ইসলাম কি রোগের চিকিৎসা না করে ধৈর্য ধারন করতে বলে ?

ইসলাম কি রোগের চিকিৎসা না করে ধৈর্য ধারন করতে বলে ?
লিখেছেনঃ আফিফ আলী সাদাফ
নাস্তিকদের অযৌক্তিক দাবি হচ্ছে ইসলাম নাকি চিকিৎসা গ্রহণ করতে নিষেধ করে । এই ব্যাপারে তারা হাদিস দিয়ে থাকে যে ,
আত্বা ইবনু আবী রাবাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না!’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘এই কৃষ্ণকায় মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বলল যে, আমার মৃগী রোগ আছে, আর সে কারণে আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি চাও তাহলে সবর কর; এর বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ নিরাময়ের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকটে দো‘আ করব।’’ স্ত্রীলোকটি বলল, ‘আমি সবর করব।’ অতঃপর সে বলল, ‘(রোগ উঠার সময়) আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়, সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন আমার দেহ থেকে কাপড় সরে না যায়।’ ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন।[1] হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
[1] সহীহুল বুখারী ৫৬৫৩, তিরমিযী ২৪০০, আহমাদ ১২০৫৯, ১২১৮৫, ১৩৬০৭।
আপনারা যদি একটু লক্ষ করেন এখানে কোথাও বলা নাই যে , রোগের চিকিৎসা করা যাবেনা । বরং ধৈর্য ধারন করতে বলা হচ্ছে । কোথাও বলা হয়নি যে , চিকিৎসা করানো যাবেনা । অথচ এমন বহু সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে রাসুল সাঃ চিকিৎসা নিয়েছিলেন
প্রথম হাদিস
عَنْ حُمَيْدٍ قَالَ سُئِلَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ عَنْ كَسْبِ الْحَجَّامِ فَقَالَ احْتَجَمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَجَمَهُ أَبُو طَيْبَةَ فَأَمَرَ لَهُ بِصَاعَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَكَلَّمَ أَهْلَهُ فَوَضَعُوا عَنْهُ مِنْ خَرَاجِهِ وَقَالَ إِنَّ أَفْضَلَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ الْحِجَامَةُ أَوْ هُوَ مِنْ أَمْثَلِ دَوَائِكُم-
হুমাইদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আনাস বিন মালিক (রাঃ)-এর নিকট হিজামার উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিজামা লাগিয়েছেন। আবু তায়বা তাকে হিজামা করেছেন। তিনি তাকে দুই ছা‘ (প্রায় ৫ কেজি) খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং তার মালিকদের সাথে আলোচনা করেন। এতে তারা তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সেগুলোর মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক’।[২]
অর্থাৎ রাসুল সাঃ চিকিৎসা স্বরূপ হিজামা গ্রহণ করেছেন
এছাড়া আরেক হাদিস আছে যেখানে বলা হচ্ছে ,
উসামান ইবন শুরায়েক রাঃ হতে বর্ণিত একদা এক বেদুইন রাসুল সাঃ ের নিকট এসে জিজ্ঞাস করলো , "ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা কি রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করব না ? " তিনি বললেন , রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করো আল্লাহর জন্য যিনি এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেন নি যার শিফা দেন নি শুধু একটি রোগ ছাড়া । তখন সে বেদুইন বলল , " সেটা কি ইয়া রাসুলুল্লাহ ? " রাসুল সাঃ বললেন , বার্ধক্য [৩] ।
এছাড়া অধিকাংশ হানাফি এবং মালেকি স্কলারদের মাঝে একটি মত হল রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করা হচ্ছে মুবাহ বা বৈধ অর্থাৎ সহজ ভাষায় পাগড়ি পরিধান করা যা রোগ এর চিকিৎসা গ্রহণ করা তা । এছাড়া শাফি , আল ক্কাদি , ইবন আল জাওযি সহ সমগ্র হানবালি মাযহাবিদের মতে এটি হচ্ছে মুস্তাহাব অর্থাৎ যা করলে সওয়াব বা নেকি পাওয়া যায় । কেননা হাদিসে এসেছে ,
“Allaah has sent down the disease and the cure, and has made for every disease the cure. So treat sickness, but do not use anything haraam,” and other ahaadeeth which contain instructions to seek cures.
সেইসকল স্কলার বলেছেন , রাসুল সাঃ চিকিৎসা স্বরূপ কাপিং বা হিজামা করতেন এছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা নিতেন আর এই কারণেই মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেয়া জায়েয রয়েছে বরং মুস্তাহাব (সংক্ষেপিত) [৪] ।
অর্থাৎ ইসলাম কখনই বলেনা যে , চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবেনা । বরং ইসলাম বলে , যে চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি ধৈর্যও অর্থাৎ আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করতে হবে । সবশেষে আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ ।
তথ্যসুত্রঃ
১। সহীহুল বুখারী ৫৬৫৩
২। মুসলিম হা/৩৯৩০।
৩। al-Tirmidhi, 4/383, no. 1961. He said: This is a saheeh hasan hadeeth. See also Saheeh al-Jaami’, 2930
৪। Haashiyat Ibn ‘Aabideen, 5/215, 249; al-Hidaayah Takmilat Fath al-Qadeer, 8/134; al-Fawaakih al-Dawaani, 2/440; Rawdah al-Taalibeen, 2/96; Kashshaaf al-Qinaa’, 2/76; al-Insaaf, 2/463; al-Aadaab al-Shar’iyyah, 2/359ff, Haashiyat al-Jumal, 2/134).



No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.