নারী+পর্দাপ্রথা+ধর্ষন+ধর্ষক+ধর্ম======ক্ষমতা...???

নারী+পর্দাপ্রথা+ধর্ষন+ধর্ষক+ধর্ম======ক্ষমতা...???
=====================================
পর্দা কি শুধু ইসলাম ধর্মেই আছে?মুসলিমরাই পর্দাকে নারীর মর্যাদা হিসাবে সার্বক্ষণিক তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে!বাদ বাকি ধর্মে চেপে রাখা হচ্ছে পর্দা নামক সৌন্দর্যের ভুষনকে!তাহলে শুধু শুধু ইসলামকে পর্দার কারণে বিতর্কিত করা হচ্ছে কেন.......???

আফসোস!৫ বছরের কন্যাশিশুটিও যখন ধর্ষণের শিকার হয়,তখন পর্দা প্রথার কি যৌক্তিকতা থাকে?পর্দা প্রথাই যদি যৌক্তিক হয় তাহলে ছেলেশিশুরা কেন বিকৃত যৌন রুচির শিকার হয়?কেন শুধু গরীব ঘরের মেয়েরাই ধর্ষণের শিকার হবে?কেন গার্মেন্টস এ কর্মরত নারীরা যৌন হয়রানীর শিকার হবে প্রতিদিন?কেন ব্যাংক,বীমা,হাসপাতাল,বহুজাতিক কোম্পানি,মোবাইল কোম্পানির উচ্চপদস্থ মহিলা কর্মীরা এই যৌন হয়রানি থেকে তুলনামূলক-ভাবে মুক্ত?কেন তারা কি পর্দানশীন মহিলা? শিশুদের বেলায় কেন ধর্ষকেরা উত্তেজিত হয় না ?আমিতো কোন প্রভাবশালী পরিবারের মেয়েকে ধর্ষিত হতে শুনিয়াই !এদেশের এম পি মন্ত্রীদের নিকট আত্মীয়দের কোন মেয়ে কি ইভ-টিজিং কিংবা যৌন হয়রানির শিকার হয়?কই ? হলিউড বলিউডের নায়িকারা কি গরিব ঘরের মেয়েদের মতো ধর্ষিত হয়?তাহলে ধর্ষণের সাথে পর্দাপ্রথার সম্পর্ক কি ?

আমি,আমার বাবা,আমার দাদা,আমার দাদার দাদার চৌদ্দ-গুষ্টির পুরুষদের মধ্যে কেউ কখনো কোন নারীকে ধর্ষণ করে নাই! কেন?আমাদের ৮ প্রজন্মের হাজার তিনেক পুরুষরা কি কখনো বেগানা নারী দেখেন নাই ,যা দেখলে শরিয়ৎ মোতাবেক শিশু উঞ্চতা ঘটে?এদের কি পুরুষত্ব ছিলোনা?নাকি,এরা সব সময় বংশ মর্যাদা,মান সম্মান,সামাজিক অবস্থান,কিংবা আদর্শগত কারণে কোন নারীকে ধর্ষণ করার সাহস পায়নি?এবং কেন এই আট প্রজন্মের কোন নারী ধর্ষিত হয়নি?নাকি এরা প্রভাবশালী বলেই ধর্ষকদের যৌনাঙ্গ বরাবরই নেতিয়ে পড়েছে?অথবা ধর্ষকরা আগে থেকে জেনে গেছে,এই বংশের নারীরা পর্দা দ্বারা সুরক্ষিত না হলেও এরা সামাজিকভাবে অরক্ষিত নয়?তাহলে পর্দাপ্রথার মূল্য কি?

নাকি যুগে যুগে যারা প্রতারিত, বঞ্চিত,লাঞ্ছিত!তারাই হয়েছে ধর্ষিত?পর্দাপ্রথার সাথে ধর্ষণের কোন সম্পর্ক নাই?কুলাঙ্গার পুরুষ নারীকে যেখানে সুযোগমতো পেয়েছে সেখানে ধর্ষণ করেছে?সেখানে নারীকে বাধ্য করেছে আগুনে ঝাঁপ দিতে?যেখানে সুযোগ পেয়েছে,সেখানেই কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দিয়েছে,সেখানেই অনাগত কন্যার ভ্রূণ হত্যা করেছে!নিজের অধিকারের কথা বলায় দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে!যৌন হয়রানি করে যাচ্ছে,ইভটিজিং করে যাচ্ছে !তাই প্রকৃত বিচারে এসবের সাথে পর্দাপ্রথার সম্পর্ক থাকতে পারেনা!তাই গ্রামের গণ্ডমূর্খ হোক,জমির আল ঠেলা কাঠ মোল্লা হোক,কিংবা জাকির নায়েকের মতো পণ্ডিতই হোক যদি পর্দাপ্রথার পক্ষে কথা বলে,তাহলে বুঝতে হবে হয়তো তার কান্ডজ্ঞানে সমস্যা আছে নয়তো সে ব্যক্তি অমানুষ !

কুলাঙ্গার পুরুষ সুযোগ পেয়ে নারীকে ধর্ষণ করেছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে,ইরাক যুদ্ধে, আফগানিস্তানে,লিবিয়া ভিয়েতনামে!এবং-কি পাকিস্তানে 'মোল্লা'নামের পুরুষটি নারীকে কবর থেকে উঠিয়েও ধর্ষণ করেছে !তারপরও কি বলা যায়,পর্দাহীন নারীরাই ধর্ষিত হচ্ছে?

ধানমন্ডি,গুলশান,বনানী এলাকার মেয়েরা যে পরিমাণে বেপর্দায় চলাফেরা করে সে পরিমাণে ধর্ষিত হয় কি?সেই তুলনায় কামরাঙ্গির চরের মেয়েরা শালীন পোশাক পরেও কেন বেশি ধর্ষিত হবে? ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,যারা ধর্ষক তারা প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে,পেশাদার সন্ত্রাসী ,রাজনৈতিক ক্যাডার ইত্যাদি হয়ে থাকে?অন্যদিকে ধর্ষিতা হয় রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে নির্যাতিত,নিপীড়িত,প্রতারিতরা!কেন? সুতরাং পর্দা প্রথার সাথে ধর্ষণের সম্পর্ক কি?

রেলস্টেশন,বাস-ষ্টেশন,হাট বাজারে বসবাসরত নারী মানসিক প্রতিবন্ধীরা প্রতি রাতেই ধর্ষিত হয়!এখন কি,রাষ্ট্র তাদেরকে পর্দা দ্বারা সুরক্ষিত করবে?নাকি মৌলবাদীরা করবে?আমরা কি জানিনা,বিকৃত রুচির কুলাঙ্গার পুরুষ দ্বারা গ্রামের গরু ছাগলও বলাৎকার হয় ?এক্ষেত্রে বেপর্দায় চলার কারণে ধর্ষিতা নারীর মতো কি গরু ছাগলকেও দোররা মারা হবে?ছাগলকে দোররা মারার দায়িত্ব কি মসজিদের ইমাম সাহেবরা নিবেন? প্রায়শ,গ্রামের মেয়েরা রাতের বেলা প্রাকৃতিক কাজ সারাতে গিয়ে আগে থেকে ওত পেতে থাকা ধর্ষক দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে!এক্ষেত্রে দায় কার?বাথরুমে যাওয়ার সময় কি পর্দাপ্রথা বাধ্যতামূলক করা হবে? মেয়েরা স্কুলে গিয়ে ধর্ষিত হচ্ছে,ভার্সিটিতে হচ্ছে,গার্মেন্টস এ হচ্ছে!কখনো কি কোন মেয়ে রিক্সায় চড়তে গিয়ে রিক্সাওয়ালা কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছে ?হয়না,এজন্যই যে রিক্সাওয়ালারা প্রতারিত?তাদের সাধ্য নেই কোন মেয়েকে ধর্ষণ করে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা আদায় করে নেওয়ার?

সমাজে যারা প্রতারিত,চরমভাবে দারিদ্র,
অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন,কিংবা নিন্মবিত্তের মানুষ তারাই পুরুষ দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে প্রতিদিন,নারী ও শিশু পাচারকারী চক্রের শিকার হচ্ছে,বাল্য বিবাহের শিকার হচ্ছে,বহুবিবাহের শিকার হচ্ছে,ধর্ষিত হয়ে দোররার শিকারও হচ্ছে!কেন?অন্যদিকে অভিজাত এলাকার নারী কর্তৃক পুরুষরাই শিকার হচ্ছে যৌন হয়রানি সহ নির্যাতন,নিপীড়নের! কেন ? সৌদি আরব,আরব আমিরাত,ওমানের মতো মুসলিম দেশগুলোতে মেয়েরা বাবা কর্তৃক,বোনেরা ভাই কর্তৃক ধর্ষিত হচ্ছে!কিংবা আপোষে চলছে উগ্র যৌনচর্চা !এবং অনেকক্ষেত্রে ঐসব দেশে গৃহ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশীরা হয়তো বাধ্য হয় গৃহকর্তীর সাথে যৌনাচারে লিপ্ত হতে নয়তো চাকুরী হারিয়ে দেশে ফেরত আসতে!এক্ষেত্র পর্দা প্রথার কার্যকারিতা কি ?যৌন হয়রানি থেকে পুরুষের মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা কি? কয়দিন আগে আই এম এফ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে,হোটেল কর্মীকে ধর্ষণ চেষ্টার!প্রশ্ন হচ্ছে,ঐ প্রেসিডেন্ট কি মিশেল ওবামা,কন্ডোলিজা রাইস,ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ,কিংবা সমপর্যায়ের ক্ষমতাবান নারীদের যৌন হয়রানি করার সাহস করবে?যদি না হয়!তাহলে কি এটাই প্রমাণিত নয় যে,যেখানে নারীরা ক্ষমতাবান সেখানে পুরুষ নির্যাতিত হয়?যেখানে পুরুষ ক্ষমতাবান সেখানে নারীরা নির্যাতিত হয় ?যুগ যুগ ধরে তাই ঘটছে ?ধর্ষক,ধর্ষিতার চাইতে অধিক ক্ষমতাবান?তা ধানমন্ডি,গুলশান, বনানী হোক,কিংবা মক্কা মদিনা,রিয়াদ,জেদ্দা,দুবাই,শারজা,মাস্কট,ওয়াশিংটন,
লন্ডনই হোক ?

গুয়ান্তানামাবে কারাগারে মার্কিন নারী সৈনিক দ্বারা তালেবান,আল কায়েদা জঙ্গিদের যৌন হয়রানিতেও কি প্রকাশ পায়না,ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানি,দুর্বলের প্রতি ক্ষমতাবানের স্বাভাবিক নির্যাতন?ধর্ষণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়?যতদিন ক্ষমতায় সমতা আসবেনা,ততদিন নির্যাতন বন্ধ হবেনা?যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ বন্ধ হবেনা ? এইও কি সহজে বোধগম্য নয়,এদেশের কোন ধর্ষক শেখ হাসিনা কন্যা পুতুলকে ধর্ষণ করার ক্ষমতা রাখেনা?বরং পুতুল ক্ষমতা রাখে এদেশের হাজার হাজার পুরুষকে যৌন হয়রানি করার ?তারেক জিয়া,কোকোও ক্ষমতা রাখে হাজার খানেক নারীকে ধর্ষণ করার!হয়তো করেছেও!প্রতিমুহর্ত্বে করে যাচ্ছে,অতীতেও করেছে, সুতরাং এটাই সত্যি,ক্ষমতার অপপ্রয়োগই নির্যাতন,নির্যাতনের অন্যরূপ ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানি! কোমল-মতি বন্ধুরা কি ভেবে দেখবেন,নারীতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কথা,যেখানে কোন পুরুষই সাহস করতে পারেনা,কোন নারীকে ধর্ষণ করতে!সে নারী যতই বেগানা চলুক!যতই যৌন উদ্বেগ হওয়ার মতো পোশাক পরিচ্ছেদ করুক? কিংবা কয়জন বাংলাদেশির সাহস আছে,ব্রাজিল,ইতালি,নেদারল্যান্ড,সিঙ্গাপুরের মতো দেশে ব্রা পেন্টি পরা নারীকে ধর্ষণ করার ?তখন কেন শিশু উঞ্চতা ঘটে না !তারপরও কি বলা যায়না,
শিশু উঞ্চতা ঘটতে ক্ষমতা লাগে?নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী ক্ষমতার চর্চা করতে হয়?

খৃষ্টান ধর্মে নারীর পর্দাঃ
খৃষ্টানদের বিশ্বাস কি আসুন সেটা জেনে নিই। এটা প্রসিদ্ধ যে,ক্যাথলিক খৃষ্টান যাজক মহিলাগন শত শত বছর ধরে পর্দা বিধান মেনে চলছেন।

"কোন পুরুষ ইবাদত বন্দেগী করা অবস্থায় তার মাথায় কিছু থাকলে তার মাথাকে অপদস্থ করা হবে। পক্ষান্তরে,কোন মহিলা খালি মাথায় ইবাদত বন্দেগী করলে তার মাথাকে অপদস্থ করা হবে। মাথাকে অপদস্থ করা মানে মাথার চুল কামিয়ে দেয়া। অতএব,কোন মহিলা মাথা ঢেকে না রাখলে তার মাথার চুল কামিয়ে দিতে হবে। যদি কোন মহিলার জন্য তার মাথার চুল কামিয়ে ফেলা অপমানজনক মনে হয়; তাহলে সে যেন তার মাথা ঢেকে রাখে। আর পুরুষের মাথা স্রষ্টার প্রতিচ্ছবি হওয়ার কারণে মাথা ঢেকে রাখা উচিত নয়। মহিলারা স্বামীর সন্মানের প্রতিচ্ছবি। কারণ,পুরুষ মহিলা থেকে নয় বরং মহিলা পুরুষ থেকে। পুরুষ মহিলার জন্য সৃজিত হয় নাই বরং মহিলা পুরুষের জন্য সৃজিত হয়েছে। তাই, ফেরেশতার খাতিরেই তার মাথার উপরে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।"
[১করিন্থিয়ান্স ১১:৪-১০]

ইসলামে পর্দার বিধান খৃষ্টানদের আকীদা-বিশ্বাসের পুরোপুরি বিপরীত। ইসলামে এটা পুরুষের সম্মান বা তার আনুগত্যের দলীল নয়। এটা ইহুদীদের আকীদা-বিশ্বাসেরও বিপরীত; ইসলামে এটা বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যকার পার্থক্যকারীও নয়। বরং তা প্রত্যেক মুসলিম নারীর সম্মান ও সচ্চরিত্রের গ্যারান্টি স্বরূপ। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার দিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। যে নারীদের সম্মানের হানি ঘটাতে আসবে তাকে অবশ্যই কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

আল্লাহ বলেন: আর যারা সতী স্বাধ্বী মহিলাদেরকে অপবাদ দেয় অতঃপর চারজন স্বাক্ষী হাজির করতে না পারে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর;কখনও তাদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর ওরাই পাপাচারী।
[সূরা আন নূরঃ ৪]

এবার তাহলে আসুন! আমরা আল কুরআনের এ শাস্তি ও বাইবেলের শাস্তির মাঝে তুলনামুলক বিশ্লেষণ করি।

বাইবেলে এসেছে- "যখন কোন পুরুষকে কোন অবিবাহিত মহিলার (যার বিবাহের এখনও প্রস্তাব আসেনি) সাথে অশ্লীলতায় লিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে তখন উক্ত পুরুষ, মহিলার পিতাকে ৫০ টি রৌপ্য মুদ্রা প্রদান করবে এবং তার চরিত্র হননের ফলস্বরুপ তাকে বিবাহ করবে; কখনও তাকে তালাক দিতে পারবে না। [ডিউটারনমী:২২/২৮-৩০]

এখানে কাকে শাস্তিটা দেয়া হল? পুরুষকে যে জরিমানা স্বরূপ নারীর পিতাকে ৫০টি স্বর্ণমুদ্রা দেবে, নাকি উক্ত মহিলাকে যাকে উক্ত পুরুষের সাথে বিবাহ ও আজীবন ঘর-সংসারে বাধ্য করা হবে? কোন বিধান নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় অগ্রগণ্য, কুরআনের কঠিন বিধান না বাইবেলের লঘু শাস্তি?

বর্তমান যুগে যখন কোন ক্যাথলিক খৃষ্টান মহিলা হিজাব পরে তখন তা সে স্বামীর সম্মানের জন্য পরিধান করেছে বলে পবিত্র গণ্য হয়; পক্ষান্তরে একই হিজাব যখন কোন মুসলিম মহিলা তার নিজের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পরে থাকে, তখন তা "নারীর উপর অত্যাচার" বলে ধর্তব্য হয়।কেন................!!!

হিন্দু ধর্মে নারীর পর্দাঃ
অনেকেই হয়তো শুনে অবাক হবেন যে হিন্দু ধর্মেও নারীদের পর্দার কথা বলা হয়েছে । যেমন-

“যেহেতু ব্রহ্মা তোমাদের নারী করেছেন তাই দৃষ্টিকে অবনত রাখবে, উপরে নয় । নিজেদের পা সামলে রাখো । এমন পোষাক পড়ো যাতে কেউ তোমার দেহ দেখতে না পায় (ঋকবেদ ৮।৩৩।১৯)।

ভেবে দেখুন উপরে যেগুলো নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে গুলোতো ইসলামেও দেয়া হয়েছে । শরীর ঢাকার কথা অর্থাৎ ভালো পোষাক পড়ার কথা । পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার কথা । নিজেদের দৃষ্টিকে অবনত রাখা ।
হিন্দুদের মধ্যে কিভাবে পর্দা প্রথা ঢুকলো কারণ আমার জানা মতে কোন হিন্দু ধর্মে পর্দার বিধান নেই।
হিন্দু নারীদের মধ্যে যে পর্দা প্রচলিত তাকে বাংলায় বলে ঘোমটা আর হিন্দিতে ঘোঁঘট। এটা শাড়ীকে টেনে মাথা এবং মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা হয়। তবে বাঙ্গালী অঞ্চলগুলিতে সাধারণত মাথা ঢেকে রাখা হয়।

হিন্দু নারীদের ঘোমটা,
এবার প্রশ্ন হলো কি করে হিন্দু ধর্মে পর্দা ঢুকলো? কথিত আছে – চতুর্দশ শতাব্দীতে আলাউদ্দিন খলজি চিতোরে গড়ের রাজা রাণা রতন-সেনের রাজ্য পরিদর্শনে আসেন। খলজিকে যে প্রাসাদের থাকার জন্য দেওয়া হয় তার বিপরীতে ছিল মেয়েদের থাকার প্রসাদ মধ্যখানে একটা সরোবর দুই প্রাসাদকে বিভক্ত রেখেছিল। একদিন সুন্দরী রাণী পদ্মিনীর পর্দা-হীন মুখ সরোবরে জলে আলাউদিন খলজি দেখলেন এবং তার রাণীকে পছন্দ হয়ে গেল। তিনি চিতোর জয় করা এবং রাণীকে বিয়ে করার স্বপ্ন নিয়ে চিতোর গড় থেকে ফিরে গেলেন এবং আবার চিতোর গড় আক্রমণ করলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি রাণীকে পেলেন ঠিকই কিন্তু তা ছিল তার মৃত পোড়া ছাই। রাণী বিধর্মী পুরুষের কাছে আত্মসমর্পণ না করে মৃত্যুকে বেছে নিলেন। তারপর থেকেই এই অঞ্চলের মেয়েদের মধ্যে পর্দা প্রথা প্রচলন মুসলিম পরিদর্শকদের হাত থেকে বাচতে এবং ধীরে ধীরে এই পর্দা প্রথা প্রায় সারা ভারতের পরম্পরা হয়ে যায়।যদিও ঘটনাটির কোন ভিত্তি নাই!

এত গেল ধর্মগ্রন্থও ইতিহাসে কথা। বর্তমানেও নারী পর্দা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক চলছে। অনেক মুসলিম প্রধান দেশ সহ অনেক দেশই নারীদের পর্দা প্রথা আইন করে বন্ধ করছে। আমিও বলি পর্দা প্রথা কোন সমস্যার সমাধান নয়। সমাধান মানসিকতা পরিবর্তনে। আসুন আমরা পাগলা কুকুরের ভয়ে নিজেরা খাঁচাতে না ঢুকে পাগলা কুকুরকে বন্ধী করি। তবে আমরা শোভন-শালী কাপড় নিশ্চয়ই পরবো তবে যা আমাদের জন্য স্বস্তিকর।

আরো একটু আলোচনায় যাওয়ার আগে আসুন আমরা দেখি যে, তথাকথিত প্রগতি, নারী-স্বাধীনতা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সমাজকে বা নারীকে কী দান করেছে..?

বর্তমান যুগে, বিশেষত পাশ্চাত্য-বিশ্বে নারীকে তাঁর নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা রূপে আখ্যায়িত করা হয়। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সাথে তাল-মিলিয়ে এবং অনেকক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের তুলনায় অধিকতর যোগ্য বলেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সত্যিই কি নারী লিঙ্গ-বৈষম্যকে অতিক্রম করে পুরুষের সমান মর্যাদা লাভ করতে পেরেছে? 'কলঙ্কময় অতীতের' নিগ্রহ ও দমন-নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেয়েছে? তথাকথিত নারী-স্বাধীনতা কি নৈতিকতা সম্বৃদ্ধ শান্তি পূর্ণ একটি নতুন সমাজ-ব্যবস্থার ইঙ্গিত প্রদান করে? সত্যিই কি নারী প্রকৃত সামাজিক ন্যায়-বিচার লাভে সমর্থ হয়েছে? আমরা যদি বর্তমান পাশ্চাত্য-সমাজের দিকে তাকাই তাহলে এর উত্তর হবে: 'না'। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হলেও পাশ্চাত্যের সমাজ-ব্যবস্থা আজ এক ভয়াবহ সঙ্কটের সম্মুখিন। তাই এককালের 'সেকেলে' বা 'out dated family concept' বা পারিবারিক প্রথা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীগণ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।

নারী-নির্যাতন, শিশুহত্যা, পতিতাবৃত্তি, ধর্ষণ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, লিভিংটুগেদার, মাদকাসক্তি, কুমারী-মাতৃত্ব ইত্যাদি সমস্যা আজ পাশ্চাত্য-সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কেবল পাশ্চাত্য বা উন্নত বিশ্বই নয়, আজ আমাদের সমাজেও এ-সকল ব্যাধির ক্রমশ সংক্রমণ ঘটছে। বাহ্যিক চাকচিক্য আর উন্নতির খোলস ভেদ করতে পারলেই আমরা সেই অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো দেখতে পাই। প্রচলিত সাধারণ ধারণায় বিংশ শতাব্দি, বিশেষ করে দ্বিতীয়-বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত সময়কে নারী স্বাধীনতার স্বর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করা হলেও এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, এই সময়ে বিশ্বে নারী-নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা পঁচিশ ভাগ। এ বিষয়ে এখানে কয়েকটি জরিপের উল্ল্যেখ করা হলোঃ

(১) গর্ভপাতঃ
১৯৬৮ সালে ইংল্যাণ্ডে গর্ভপাতকে বৈধতা প্রদান করার পর সেখানে কেবল রেজিস্টার্ড গর্ভপাতের ঘটনাই বৃদ্ধি পেয়েছে দশগুণ। এর মধ্যে মাত্র শতকরা একভাগ (১%) স্বাস্থ্যগত কারণে আর বাকী ৯৯%-ই অবৈধ গর্ভধারণের কারণে ঘটেছে। ১৯৬৮ সালে যেখানে ২২,০০০ রেজিস্টার্ড গর্ভপাত ঘটানো হয় সেখানে ১৯৯১ সালে এক লক্ষ আশি হাজার আর ১৯৯৩ সালে তা দাঁড়ায় আট লক্ষ উনিশ হাজারে। এর মধ্যে পনের বছরের কম বয়সী মেয়ের সংখ্যা তিন হাজার। এটা তো গেল যুক্তরাজ্যের অবস্থা। এখন আসুন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। সেখানকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। রেজিস্টার্ড পরিসংখ্যান অনুযায়ী কেবলমাত্র ১৯৯৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে দশ লক্ষ গর্ভপাত ঘটানো হয়। The Alan Guttmachere Institute নামের একটি গবেষণা-প্রতিষ্ঠানের মতে প্রকৃত গর্ভপাতের সংখ্যা উক্ত সংখ্যার তুলনায় ১০%-২০% বেশি। এক্ষেত্রে কানাডার পরিস্থিতি কিছুটা 'ভালো'। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক। তবে জাপানের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুন । অর্থাৎ, জাপানে প্রতি বছর প্রায় বিশ লক্ষ রেজিস্টার্ড গর্ভপাত ঘটানো হয়ে থাকে। তথাকথিত সভ্য-জগতে 'ইচ্ছার স্বাধীনতা'-র জন্য বিগত ২৫ বছরে এক বিলিয়ন অর্থাৎ দশ কোটিরও অধিক ভ্রুণকে হত্যা করা হয়। উক্ত সংখ্যা কেবলমাত্র রেজিস্টার্ড পরিসংখ্যান থেকে নেয়া হয়েছে । প্রকৃত সংখ্যা আরো ভয়াবহ। 'বর্বরযুগে' কন্যা-সন্তানদের হত্যা করা হতো অর্থনৈতিক কারণে। কিন্তু আজ তথাকথিত সভ্য-জগতে ব্যাভিচার, অবৈধ-মিলন আর অনৈতিকতার চিহ্ন মুছে ফেলতে এইসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। এ-সবই হলো বেপর্দা আর নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কুফল।

(২) ধর্ষণঃ
ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা জানা সহজ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী এ-বিষয়ে রিপোর্ট করে না। ফলে, যে-সংখ্যা পাওয়া যায়, বাস্তবে তা অনেক বেশি ঘটে। ব্রিটিশ পুলিশের মতে ১৯৮৪ সালে, এই এক বছরে, বৃটেনে ২০,০০০ (বিশ হাজার)-এর অধিক নিগ্রহ এবং ১৫০০ (পনের শ') ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়। The London Rape Crisis Center -এর মতে বৃটেনে প্রতিবছর অন্তত পাঁচ থেকে ছয় হাজার ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড হয়ে থাকে, আর প্রকৃত সংখ্যা তার চাইতেও বেশি। ১৯৯৪ সাল নাগাদ এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২,০০০ হাজারে। উক্ত সংস্থার মতে "If we accept the highest figures, we may say that, on average, one rape occurs every hour in England." মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি সবচাইতে ভয়াবহ। এখানে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে। সে সংখ্যা জার্মানীর সংখ্যার চাইতে চারগুণ, বৃটেনের চাইতে ১৮ গুণ আর জাপানের চাইতে প্রায় বিশগুণ বেশি। সবচাইতে উদ্বেগজনক এবং বাস্তবতা এই যে, ৭৫% ভাগ ধর্ষণের ঘটনাই ঘটে থাকে পূর্ব-পরিচিতের দ্বারা আর ১৬% নিকট-আত্মীয় বা বন্ধুর দ্বারা। National Council for Civil Liberties নামক সংস্থার মতে ৩৮% ক্ষেত্রে পুরুষ তাঁর অফিসিয়াল ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে নারীকে ধর্ষণ করে থাকে। আর ৮৮% মহিলা কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকেন। এই হলো তথাকথিত উন্নত ও নারী-স্বাধীনতার দাবীদার দেশগুলোর অবস্থা।

(৩) বিবাহ-বিচ্ছেদঃ
বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বিবাহপূর্ব সহবাস এবং 'Live Together' -এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬০ সালে জন্ম গ্রহণকারী বৃটেনের নারীদের প্রায় অর্ধেক প্রাক-বিবাহ সহবাসের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এর পক্ষে তাঁদের যুক্তি ছিল যে, এর ফলে নর-নারী একে অপরকে ভালোভাবে জানতে পারে এবং এর পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তা স্থায়ীত্ব লাভ করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইংল্যাণ্ডেই সর্বাধিক বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে থাকে। ১৯৮৩ সালে যুক্তরাজ্যে যেখানে এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে, ১৯৯৪ সালে তার সংখ্যা দাঁড়ায় এক লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭০ সালে বিবাহ-বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিল সাত লক্ষ আট হাজার, আর ১৯৯০ সালে তা দাঁড়ায় এগার লক্ষ পঁচাত্তর হাজারে। পক্ষান্তরে, বিবাহের হারে তেমন কোনো উল্ল্যেখযোগ্য-সংখ্যক পরিবর্তন হয়নি।

(৪) কুমারী-মাতৃত্ব ও একক-মাতৃত্বঃ
পশ্চিমা-বিশ্বের তথাকথিত "নারী স্বাধীনতার" আরেক অভিশাপ হলো কুমারী-মাতৃত্ব। বৃটেনে এক জরিপে দেখা যায় যে, ১৯৮২ সালে যেখানে কুমারী-মাতার সংখ্যা ছিল নব্বই হাজার, ১৯৯২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই লক্ষ পনের হাজারে। ১৯৯২ সালে জন্ম নেওয়া শিশুদের ৩১% ছিল অবিবাহিতা মাতার সন্তান। এই অবিবাহিতা বা কুমারী-মাতাদের মধ্যে আড়াই হাজারের বয়স ১৫ (পনের) বছরের নীচে। বৈধ বিবাহের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুর তুলনায় অবৈধ শিশুর জন্মের হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে, অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া শিশুর দায়ভার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বর্তাচ্ছে কুমারী-মাতা বা একক-মাতৃত্বের (single mother) উপর। নারীর উপর কুমারী-মাতৃত্বের এই দায়ভার পশ্চিমা-বিশ্বে নারী-নিপীড়নের এক নিষ্ঠুর উদাহরণ।

(৫) মদ্যপান ও ধুমপানঃ
পশ্চিমা ধাঁচের নারী-পুরুষের সমানাধিকার নারী সমাজের মধ্যে অনেক মন্দ অভ্যাসের জন্ম দিয়েছে। একসময় মদ্যপান ও ধূমপানকে কেবল পুরুষের বদঅভ্যাস হিসাবে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু আজ নারীও তাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। The Sunday Times - এর এক রিপোর্টে দেখা যায় যে, নারীরা "নির্দ্ধারিত মাত্রার" চাইতে অধিক পরিমাণে মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। আর ধুমপানের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা এবং পরিমাণ পুরুষের সমান সমান।

(৬) বিজ্ঞাপনে ও পর্নোগ্রাফীতে:
তথাকথিত নারী-স্বাধীনতার নামে নারীকে আজ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন-সামগ্রী এবং পর্নোগ্রাফীতে। পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী যেন আজ একটি অপরিহার্য বিষয়। সম্প্রতি দি ওয়াশিংটন পোষ্ট পত্রিকার বরাত দিয়ে আমাদের ঢাকার দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়,
"আমেরিকার মেয়েরা যৌন-আবেদনময়ী হওয়ার পরিবেশেই বড় হচ্ছে। তাঁদের সামনে যেসব পণ্য ও ছবি তুলে ধরা হচ্ছে তাতে তাঁরা যৌনতার দিকেই আকৃষ্ট হচ্ছে। মার্কিন সংস্কৃতি, বিশেষ করে প্রধাণ প্রধাণ প্রচার-মাধ্যমে মহিলা ও তরুনীদের যৌন-ভোগ্য-পণ্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (এপিএ) টাষ্ক ফোর্স অন দ্যা সেক্সুয়ালাইজেশন অব গার্লস-এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে একথা বলা হয়। রিপোর্টের প্রণেতাগণ বলেন, টিভি-শো থেকে ম্যাগাজিন এবং মিউজিক-ভিডিও থেকে ইণ্টারনেট পর্যন্ত প্রতিটি প্রচার-মাধ্যমেই এই চিত্রই দেখা যায়। ............. প্রণেতাদের মতে, যৌনরূপদান তরুনী ও মহিলাদের তিনটি অতি সাধারণ মানসিকস্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এগুলো হলো পেটের গোলযোগ, আত্মসম্মানহানিবোধ এবং মনমরা ভাব। .

................ লিজ গুয়া নামের একজন মহিলা বলেন, তিনি তাঁর ৮ (আট) বছরের মেয়ে তানিয়ার উপযোগী পোশাক খুঁজে পেতে অসুবিধায় রয়েছেন। প্রায়ই সেগুলো খুবই আঁটসাঁট, নয়তো খুবই খাটো। যৌন-আবেদন ফুটিয়ে তোলার জন্যই এ ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়।" (দৈনিক জনকন্ঠ, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০০৭)
এতক্ষণ পর্যন্ত তথাকথিত নারী-স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা-জগতের ঘুনেধরা সমাজের একটি ভয়ঙ্কর চিত্র আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বাস্তবচিত্র তার চাইতেও আরো অনেক বেশি ভয়াবহ। অর্থনৈতিক চাকচিক্য আর প্রযুক্তিগত উন্নতির আড়ালে তথাকথিত 'আধুনিক' বিশ্বের সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থায় আজ ধ্বস নেমেছে। নারী-স্বাধীনতা ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার নামে নারী আজ পদে পদে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হচ্ছে, ব্যবহৃত হচ্ছে' ভোগের সামগ্রী হিসাবে। এথেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও জীবন-নির্ধারণের সঠিক ও পূর্ণ অনুসরণ। পবিত্র কুর'আন মজিদের সূরা আহযাবের যে আয়াতটি সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা নবী করিম হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এবং মুমেনগণকে এই নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁদের স্ত্রী এবং কন্যাগণ যেন চাদর দ্বারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও শরীর ঢেকে রাখে। যার মধ্যে তাঁদের জন্য রয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য এবং প্রশান্তি।

অনেকে বলে থাকেন যে, প্রকৃত পর্দা হলো মনে। মন ঠিক থাকলে নাকি দেহের পর্দার প্রয়োজন হয় না। ইসলামও একথা স্বীকার করে যে, পর্দা খুবই জরুরী, পবিত্র কুর'আনও মনের পর্দার উপর জোর দিয়েছে। কিন্তু, মন তো দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। দেহকে কেন্দ্র করেই মনের অস্তিত্ব। তাই, সবার আগে প্রয়োজন দেহের পর্দা।

বিশেষ মন্তব্য,আজ থেকে ২০ বছর আগে যেই ধরনের কাপড় শুধুমাত্র যৌন-কর্মীদেরকে রাতের বেলায় পড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত (যেমন: বাংলাদেশে ওড়না ছাড়া কামিজ; বিদেশে: শুধুই টাইট্‌স), যেন তারা খদ্দের ধরতে পারে, আজকে সেই একই পোশাক পড়ে ভদ্রঘরের মেয়েরা দিনে-রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজকাল মেয়েদের কাপড় দেখে বোঝা মুশকিল সে কোনো যৌন কর্মী, নাকি কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে — সবারই পোশাক এক রকম। মিডিয়া এবং সংস্কৃতি খুব ধীরে ধীরে আমাদেরকে প্রতিক্রিয়াহীন, অনুভূতিহীন, ভোঁতা করে দিয়েছে। আজকাল মেয়েদেরকে এই সব পোশাক পড়তে দেখলে আমরা, “আস্তাগফিরুল্লাহ! ছি! ছি! এইটা কী পড়ে আছো?”, বলে আঁতকে উঠি না।

যার ফলাফল: মেয়েদের কাপড় আস্তে আস্তে আরও টাইট, আরও স্বচ্ছ আরও ছোট হতেই থাকে। এভাবে আমাদের অন্তর কঠিন হতে হতে, একসময় পাথর হয়ে যায়, লজ্জা-হায়া সব লোপ পায়।

সকল ধর্মের পর্দার লিংক,তাহলে ইসলাম কেন দোষী হবে?
http://www.peaceinislam.com/rezowan/655/

সর্বশেষ মিনতিঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নারীরা হচ্ছে চাদর এবং যদি সে গৃহের বাইরে যায় তবে শয়তান খুশি হয় (তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে বলে)। সে (নারী) আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না যতটা সে গৃহে থেকে করতে পারতো।”
[ইবনে হিব্বান ও ইবনে আবী খুযাইমাহ, আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন, সিলসিলা আস সহীহাহ ২৬৮৮]

এবং তিনি (সাঃ) নারীদের মসজিদে সালাত আদায়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছিলেন, “তাদের গৃহই তাদের জন্য উত্তম।” [আবু দাউদ ৫৬৭]

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় আর কোন ফিতনাহ রেখে যাচ্ছিনা। আর, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনাহই ছিলো নারী সংক্রান্ত। সুতরাং লোকদের উচিত তাদের পরিবারকে ফিতনাহ এবং ফিতনাহর উপকরণ থেকে দুরে রাখা। [ফতোয়ায়ে আল-মার'আহ আল মুসলিমাহ : ২/৯৮১]

আবু হুরায়ররা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "মহান আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।’’
.
[সহীহ বুখারীঃ হাদীস ১০৮৮, সহীহ মুসলিমঃ ১৩৩৯, জামে তিরমিযীঃ হাদীস ১০৭০, সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস ১৭২৩, ইবনে মাজাহঃ হাদীস ২৮৯৯, মুসনাদে আহমদঃ হাদীস ৭১৮১, ৭৩৬৬, ৮২৮৪, ৮৩৫৯, ৯১৮৫, ৯৩৭৪, ৯৮৪৮, ১০০২৯, ১০১৯৭, মুওয়াত্তা মালিকঃ হাদীস ১৮৩৩]
.
ফিক্বাহবিদদের সর্বসম্মত ঐকমত্য এই যে, যে কোন যুগে, টেকনোলজির পরম উৎকর্ষতার সময়েও এই দুরত্ব ৪৮ মাইল/৮০ বা ৮৩ কিলোমিটার। এই একই দুরত্ব অতিক্রম করার পরে একজন মুসাফির হিসেবে গন্য হবেন।লেখাটি দীর্ঘ হয়ে গেল।আরেক পর্বে মুসলিম নারী স্বাধীনতা পক্ষবাদীদের কথা লিখবো,ইনশাল্লাহ!

https://youtu.be/1Q3i6wXf0o0
Peace In Islam » Blog Archive » সকল ধর্মে পর্দা
পাসওয়ার্ড মনে পড়ছে না? নতুন হলে রেজিস্ট্রেশন করুন।
peaceinislam.com


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.