তারকারাজির অবস্থান নিকটবর্তী আসমানে ?
প্রশ্নঃ
তারকারাজির অবস্থান নিকটবর্তী আসমানে ? এরমানে আমরা পৃথিবীর উপর যে বায়ুমন্ডল দেখতে পারছি সেখানে তারকারাজির অবস্থান ? কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলে যে , তারকারাজির অবস্থান মহাকাশে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে নয় । তাহলে এটা কি বৈজ্ঞানিক ভুল নয় ?
তারকারাজির অবস্থান নিকটবর্তী আসমানে ? এরমানে আমরা পৃথিবীর উপর যে বায়ুমন্ডল দেখতে পারছি সেখানে তারকারাজির অবস্থান ? কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলে যে , তারকারাজির অবস্থান মহাকাশে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে নয় । তাহলে এটা কি বৈজ্ঞানিক ভুল নয় ?
উত্তরঃ
সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই , এবং মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহর রাসুল ।
আল্লাহ বলেন ,
⦁ নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি।
কুরআন ৩৭ঃ৬
উক্ত আয়াতে ব্যাবহার করা ٱلسَّمَآءَ এর একাধিক অর্থ বিদ্যমান একটি হচ্ছে আকাশ আরেকটি হচ্ছে স্বর্গ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি দ্বারা মহাকাশও বুঝানো হয়
অনেকে বলবে যে , আমরা অনুবাদ করার যোগ্যতা রাখিনা তবে কেন আমরা একে নিজের মত আকাশের বদলে স্বর্গ বা মহাকাশ ব্যাবহার করছি ? বরং প্রাচীন আধুনিক ইংরেজি অনুবাদগুলো এখানে গনহারে স্বর্গ ব্যাবহার করেছে ।
DR. GHALI
Surely We have adorned the lowest heaven with an adornment, the planets,
MUHSIN KHAN
Verily! We have adorned the near heaven with the stars (for beauty).
PICKTHALL
Lo! We have adorned the lowest heaven with an ornament, the planets;
SAHIH INTERNATIONAL
Indeed, We have adorned the nearest heaven with an adornment of stars
YUSUF ALI
We have indeed decked the lower heaven with beauty (in) the stars,-
ABUL ALA MAUDUDI(WITH TAFSIR)
(37:6) We have adorned the lower heaven with the adornment of the stars5
DR. MUSTAFA KHATTAB
Indeed, We have adorned the lowest heaven with the stars for decoration
Surely We have adorned the lowest heaven with an adornment, the planets,
MUHSIN KHAN
Verily! We have adorned the near heaven with the stars (for beauty).
PICKTHALL
Lo! We have adorned the lowest heaven with an ornament, the planets;
SAHIH INTERNATIONAL
Indeed, We have adorned the nearest heaven with an adornment of stars
YUSUF ALI
We have indeed decked the lower heaven with beauty (in) the stars,-
ABUL ALA MAUDUDI(WITH TAFSIR)
(37:6) We have adorned the lower heaven with the adornment of the stars5
DR. MUSTAFA KHATTAB
Indeed, We have adorned the lowest heaven with the stars for decoration
এবার আসুন তাফসীর দিয়ে পর্যালোচনা করা যাক ।
মূলঃ Islam Web Fatwa - 89488
ইমাম কুরতুবি তার তাফসীরে ইঙ্গিতে বলেছেন , তারপর তিনি দু’দিনে আসমানসমূহকে সাত আসমানে পরিণত করলেন। আর প্রত্যেক আসমানে তার কার্যাবলী ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। আর আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপমালার দ্বারা সুসজ্জিত করেছি আর সুরক্ষিত করেছি। এ হল মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নির্ধারণ।
এই ব্যাপারে আলেম ওলামাদের মাঝে অনেক মত আছে কেউ কেউ বলেছেন যে , সাত আসমানের প্রত্যেক আসমান তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত আবার কেউ কেউ বলেছেন শুধু প্রথম আসমান তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত । তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে প্রথম আসমান তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত । কেননা আল্লাহ বলেছেন , তারপর তিনি দু’দিনে আসমানসমূহকে সাত আসমানে পরিণত করলেন। আর প্রত্যেক আসমানে তার কার্যাবলী ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। আর আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপমালার দ্বারা সুসজ্জিত করেছি আর সুরক্ষিত করেছি। এ হল মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নির্ধারণ। এখানে মনে রাখার বিষয় প্রতিটি আসমান ফেরেশতা দ্বারা ভরপুর কেননা এখানে বলা হচ্ছে ( আর প্রত্যেক আসমানে তার কার্যাবলী ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। )
এই ব্যাপারে আলেম ওলামাদের মাঝে অনেক মত আছে কেউ কেউ বলেছেন যে , সাত আসমানের প্রত্যেক আসমান তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত আবার কেউ কেউ বলেছেন শুধু প্রথম আসমান তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত । তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে প্রথম আসমান তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত । কেননা আল্লাহ বলেছেন , তারপর তিনি দু’দিনে আসমানসমূহকে সাত আসমানে পরিণত করলেন। আর প্রত্যেক আসমানে তার কার্যাবলী ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। আর আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপমালার দ্বারা সুসজ্জিত করেছি আর সুরক্ষিত করেছি। এ হল মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নির্ধারণ। এখানে মনে রাখার বিষয় প্রতিটি আসমান ফেরেশতা দ্বারা ভরপুর কেননা এখানে বলা হচ্ছে ( আর প্রত্যেক আসমানে তার কার্যাবলী ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। )
অর্থাৎ এদ্বারা বুঝা যায় যে , নিকটবর্তী আসমান বলতে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল কে বুঝানো হয়নি ।
তবে এখন আবার প্রশ্ন আসতে পারে যে , আল্লাহ এক আয়াতে বলেছেন ,
⦁ হে জিন ও মানবজাতি, যদি তোমরা আসমানসমূহ ও যমীনের সীমানা থেকে বের হতে পার, তাহলে বের হও। কিন্তু তোমরা তো (আল্লাহর দেয়া) শক্তি ছাড়া বের হতে পারবে না।
তাহলে মানুষ কিভাবে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ?
কোন কোন স্কলার বলেছেন যে , এটা কিয়ামতের দিনের কথা বলা হচ্ছে । অর্থাৎ সেদিন কেউ আসমানসমূহ এবং যমিন এর সীমানা অতিক্রম করতে পারবেনা বা পালাতে পারবেনা কেউ কেউ বলেছেন , এদ্বারা বুঝানো হয় যে , কেউ পালাতে সক্ষম নয় আল্লাহর ফরমান থেকে অর্থাৎ মৃত্যু অনিবার্য এই ফরমান থেকে আবার কেউ কেউ বলেছেন কেউই জানেনা গায়েব সম্পর্কিত আল্লাহ ছাড়া । তবে প্রথম মত টিই বেশি গ্রহণযোগ্য অর্থাৎ এটা কিয়ামতের দিনের কথা বলা হচ্ছে । অর্থাৎ সেদিন কেউ আসমান্সমূহ এবং যমিন এর সীমানা অতিক্রম করতে পারবেনা বা পালাতে পারবেনা ।
এছাড়া তাফসীরে আহসানুল বায়ানেও বলা আছে যে ,
⦁ [1] এই হুমকিও একটি অনুগ্রহ। কেননা, এর ফলে অবাধ্যজন অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসে এবং সৎ লোকেরা আরো সৎকর্ম করে।
⦁ [2] অর্থাৎ, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য ও ফায়সালা থেকে পালিয়ে কোথাও যেতে পারলে চলে যাও। কিন্তু এ সাধ্য ও শক্তি কার আছে? আর পালিয়ে যাবেই বা কোথায়? কোন্ জায়গা এমন আছে, যা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে? এটাও হুমকি যা পূর্বের হুমকির ন্যায় নিয়ামতও বটে। কেউ কেউ বলেছেন, এটা হাশরের ময়দানে বলা হবে। যেখানে ফিরিশতারা চতুর্দিক থেকে মানুষকে ঘিরে থাকবেন। উভয় অর্থই নিজ নিজ স্থানে সঠিক।
⦁ [2] অর্থাৎ, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য ও ফায়সালা থেকে পালিয়ে কোথাও যেতে পারলে চলে যাও। কিন্তু এ সাধ্য ও শক্তি কার আছে? আর পালিয়ে যাবেই বা কোথায়? কোন্ জায়গা এমন আছে, যা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে? এটাও হুমকি যা পূর্বের হুমকির ন্যায় নিয়ামতও বটে। কেউ কেউ বলেছেন, এটা হাশরের ময়দানে বলা হবে। যেখানে ফিরিশতারা চতুর্দিক থেকে মানুষকে ঘিরে থাকবেন। উভয় অর্থই নিজ নিজ স্থানে সঠিক।
এছাড়া নিচে দুটি আয়াত পেশ করা হচ্ছে যা দ্বারাও প্রমাণ হয় যে , এখানে নিকটবর্তী আসমান দিয়ে সাত আসমানের নিকটবর্তী আসমান বুঝানো হচ্ছে
⦁ যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?
সুরা মুলক আয়াত ৩
⦁ আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপুঞ্জ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব।
সুরা মূলক আয়াত ৫
অর্থাৎ এদ্বারাও স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে , এখানে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের কথা বলা হচ্ছেনা । আশা করি উত্তর পেয়েছেন । সবশেষে আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ ।
এখন অনেকে এই দাবি উত্থাপন করতে পারে যে , " এখানে তো আসমান সাত স্তর বলতে এও বোঝানো যেতে পারে যে , পৃথিবীর সাতটি বায়ুমন্ডল এবং প্রথম বায়ুমন্ডলে তারকারাজির কথা কুরআন বলছে । কিন্তু এরকম ব্যাপার না এরকম দাবি করাটাও হাস্যকর বরং শত বছর আগের ইসলামিক স্কলার ইবনে তাইমিয়ার এক স্পষ্ট পরিষ্কার স্টেটমেন্ট এ তিনি বলেছেন ,
Shaykh al-Islam Ibn Taymiyah said:
It is well known from a rational point of view that the air is above the earth, and the heaven is above the earth.
অর্থঃ এটি একটি যুক্তিসঙ্গত দিক যে , বায়ুমন্ডল পৃথিবীর উপরে এবং বায়ুমন্ডলের উপরে রয়েছে স্বর্গ ( বা সাত আসমান সমূহ ) (সংক্ষেপিত) রেফারেন্সঃ Dar’ al-Ta’aarud, 6/336, 337
এছাড়া ইবনে হাজার বলেন ,
Based on this evidence, the earth is a place that is beneath the heaven, hence the heaven is above the earth… and with regard to the son of Adam, his head points towards the heavens and his feet towards the earth.
এই প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে , পৃথিবী আসমানের নিচে এবং আসমান পৃথিবীর উপরে এবং আদম সন্তানের মাথার উপরে আসমান ( সাত আসমানসমূহের কথা হচ্ছে ) এবং তাদের পায়ের নিচে যমিন বা পৃথিবী । রেফারেন্সঃ Al-Fasl bayna al-Milal wa’l-Nahl, 2/243
এতদ্বারা বোঝা গেল যে , বায়ুমন্ডল পৃথিবীর উপরে এবং তারও উপরে সাত আসমান সমূহ এছাড়া ইবনে তাইমিয়া বলেন ,
]
]
Being above something does not necessarily mean encompassing,
সাত আসমান উপরে থাকা মানে এই না যে , এটি পৃথিবীকে বেষ্টন করে রেখেছে । [বক্তব্য সমাপ্ত ] রেফারেন্সঃ Dar’ al-Ta’aarud, 6/336, 337
অথচ আমরা জানি বায়ুমন্ডল পৃথিবীকে উপরে দিয়ে বেষ্টন করে রাখে ।
এছাড়া ইবনুল কাইয়িম বলেন ,
that the view that the heaven does not encompass the earth and is only above it,
অর্থঃ আসমান ( সাত আসমানের কথা বলা হচ্ছে ) কখনো পৃথিবীকে বেষ্টন করে না এটি শুধু এর উপরে রয়েছে ।
আশা করি উত্তর পেয়েছেন
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.