মুরতাদ এর শাস্তির বিধান । একটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ ।

আল্লাহর রাসুল বলেছেনঃ , ‘যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে এটা কি পাষান এর কাজ নয়???
-----------------------------------------------------------------
সাবলীল জবাব দিয়েছেনঃ মোঃ নিয়ামত আলী
 খুব ভাল একটি প্রশ্ন ভাইজান । আশা করি শেষ পর্যন্ত পড়বেন! মুরতাদের ওপরে কোরাণে কোথাও কোন পার্থিব দণ্ড নেই বরং এর ভেতরে মানুষের নাক গলানো নিষেধ করা আছে । আসুন দেখি কোরানের আয়াত আল্লাহ কি বলেন ।

* আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ কিরুপে সৎপথে পরিচালিত করবেন সেই সম্প্রদায়কে যারা ইমান আনয়নের পর ও রাসুলকে সত্য বলিয়া সাক্ষ্যদান করার পর এবং তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর কুফুরি করে ? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না । (সুরা আল ইমরান আয়াত ৮৬)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমরা তাদের মত হইয়ো না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে । তাদের জন্য মহাশাস্তি আছে । (আল ইমরান আয়াত ১০৫)

* আল্লাহ বলেনঃ সেদিন কিছু মুখ উজ্জ্বল হবে এবং কিছু মুখ কাল হবে । যাদের মুখ কাল হবে তাদের বলা হবে ইমান আনার পর কি তোমরা কুফুরি করেছিলে ?সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ করো যেহেতু তোমরা কুফুরি করিতে । (আল ইমরান আয়াত ১০৬)

* আল্লাহ বলেনঃ কেউ তার ইমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করিলে এবং কুফুরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখিলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি তবে তার জন্য না , যাকে কুফুরির জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ইমানে অবিচলিত । ( সুরা নাহল ১০৬ আয়াত)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমরা দোষ স্থালনের চেষ্টা করো না । তোমরা তো ইমান আনার পর কুফুরি করিয়াছ । তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করিলেও অন্য দলকে শাস্তি দিব কারন তারা অপরাধী । (সুরা তওবা ৬৬)

* আল্লাহ বলেনঃ উহারা আল্লাহর শপথ করে যে , উহারা কিছু বলে নাই, কিন্তু উহারা তো কুফুরির কথা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহনের পর তারা কাফের হয়েছে উহারা যা সংকল্প করেছে তা পায় নাই । আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নিজ কৃপায় তাদের অভাবমুক্ত করেছেন বলেই তারা বিরোধিতা করিয়াছিল । তারা তওবা করলে তাদের জন্য ভাল হবে কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য মরমন্তু শাস্তি দিবেন । দুনিয়াতে তাদের কোন অভিভাবক নাই এবং কোন সাহায্যকারী নাই । (সুরা তওবা ৭৪)

* আল্লাহ বলেনঃ যারা ইমান আনে ও পরে কুফুরি করে এবং আবার ইমান আনে , আবার কুফুরি করে , অতপর তাদের কুফুরি প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায় আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথে পরিচালিত করবেন না । (সুরা নিসা ১৩৭ আয়াত)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে দুনিয়াতে যারা আছে তারা সকলেই অবশ্যই ইমান আনত , তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে ? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ইমান আনা কারো সাদ্ধে না এবং যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদেরকে কুলসলিপ্ত করেন । (সুরা ইউনুস আয়াত ৯৯ - ১০০)

* আল্লাহ বলেনঃ বল, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক । (সুরা কাহফ আয়াত ২৯)

* আল্লাহ বলেনঃ কেউ রাসুলের অনুগত্ত করলে সে তো আল্লাহরই অনুগত্ত করিল এবং মুখ ফিরিয়ে নিলে তোমাকে তাদের উপর তত্থাবধায়ক প্রেরন করি নাই । (সুরা নিসা ৮০ আয়াত) ।

* আল্লাহ বলেনঃ ধর্মে জোর জবরদস্তী নাই । (সুরা বাকারা ২৫৬) ।

উপরের আয়াতে ইমান তথা ইসলাম গ্রহনের পরে আবার কুফুরি (ইসলাম ত্যাগ ) করলে সাথে সাথে হত্যা করতে হবে এমন কিছু বলা নাই অথবা তাকে মেরে ফেল এব কিছুই বলা নাই । অর্থাৎ কোরাণ মুরতাদকে ইসলামে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছে। তাকে খুন করলে ‘আবার মুসলমান’ হবার সুযোগ সে পাবে না, সেই খুন সরাসরি কোরাণ লঙ্ঘন হয়ে যাবে ।

ইউরোপিয়ান ফতোয়া ও গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য বিশ্ব-বিখ্যাত শরিয়া সমর্থক ডঃ জামাল বাদাওয়ি পর্যন্ত এটা স্বীকার করেছেন এবং বলেছেনঃ কোরানের কোন আয়াতেই মুরতাদের দুনিয়ার শাস্তির বিধান নাই । কোরআন বলে এই শাস্তি শুদুমাত্র পরকালেই হবে । (ফতোয়া কাউন্সিলের ওয়েবসাইট)

এখন আসেন হাদিসে কি বলা হয়েছে সেগুলা দেখি তাইলেই আপনাদের ভুল ভেঙ্গে যাবে ।

নবীজীর ওহি-লেখক আবদুলা বিন সা’আদ-ও মুরতাদ হয়ে মদিনা থেকে মক্কায় পালিয়ে গিয়েছিল। এ হেন মহা-মুরতাদকেও নবীজী মৃত্যুদণ্ড দেননি (ইবনে হিশাম-ইশাক পৃঃ ৫৫০)। বরং হজরত ওসমান পরে তাকে মিশরের গভর্নর করেছিলেন । কি বুঝলেন! শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন মূল বিষয়ে জেনে যাবেন! তবে মুরতাদ-হত্যার বিরুদ্ধে কোরাণের সবচেয়ে স্পষ্ট নির্দেশ আছে সুরা ইমরান- এর ৮৬ নম্বর আয়াতে।

 হারিথ নামে এক মুসলমান মুরতাদ হলে তার ওপরে নাজিল হয়েছিল এ আয়াত : “কেমন করে আল্লাহ এমন জাতিকে হেদায়েত দেবেন যারা ইমান আনার পর ও রসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেবার পর ও তাদের কাছে প্রমাণ আসার পর কাফের হয়েছে ?” নবীজী তাকে মৃত্যুদণ্ড কেন, কোন শাস্তিই দেননি (ইবনে হিশাম-ইশাক পৃঃ ৩৮৪)।

এখনঃ নবীজী বলিয়াছেন যে ব্যক্তি ধর্মত্যাগ করে তাহাকে হত্যা কর” (বোখারী ২৮৫৪ নং হাদিস- মওলানা আবদুল জলিলের অনুবাদ) নিয়ে মওলানাদের মধ্যেই মহা-বিতর্ক আছে কারণ তাহলে যারা তাদের ধর্ম ত্যাগ ক’রে ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকেও খুন করতে হয়। নবীজীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জীবনী “সিরাত”-এ (ইবনে হিশাম/ইশাক) উবায়রাক ছাড়াও আমরা নবীজীর সময়ে তিনজন মুরতাদের দলিল পাই। তারা হল হারিথ, নবীজীর ওহি লেখক ইবনে সা’দ, এবং উবায়দুলাহ − পৃষ্ঠা ৩৮৪, ৫২৭ ও ৫৫০।- এ তিনজনের কাউকে মৃত্যুদণ্ড কেন, কোনো শাস্তিই দেননি রসুল। তিনি মনে কষ্ট পেয়েছেন, তবু সর্বদা মেনে চলেছেন লা-ইকরাহা ফিদ্দিন, − ধর্মে জবরদস্তি নাই − বাকারা ২৫৬।-

দলিলে এ-সব ঘটনা আছে নামধাম, তারিখ, ঘটনার বিবরণ সহ। দেখুন সহি বুখারি ৯ম খণ্ড হাদিস ৩১৮ ঃ জাবির বিন আবদুলা বলেন, এক বেদুইন আল্লাহর রসুলের কাছে বায়াত গ্রহণ করিল। পরে মদিনায় তাহার জ্বর হইলে সে আলাহ’র রসুলের নিকট আসিয়া বলিল ‘হে আলাহ’র রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে আবার আসিয়া বলিল ‘হে আলাহ’র রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে আবার আসিয়া বলিল ‘হে আলাহ’র রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে মদিনা ছাড়িয়া চলিয়া গেল। ইহাতে আলাহ’র রসুল বলিলেন− “মদিনা একটি উনুনের মতো, − ইহা ভেজালকে বাহির করিয়া দেয় এবং ভালোকে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে।” এই যে স্বয়ং নবীজীর সামনে প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগ − মৃত্যুদণ্ড তো দূরের কথা, কোথায় হুঙ্কার বা কোথায় শাস্তি ? আমাদের শারিয়াপন্থীরা কি ভেবে দেখেছেন কার বানানো শারিয়া আর কার বানানো ‘ইসলাম’-এর শিকার হয়েছেন তাঁরা ?”

আরেকটি হাদিস দেখি নেই তাইলে আরও পরিস্কার হবেন।

* ইমাম মালেক (রহ).........হযরত আব্দুর রহমান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল কারী (রহ) থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত । তিনি(মোহাম্মদ) বলেন, আবু মুসা আশআরি (রা) এর পক্ষ থেকে এক বেক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর কাছে এলো । তিনি তাঁর কাছে ওখানকার লোকদের হাল-অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন । সে এ সম্পর্কে তাকে জানালো । উমর (রা) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন , তোমাদের কাছে কি নতুন কোন খবর আছে ? সে বলল হ্যাঁ । এক বেক্তি ইসলাম গ্রহন করার পর মুরতাদ (ধর্ম ত্যাগী) হয়েছে । তিনি বলেন , তোমরা তার সাথে কি ব্যাবহার করেছ ? সে বলল , আমরা তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করেছি । তিনি বলেন, কেন তোমরা তাকে তিন দিন একটি ঘরে বন্দী করে রাখলে না ? প্রতিদিন তাকে খাবার খাওয়াতে । তাকে তওবা করতে বলতে । হয়ত সে তওবা করতো এবং পুনরায় আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসত ? (এরপর তিনি বলেন) হে আল্লাহ! আমি (তাদের) এই নির্দেশ দেইনি । আমি উপস্থিত ছিলাম না এবং আমার কাছে খবর পৌঁছালে তাতে আনন্দিতও হই নি । (মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (রহ) পৃষ্ঠা ৬১৪-৬১৫)।

উপরের হাদিস হতে যা বুঝা যায়ঃ

* হযরত ওমর (রা) দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুরতাদকে সাথে সাথে হত্যা করাতে । * মুরতাদ এর সাথে ভাল ব্যাবহার করতে হবে ।

* মুরতাদকে সুযোগ দিতে হবে তাকে বুঝাতে হবে তওবার সুযোগ দিতে হবে ।

=  তাহলে মুরতাদকে কেন হত্যা করতে বলছেন মোহাম্মদ (সা) ?

উপরের আলোচনায় জবাব যদিও পাওয়ার কথা তবুও আরেক্তু বুঝানর চেষ্টা করছি । দেখুন আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে অ্যামেরিকা জান তাহলে কারো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি বাংলাদেশ থেকে অ্যামেরিকায় যাওয়ার পরে বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে উস্কানি মূলক কথা , লিখা লিখি , এক কথায় দেশদ্রোহী করেন তাইলে কিন্তু আপনাকে বাংলাদেশের সরকার মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারে কারন আপনি দেশদ্রোহী । একই ভাবে আপনি যদি ইসলাম ত্যাগ করেন তাইলে আমাদের কারো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি উস্কানি মূলক কথা, লিখা লিখি এক কথায় ধর্মদ্রোহী হন তাইলে ইসলামই রাষ্ট্র আপনাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারে এটি স্বাভাবিক ।

মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড যৌক্তিকতা বিষয়ে ইবনুল কায়িম আল জাওজিয়া (রহ) লিখেনঃ মৃত্যুদণ্ড হল সর্বউচ্ছ অপরাধের সর্বউচ্ছ শাস্তি । সর্বউচ্ছ অপরাধ যেমনঃ মানুষ হত্যা , দ্বীনের বিষয়ে কটূক্তি করা বা দ্বীন ত্যাগ করার মাধ্যমে দ্বীনের উপর আঘাত হানা ইত্যাদি । মুরতাদ এর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া খুবই যুক্তিসংগত কারন সমাজে মুরতাদ এর অবস্থান সংঘাত - সহিংসতা ও আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারন হয়ে থাকে । এমন বেক্তির বেঁচে থাকার মাঝে কোন মঙ্গলের আশা করা যায় না । একে বাচিয়ে রাখা বরং অনেক নির্বুদ্ধিতা । (ইলামুল মুয়াক্কিয়িন ২/৮৪)

সারসংক্ষেপঃ

১/ মুরতাদ হলেই সাথে সাথে হত্যা করা যাবে না ।

২/ তার সাথে ভাল ব্যাবহার করতে হবে।

৩/ তওবার সুযোগ দিতে হবে ।

৪/ মুরতাদ এর সব হুকুম একমাত্র রাষ্ট্র এর হাতে এখানে সাধারণ কোন মানুষ বিন্দুমাত্র হস্তখেপ করতে পারবে না ।

৫/ দেশদ্রোহী যেমন ধর্মদ্রোহী একই
-----------------------------------------------------------------

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.