হিল্লা বিয়ে সংক্রান্ত নাস্তিকের প্রশ্ন ও জবাবঃ-

হিল্লা বিয়ে সংক্রান্ত নাস্তিকের প্রশ্ন ও জবাবঃ-
******************************************
প্রশ্নঃ- তালাকের পরে হিল্লা বিয়ের মত জঘন্য পদ্ধতির মাধ্যমে কেন স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে আনতে হয়,সেই সাথে সহবাসের শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে ।নারীদের প্রতি এই অবিচার কেন?
জবাবঃ-
ইসলামী শরী‘আতে বৈবাহিক বন্ধনকে অক্ষুণ্ণ রাখার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই এই বন্ধন যেন ঝটিকার ন্যায় ছিন্ন-ভিন্ন না হয়ে যায় বরং চিন্তা ভাবনা ও পরামর্শের মাধ্যমে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে সুযোগ রেখে চূড়ান্ত বিচ্ছেদের বিষয়টিকে ইসলাম ইদ্দতের সাথে সম্পৃক্ত করে শেষ সময়কাল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত রেখেছে। ইদ্দতের সময়কাল হ’ল তিন তুহুর, তিন ঋতু বা তিন মাস (বাক্বারাহ ২/২২৮)।
একসাথে তিন তালাক দিতে কোরআন ও হাদিসে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে(২/২৩০/২৩১ দ্রষ্টব্য)।এটা এজন্য যে স্বামী স্ত্রী যেন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে সচেষ্ট হয়।শরীয়তের বিধান হচ্ছে তিন তালাক দেয়ার পরে সেই স্ত্রী আর স্বামীর জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত সেই স্ত্রী দ্বিতীয়বার বিয়ে ও তালাক হচ্ছে।
সূত্র: (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=13006
একশ্রেণীর সুবিধাবাদী লোক এই শর্ত পূরণের জন্য হিল্লা বিয়ের আয়োজন করে যা স্পষ্ট হারাম।
হিল্লা অর্থ উপায়, গতি, ব্যবস্থা, আশ্রয় ও অবলম্বন বিভিন্ন অর্থে আভিধানিকভাবে ব্যবহার হয়। পরিভাষায় হিল্লা বলা হয় : ‘কোন স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে, যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে’।
ইসলামি রীতিতে এ বিয়ে বাতিল ও অশুদ্ধ, এর ফলে নারী তিন তালাকদাতা স্বামীর জন্য হালাল হয় না।
যখন কোন ব্যক্তি এ নারীকে তালাক দেয়ার নিয়তে বিয়ে করে, যেন সে তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, তখন এ বিয়ে হারাম ও বাতিল বলে গন্য।
ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَال: ” لَعَنَ َرسولُ اللَّهِ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ “
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন”। আহমদ : (২/৩২৩),
এ হাদিসটি ইমাম বুখারি হাসান বলেছেন। তার সূত্রে হাফেজ ইব্‌ন হাজার তার “তালখিস” (৩/৩৭৩) গ্রন্থে ইমাম বুখারির এ মন্তব্য উল্লেখ করেন।
ইমাম হাকেম রহ. ও ইমাম তাবরানি রহ. তার ‘আওসাত’ গ্রন্থে ওমর ইব্‌ন নাফে থেকে বর্ণনা করেন, সে তার পিতা নাফে সূত্রে বলেন :
জনৈক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট আগমন করে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, অতঃপর তার এক ভাই কোন পরামর্শ ছাড়াই তালাক প্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করে তার ভাইয়ের জন্য হালাল করার নিয়তে, এভাবে কি প্রথম স্বামীর জন্য স্ত্রী হালাল হবে ? তিনি বললেন : না, পছন্দ ও আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত হালাল হবে না, আমরা এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যেনা বিবেচনা করতাম। আল-মুসতাদরাক লিল হাকেম : হাদিস নং : (২৭৩১)
প্রশ্ন হচ্ছে -
তালাকের পরে যদি তারা ভুল বুঝে আবার সম্পর্কে ফিরে আসতে চায় তবে অন্য স্বামীর সাথে বিয়ে ও সহবাসের শর্ত কেন দেয়া হল ?
দেখুন, এ বিধান যদি না থাকত, তাহলে প্রতিদিনই স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিত। কথায় কথায়, রাগের মাথায় সবসময়ই ‘তালাক তালাক’ বলত। এরপর প্রতিদিনই আবার মায়া করে তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিত। এতে নারীদের কোন সম্মান থাকতনা বরং তারা হয়ে যেত খেলার পুতুল।
নারীর মর্যাদা ধরে রাখার জন্যই ইসলামের এ বিধান। নারী যেন খেলনার বস্তুতে পরিণত না হয়, যেন যখন তখন তাকে স্বামী ছেড়ে দিতে না পারে, আবার যখন তখন তাকে গ্রহণ করতে না পারে, এ জন্যই এ বিধান।
কোন স্বামী যদি কল্পনা করে যে, আমি তিন তালাক দিলে আর আমার স্ত্রী বা সন্তানের মাকে আর ফিরে পাবনা বা আমার স্ত্রীকে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ বসতে হবে। তারপর তার সাথে তাকে শুতে হবে। এরপর সে তালাক দিলে আমি তাকে পুণরায় গ্রহণ করতে পারব। এত কিছু নয়, শুধু এটুকু ভাবলেই যথেষ্ট যে, ‘আমার স্ত্রীকে পর পুরুষের সাথে রাত কাটাতে হবে’, এটুকু ভাবলেই কোন পুরুষত্বের অধিকারী পুরুষ আর তিন তালাক দিতে পারে না।
অতএব, এখন যে সচেতনতা চলছে যে, “মৌখিক তালাক দিলে তা কার্যকরী হবে না। আদালতের নির্দেশনা ইত্যাদি লাগবে”, তার চেয়ে বরং “তিন তালাক দিলে স্ত্রীকে আর ফিরে পাওয়া যাবেনা ” এ সচেতনতা বাড়ানো দরকার। বর্তমান সচেতনতায় তিন তালাকের সংখ্যা বাড়ছে এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পাপ ও পাপীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী পরিণত হচ্ছে স্বামীর হাতের খেলনা।
আর তিন তালাকের ভয়াবহতার সচেতনতা বাড়ালে তিন তালাকের সংখ্যাও কমবে, নারীর মর্যাদাও বাড়বে। বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার গভীর ভাবে।
আল্লাহ্‌ আমাদের বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন,আমিন।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.