আমি কেন নাস্তিকধর্ম বিশ্বাস করি না ? part 8

আমি কেন নাস্তিকধর্ম বিশ্বাস করি না ?
========================
ড. গ্যারি মিলার ছিলেন কানাডার একজন খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারক। তিনি পবিত্র কুরআনের ভুল খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন, যাতে ইসলাম ও কুরআন বিরোধী প্রচারণা চালানো সহজ হয়। কিন্তু ফল হয়েছিল বিপরীত। তিনি বলেন, আমি কোন একদিন কুরআন সংগ্রহ করে তা পড়া শুরু করলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম কুরআন নাযিল হয়েছিল আরবের মরুচারীদের মধ্যে। তাই এতে নিশ্চয় মরুভূমি সম্পর্কে কথা থাকবে। কুরআন নাযিল হয়েছিল ১৪০০ বছর আগে। তাই খুব সহজেই এতে অনেক ভুল খুঁজে পাব ও সেসব ভুল মুসলিমদের সামনে তুলে ধরব বলে সংকল্প করেছিলাম। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা ধরে কুরআন পড়ার পরে বুঝলাম আমার এসব ধারণা ঠিক নয়, বরং এমন একটা গ্রন্থে অনেক আকর্ষণীয় তথ্য পেলাম। বিশেষ করে সূরা নিসার ৮২ নম্বর আয়াতটি আমাকে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত করে। সেখানে আল্লাহ বলেন, ‘এরা কী লক্ষ্য করে না কুরআনের প্রতি? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে নাযিল হ’ত, তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত’। খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারক গ্যারি মিলার এভাবে ইসলামের দোষ খুঁজতে গিয়ে মুসলিম হয়ে যান।তিনি বলেছেন, ‘আমি খুব বিস্মিত হয়েছি যে, কুরআনে ঈসা (আঃ)-এর মাতা মারিয়ামের নামে একটি বড় পরিপূর্ণ সূরা রয়েছে। আর এ সূরায় তাঁর এত ব্যাপক প্রশংসা ও সম্মান করা হয়েছে যে, এত প্রশংসা বাইবেলেও দেখা যায় না। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নাম মাত্র ৫ বার এসেছে। কিন্তু ঈসা (আঃ)-এর নাম এসেছে ২৫ বার। আর এ বিষয়টি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে আমার ওপর ব্যাপক প্রভাব রেখেছে’।
=========================
♦ ♦ আল কুরআন ও বিজ্ঞান
 ♠ডক্টর. মরিস বুকাইলী যেভাবে মুসলিম হলেনঃ
 ♣ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিত্রা ১৯৮১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আশির দশকের শেষের দিকে ফিরাউনের মমিকে নিয়ে প্রত্নতাত্তিক গবেষণার জন্য মিসরের কাছে অনুরোধ জানালেন। মিসরের সরকার তাতে রাজি হলে কায়রো থেকে ফিরাউনের লাশ এল প্যারিসে। প্লেনের সিড়ি থেকেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তার মন্ত্রীবর্গ ও ফ্রান্সের সিনিয়র অফিসারগণ মাথা নিচু করে ফিরাউনকে স্বাগত জানালেন!!!
ফিরাউনকে জাঁকালো প্যারেডের মাধ্যমে রাজকীয়ভাবে বরণ করে ফ্রান্সের প্রত্নতাত্তিক কেন্দ্রের একটা বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড়  সার্জনরা রয়েছে আর তারা ফিরাউনের মমির ময়নাতদন্ত করে সেটা স্টাডি করবে ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন করবে।
মমি গবেষণার প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর ড. মরিস বুকাইলি। থেরাপিস্ট যারা ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন (ক্ষত অংশগুলো ঠিক করা) করতে চাচ্ছিল, আর ড. মরিস বুকাইলি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন যে কিভাবে ফিরাউন মারা গেল! পরিশেষে, রাতের শেষের দিকে ফাইনাল রেজাল্ট আসলো। যাতে বলা হয়েছে তার শরীরে লবণের অংশ আছে আর ইহাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে সে (ফিরাউন) ডুবে মারা গিয়েছিল আর মৃত্যু বরণের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র (লোহিত সাগর) থেকে তোলা হয়েছিল তারপর লাশ দ্রুত মমি করা হয়েছিল। এখানে ফিরাউনের মমিটি প্রফেসর মরিসকে হতবুদ্ধি করে দিল, যে কিভাবে এই মমি অন্য মমিদের তুলনায় সুরক্ষিত অবস্থায় থাকল, যা এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে। কারণ আদ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে আর প্রতিটি আদ্র বস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করে দিয়ে থাকে।
ড. মরিস ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করল যাতে তিনি বললেন: এটা একটা নতুন আবিস্কার। সেই সময় তাকে কেউ ফেরাউনের এই ডুবে যাওয়া মমি সম্পর্কে প্রকাশ্যে আলোচনা না করার পরার্মশ দেন, কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে এর প্রতিবাদ করে বললেন যে, এরকম একটা বিশাল আবিস্কার যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সহায়তা করবে সেটা জানানো যাবেনা!!
কেউ একজন তাকে বলল যে কুরআনে ফিরাউনের ডুবে যাওয়া ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা এসেছে। এই ঘটনা শুনে ডা. মরিস বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন, এটা কিভাবে সম্ভব?? এই মমি পাওয়া গিয়েছে মোটে ১৮৮১ সালে, আর কুরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে!! আর প্রাচীন আরবেরা তো মমি করার পদ্ধতিই জানতো না, মাত্র কয়েক দশক আগে তা আমাদের হাতে আবিস্কৃত হয়!! ড. বুকাইলি ফিরাউনের লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীরভাবে ভাবছিলেন যে, মুসলিমদের কুরআনে কিভাবে ফিরাউনের লাশ সংরক্ষণের কথা এসেছে??
 ♦বাইবেলে ফিরাউন কর্তৃক মুসা (আ.)-এর পিছু নেয়ার কথা বলা আছে কিন্তু ফিরাউনের লাশের পরিনতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা নাই। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন আর ভাবতে ছিলেন যে, এটা কিভাবে ধারণা করা যায় যে, এই মমি যার সে মুসার (আ.)-এর পিছু নিয়েছিল? আর এটা কেমন করে সম্ভব যে, মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগেই এটা সম্পর্কে জানতেন?? এবং আরো অনেক কিছু.......।
ডা. মরিস সেই রাতে ঘুমাতে পারলেন না, তিনি তোরাহ (তাওরাত) আনালেন এবং সেটা পড়লেন। তোরাহতে বলা আছে, পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল, যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের কেউই বাঁচতে পারল না। ড. বুকাইলি আশ্চার্য হয়ে দেখলেন যে, তাওরাতে লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু বলা নাই!!
অতপার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম ময়নাতদন্তে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন ও আলোচনা করবেন। তিনি তথায় পৌছে ফিরাউনের লাশ ডুবে যাওয়া পরবর্তী সংরক্ষণের যে রেজাল্ট পেয়েছেন তা নিয়ে আলেচনা করেন, তখন একজন মুসলিম বিশেষজ্ঞ পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ড. বুকাইলিকে শুনালেন যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেনঃ-
 ♥"“অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।"” [আল-কুরআন; সুরাঃ ১০, আয়াতঃ ৯২]
তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত ও অভিভূত হয়ে তখনি ইসলাম গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চ কন্ঠে ঘোষনা করলেন যে, আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং আমি এই কুরআনে বিশ্বাসী। [সুবহানাল্লাহ]
ইসলাম গ্রহনের পর তার রচিত বই- বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান, এর তিনি ব্যাখ্যা দেন।
ডা. মরিস বুকাইলি ফ্রান্স ফিরে গেলেন এক ভিন্ন অবস্থায়। ফ্রান্সে ১০ বছর তিনি আর কোন ডাক্তারি প্রকটিস করেন নি বরং এই সময়ে তিনি আরবী ভাষা শিখেছেন আর পবিত্র কুরআনে কোন বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করেছেন।
সব শেষে তিনি পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটির গুরুত্ব অনুধাকন করতে পারলেন যাতে বলা আছেঃ
 ♥"“এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।"
” [আল-কুরআন; সুরাঃ ৪১, আয়াতঃ ৪২]
১৯৭৬ সালে ড. মরিস বুকাইলি বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান” নামে একটি বই লেখেন যা পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের টনক নাড়িয়ে দেয়।যা বেস্ট সেলার হয়। যা প্রায় ৫০ টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে!
 ♦আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এভাবে-ই হেদায়াত দান করেন। আল্লাহ আমাদেরকে ও কোরআন বোঝার ও তদানুযায়ী জীবন গড়ার তাওফীক দান করুক। আমীন।

========================================
নওমুসলিম
আব্দুল্লাহর(দীপ
চন্দ্র আহীর)
সাক্ষাতকার
s December 31, 2013  মোহাম্মদ
নুরুল ইসলাম
আহমদ আওয়াহ :
আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি
ওয়া বারাকাতুহু।
আব্দুল্লাহ : ওয়া
আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি
ওয়া বারাকাতুহু।
প্রশ্ন : ভাই আব্দুল্লাহ!
জানেন নিশ্চয়ই,
আমাদের এই ফুলাত
থেকে ‘আরমুগান’ নামে
একটি ম্যাগাজিন বের
হয়। কিছুদিন থেকে
আরমুগানে ইসলামের
ছায়াতলে
আশ্রয়গ্রহণকারী
সৌভাগ্যবান
নওমুসলিমদের
ইন্টারভিউ প্রকাশিত
হচ্ছে। এ ব্যাপারে
আমি আপনার সঙ্গে
কিছু কথা বলতে চাই।
উত্তর : ভাই আহমদ!
(অশ্রু মুছতে মুছতে)
আমার মত জালিম
পাপিষ্ঠের কথা এই
পবিত্র ম্যাগাজিনে
ছেপে কেন ওটাকে
অপবিত্র করবেন?
প্রশ্ন : না, ভাই!
আব্বাজান (হযরত
মাওলানা কালিম
সাহেব সিদ্দীকি)
বলেছেন, আপনার
জীবন আল্লাহ
তাআলার কুদরতের এক
আশ্চর্য নিদর্শন। তাঁর
ইচ্ছা, আপনার
সাক্ষাতকারটি যেন
অবশ্যই ছাপা হয়।
উত্তর : আপনার
আব্বাজান- আল্লাহ
তাআলা তাঁকে দীর্ঘ
হায়াত দান করুন- আমি
নিজেকে তাঁর গোলাম
মনে করি। তাঁর
আদেশকে শিরোধার্য
জ্ঞান করি। প্রশ্ন করুন,
আমি উত্তর দিতে
প্রস্তত।
প্রশ্ন : প্রথমে আপনার
পরিচয় বলুন।
উত্তর : যদি বলি,
পৃথিবীতে শুরুলগ্ন
থেকে আজ পর্যন্ত
মানুষের মধ্যে আমিই
সবচেয়ে জালিম এবং
আমি সবচেয়ে নিকৃষ্ট
আবার আমিই সবচেয়ে
সৌভাগ্যবান তাহলে
এই পরিচয় সত্য এবং
যথার্থ।
প্রশ্ন : আপনার
আবেগকে আমি শ্রদ্ধা
করি কিন্তু আপনার
পারিবারিক পরিচয়
বলুন।
উত্তর : আজ থেকে
বিয়াল্লিশ কি
পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্বে
মুজাফফর নগর জেলার
বুড়হানা তাহশীলের
রাজপুত সংখ্যাগরিষ্ঠ
গ্রামের এক আহীর
(হিন্দুজাত বিশেষ) এর
ঘরে আমার জন্ম।
আমার পরিবার উগ্র
হিন্দু হওয়ার
পাশাপাশি
অপরাধমূলক পেশায়
জড়িত ছিল। লুট-তরাজ,
খুন-খারাবী বংশের রগ
রেশায় মিশে
গিয়েছিল। ১৯৮৭
ইংরেজীর মীরাঠের
দাঙ্গায় আত্মীয়-
স্বজনের সহযোগিতার
উদ্দেশ্যে পিতার
সঙ্গে আমিও সেখানে
গিয়েছিলাম। আমরা
পিতা-পুত্র মিলে
অন্তত পঁচিশজন
মুসলমানকে নিজ হাতে
হত্যা করেছি। তারপর
মুসলিম বিদ্বেষী
আবেগে বজরং দলে
নাম লিখাই। বাবরী
মসজিদ শহীদ হওয়ার
সময় শামেলীতে বহু
মুসলমানকে শহীদ
করেছি। ১৯৯২ ইং তে
বুড়হানায়ও অনেক
মুসলমানকে হত্যা
করেছি। বুড়হানার এক
প্রসিদ্ধ গুন্ডা ছিল।
গুন্ডা হলেও সে ছিল
সাচ্চা মুসলমান। তাঁর
নাম শুনে গোটা
এলাকায় অমুসলিমরা
থরথর করে কাঁপতো।
আমি তাঁকেও গুলি করে
হত্যা করি। মুসলিম
বিদ্বেষের উগ্র
আবেগের বশবর্তী হয়ে
আমি নরাধম এমন এক
জঘন্যতম কাজ করেছি …
(দীর্ঘক্ষণ কাঁদতে
কাঁদতে) সম্ভবত এমন
বর্বরতা এবং এমন জুলুম
আকাশের নিচে,
পৃথিবীর বুকে না কেউ
দেখেছে, না কেউ
শুনেছে আর না কেউ
কল্পনা করেছে। (আবার
দীর্ঘক্ষণ কান্না)
প্রশ্ন : আপনার ইসলাম
গ্রহণ সম্পর্কে বলুন?
উত্তর : কুরআন শরীফের
ত্রিশতম পারায় সূরা
বুরুজে আল্লাহ তাআলা
যে আসহাবুল উখদুদ
অর্থাৎ বহু ইন্ধনযুক্ত
অগ্নির অধিকারীদের
অভিশপ্ত হওয়ার কথা
আলোচনা করেছেন, তা
যেন আমার ব্যাপারেই
অবতীর্ণ হয়েছে। ”
ধ্বংস হয়েছে, বরবাদ
হয়েছে অগ্নিকুণ্ডের
গর্তওয়ালাগন” এটার
আরবীটা বলুন না!
“কতালা আসহাবিল-
উখদুদিন্নারি যাতিল-
অকুদ”
প্রশ্ন : এদের প্রতি যদি
কখনও দয়া করা হয়
তাহলে আরবীটা তখন
কেমন হবে?
উত্তর : “রহিমা
আসহাবিল-
উখদুদিন্নারি যাতিল
অকুদ”
জী, আমার ব্যাপারে
হলে আয়াতটি এভাবেই
অবতীর্ণ হতো।
প্রশ্ন : আপনি ঘটনাটি
বলুন?
উত্তর : ভাই বলছেন
তো, কিন্তু কোন মুখে
বলি, কেমন করে বলি?
আমার পাথর দিলও
সেই হৃদয়-বিদারক ঘটনা
শোনানোর সাহস
রাখে না।
প্রশ্ন : তবুও বলুন! সম্ভবত
এ জাতীয় ঘটনা
মানুষের জন্য বেশী
শিক্ষণীয় হয়ে থাকে।
উত্তর : হ্যাঁ ভাই!
বাস্তবিকই আমার
ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
নিরাশ ব্যক্তির জন্য
আশা জাগানিয়।
কারণ, কৃপাময়, দয়ালু
(আরহামুর রাহিমীন)
খোদা আমার সঙ্গেই
যখন এমন দয়ার আচরণ
করতে পারেন তাহলে
অন্যদের নিরাশ হওয়ার
সুযোগ কোথায়! শুনুন
তাহলে, আমার এক বড়
ভাই আছেন। অত্যাচার
আর অপরাধপ্রবণ হওয়া
সত্ত্বেও আমাদের দুই
ভাইয়ে প্রচণ্ড রকম
ভালোবাসা ছিল।
তাঁর দুটি মেয়ে ও দুটি
ছেলে আর আমি
নিঃসন্তান। বড়
মেয়ের নাম ছিল
হীরা। আশ্চর্য মেয়ে
ছিল সে। বড় ভাবুক আর
উদাস প্রকৃতির। কারো
সঙ্গে ভাব জমলে
সেটাও ছিল মাত্রা
ছাড়া আবার কারো
প্রতি বিতৃষ্ণ হলে
সেটাও হতো চরম
পর্যায়ের। আমরা
ভাবতাম ওর উপর হয়তো
উপরের প্রভাব রয়েছে।
এজন্য কয়েকজন
ওঝাকেও দেখানো
হয়েছে। কিন্তু তাঁর
অবস্থানে কোন
পরিবর্তন হয়নি। সে
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত
পড়াশুনা করেছিল।
তারপর বড় হয়ে গেলে
স্কুল ছাড়িয়ে ঘরের
কাজকর্মে লাগিয়ে
দেয়া হয়। কিন্তু
পড়াশুনার প্রতি তাঁর
ছিল প্রবল আগ্রহ। সে
পরিবারের গররাজি
সত্ত্বেও হাইস্কুলের
ফরম ফিলাপ করে। ফি
যোগাড় ও বইপত্র
কেনার জন্য আট দিন
অন্যের ক্ষেতে মজুর
খাটে। এদিকে পড়া
বুঝে না আসলে সে এক
ব্রাহ্মণের মেয়ের
কাছে পড়তে যেতো।
ব্রাহ্মণের একটি ছেলে
ছিল। ডাকুসন্ত্রাসী।
কিভাবে সে যেন
আমার ভাতিজীকে
ফুসলিয়ে রাতের
আঁধারে দুজনে
পালিয়ে যায়। সে
তাঁকে নিয়ে বড়োটের
নিকটবর্তী এক জঙ্গলে
গিয়ে লুকায়। ওখানে
তাঁর অন্যান্য
ডাকুসঙ্গীরা থাকতো।
হীরা পালাল ঠিকই
কিন্তু সেখানে
যাওয়ার পর
পিতামাতার সম্মান
নষ্ট হওয়ার এবং নিজের
ভুল সিদ্ধান্তের
ব্যাপারটা অনুধাবন
করে। সে চুপি চুপি
নীরবে কেবল কাঁদতো।
গুন্ডার দলে
ইদ্রিসপুরের একটি
মুসলমান ছেলেও ছিল।
একদিন সে হীরাকে
কাঁদতে দেখে ফেলে
এবং কান্নার কারণ
জিজ্ঞাসা করে।
হীরা বলল, অল্প বয়স ও
কাঁচা বুদ্ধির কারণে
আমি ওর সঙ্গে চলে
এসেছি। কিন্তু এখানে
আমি ইযযত নষ্ট হওয়ার
আশংকা করছি।
তাছাড়া আমার বাপ-
মায়ের পেরেশানীর
কথাও আমার মনে
পড়ছে। হীরার প্রতি
ছেলেটার মায়া হয়।
সে হীরাকে বলে,
আমি মুসলমান, আর
মুসলমান তার
অঙ্গিকার সত্যে
পরিণত করে। আমি
তোমাকে আমার বোন
বানালাম। একজন
ভাইয়ের মতই আমি
তোমার ইযযতের
হেফাযত করব। এই
জঙ্গলে থেকে বের করে
তোমাকে নিরাপদে
ঘরে পৌঁছানোর চেষ্টা
করব।
ছেলেটি তার
সঙ্গীদের বলল, এই
মেয়েটি বেশ সহসী
এবং নিজ সিদ্ধান্তে
অনঢ়। আমাদের দলে
এরকম দু-একজন মেয়েকে
অবশ্যই শামিল করা
উচিত। তাছাড়া
আমাদের যে কাজ
তাতে এমনিতেই
সহযোগী হিসাবে দু-
একজন মেয়ের দরকার।
তবে জঙ্গলে রাখতে
হলে ওকে ছেলেদের
পোশাকে রাখতে
হবে। দলের সবাই তার
কথায় সায় দিল।
তারপর হীরাকে ওরা
ছেলেদের পোশাক
পরিয়ে পুরোদস্তর
নিজেদের দলে শামিল
করে নিল। হীরা দেখল,
দলের দশ-বারোজনের
মধ্যে এই মুসলমান
ছেলেটা একটু অন্যরকম।
আর সবার চেয়ে
আলাদা। কথা দিলে
তা পুরোপুরি রক্ষা
করে। পরামর্শ দিলে
সঠিকটাই দেয়। লুটের
মাল বাটোয়ারার সময়
গরীবদের জন্যও কিছু
অংশ রেখে দেয়।
হীরাকে ওরা আলাদা
একটা ডেরায় থাকার
বন্দোবস্ত করে।
ছেলেটা রাতের বেলা
বার বার এসে খোঁজ
নিয়ে যেতো, তার
কোন সঙ্গী বদমতলবে
এদিকে আসে কিনা।
এভাবে কিছুদিন
কাটার পর হীরার
অপহরণ নিশ্চিত হয়, সে
এখন ওদের দলেরই
একজন। ফলে তারা ওর
ওপর নজরদারীও কমিয়ে
দেয়।
তারপর একদিন সেই
মুসলমান ছেলেটি
হীরাকে কোন এক
বাহানায় বড়োট
পাঠায়। তাকে বলে
দেয়, সে যেন টাঙ্গায়
করে ইদ্রিসপুরে
ছেলেটির বাড়িতে
গিয়ে ওঠে এবং তার
ছোট ভাইকে সব কথা
খুলে বলে। তাকে যেন
একথাও বলে দেয়,
তোমার বড় ভাই
তোমাকে জঙ্গলে
ডেকেছেন। তুমি গিয়ে
তাকে সংবাদ দিবে
যে, মেয়েটিকে
বড়োটের লোকজন
সন্দেহ করে পুলিশে
ধরিয়ে দিয়েছে। হীরা
তার কথামত কাজ করল।
ছেলেটির ভাই জঙ্গলে
গিয়ে তাকে জানাল,
মেয়েটিকে বড়োটের
লোকজন সন্দেহ বশত:
পুলিশে ধরিয়ে
দিয়েছে। তারপর
গোপনে সে তার ছোট
ভাইকে বলল, তুমি
গিয়ে হীরাকে থানায়
পৌঁছে দাও। সে
থানায় গিয়ে বলবে,
একদল গুন্ডা আমাকে
গ্রাম থেকে অপহরণ
করে নিয়ে গিয়েছিল।
আমি তাদের হাত
থেকে কোনমতে
পালিয়ে এসেছি।
আমি আমার প্রাণের
আশংকা করছি। হীরা
থানায় গিয়ে কথামতই
কাজ করল। বড়োট
থানার পুলিশ বুড়হানা
থানায় যোগাযোগ
করল। সেখানে
হীরাকে অপহরণের
বিষয়টি আগেই
রিপোর্ট করা ছিল।
থানাওয়ালারা
লেডিস পুলিশ নিয়ে
বড়োট থানায় গিয়ে
হীরাকে নিয়ে আসল।
আমরা গিয়ে হীরাকে
বাড়িতে নিয়ে
আসলাম। কিন্তু এমন
বদলান মেয়েকে
কিভাবে ঘরে রাখি।
হীরা সবাইকে বলল,
আমাকে তো গুন্ডার দল
উঠিয়ে নিয়ে
গিয়েছিল। আমি
এভাবে এভাবে
পালিয়ে এসেছি এবং
আমার ইযযত রক্ষা
করেছি। কেউ তার কথা
বিশ্বাস করল না।
একজন শিক্ষিত
আত্মীয়ও তখন
সেখানে উপস্থিত
ছিল। সে বলল,
ডাক্তারী পরীক্ষা
করে নাও, তাহলেই তো
সব ল্যাঠা চুকে যায়।
আমরা দুই ভাই চেক আপ
করানোর জন্য তাকে
বুড়হানা হাসপাতালে
নিয়ে যাই। আমাদের
খেয়াল ছিল, মেয়ের
ইযযত নিরাপদ থাকলে
তাকে ফিরিয়ে নিব,
অন্যথায় খুন করে
বুড়হানা নদীতে
ভাসিয়ে দিব।
আল্লাহর কি কাজ,
ডাক্তার রিপোর্ট দিল,
তার ইযযত নিরাপদ
আছে। আমরা খুশি মনে
তাকে বাড়িতে নিয়ে
আসলাম। কিন্তু এখন
সে কথায় কথায়
মুসলমানদের আলোচনা
করে। সময় সময়
মুসলমানদের ঘরে যায়।
সেখানকার এক মেয়ে
তাকে জাহান্নামের
ভয়াবহতা এবং
জান্নাতের শান্তি
বিষয়ক একটা বই দেয়।
আমি কিতাবটি ঘরে
দেখে তাকে খুব
মারপিট করি। হুশিয়ার
করে দেই, আবার এ
ধরনের কিতাব দেখলে
মেরে কেটে ভাসিয়ে
দিবো। কিন্তু তার
অন্তরে ইসলাম আসন
গেড়ে নিয়েছিল এবং
দিলের অন্ধকার
কুঠরীকে আপন আলোক
দ্বারা আলোকিত করে
দিয়েছিল। তারপর
একদিন সে এক মুসলমান
মেয়ের সঙ্গে
মাদরাসায় গিয়ে এক
মাওলানা সাহেবের
নিকট ইসলাম গ্রহণ
করে। চুপি চুপি
নামাযও শিখতে
থাকে। এমনকি মাঝে
মাঝে নামায পড়াও
শুরু করে দেয়। মুসলমান
হওয়ার পর সে শিরকের
ঘরে অস্বস্তি বোধ
করতে থাকে। সব সময়
সে উদাসীন হয়ে
থাকতো। কথায় কথায়
হেসে ওঠা ফুরফুরে
মেয়েটির সব কিছুই
যেন বদলে গেল।
কিভাবে যেন সে
ব্যবস্থা করে ফেলল
এবং আবার বাড়ী
থেকে উধাও হল। এক
মাওলানা সাহেব তার
স্ত্রীসহ হীরাকে
ফুলাত রেখে আসল।
কিছুদিন সে ফুলাত
ছিল। ভাই আহমদ! সে
আপনাদের এখানেই
কিছুদিন ছিল। সম্ভবত
আপনাদের সেটা স্মরণ
আছে।
প্রশ্ন : হ্যাঁ, হ্যাঁ, হীরা
আপা। আরে, হীরা
আপা এখন কোথায়
আছেন? আমাদের
গোটা পরিবার তার
জন্য অত্যন্ত
পেরেশান। বড় ভাল
মানুষ ছিলেন তিনি।
আশ্চর্য আপনিই তাহলে
হীরা আপার চাচা?
উত্তর : হ্যাঁ, ভাই
আহমদ! আপনার
পিতাজী তার নাম
রেখেছিলেন ‘হেরা’
আর সেই সৌভাগ্যবান
কন্যার খুনি চাচা
হলাম আমি।(কাঁদতে
কাঁদতে)
প্রশ্ন : আগে তো বলুন,
হীরা আপা এখন
কোথায় আছেন?
উত্তর : বলছি, ভাই
আমার! সব বলছি।
আমার অত্যাচার আর
পাশবিকতার সব
কাহিনীই আপনাকে
বলব। জানেন নিশ্চয়ই,
আপনার পিতাজী
তাকে সতর্কতার
খাতিরে দিল্লিতে
তার বোনের নিকট
পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
হীরা সেখানে যথার্থ
ও উপযুক্ত পরিবেশ
পেয়েছিল। সে আপনার
ফুফুকে রানী ফুফু বলত।
আপনার মা-ও তাকে
খুব আদর করতো। আর
রানী ফুফু তাকে
তালীম তারবিয়ত
করতো। সম্ভবত হীরা
সেখানে এক দেড় বছর
ছিল। ফুলাত আর
দিল্লির এই অবস্থান
তাকে এমন খাঁটি
মুসলমানে পরিণত
করেছিল যে, বর্তমানে
কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার
সুযোগ থাকলে আহমদ
ভাই! সম্ভবত এই শহীদ
মেয়ের নাম ধরে সূরা
অবতীর্ণ হতো,
পরিবারের লোকজনকে
বেচারী অত্যন্ত
ভালবাসতো। একদিন
সে সবে স্বপ্নে দেখল,
তার মা মারা গেছে।
চোখ খুললে সে বেচাঈন
হয়ে পড়ল যে, মা যদি
ঈমান ছাড়া মারা যায়
তাহলে কি অবস্থা
হবে। একথা ভেবে সে
কাঁদতে লাগল। এমনকি
হেঁচকি তুলে কাঁদতে
আরম্ভ করল। ঘরের
লোকজন সকলে জেগে
গেল। তাকে
বিভিন্নভাবে
সান্ত্বনা দিতে
লাগল। সাময়িকভাবে
যে শান্ত হল বটে
কিন্তু বার বার
স্বপ্নের কথা মনে করে
তার কান্না আসতো।
হীরা আপনার
পিতাজীকে আব্বা
বলতো। বার বার তার
স্বপ্নের কথা মনে
পড়তো আর আব্বাজীর
নিকট বাড়ি যাওয়ার
অনুমতি চাইতো। কিন্তু
আপনার আব্বাজী
তাকে বুঝাতেন, বাড়ি
গেলে ওরা তোমাকে
যিন্দা রাখবে না;
মেরে ফেলবে। উপরন্ত
তোমাকে আবার হিন্দু
বানিয়ে ফেলবে।
ঈমানের আশংকায় সে
নীরব হয়ে যেতো।
কিন্তু যখনই আবার
স্বপ্নের কথা মনে
পড়তো, আবার ঘরে
ফেরার জন্য জেদ
ধরতো। অবশেষে
নিরুপায় হয়ে
মাওলানা সাহেব
তাকে বাড়িতে
যাওয়ার অনুমতি
দিলেন। সাথে একথাও
বলে দিলেন, তুমি
কেবল তোমার
পরিবারের লোকজনকে
ইসলামের দাওয়াত
দেয়ার উদ্দেশ্যে
সেখানে যাবে। যদি
বাস্তবিকই ঘরের
লোকজনের সঙ্গে
তোমার ভালোবাসা
থাকে তাহলে
ভালোবাসার সবচেয়ে
বড় হক হল তুমি
তাদেরকে ইসলামের
দাওয়াত দিবে এবং
তাদেরকে দোযখের
আগুন থেকে রক্ষা করার
ফিকির করবে। হীরা
বলেছিল, তারা তো
ইসলামের নাম শুনেই
তেড়ে আসে। তারা
কখনও ইসলাম গ্রহণ
করবে না। সে
আমাদেরকে বলেছিল,
মাওলানা সাহেব
বলেছেন, আল্লাহ
তাআলা যখন তাদের
বক্ষকে ইসলামের জন্য
উন্মুক্ত করে দিবেন
তখন তারা কুফর এবং
শিরকের দিকেও
তেমনি তেড়ে আসবে
যেমন এখন ইসলামের
নাম শুনে তেড়ে আসে।
মাওলানা সাহেব
তাকে বলেছিলেন,
তুমিও তো এক সময়
ইসলামের নাম শুনতে
পারতে না যেমন এখন
কুফর শিরকের নাম
শুনতে পারো না।
আল্লাহর কাছে দুআ
করো আর আমার নিকট
অঙ্গিকার করো, আমি
আমার ঘরে গিয়ে
আমার মা এবং
পরিবারকে
জাহান্নাম থেকে
রক্ষা করার ফিকির
করবো। যদি তুমি এই
নিয়তে সেখানে যাও,
তাহলে প্রথমত:
আল্লাহ তোমাকে
হেফাযত করবেন। আর
যদি তোমাকে কষ্ট
দেয়া হয় তাহলে সেটা
হবে আমাদের নবীজীর
আসল সুন্নাতের
অনুসরণ। আর খোদা না
করুন তোমার পরিবার
যদি তোমাকে মেরে
ফেলে তাহলে তুমি
হবে শহীদ। আর
শাহাদাত জান্নাতে
যাওয়ার সংক্ষিপ্ততম
পথ। আমার বিশ্বাস
তেমনটি হলে তোমার
শাহাদাত হবে
হেদায়াতের মাধ্যম।
তোমার পরিবারকে
জাহান্নাম থেকে
রক্ষা করার জন্য যদি
তোমার প্রাণ চলে যায়
আর বিনিময়ে তারা
হেদায়াত পেয়ে যায়
তাহলে এটা হবে অতি
সস্তা সওদা।
মাওলানা সাহেব
বলছেন, তিনি তাকে
দু’রাকাআত নামায
পড়ে আল্লাহ তাআলার
কাছে হেদায়াতের
দুআ করতে এবং
দাওয়াতের নিয়তে
বাড়ি যাওয়ার
অঙ্গিকার করতে
বলেছিলেন। সে
দিল্লী থেকে ফুলাত
হয়ে বাড়িতে আসল।
তাকে দেখে আমরা
তো রেগে অগ্নিশর্মা।
আমি তাকে আচ্ছা
মতো জুতো পেটা
করলাম এবং ক্রমাগত
লাথি মারতে
লাগলাম। সে একথা
বলেনি, এতদিন
কোথায় ছিল। তবে
একথা বলে দিল, আমি
মুসলমান হয়ে গেছি
এখন আর আমাকে কেউ
ইসলাম থেকে হটাতে
পারবে না। আমরা তার
ওপর যতই কঠোরতা
করতাম, সে ততই
আমাদেরকে মুসলমান
হয়ে যেতে বলতো। তার
মা খুবই অসুস্থ ছিল।
তার ঘরে ফেরার
দু’মাসের মাথায় সে
মারা গেল। হীরা তার
মাকে না পুড়িয়ে
দাফন করার জন্য
মুসলমানদের হাতে
সোপর্দ করার দাবী
জানাল। বলল, তার মা
তার সামনে কালিমা
পড়ে এবং মুসলমান
হয়েই মারা গেছে।
কাজেই তাকে
পোড়ানো অন্যায় হবে।
কে শুনে কার কথা,
আমরা তাকে পুড়িয়েই
ভস্ম করলাম।
প্রতিদিনই আমাদের
ঘরে কোনো না কোন
ফাসাদ লেগে
থাকতো। কখনও সে
ভাইদেরকে মুসলমান
হয়ে যেতে বলতো।
কখনও পিতাকে
মুসলমান হয়ে যেতে
বলতো। আমরা তাকে
মীরাঠে তার নানা
বাড়ি রেখে আসলাম।
তার মামা তার
মুসলমানী দেখে
লাচার হয়ে উঠল। সে
আমাকে এবং আমার
ভাইকে ডেকে পাঠাল।
বলল, এই বিধর্মীটাকে
তোমরা নিয়ে যাও,
রোজ রোজ ঝগড়া-
ঝাটি করে আমরা আর
পারছি না।
আমি বজরং দলের
নেতাদের সঙ্গে
পরামর্শ করলাম। তারা
ওকে মেরে ফেলার
পরামর্শ দিল। আমি
তাকে গাঁয়ে ফিরিয়ে
আনলাম। একদিন গিয়ে
নদীর কিনারে পাঁচ ফুট
গভীর গর্ত খুঁড়লাম।
তারপর তাকে তার বুবুর
বাড়িতে নিয়ে
যাওয়ার বাহানায়
তৈরী হতে বললাম।
সম্ভবত সে স্বপ্নের
মাধ্যমে কোন ইঙ্গিত
পেয়ে গিয়েছিল। সে
গোসল করল এবং নতুন
কাপড় পরিধান করে
আমাদেরকে বলল, চাচা
শেষ নামাযটা তো
পড়ার সুযোগ দিবেন?
তারপর সে দ্রুত নামায
শেষ করল এবং নববধূর
মত সানন্দে আমাদের
সঙ্গে রওয়ানা হল।
জনবসতি ছেড়ে
আলাদা রাস্তা ধরে
যাওয়া সত্ত্বেও সে
আমাদেরকে একবারও
জিজ্ঞাসা করল না,
বুবুর বাড়িতে যাওয়ার
পথ তো এটা নয়! নদীর
একেবারে নিকটে
গিয়ে সে হেসে দিয়ে
তার পিতাকে বলল,
আপনি আমাকে বুবুর
বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন,
না প্রিয়ার বাড়িতে?
(দীর্ঘক্ষণ কান্না…….)
প্রশ্ন : পানি পান
করানোর পর- হ্যাঁ, শেষ
করুন জনাব।
উত্তর : কোন মুখে শেষ
করব? কিভাবে শেষ
করবো? হ্যাঁ ভাই। শেষ
তো করতেই হবে।
আমার ব্যাগে পাঁচ
লিটার পেট্রোল ছিল।
হীরার জন্মদাতা
পিতা আর আমি এই
জালিম চাচা দুজনের
সঙ্গেই সে সাচ্চা
মুমিনা, আশেকা এবং
শহীদার মত আচরণ
করছে। বিলকুল কোন
প্রতিবাদ করেনি।
আমরা তাকে নিয়ে
গর্তের নিকট পৌঁছি যা
একদিন পূর্বে
প্ল্যানমাফিক খনন
করা হয়েছিল। এই
পাষণ্ড চাচা এ কথা
বলে ফুলের মত নিষ্পাপ
বাচ্চাকে সেই গর্তে
ধাক্কা মেরে ফেলে
দেই যে, তুই
আমাদেরকে নরকের
আগুন থেকে কি
বাঁচাবি? নে নিজেই
নরকের স্বাদ আস্বাদন
কর! গর্তে ধাক্কা
দিয়েই আমি তার উপর
সমস্ত পেট্রোল ঢেলে
দেই এবং ম্যাচ
জ্বালাই। আমার বড়
ভাই একপাশে দাঁড়িয়ে
কাঁদতে কাঁদতে শুধু
তাকে দেখছিল।
জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি
তার উপর পড়তেই
মুহূর্তে দাউদাউ করে
জ্বলে উঠল। সে গর্তের
ভেতর অনড় দাঁড়িয়ে
ছিল, আগুনের জ্বলন্ত
কুণ্ডলীর মধ্যে
আকাশের দিকে দু’হাত
তুলে সে চিৎকার করে
বলল, “আয় আমার
আল্লাহ! তুমি তো
আমাকে দেখছোই। আয়
আল্লাহ! তুমি তো
আমাকে
ভালোইবাসো।
তোমার হীরাকে তো
মহব্বতই করো। আয়
আল্লাহ! তুমি ‘হেরা’
গুহাকেও ভালোবাসো,
আর গর্তে জ্বলন্ত
‘হীরা’ কেও
ভালোবাসো। তোমার
ভালোবাসা পেলে
আমার আর কিছুই চাই
না।” তারপর সে
সজোরে চিৎকার করে
বলতে লাগল, পিতাজী!
অবশ্যই ইসলাম গ্রহণ
করবেন। চাচাজী!
অবশ্যই মুসলমান হয়ে
যাবেন। চাচাজী,
অবশ্যই মুসলমান হয়ে
যাবেন।
আমার ভীষণ রাগ হল।
আমি ভাই সাহেবকে
চলে আসতে বললাম।
ভাই আমাকে বলতে
লাগলেন, শেষবারের
মত বুঝিয়ে দেখতে?
তার উপর আমি রেগে
গেলাম। ফিরে আসার
সময় আমরা গর্তের
ভেতর থেকে জোরে
জোরে ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ এর আওয়াজ
শুনতে পেলাম। আমরা
আমাদের দায়িত্ব
কর্তব্য তো শেষ করে
আসলাম। কিন্তু সেই
শহীদ বাচ্চার সর্বশেষ
বাক্য আমার মত
হিংস্র খুনির পাথর
অন্তরও টুকরো টুকরো
করে দিল। আমার ভাই
ঘরে এসে অসুস্থ হয়ে
পড়লেন তার দিলে সেই
আঘাত প্রচণ্ড রকম ক্ষত
সৃষ্টি করল। তারপর এই
আঘাতই তার জন্য প্রাণ
সংহারী হয়ে দাঁড়াল।
মৃত্যুর দু’দিন পূর্বে
তিনি আমাকে ডেকে
বললেন, জীবনে যা
করার তা তো করেছি
কিন্তু এখন আমার মৃত্যু
হীরার ধর্ম ছাড়া অন্য
কিছুর ওপর হতে পারে
না। তুমি গিয়ে
মাওলানা ডেকে
আনো। আমিও ভাই
সাহেবের অবস্থাদৃষ্টে
ভেঙ্গে পড়েছিলাম।
এক মাওলানা সাহেব
তাকে কালিমা পড়তে
বললেন। ভাই সাহেব
কালিমা পড়লেন এবং
নিজের ইসলামী নাম
আব্দুর রহমান রাখলেন।
তারপর আমাকে
বললেন, আমাকে
মুসলমানদের নিয়মে
দাফন করবে। এটা
আমার জন্য অত্যন্ত
মুশকিল ব্যাপার ছিল।
কিন্তু আমি ভাই
সাহেবের অন্তিম
ইচ্ছা পূরণের জন্য
চিকিৎসার বাহানায়
তাকে দিল্লী নিয়ে
গেলাম। হাসপাতালে
ভর্তি করলাম।
সেখানেই তার
ইন্তেকাল হল। তিনি
পরম প্রশান্তিতে
মৃত্যুবরণ করলেন। তারপর
আমি এক দরদী
ডাক্তারের নিকট সব
কথা খুলে বললাম।
তিনিই সেখানকার
কিছু মুসলমানকে ডেকে
দাফন ইত্যাদির
ব্যবস্থা করলেন।
প্রশ্ন: আল্লাহু আকবর,
বড় আশ্চর্যজনক ঘটনা
তো! কিন্তু আপনি
আপনার ইসলাম
গ্রহণের ঘটনাটি এখনও
শোনাননি।
উত্তর : হ্যাঁ, বলছি শুনুন।
এই ঘটনার পর ইসলামের
সঙ্গে আমার দুশমনী
কিছুটা কমে গেল।
কিন্তু ভাই সাহেবের
মুসলমান হয়ে মৃত্যু বরণ
করার প্রতি আমার
দুঃখ ছিল। ভাইজানের
মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরণ
করায় আমার একীন হয়ে
গেল যে, ভাবী
সাহেবাও নিশ্চিত
মুসলমান হয়ে মারা
গিয়েছিলেন। আমার
মনে হল, কোন মুসলমান
আমাদের পরিবারের
উপর যাদু করেছে এবং
আমাদেরকে বশীভূত
করে ফেলেছে। সেই
প্রভাবেই একে একে
সবাই নিজ নিজ ধর্ম
ত্যাগ করছে। এ
ব্যাপারে অনেক
অভিজ্ঞ ও
তত্ত্বজ্ঞানীর সঙ্গেও
কথা বলেছি। তারপর
এক তান্ত্রিকের
খোঁজে শামেলী
থেকে ‘উধ’ যাচ্ছিলাম।
এক বাসে উঠলাম।
বাসটি ছিল একজন
মুসলমানের।
ড্রাইভারটিও ছিল
মুসলমান। সে বাসের
রেকর্ডারে কাওয়ালী
চালিয়ে রেখেছিল।
কাওয়ালী ছিল এক
বুড়িকে নিয়ে।
আমাদের নবীজী (সা)
বুড়িকে খেদমত
করেছিলেন। বুড়িকে
দরদ নিয়ে ইসলামের
কথা বুঝিয়েছিলেন।
তারপর সেই বুড়ি
মুসলমান হয়ে
গিয়েছিল। স্পিকার
ছিল আমার মাথার
উপরে। বাস ঝানঝানা
থামল। সেই কাওয়ালী
আমার চিন্তা ধারায়
আলোড়ন সৃষ্টি করল।
মনে হল, এই কাহিনী
যে নবীর, তিনি
মিথ্যা হতে পারেন
না। আমি উধ যাওয়ার
পরিবর্তে ঝানঝানা
নেমে পড়লাম।
ভাবলাম, ইসলাম
সম্বন্ধে আমার পড়া
শোনা করা উচিত।
তারপর শামিলীর
বাসে চেপে বসলাম।
আশ্চর্য সেই বাসেও
রেকর্ড চলছিল।
পাকিস্তানের
মাওলানা হানীফ
সাহেবের বয়ান
হচ্ছিল। তিনি মৃত্যু
এবং মৃত্যুপরবর্তী
অবস্থা নিয়ে
আলোচনা করছিলেন।
আমাকে শামেলী
নামতে হবে কিন্তু
বয়ান তখনও পুরা হয়নি।
শামেলী স্টপেজে
গিয়ে ড্রাইভার টেপ
বন্ধ করে দিল। এদিকে
বয়ান শেষ পর্যন্ত
শোনার জন্য আমি
অস্থির হয়ে উঠছিলাম।
বাসের পরবর্তী গন্তব্য
মুজাফফর নগর। ব্যস,
আমি বয়ান শোনার
জন্য মুজাফফর নগরের
টিকেট নিলাম। বাঘরা
পৌঁছে বয়ান শেষ হলে।
এই বয়ান ইসলামের
সঙ্গে আমার দুরত্ব
অনেক কমিয়ে আনল।
আমি বুড়হানা রোডে
নেমে বাড়ি যাওয়ার
জন্য বুড়হানার বাসে
চাপলাম। আমার পাশে
এক মাওলানা সাহেব
বসলেন। তাকে বললাম,
আমি ইসলাম সম্পর্কে
কিছু পড়তে চাই। আপনি
আমাকে সহযোগিতা
করুন। তিনি বললেন,
আপনি ফুলাত চলে
যান। মাওলানা
কালীম সাহেবের
সঙ্গে দেখা করুন। তাঁর
চেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি
আপনি আমাদের
এলাকায় খুঁজে পাবেন
না। আমি ফুলাতের
ঠিকানা সংগ্রহ
করলাম এবং বাড়ি
যাওয়ার পরিবর্তে
ফুলাত পৌঁছলাম।
মাওলানা সাহেব তখন
সেখানে ছিলেন না।
পরদিন সকালে তাঁর
ফেরার কথা ছিল।
রাতে এক মাষ্টার
সাহেব আমাকে
মাওলানা সাহেবের
কিতাব “আপকি
আমানত আপকি সেবা
মে” পড়তে দিলেন।
কিতাবটি তাঁর ভাষা
এবং মর্মস্পর্শী
আবেদন দিয়ে আমাকে
অধিকার করে নিল।
মাওলানা সাহেব
পরদিন সকালের
পরিবর্তে সন্ধ্যায়
ফুলাত আসলেন।
মাগরিবের পর আমি
তাঁর নিকট হাজির হয়ে
মুসলমান হাওয়ার
আগ্রহ প্রকাশ করলাম।
বললাম, আমি কেবল
জানতে এসেছিলাম
কিন্তু আপনার
“আমানত” আমাকে
শিকার করে নিয়েছে।
মাওলানা সাহেব খুবই
খুশি হলেন। আমাকে
কালিমা পড়ালেন।
দিনটি ছিল ১৩ই
জানুয়ারী ২০০০
খৃষ্টাব্দ। আমার নাম
রাখা হয় আব্দুল্লাহ।
পরদিন আমি মাওলানা
সাহেবের নিকট এক
ঘণ্টা সময় নিলাম।
তাঁকে জুলুম ও বর্বরতার
নগ্ন নৃত্যের সেই
কাহিনী শোনালাম।
মাওলানা সাহেব
হীরার কাহিনী
শোনে দীর্ঘক্ষণ
কাঁদতে থাকলেন।
বললেন, হীরা
আমাদের এখানেই ছিল
এবং দিল্লিতে
আমারই বোনের নিকট
ছিল। তারপর তিনি
আমাকে সান্ত্বনা
দিলেন, ইসলাম
অতীতের সমস্ত অপরাধ
নিঃশেষ করে দেয়।
কিন্তু আমার মন
প্রশান্ত হল না, এমন
ঘোরতর রক্ত পিপাসুর
বর্বরতা কীভাবে
ক্ষমা হতে পারে।
মাওলানা সাহেব
আমাকে বলেছিলেন,
ইসলাম অতীতের সকল
অপরাধ মার্জনা করে
দেয় একথা নিশ্চিত
সত্য তথাপি আপনার
মনের প্রশান্তির জন্য
কিছু মুসলমানের জীবন
রক্ষার চেষ্টা করুন;
ঠিক যেভাবে বহু
মুসলমানকে আপনি
শহীদ করেছিলেন।
কুরআনে কারীমের
ইরশাদ, নেককাজসমূহ
গুনাহসমূকে মিটিয়ে
দেয়।
তখন থেকেই আমি
আমার দিলকে
সান্ত্বনা দেয়ার জন্য
এবং দুর্ভাগ্যকে
সৌভাগ্যে পরিণত
করার জন্য চেষ্টা করে
যাচ্ছি। কোন দুর্ঘটনায়
বা রোগ ব্যাধিতে
কোন মুসলমান মারা
যাচ্ছে, আমি তাঁকে
বাঁচানোর চেষ্টা করি।
জানা আছে, মুমূর্ষুকে
বাঁচানোর সাধ্য আমার
নেই তবে চেষ্টার করার
সাধ্য তো আমার আছে।
তাছাড়া চেষ্টাকারী
তো সম্পন্নকারীর
মতোই।
গুজরাটে যখন দাঙ্গা
লাগল। আমি উপযুক্ত
সুযোগ মনে করলাম।
আল্লাহ তাআলার
অনুগ্রহ, তিনি আমাকে
যথেষ্ট সুযোগ
দিয়েছেন। সে সময়
আমি হিন্দু সেজে বহু
মুসলমানকে নিরাপদ
স্থানে পৌঁছে
দিয়েছি। কিংবা
আগে থেকে আশংকার
ব্যাপারে সতর্ক করে
দিয়েছি। আমি
হিন্দুদের পরামর্শ
সভায় শরীক হতাম।
ফলে দশ বারোটা
হামলার সংবাদ আগে
ভাগেই মুসলমানদেরকে
দিয়ে আক্রমণের
পূর্বেই তাদেরকে গ্রাম
থেকে সরিয়ে দিতে
পেরেছিলাম। আল্লাহ
তাআলা আমার দ্বারা
আরেকটি এমন কাজ
করিয়ে ছিলেন যে,
আমার অনুতাপদগ্ধ
হৃদয়ে প্রশান্তির
প্রলেপ লেগে
গিয়েছিল। আপনি শুনে
থাকবেন হয়তো
ভাওনগরের এক
মাদরাসায় চারশত
শিশুকে মাদরাসার
ভেতরেই পুড়িয়ে
মারার প্ল্যান করা
হয়েছিল। আমি
সেখানে থানার
ইনচার্জ মিস্টার শর্মা
সাহেবকে সংবাদ দেই
এবং তাকে প্রস্তত
করি। হায়েনাদের
আক্রমণের মাত্র দশ
মিনিট পূর্বে আমি
নিজ হাতে দেয়াল
ভেঙ্গে ফেলি এবং
আল্লাহ তাআলা
আমাকে চারশত
নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ
রক্ষার উসীলা করেন।
সে সময় এ কাজের জন্য
আমি তিন মাস গুজরাট
পড়ে থাকি। তবু আমার
অপরাধ এতই বেশী যে,
এই সমস্ত ভালো কাজও
তার বরাবর হতে পারে
না।
মাওলানা সাহেব
আমাকে আরেকবার
সান্ত্বনা দিয়ে
বলেছিলেন, মৃত্যুর সময়
এবং মৃত্যুর বাহানা
স্বয়ং আল্লাহ
তাআলাই নির্ধারণ
করেছেন। কাজেই
আল্লাহ তাআলার
রহমতের পক্ষে অসাধ্য
নয় যে, যিনি আপনাকে
হেদায়াত দিয়ে
সন্মানিত করেছেন
তিনি আপনাকে
ক্ষমাও করে দিবেন।
এতে আমার দিল
পুরোপুরি প্রশান্তি
লাভ করে। মাওলানা
সাহেব আমাকে
ইসলাম শেখার জন্য
জামাতে যাওয়ার
পরামর্শ দেন। আমি দুই
মাস সময় নেই। গ্রামে
গিয়ে ঘর-বাড়ি, জমি-
জমা সব স্বল্পমূল্যে
বিক্রি করে দেই এবং
দিল্লিতে গিয়ে বাড়ি
ক্রয় করি। স্ত্রী, দুই
ভাতিজা আর হীরার
বোনকে তৈরি করি।
ফুলাত এনে তাদেরকে
কালিমা পড়াই। আমি
সর্বদা এই
পেরেশানীতে ডুবে
থাকি, এতগুলো
মুসলমান এবং ফুলের মত
নিষ্পাপ মেয়ের এই
নির্মম ঘাতক কিভাবে
ক্ষমার যোগ্য হতে
পারে? মাওলানা
সাহেব আমাকে
কুরআনে কারীম পড়তে
বললেন। বিশেষ করে
সূরা বুরুজ বারবার
পড়তে বললেন। এখন এই
সূরাটিই আমার
সবচেয়ে বেশী ইয়াদ
আছে এবং অর্থও। ১৪০০
বছর পূর্বে আমার
আল্লাহ কেমন বাস্তব
কথা বলেছেন। আমার
এমন মনে হয় যে,
অদৃশ্যের জ্ঞানী
আলিমুল গায়েব,
সর্বজ্ঞ খোদা এখানে
আমারই নকশা
এঁকেছেন।
“কুটিলা আসহাবুল-
উখদুদ”
“অভিশপ্ত হয়েছে
খন্দকওয়ালারা।”
অর্থাৎ বহু ইন্ধন
বিশিষ্ট আগুনের
আয়োজনকারীরা। যখন
তারা তার আশেপাশে
উপবিষ্ট ছিল এবং
মুসলমানদের উপর যে
অত্যাচার করছিল তা
দেখছিল। ঐ কাফেররা
সেই মুসলমানদের উপর
শুধুমাত্র এ কারণেই
অত্যাচার করেছিল যে
তারা ঈমান এনেছিল
এমন আল্লাহর উপর,
যিনি মহা পরাক্রান্ত,
প্রসংশনীয়। তিনি
এমন যে, তাঁরই জন্য
আসমানসমূহ ও যমিনের
রাজত্ব আর আল্লাহ
প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে
অবগত আছেন।
প্রশ্ন : ভাই আহমদ!
আপনি সূরাটি পড়ুন আর
হীরার সেই
মর্মবিদারী শেষ
কথাগুলো উপলব্ধি
করুন…..
উত্তর : আয় খোদা! তুমি
তো আমাকে দেখছোই!
আয় আল্লাহ! তুমি তো
আমাকে
ভালোইবাসো!
তোমার হীরাকে তো
মহব্বতই করো। আয়
আল্লাহ! তুমি হেরা
গুহাকেও ভালোবাসো
আর গর্তে জ্বলন্ত
হীরাকেও
ভালোবাসো। তোমার
ভালোবাসা পেলে
আমার আর কিছুই চাই
না। পিতাজী ইসলাম
গ্রহণ করুন, চাচাজী
মুসলমান হয়ে যান।
প্রশ্ন : আল্লাহ
তাআলার শোকর!
আপনি তার আবেদন
মঞ্জুর করে নিয়েছেন।
আপনি বড়ই
সৌভাগ্যবান। আল্লাহ
তাআলা অত্যাচারের
অমানিশাকে আপনার
জন্য রহমত ও ইসলামের
প্রচারের উপলক্ষ করে
দিয়েছেন।
উত্তর : আমি তার কথা
কোথায় শুনলাম? আমি
তো হেদায়াতের
ফায়সালাকারী,
হীরাকে পেয়ারকারী
আল্লাহ তাআলার কথা
শুনেছি। তিনি না
হলে আমার মত জালেম
কীভাবে এই
সৌভাগ্যের অধিকারী
হতে পারতো?
প্রশ্ন : অনেক অনেক
শোকরিয়া ভাই
আব্দুল্লাহ!
উত্তর : ভাই আহমদ! দুআ
করবেন আল্লাহ
তাআলা যেন আমার
দ্বারা এমন কোন কাজ
করিয়ে নেন যাতে
আমার মন প্রশান্তি
লাভ করে, আমার
অত্যাচারের ক্ষতিপূরণ
হয়ে যায়। বাস্তবিকই
কুরআনের এই বাণীতে
আমার মত দুরারোগ্য
রোগীর জন্য কার্যকর
ব্যবস্থা রয়েছে যে,
নেক কাজসমূহ
(অতীতের)
মন্দকাজসমূহকে
মিটিয়ে দেয়। এজন্য
গুজরাটের দাঙ্গার সময়
কিছু নিষ্পাপ
মুসলমানের সাহায্য
এবং প্রাণ রক্ষার
প্রচেষ্টা আমাকে
ভালো রকম সান্ত্বনা
প্রদান করেছে। (খোদা
হাফেজ)



No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.