নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীদের লজিক্যাল ফ্যালাসি part 1 / এম ডি আলী

নাস্তিকদের লজিক্যাল ফ্যালাসি অথবা গোঁজামিল মাস্টারদের কেরামতি ফাঁশ।
লিখেছেনঃ এম ডি আলী 😎😎😎
শুরুর কথাঃ
আমরা অনেক সময় নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীদের সাথে বিতর্ক করি যুক্তিতর্ক দিয়ে যখনি তারা কোন মুসলিমদের যুক্তি খণ্ডন করতে পারে না অথবা বাংলা ভাষায় যখন ধরা খায় তখন এক ফন্দী আটে তা হল কোন সঠিক যুক্তি দিলেই নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসী দাবী করে এ এটা লজিক্যাল ফ্যালাসি অথবা না না এটা এভাবে না , সেভাবে ! ইত্যাদি ইত্যাদি গোঁজামিল দিয়ে নাস্তিক ধর্মের অনুসারী মুলত নিজেদের অন্ধ বিশ্বাস রক্ষা করতে চায় । তাই আজকে আমি আপনাদের সঠিক যুক্তি দিয়ে প্রমান করব কিভাবে নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরাই নিজের বর্বর ধর্ম নাস্তিকতা রক্ষা করতে এই লজিক্যাল ফ্যালাসির প্রয়োগ করে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রচলিত কিছু অনর্থক কথার মারপ্যাঁচ কিংবা ভুলযুক্তি/কুযুক্তি/অপযুক্তি বা কুতর্ক জুড়ে দেয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্যণীয় ছিল, এবং এগুলো সবই যে কুতর্ক তা দ্বিধাহীনভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। তাই বর্তমান সময়ে বিতর্ক কিংবা একাডেমিক আলোচনার সময় কিছু কিছু যুক্তিকে কুতর্ক logical fallacy হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আসুন তাহলে আমরা শুরু করি, কুতর্ক , ইহা কত প্রকার এবং কী কী। এই আলোচনা সম্পূর্ণটুকুই আন্তর্জাতিক যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক নানা বই থেকে সংগৃহীত। পৃথিবীর প্রায় সকল যুক্তিবাদী মানুষই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। অনুন্নত অসভ্য এবং অশিক্ষিত নাস্তিক সমাজে যদিও এই কুতর্কগুলোই এখনো যুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু এগুলো কোনটাই আসলে যুক্তি হিসেবে জ্ঞানীদের কাছে গণ্য হয় না। সহজভাবে বলতে গেলে,নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীদের এই ধরণের কুযুক্তিগুলো সবই যুক্তিবিদ্যার শুরুতেই বাতিল করে দেয়া হয়। সেগুলো আলোচনাতে আসবার যোগ্যতাই রাখে না। কেন এগুলো ফ্যালাসি বা নাস্তিকিও গোঁজামিল তা উদাহরণ সহকারে এই লেখাটিতে ব্যাখ্যা করা হবে। আপনি যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে থাকলে, এই লেখাটি সবার আগে মন দিয়ে পড়ে নেয়া জরুরি। কারণ, হয়তো আপনি নিজেই মনের অজান্তে নানা ধরণের ফ্যালাসি দিয়ে যুক্তিতর্ক করে যাচ্ছেন।
কুযুক্তি বা লজিক্যাল ফ্যালাসি হচ্ছে যুক্তির ভান করে আপনাকে মিথ্যা বা অযৌক্তিক কিছু বোঝাবার কৌশল। যুক্তিতর্কের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, সততার সাথে বিতর্কে অংশ নেয়া এবং আপনার যুক্তি ভুল হয়ে থাকলে শুদ্ধটি দ্বারা তা শুধরে নেয়া।বর্বর নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীদের মত অসৎ ভাবে যারা বিতর্ক করে বা চালাকিপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরে, তাদের থেকে সাবধান থাকা খুবই জরুরি। কারণ তারা আপনাকে ভুল বা চালাকিপূর্ণ কথা বলে আপনার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবে। এই ধরণের প্রতারণামূলক যুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করে সেগুলো বাতিল করে সঠিক ভাবে গঠনমূলক যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনা করাটাই এই লেখাটির উদ্দেশ্য।
আমরা এখন ধীরে ধীরে একে একে সব লজিক্যাল ফ্যালাসির সব পয়েন্ট সম্পর্কে আলোচনা করবঃ
১/ মূর্খতার কুযুক্তি (Argument from Ignorance Fallacy):
দাবীঃ যেহেতু তুমি জানো না, বিগ ব্যাং এর আগে কী ছিল, সেহেতু নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা যেই দাবী তুলে "স্রস্টা নাই" দাবীটিই সঠিক!
দাবীঃ যেহেতু তুমি জানো না, মিশরের পিরামিডগুলো কোনটি কয়টি পাথর দিয়ে বানানো, তাই যৌন সম্পর্ক ছাড়াই নাস্তিকরা ধর্ষণ করে এটা সঠিক !
দাবীঃ যেহেতু তুমি জানো না, আমার মাথায় কয়টি চুল, তাই নাস্তিকরা একেবারে সবাই সত্যবাদী !
দাবীঃ যেহেতু তুমি জানো না, প্রশান্ত মহাসাগরে কয়লিটার পানি আছে, তাই হনুমান এক লাফে ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা পৌঁছে গেছে!
ব্যাখ্যাঃ উপরের দাবীগুলো অজ্ঞতার কুতর্কের কিছু উদাহরণ। ধরুন কোন নাস্তিক দাবী করলো, মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা নেই; এবং যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করলো, এই দাবীটি কেউ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবে না, এবং আরও প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করলো মানুষের অজ্ঞতাকে। যেহেতু মানুষ কিছু বিষয় সম্পর্কে জানে না, বা মানুষের জ্ঞান যেহেতু সীমাবদ্ধ, বা তার কথাটি ভুল প্রমাণ করা হয় নি, সেহেতু তার দাবীটিই সঠিক! - আসলে দাবিটি ভুল ।
বিগ ব্যাং এর আগে স্থান বা সময় যেহেতু ছিল না, ক্লাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার কোন সূত্র যেহেতু সেখানে কাজ করতো না, সেহেতু কী ছিল, তা সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করতে পারি। জানাও সম্ভব হচ্ছে। তথ্য প্রমাণ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের কোন অজানা বিষয় থাকার অর্থ এই নয় যে, অমুকের তথা নাস্তিকদের দাবীটি সঠিক। যেকোন অজানা বিষয়কে জানার পদ্ধতি হচ্ছে, তা নিয়ে পড়ালেখা করা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য প্রমাণ যুক্তি দিয়ে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। অমুকে করেছে বা তমুকে এমনটি ঘটিয়েছে (বিজ্ঞানিরা) তা ধরে নেয়া নয়। কোন অজানা বিষয় অপ্রমাণিত কোন কিছুর সপক্ষের যুক্তি বা প্রমাণ হতে পারে না।
২/ কর্তৃপক্ষ পতন থেকে আর্গুমেন্ট (Argument from authority fallacy):
দাবীঃ অমুক বিজ্ঞানী নাস্তিকদের পক্ষে একটি কথা বলেছে, তাই নাস্তিকরা সমাজের পরিবর্তন করতে পারে।
দাবীঃ অমুক দর্শনের নাস্তিক পণ্ডিত পীরবাবার বৈজ্ঞানিক মুত খেত, অতএব মুত পানিপড়া খেলে অসুখ সারে।
দাবীঃ অমুক বিখ্যাত ডাক্তার এক নাস্তিকের বন্ধু হয়েছিল, অর্থাৎ নাস্তিকরা সব জ্ঞানীদের বন্ধু হয় ।
ব্যাখ্যাঃ উপরের দাবীগুলোকে Argument from authority fallacy বলে। কোন বিশিষ্ট নাস্তিক বিজ্ঞানি অথবা নাস্তিক কোন ফেমাস ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে এক ধরণের কর্তৃত্ব আরোপ করা, এবং তার নামকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করাকে কুযুক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধরণের ঘটনা কোনকিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করতে পারে না। কোন বিখ্যাত নাস্তিক মানুষ কী বলেছেন বা করেছেন বা শুনেছেন, তার ওপর যুক্তি নির্ভরশীল নয়। যেমন, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর নাস্তিক হওয়া নাস্তিক্যবাদের যথার্থতার কোন প্রমাণ নয় তাই এই বিজ্ঞানির সব গবেষণা নাস্তিকদের ময়লা আবর্জনায় ফেলে দেয়া আবশ্যক হয়ে উঠেছে সকল নাস্তিকদের জন্য। স্রস্টা আছে কী নেই, তা স্টিফেন হকিং এর ব্যক্তিগত বিশ্বাস অবিশ্বাসের ওপর নয়, "স্রস্টার নাই" এই প্রমানের সপক্ষে নাস্তিকদের কতটুকু যুক্তি রয়েছে তার ওপর নির্ভরশীল। তা কোন নাস্তিক ব্যক্তির বিশ্বাস অবিশ্বাস নিরপেক্ষ। কোন নাস্তিক কে কত বড় বিখ্যাত বা অখ্যাত বা পণ্ডিত বা বিশেষজ্ঞ, তার উল্লেখ করে তাদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসকে প্রমাণ করা যায় না। তবে, স্টিফেন হকিং যেসমস্ত যুক্তি বা প্রমাণ ব্যবহার করেছেন, সেগুলো যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না কারন এগুলা তাদের নিছক বিশ্বাস মাত্র যুক্তি না কিন্তু যুক্তিহীনভাবে বিখ্যাত কারও নাম উল্লেখ করে কোন দাবী করলে সেই দাবীকে প্রাধিকারের কুযুক্তিই বলবো আমরা । সুতরাং কোন নাস্তিক কোন বিজ্ঞানির রেফারেন্স দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে কারন এটা Argument from authority fallacy বলা হয় ।
৩/ জনপ্রিয়তার কুযুক্তি (Argument from popularity):
দাবীঃ নাস্তিক ধর্ম যদি সত্য নাই হয়ে থাকে, তাহলে ১০০ কোটি নাস্তিক কেন নাস্তিক ধর্মে বিশ্বাস করে?
দাবীঃ আদম (আ) যদি সত্য হয়েই থাকে, তাহলে পৃথিবীর সব নাস্তিক ধর্মের ধার্মিক মানুষ কেন তা অবিশ্বাস করে?
ব্যাখ্যাঃ জনসংখ্যার কত অংশ নাস্তিক কী বিশ্বাস করে, বা কোন মতবাদটি কতটুকু জনপ্রিয়, যুক্তি তার ওপর নির্ভর করে না। যুক্তি বা বিজ্ঞান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নয় যে, কত মানুষ তা মানলো সেটার ওপর নির্ভর করবে। যুক্তি শুধুমাত্র তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তির ভ্যালিডিটির ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর সকল মানুষও যদি অযৌক্তিক কিছু বলে, শুধু একজন যদি যৌক্তিক কথা বলে, তাহলে ঐ একজন ব্যক্তিই সঠিক যদিও কোন নাস্তিক এটিও সত্য কিভাবে ? সেটা বিশ্লেষণ করতে পারবে না । যেমন, পৃথিবীর একশ কোটি মানুষ নাস্তিকতায় বিশ্বাস করলে সেটা যেমন কোন যুক্তি নয়, ঠিক একইভাবে, পৃথিবীর বাকি কোটি মানুষ যেহেতু নাস্তিকতায় বিশ্বাসী নয়, সেহেতু ইসলাম মিথ্যা, সেটাও ভুল যুক্তি বা কুতর্ক বা লজিক্যাল ফ্যালাসি। কোন দাবীর সত্যতা সেই দাবীটির তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তির ওপর নির্ভরশীল, তা কতজন বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করে তার ওপর নয়।
৪/ কুযুক্তির প্রশ্ন সমাচার (Begging the question):
দাবীঃ আপনি কেন খুন করেছেন?
দাবীঃ আপনি আগে যেমন চুরি করতেন এখনো কী করেন?
দাবীঃ নাস্তিকদের কথা না থাকলে বিজ্ঞানে তাদের কথা লেখা থাকবে কেন?
ব্যাখ্যাঃ উপরের দাবী প্রথম ও দ্বিতীয় দাবীগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, যিনি প্রশ্ন করেছেন, তিনি শুরুতেই ধরে নিয়েছেন, যাকে প্রশ্ন করেছেন তিনি খুনি, বা তিনি চোর। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তিনি প্রশ্ন করেছেন, যেই প্রশ্নটিই ভুল। যদি আগে থেকেই শ্রোতা খুনি বা চোর প্রমাণিত না হয়ে থাকে, তাহলে এই ধরণের যুক্তিকে কুযুক্তি হিসেবেই গণ্য করা হয়।তৃতীয় দাবীতে, উনি ধরে নিয়েছেন নাস্তিকরা যা বলে তা সত্য, এবং নাস্তিকদের কথা না থাকলে বিজ্ঞানে তাদের কথা কেন লেখা থাকবে? যুক্তিবিদ্যায় এরকম যুক্তি প্রদানকে কুযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৫/ খড়ের মানুষ পতন গোঁজামিল (Straw man Fallacy):
বিপক্ষের তার্কিক আসলে যা বলেনই নি, সেরকম কিছু তিনি বলেছেন দাবী করে সেই বক্তব্যকে যুক্তি দিয়ে পরাজিত করার যুক্তিকে স্ট্রম্যান ফ্যালাসি বা খড়ের মানুষ বানিয়ে তার সাথে যুদ্ধ করার কুযুক্তি বলে। ধরুন,
বক্তা ক বলেছেন, আমি স্রস্টায় বিশ্বাস করি
বক্তা খ বলছেন, বক্তা ক আসলে "বিজ্ঞান না মানার" জন্য স্রস্টায় বিশ্বাস করেন । বিজ্ঞান না মানা খুবই খারাপ। এই যুগে আপনাকে বিজ্ঞান মানতে হবে। ( এরপরে তিনি দীর্ঘ পাঁচঘণ্টা নাস্তিকিও কলা বিজ্ঞানের ভাল খারাপ বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিয়ে গেলেন। অথচ বক্তা ক বিজ্ঞান মানেন কি মানেন না এই বিষয়ক কিছু উল্লেখই করেন নি।)
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, বক্তা খ হয়তো নাস্তিকিও কলা বিজ্ঞানের ভাল খারাপ বিষয়ে কিছু বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম করতে চাচ্ছিলেন, তাই স্রস্টার অস্তিত্ব অনস্তিত্ব সম্পর্কে আলোচনা না করে উনি নিজেই বিপক্ষের বক্তার একটি বানানো আর্গুমেন্ট তৈরি করলেন, এবং সেটাকে হারিয়ে দিলেন। একজন যেমন খড় দিয়ে মানুষ বানিয়ে তার সাথে মল্লযুদ্ধ করে যুদ্ধ জয় করার ভান ধরে, খুব বীরত্ব দেখানো হয়েছে বলে সবাইকে বোঝাতে চায়, ঠিক তেমনি, বক্তা ক যা আসলে বলেনই নি, সেই আর্গুমেন্ট বানিয়ে উনি নিজেই যুদ্ধে জয়লাভ করে বসলেন। স্রস্টার অস্তিত্ব অনস্তিত্বের সাথে "নাস্তিকিও কলা বিজ্ঞানের" অথবা কোন ধরণের গোঁজামিল প্রাসঙ্গিক নয়। এরকম যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টাকে খড়ের মানুষ হারানো কুযুক্তি বলা হয়।
৬/ চক্রাকার অথবা গোলাকার গোঁজামিল (Circular logic Fallacy):
প্রশ্ন-১ নাস্তিক ধর্ম যে সত্য তার প্রমাণ কী?
উত্তর-১ নাস্তিক ধর্ম সত্য কারণ নাস্তিকরাই বলেছেন যে তারাই সত্য।
প্রশ্ন-২ স্রস্টা যে নেই তার প্রমাণ কী?
উত্তর-২ স্রস্টা যে নাই কারণ নাস্তিকদের বইতে লেখা আছে স্রস্টা নাই।
ব্যাখ্যাঃ উপরের দাবী দুটো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একটি দাবী আরেকটি দাবীকে সত্য প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এই দাবী দুটো একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এর কোনটাই প্রমাণিত নয়, তবে একটি আরেকটি দাবীর প্রমাণ হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে বলে চক্রাকার যুক্তি বা সার্কুলার লজিক। এটি একটি কুযুক্তিই বটে।
৭/ ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণী কুযুক্তি (Ad Hominem Fallacy):
দাবীঃ যেহেতু তোমার চেহারা খারাপ, সেহেতু তোমার যুক্তিটা ভুল।
দাবীঃ যেহেতু তুমি মুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করো, সেহেতু নাস্তিক ধর্ম সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নাই।
দাবীঃ যেহেতু তুই নাস্তিক না, সেহেতু নাস্তিক ধর্ম সম্পর্কে তোমার যুক্তিগুলা ভুল।
ব্যাখ্যাঃ উপরের দাবীগুলোকে বলা হয় এড হোমিনেম ফ্যালাসি বা ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণী কুযুক্তি। যুক্তির জবাব যুক্তিতে দেয়া সম্ভব না হলে অনেকেই ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণে নেমে যান, এবং তার চরিত্র, তার বাবা মা ভাই বোন ইত্যাদিকে টেনে এনে কোন যুক্তিকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করেন। যেখানে যুক্তির সাথে ব্যক্তির চেহারা, তার কাদের সাথে বন্ধুত্ব, বা তার ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস অপ্রাসঙ্গিক এবং সেগুলো নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে না। নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসী ধার্মিকদের মধ্যে এই কুযুক্তি ব্যবহার খুব বেশি মাত্রায় দেখতে পাওয়া যায়।
৮/ এড হোমিনেম (সারকামস্টেনশিয়াল) বা আপিল টু মোটিভঃ
কোন যুক্তির পেছনে যুক্তিদানকারীর স্বার্থ্য রয়েছে এমনটা দেখিয়ে যুক্তি বা দাবীকে ভুল বললে বা নাকোচ করলে এই গোঁজামিলটি সংঘটিত হয়। এখানে যুক্তির বিপক্ষে যুক্তি নয়, যুক্তিদানকারী কী উদ্দেশ্যে যুক্তি দিচ্ছে, সেই নিয়েই আলোচনা চলে।
উদাহরণঃ
(ক) ধরা যাক,"নাস্তিকদের বর্বর বিকৃত ফ্রি সেক্স" নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় একজন বললো, আপনি নাস্তিক ধর্মের বিরুদ্ধে যুক্তি দিচ্ছেন, নিশ্চয়ই আপনি নাস্তিক বিদ্বেষী খৃষ্টানদের থেকে টাকা পয়সা নিচ্ছেন।
– এখানে, নাস্তিকদের পক্ষে যিনি বলছেন, তিনি ফ্রি সেক্সের ভাল খারাপ দিক নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা না করে কী উদ্দেশ্যে কেউ এই যুক্তি দিচ্ছে, কার থেকে টাকা পয়সা পাচ্ছে, তার দিকে নির্দেশ করছেন। যুক্তিবিদ্যায় একে এড হোমিনেম ফ্যালাসি বলে। উল্লেখ্য, কল্পিত ইহুদীদের থেকে যদি কেউ টাকা নিয়েও থাকে, তাতেও বিকৃত ফ্রি সেক্সের বিরুদ্ধে যিনি যুক্তি দিচ্ছেন, সেই যুক্তিটি ভুল প্রমাণ হয় না।
(খ) গাড়ির ডিলার – কনজিউমার রিপোর্ট অনুযায়ী এই আমাদের গাড়ি এভারেজ গ্যাস মাইলেজের গাড়িগুলোর থেকে ভাল, আর এটা বর্তমানে গাড়ির সবচেয়ে রিলায়াবল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি।
ক্রেতা – এর সত্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, তুমি তো বিক্রির জন্য এটা বলবেই, এটাই তো তোমাদের ব্যবসা।
লক্ষ্য করে দেখুন, ক্রেতা এখানে গাড়ির যন্ত্রাংশ নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা না করে, এটাই যে গাড়ির ডিলারের ব্যবসা সেই দিকে নির্দেশ করছেন। তাই এটি একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি। গাড়ি বিক্রেতার গাড়ি বিক্রির জন্য ইন্টারেস্ট আছে এই অজুহাত দিয়ে এখানে গাড়ির মানকে অস্বীকার করা হচ্ছে, যেখানে বিক্রেতার সেরকম কোন ইন্টেনশন নাও থাকতে পারে, বা বিক্রেতার বক্তব্যে সেরকম ইন্টেনশনের প্রভাব নাও পড়তে পারে। অতএব নাস্তিকদের অবস্থা এরকমই , এমন ভাব করে যে তার গাড়ি অনেক ভাল আসলে তার গাড়ি ঠেলাগাড়ি থেকেও দুর্বল ।
(গ) – দুলাল যদি উত্তেজিত হয়ে ধর্ষককেও গণপিটুনি দেয় তা সঠিক হবে না, এতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রকাশিত হয়, তাকে পুলিসে দেয়া প্রয়োজন। – তুমি ধর্ষককে সমর্থন করছ, ধর্ষকের প্রতি সমবেদনা দেখাচ্ছ, এদেশের লোকেদের তো ইন্টেনশনই আছে ধর্ষকদের পক্ষ নেবার, তুমিও সেই পথে যাচ্ছ --- (অতএব তোমার কথাগুলো ভুল)। --- এখানে কাল্পনিকভাবে ধর্ষণের সপক্ষের মোটিভকে নিয়ে এসে অপরাধীর প্রতি দুলাল জাস্টিসের বিরুদ্ধের যুক্তিকে নাকোচ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
৯/ ধাপ্পাবাজি আশ্রিত কুযুক্তি (appeal to hypocrisy):
(ক) ধরুন, আসাদ নুর নামের এক নেতা "n পার্টির" নেতা আসিফকে বললো, তুমি একজন দুর্নীতিবাজ।
উত্তরে "nপার্টির" নেতা আসিফও বললো, তুমিও তো দুর্নীতি করো, বা লোপা ট্রাম্পও তো দুর্নীতি করে বা নাস্তিক মল্লা মাসুদ তো দুর্নীতি করেছিল।
(খ) প্রস্তাব – নাস্তিক ধর্মে নারীর মানবিক অবস্থান খুবই অসম্মানজনক। এখানে ফ্রি সেক্স হালাল ।
কুযুক্তি – চিনের নাস্তিক ধর্মে নারীর অধিকার কতটুকু? সেখানেও তো অসম্মানজনক।
এই ধরণের উত্তর একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে বলা হয় এপিল টু হিপোক্রেসি বা ট্যু ক্যুও- ক্যুই। মানে হচ্ছে, ইউ ট্যু বা তুমিও। কিন্তু অন্য আরেকজন দুর্নীতি করলেই প্রথম জনার দুর্নীতির দাবীটি মিথ্যা হয়ে যায় না। বা চিনে নাস্তিক ধর্মে নারী অসম্মানজনক অবস্থানে থাকলেই জার্মানির নাস্তিক ধর্মের নারীর অবস্থান সম্মানজনক তা প্রমাণ হয় না। এই কুযুক্তিটি নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসী ধার্মিক সমাজে বহুল প্রচলিত এবং এই যুক্তি দ্বারাই সাধারণত বিপক্ষকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা করা হয়। উগ্র নাস্তিক জঙ্গিবাদের সমালোচনার সময় তারা নাস্তিকদের ওপর আক্রমণের উদাহরণ তুলে আনেন, কিন্তু নাস্তিক উগ্ররা নির্যাতিত হয়ে থাকলেও উগ্র নাস্তিক জঙ্গিবাদ তাতে জাস্টিফায়েড হয় না। আরেকটি অন্যায়ের উদাহরণ প্রথম অন্যায়টিকে ন্যায় বানাতে পারে না।
১০/ অপ্রমাণের বোঝা বা বস্তা (Burden of proof):
ঘটনা- ১
দাবীঃ সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নাই
প্রশ্নঃ "সৃষ্টিকর্তা যে নেই" এটার প্রমান কি কোন এভিডেন্স আছে ?
কুযুক্তিঃ স্রস্টা যে আছে এটা যেহেতু দেখাতে পারছ না তাই আমারতাই সঠিক !
ঘটনা- ২
দাবীঃ বিগ ব্যাং এর আগে কেউ যেহেতু নাই তাই স্রস্টাও নাই
প্রশ্নঃ তুমি কিভাবে বুঝলে যে স্রস্টা নেই , তুমি কি সেখানে ছিলে অথবা দেখে এসেছ ?
কুযুক্তিঃ যেহেতু আমি দেখি নাই সেখানে কি ছিল তাই স্রস্টা নেই এটাই সত্য !
ঘটনা- ৩
দাবীঃ স্রস্টা নাই এটা নাস্তিক বিজ্ঞানীরা প্রমান করে ফেলেছে
প্রশ্নঃ নাস্তিক বিজ্ঞানীরা কিভাবে সেটা প্রমান করল ?
কুযুক্তিঃ নাস্তিক বিজ্ঞানীরা সেটা প্রমান করেছে তাই এটা প্রমান হয়ে গেছে তুমি কি এটা মিথ্যা প্রমান করতে পারবে ?
উপরের তিন টি ঘটনা বুঝতে হলে একটি উদাহরণ দেয়া যাক তা হলঃ কোন নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসী দাবী করল "স্রস্টা নাই" এটা আমি বিশ্বাস করি । দ্বিতীয় জন বললঃ "স্রস্টা নাই" এর পক্ষে প্রমান দেও । একই ব্যাক্তি বলল তুমি যে দাবী করেছ স্রস্টা আছে আগে এর প্রমান দেও।
আসলে উপরের প্রতিটি দাবী এবং দাবীর সপক্ষে কুযুক্তিগুলো লক্ষ্য করুন। দাবীকারী নিজ দাবীর সপক্ষে কোন প্রমাণ উপস্থাপন না করে প্রশ্নকর্তাকেই তার দাবীটি অপ্রমাণের দাবী জানাচ্ছে। অর্থাৎ, তার কাছে তার দাবী প্রমাণের যথেষ্ট যুক্তি না থাকায় প্রশ্নকর্তার ওপরেই সে তার দাবী অপ্রমাণের বোঝা চাপাতে চাচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে আমরা বার্ডেন অফ প্রুফ বা অপ্রমাণের বোঝা চাপানো বলি। উল্লেখ্য, প্রমাণ বা যুক্তি উপস্থাপনের দায় তারই, যিনি দাবী উত্থাপন করেন। অন্য কারও তা অপ্রমাণ করার দায় নেই। অন্য কেউ তা অপ্রমাণ না করলেও, তার দাবীটি প্রমাণের বোঝা অন্যের কাঁধে চাপাতে চাইলে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ ও যুক্তির অভাবে তার দাবীটিই খারিজ বা বাতিল হয়ে যাবে। তাই এই হিসেবে নাস্তিকরা যে দাবী করে "স্রস্টা নেই" এর পক্ষে তাদের যুক্তি প্রমান দিতে হবে নাইলে তারা যখন পাল্টা মুসলিমদের কাছে প্রশ্ন করবে "স্রস্টা আছে" এর প্রমান দেও তখন (Burden of proof) কুযুক্তি বলে প্রমানিত হবে


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.