ধর্ষনের শাস্তির জন্য কি চারজন সাক্ষী বাধ্যতামূলক??

 নাস্তিকদের অপপ্রচারের জবাব)
ধর্ষনের শাস্তির জন্য কি চারজন সাক্ষী বাধ্যতামূলক??

ধর্ষন এবং ব্যাভিচার সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ব্যাপার ৷
স্বেচ্ছায় অবৈধ যৌন সম্পর্ক করাকে ব্যভিচার বলা হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বটে।

কিন্তু ধর্ষন একটি ভয়ংকর ব্যাপার ৷ এটি ব্যাভিচারের চেয়ে অনেক বড় বিষয় ৷ ধর্ষন, ডাকাতির চেয়েও বড় অপরাধ ৷
এটি একটি পাশবিকতার নামান্তর। তাই ধর্ষণকে ব্যাভিচারের সাথে সম্পৃক্ত না করে সন্ত্রাস বা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কারন গুলোর সাথে বিবেচনা করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

ব্যাভিচারের বিচারের পদ্ধতি এবং শাস্তির বিধান৷

কোন নারীর বিরুদ্ধে ব্যাভিচার প্রমান করতে হলে এবং শাস্তি দিতে চাইলে যিনি অভিযোগ করবেন তাকে ,

(1) চারজন সাক্ষী আনতে হবে ৷
(2) যদি আনতে না পারেন তব তাকে ৮০ টি বেত্রাঘাত দেয়া হবে ৷
(3) কোনদিন আর তার সাক্ষী গ্রহন করা হবে না ৷

আল্লাহ বলেন

4] وَالَّذينَ يَرمونَ المُحصَنٰتِ ثُمَّ لَم يَأتوا بِأَربَعَةِ شُهَداءَ فَاجلِدوهُم ثَمٰنينَ جَلدَةً وَلا تَقبَلوا لَهُم شَهٰدَةً أَبَدًا ۚ وَأُولٰئِكَ هُمُ الفٰسِقونَ
[4] যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান।( সূরা নূর)

তবে তিনি বাঁচতে পারবেন যদি ,

(1) অপরাধী অপরাধ স্বীকার করে
(2) অথবা বাদী এবং বিবাদী কে আল্লাহর নামে কসম কাটতে হবে ৷
এখানে আমরা দেখছি যে যদি কোন নারীর উপর কেউ অপবাদ দেয় তবে তাকে তা প্রমানের জন্য সাক্ষী আনতে হবে এবং সাক্ষী না আনতে পারলে তাকে শাস্তি পেতে হবে ৷
কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল নাস্তিকরা ঠিক তার উল্টো কথা বলে বেড়ায় ৷তারা বলে নারীকে নাকি চারজন সাক্ষী আনতে হবে!!

ধর্ষনের শাস্তি৷

আগেই বলেছি ধর্ষন এবং ব্যাভিচার ভিন্ন ব্যাপার ৷
ইসলামে দৃষ্টিতে ধর্ষণে দুইটি অপরাধ হয়,
(১ )ব্যাভিচার (যে ধর্ষণ করে তার দিক থেকে)
(২ )জুলুম বা কারো থেকে অন্যায়ভাবে কিছু কেড়ে নেওয়া। এখানে ধর্ষিত ব্যাক্তি সম্পূর্ণ নিরাপরাদ।
যেহেতু ধর্ষনকারী একজন নারীর ইজ্জত ছিনিয়ে নেয়, সেহেতু তার বিচার সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে হয়ে থাকে ৷ ধর্ষণকে সন্ত্রাস বা বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয় ৷ ডাকাতি বা ছিন্তাই করার সময় যেমন নিরীহ মানুষের সম্পদ লুন্ঠন করা হয়। তেমনি জোরপূর্বক নারীর সতীত্ব হরণ বা লুণ্ঠন করা হলো ধর্ষণ। তাই আল-কোরআনে ধর্ষণের কথা ব্যভিচারের পাশাপাশি তো বলাই হয়নি, এমনকি আলাদা ভাবেও উল্লেখ করা হয়নি। আর এ কারনেই এটিকে ডাকাতি, ছিন্তাই, রাহাজানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জুলুম, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ,ভূপৃষ্ঠে জনগনের ক্ষতি করা, অস্থিতিশীলতা বা বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টির মত অমানবিক কুকর্মের সমপর্যায়ভুক্ত জ্ঞান করা হয়েছে ৷

আল্লাহ বলেন
33] إِنَّما جَزٰؤُا۟ الَّذينَ يُحارِبونَ اللَّهَ وَرَسولَهُ وَيَسعَونَ فِى الأَرضِ فَسادًا أَن يُقَتَّلوا أَو يُصَلَّبوا أَو تُقَطَّعَ أَيديهِم وَأَرجُلُهُم مِن خِلٰفٍ أَو يُنفَوا مِنَ الأَرضِ ۚ ذٰلِكَ لَهُم خِزىٌ فِى الدُّنيا ۖ وَلَهُم فِى الءاخِرَةِ عَذابٌ عَظيمٌ
[33] যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।( সূরা আল মায়েদাহ)

ধর্ষণ সহ বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টিকারী এসব অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে, আল-কোরআন অনুসারে এগুলো হল তাদের শাস্তি ৷
বিচারক অপরাধের তীব্রতা অনুসারে এসকল শাস্তির যেকোন একটি প্রদান করতে পারেন ৷

রাসূল সাঃ কিভাবে শাস্তি এবং কতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য অনুযায়ী ধর্ষনের বিচার করেছেন??

আমরা একটি হাদীসে দেখি যে

বইঃ সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৭/ দন্ডবিধি (كتاب الحدود عن رسول الله ﷺ), হাদিস নম্বরঃ ১৪৬০
১৪৬০। মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আলকামা ইবনু ওয়াইল কিনদী তার পিতা ওয়াইল কিন্দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে জনৈক মহিলা সালাতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছিল। পতে তাকে এক ব্যক্তি স্বীয় কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলে এবং তার প্রয়োজন পূরণ করে। মহিলাটি চিৎকার করলে লোকটি চলে যায়। এই সময় মহিলাটির পাশ দিয়ে আরেক ব্যক্তি যাচ্ছিল। মহিলাটি বলতে লাগল এই পুরুষটই তার সাথে এমন এমন করেছে। তখন একদল মুহাজির সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহিলাটি বলল, এই লোকটই আমার সঙ্গে এমন এমন করেছে। তখন তারা এই লোকটিকে নিয়ে এলে মহিলাটি বলল, এ-ই সেই লোক। তখন তারা এই লোকটিকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন। তিনি তাকে ‘রজম’ এর নির্দেশ দিলেন। এই সময় যে লোকটি প্রকৃত পক্ষে উপগত হয়েছিল সেই লোকটি উঠে দাঁড়াল। বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আসলে আমি অপরাধী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাটিকে বললেন, যাও, আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিয়েছেন। ধৃত পুরুষটি সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করলেন। আর প্রকৃত পক্ষে যে লোকটি উপগত হয়েছিল তাকে রজম-এর নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, সে এমন তওবা করেছে যে, সমগ্র মদ্বীনাবাসী যদি তা করে তবে তাদের তওবাও কবুল হয়ে যাবে।

তিরমিযী :1454,আবু দাউদ :4379, আহমদ: 27240

এখানে আমরা দেখছি মাত্র একজন ধর্ষিত নারীর সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করেই রায় দেয়া হয় এবং পরে অপরাধী যখন অপরাধ স্বীকার করেন তখন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ৷
তাই আমরা সহজেই বলতে পারি যে

(1)ধর্ষনের শাস্তি দেয়ার জন্য চারজন সাক্ষীর উপস্থিতি অত্যাবশ্যক নয় ৷
(2) যদি বিচারক একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের মাধ্যমেও বুঝতে পারেন যে কোন নারী ,কারো দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন তবুও শাস্তি কার্যকর করতে পারেন ৷
(3) যদি অপরাধী অপরাধ স্বীকার করে তবুও দন্ড কার্যকর করতে পারেন ৷
(4 ) ব্যাভিচারের চেয়ে ধর্ষন অনেক বড় অপরাধ ৷

পরিশেষে বলতে চাই যদি বিচারক অধিক সাক্ষীর উপস্থিতি কামনা করেন তবে কি সেটা ভুল হবে?
পৃথিবীর এমন কোন আদালত আছে ,যেটি সাক্ষী ছাড়া শাস্তি দেয়??
পৃথিবীতে এমন একটি আদালত নেই যেটি সাক্ষী ছাড়া শাস্তি দেয় ৷
তাহলে ইসলামী আদালতে সাক্ষী চাইলে অপরাধ কেন হবে? কেন টনের টন কাগজ নাস্তিকরা নষ্ট করে, সাক্ষী চাওয়ার অপরাধে??যদি সাক্ষীর প্রয়োজন না থাকত তবে কোন পুরুষ বাঁচার সুযোগ পেত?অনেক নারী তখন যে কাউকে ফাঁসিয়ে দেবার সুযোগ গ্রহন করত না ?? শাস্তির ভয় দেখিয়ে কি তখন পুরুষদের ক্ষতিগ্রস্ত করার ভয় থেকে যেত না?
No automatic alt text available.


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.