবাবে প্রথমে সত্যনবীর হাদীস ও সত্য কুর’আনের কথা বললেন। অতঃপর উদাহরণ স্বরূপ একটি মাছের ঘটনা শুনালেন। যার দ্বারা আমার বিষয়টি বুঝতে দেরী হল না।
তারপর হঠাৎ করে আমার দীর্ঘদিনের একটি প্রশ্ন মনে পড়লো। আমি মাওলানা সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা বলুনতো- মুসলমানদের নিজ ধর্মের প্রতি এত বিশ্বাস কেন? আমাদের হিন্দুদের মধ্যে এমন হয় না কেন? মাওলানা সাহেব উত্তরে বললেন, মানুষের একীন ও বিশ্বাস সত্যের উপরে হয়, মিথ্যার উপর নয়। কারণ, মিথ্যার উপর মানুষের সন্দেহ থেকে যায়। কুর’আন হল ইসলামের মূল বাণী। তা অবিকৃতরূপে ও লক্ষ লক্ষ হাফেজের মাধ্যমে হিফজ-পরম্পরায় সুরক্ষিতভাবে আমাদের নিকট বিদ্যমান রয়েছে। আর তার বাহক সর্বশেষ নবীর হাদীস এবং তাঁর সমগ্র জীবন ইতিহাসের মাধ্যমে বিশুদ্ধ সনদে আমাদের কাছে উপস্থিত আছে। তাই আমরা ইসলামের প্রতিটি কথার অন্তর থেকে বিশ্বাস করি। এই ইসলাম ও কুর’আন-হাদীস এমন সত্য নবীর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছেছে, যাকে দুশমনরাও প্রকৃত সৎ ও আমানতদার বলতো। এমনকি মানুষ তাঁর নামই রেখে দিয়েছিল আল-আমীন অর্থ- সত্যবাদী আমানতদার।
এভাবে বিভিন্ন উপায়ে মাওলানা সাহেব আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বুঝাতে লাগলেন এবং কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য বলতে লাগলেন। মাওলানা সাহেবের বারবার ইসলাম গ্রহণ করার এবং মুসলমান হওয়ার জন্য যুক্তিপূর্ণ আলোচনা ও পীড়াপীড়ি এক সময় আমার অন্তরে দাগ কাটলো।
কিন্তু ধর্ম পরিবর্তন করা এত সহজ কাজ ছিল না। তবে এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলাম। তারপর একাকী বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য অন্তরে তাকীদ অনুভব করলাম। এ পর্যায়ে আমি পেশাবের বাহানায় বিমানের টয়লেটে চলে গেলাম। টয়লেট থেকে ফিরে আমার আসনে না বসে একদিক দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ চিন্তা করতে লাগলাম যে, এই লোকটি আমার কোন আত্মীয়-স্বজন নন। আমার থেকে তাঁর কোন চাওয়া-পাওয়াও নেই। তিনি এমন সুশিক্ষিত বিদ্বান যে, যথার্থ যুক্তি দিয়ে তিনি আমাকে সব বুঝিয়েছেন। আমি একজন ডক্টর-শিক্ষিত মানুষ। বিষয়টি যেহেতু আমার কাছে শতভাগ পরিষ্কার, তাই আমার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সমাজে কি বললো আর না বললো, এ ধরণের চিন্তা করা মূর্খতা। এটা আধুনিক যুগ। কমপক্ষে আমার মত সাইন্সে পিএইচডি করা প্রত্যেক ব্যক্তিরই শতভাগ স্বাধীন চিন্তার মানসিকতা থাকা উচিত। এমন বিভিন্ন চিন্তা-ফিকিরের পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এই সৎ ব্যক্তির আন্তরিকতা পূর্ণ দাওয়াতকে ফিরিয়ে দেয়া আমার জন্য উচিত হবে না।
মাওলানা সাহেব আমাকে পরে বলেছেন যে, তিনি দুবাই সফরে খুবই ব্যথিত ছিলেন। তিনি বলেন, আপনি যখন আসন ছেড়ে উঠে চলে গেলেন, তখন আমার মালিকের আবেগ আপ্লুত হয়ে দু’আ করলাম- হে আল্লাহ! আপনিই অন্তরের অবস্থাকে পরিবর্তনকারী! আপনি তার অন্তরকে ইসলামের জন্য খুলে দিন। আপনার ভাঙা দিলওয়ালা বান্দা খুবই ব্যথিত। হে আমার আল্লাহ! আপনি এর মাধ্যমে আমার মনটাকে খুশি করে দিন।
আহমদ আওয়াহঃ এরপর কী হল?
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ সিদ্ধান্ত তো উপর থেকেই হয়েছিল। খুবই বিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ের সাথে আসনে গিয়ে বসলাম। এখনও আমার সেই আত্মপ্রত্যয়ের স্বাদ অনুভব হয়। যেমন কোন সৈনিক কোন এক জগত বিজয় করে বসলো। আমি মাওলানা সাহেবকে বললাম, আমাকে মুসলমান করে নিন। মাওলানা সাহেব আনন্দের আতিশায্যে আমার হাতে চুমু খেলেন এবং অত্যন্ত খুশী মনে আমাকে কালেমা পড়ালেন। আর আমার ইসলামী নাম রাখলেন মুহাম্মদ কাশেম। অতঃপর আমাকে বললেন, এই ইসলাম আপনার মালিকানাধীন নয়, বরং আমানত। আর আপনি হলেন কাশেম ( বণ্টনকারী )। আমাদের নবীর একটি উপাধি ছিল ‘কাশেম’। এখন এই আমানতটি সকলের কাছে পৌঁছাতে হবে।
ইতোমধ্যে বিমান থেকে ঘোষনা দেয়া হল, আমরা দিল্লীতে পৌঁছতে যাচ্ছি। বিমান অবতরণ করলো। আমরা দু’জন একই সাথে একই ধর্মের সাথে জমীনে নামলাম- যদিও একই ধর্মের সাথে বিমানে উঠেছিলাম না। এরপর আমি আমার লাগেজ থেকে মিষ্টির ঐ প্যাকেটটিই বের করলাম- যা আমার পূর্বের ধর্মের গুরুর জন্য নিয়ে এসেছিলাম। সেই মিষ্টি বের করে আনন্দের সাথে মাওলানা সাহেবের সামনে পেশ করলাম। এরপর প্রশান্ত চিত্তে ঘরে ফিরলাম।
এবার একটি চুটকি শুনাই। মাওলানা সাহেবের ফুলাত পৌঁছে মনে হল, আমার নাম প্রমোদের স্থানে উসামা রাখা উচিত ছিল। তিনি আমাকে ফোন করে বললেন, ভুলে গিয়ে আপনার নাম মুহাম্মদ কাশেম রেখেছি। আপনি তো আপনার নাম উসামা রেখেছিলেন। আমি বললাম, জি-না মাওলানা সাহেব! মানুষ আমাকে বাঁচতে দিবে না। হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-এর এক নাম কাশেম। তা উসামা থেকে অনেক উত্তম। মাওলানা সাহেব হাসতে হাসতে ফোন রেখে দিলেন।
আহমদ আওয়াহঃ আপনি কাশেম নামের কি দায়িত্ব পালন করেছেন?
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ আমি তো তেমন কোন হক আদায় করতে পারিনি। তবে আমার একমাত্র ভাই যিনি আমেরিকায় থাকেন, তিনি একজন বড় ডাক্তার, তার জন্য হেদায়েতের দু’আ করেছিলাম। সেপ্টেম্বর মাসে তার চিঠি এল যে, তিনি তার নার্সিং এক মুসলমান নার্সের আচরণে প্রভাবিত হয়ে মুসলমান হয়ে গিয়েছেন এবং ঐ নার্সকে বিবাহও করেছেন। অবশ্য এটা তার দ্বিতীয় বিবাহ।
আহমদ আওয়াহঃ তার ইসলাম কবুল করায় এবং মুসলিম নার্সকে বিবাহ করায় আপনার ভাবীর পক্ষ থেকে বাঁধা আসেনি?
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ শুনেছি, শুরুতে তিনি খুবই ক্ষিপ্ত ছিলেন। হিন্দুস্থানে ফিরে আসতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু এ কথা শুনে খুবই আশ্চর্য লাগলো যে, ঐ মুসলমান নার্সের সেবা ও আচার-আচরণে প্রভাবিত হয়ে তিনিও মুসলমান হয়ে গিয়েছেন।
আহমদ আওয়াহঃ আপনার কথাগুলো খুবই চমকপ্রদ। আল্লাহ তা’আলা এভাবেই আপনার ঈমানকে মধুময় করুন।
আপনি বলেছিলেন যে, আপনাকে আসমান ও জমীনের মধ্যস্থানে (বিমানে) হেদায়েত দান করেছেন। এক্ষেত্রে আপনি বলেছিলেন যে, আপনারা দু’জন ওই সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তিটি কে?
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ মাওলানা সাহেব বলেছিলেন যে, উনার পীর মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ) কাউকে বিমানে কালেমা পড়িয়েছিলেন।
আহমদ আওয়াহঃ ইসলাম গ্রহণের পর আপনি ইসলামের বিধি-বিধান ও আমল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন কিভাবে করেছেন?
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ আমি গুরগাও-এ একজন মাওলানা সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেছি। প্রতিদিন রাতে একঘণ্টা অথবা আধা ঘণ্টার জন্য যাই। মহান আল্লাহর শোকর যে, আমি কুর’আন শরীফ পড়া শিখে ফেলেছি এবং নামাযের যাবতীয় মাসায়েল জানাযার নামাযের নিয়মসহ সম্পূর্ণ শিখে ফেলেছি। আর অধিকতর ইসলামের জ্ঞান লাভের জন্য আমি প্রতিদিন কোন না কোন কিতাব পড়ি।
আহমদ আওয়াহঃ আপনার কি বিবাহ হয়েছে?
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ আলহামদুলিল্লাহ, মুম্বাইয়ের এক শিক্ষিত দ্বীনদার মুসলিম পরিবারে আমার বিবাহ হয়েছে।
আহমদ আওয়াহঃ ডক্টর সাহেব! আপনার অনেক অনেক শুকরিয়া। আপনি কি পাঠক-পাঠিকার জন্য কোন পয়গাম দিবেন?
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ আমার পয়গাম শুধু এতটুকুই যে, ইসলাম যেহেতু একটি সত্যধর্ম, আর এই সত্য সবার জন্য, তাই একে আমাদের সবার কাছে পৌঁছানো উচিত। মানুষ তো সত্যের সামনে দূর্বল হয়ে যায়। তাই সে যথার্থ প্রক্রিয়ায় সত্যের দাওয়াত পেলে অবশ্যই সত্যকে গ্রহণ করবে।
আহমদ আওয়াহঃ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নওমুসলিম ডঃ কাশেমঃ আসলে ধন্যবাদ তো আপনাদেরকে দেয়া উচিত। আপনারা মাওলানা সাহেবের পরিবার দ্বীনের জন্য অনেক কষ্ট-মেহনত করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তা’আলা আপনাদেরকে এর পরিপূর্ণ জাযা দান করুন। ( আমীন )
( তথ্যসূত্রঃ মূল মাসিক আরগুমান- মার্চ,২০০৫, মাসিক আদর্শ নারী- নভেম্বর,২০১১ )
Friday, September 6, 2013



No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.