ইসলাম কি সাপের কামড় , জ্বর , চেহারায় কালো দাগ ইত্যাদি রোগের বেলায় শুধু ঝারফুক করতে বলে ?

ইসলাম কি সাপের কামড় , জ্বর , চেহারায় কালো দাগ ইত্যাদি রোগের বেলায় শুধু ঝারফুক করতে বলে ?
বেশ কিছু হাদিস আছে যেখানে রাসুল সাঃ বলেন , সাপের কামড় বিষাক্ত প্রানির কামড় থেকে নিরাময়ের জন্য ঝারফুক করতে । তবে এই ঝারফুক কি বাধ্যতামূলক কিছু ?
এর উত্তর যদি ছোট ভাবে দিতে হয় তাহলে এর উত্তর হচ্ছে না । ঝারফুক করা বাধ্যতামূলক না । বেশ কিছু হাদিস থেকে জানা যায় যে , রোগ ব্যাধিতে ঝারফুক করা হল মুস্তাহাব ।
গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
হাদিস নম্বরঃ [5620] অধ্যায়ঃ ৪০। সালাম (كتاب السلام)
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ২১. চোখলাগা, পার্শ্বঘা, বিষাক্ত প্রাণীর বিষক্রিয়া ও দুরাবস্থা হতে (মুক্তির জন্য) ঝাড়ফুক করা মুস্তাহাব
৫৬২০-(৬১/২১৯৯) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ….. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানু আমরকে সাপের ছোবলে আক্রান্ত রোগীর ঝাড়ফুঁকের অনুমতি দেন। আবূ যুবায়র (রহঃ) আরও বলেছেন- আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) কে আরও বলতে শুনেছি যে, একটি বিছা আমাদের এক লোককে ছোবল দিল। আমরা সেথায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসা ছিলাম। তখন এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি (তাকে) ঝেড়ে দেই? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কোন লোক যদি তার ভাইয়ের (কোনও) উপকার করতে পারে, সে যেন (তা) করে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫৩৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৬৪)
হাদিস - ২
গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ [5328] অধ্যায়ঃ ৬৩/ চিকিৎসা
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২৩০৬. বদ নযরের জন্য ঝাড়ফুঁক করা
৫৩২৮। মুহাম্মদ ইবনু খালিদ (রহঃ) … উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে একটি মেয়েকে দেখলেন যে, তার চেহারায় কালিমা রয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ তাকে ঝাড়ফুক করাও, কেননা তার উপর (বদ) নযর লেগেছে। আবদুল্লাহ ইবনু সালিম (রহঃ) এ হাদীস যুবায়দী থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। উকায়ল (রহঃ) বলেছেন, এটি যুহরী (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
Narrated Um Salama: that the Prophet (ﷺ) saw in her house a girl whose face had a black spot. He said. “She is under the effect of an evil eye; so treat her with a Ruqya.”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
অর্থাৎ উপরোক্ত হাদিসের পরিচ্ছেদেই বলা হয়েছে যে , রুকিয়া বা ঝাড়ফুঁক মুস্তাহাব । এখন আমাদের জানতে হবে মুস্তাহাব কি জিনিস ? মুস্তাহাব হল এমন জিনিস যা পছন্দনীয় তবে বাধ্যতামূলক না অর্থাৎ যা করলেও সমস্যা নেই না করলেও সমস্যা নেই [১] ।
ঠিক তদ্রূপ মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেয়াও মুস্তাহাব । এছাড়া অধিকাংশ হানাফি এবং মালেকি স্কলারদের মাঝে একটি মত হল রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করা হচ্ছে মুবাহ বা বৈধ অর্থাৎ সহজ ভাষায় পাগড়ি পরিধান করা যা রোগ এর চিকিৎসা গ্রহণ করা তা । এছাড়া শাফি , আল ক্কাদি , ইবন আল জাওযি সহ সমগ্র হানবালি মাযহাবিদের মতে এটি হচ্ছে মুস্তাহাব অর্থাৎ যা করলে সওয়াব বা নেকি পাওয়া যায় । কেননা হাদিসে এসেছে ,
“Allaah has sent down the disease and the cure, and has made for every disease the cure. So treat sickness, but do not use anything haraam,” and other ahaadeeth which contain instructions to seek cures.
সেইসকল স্কলার বলেছেন , রাসুল সাঃ চিকিৎসা স্বরূপ কাপিং বা হিজামা করতেন এছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা নিতেন আর এই কারণেই মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেয়া জায়েয রয়েছে বরং মুস্তাহাব (সংক্ষেপিত) [২]
এছাড়া রাসুল সাঃ এর বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে , তিনি চিকিৎসাও নিয়েছেন আবার রুকইয়াও করেছেন
নিচে বেশ কিছু হাদিস দেয়া হল
উসামান ইবন শুরায়েক রাঃ হতে বর্ণিত একদা এক বেদুইন রাসুল সাঃ ের নিকট এসে জিজ্ঞাস করলো , "ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা কি রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করব না ? " তিনি বললেন , রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করো আল্লাহর জন্য যিনি এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেন নি যার শিফা দেন নি শুধু একটি রোগ ছাড়া । তখন সে বেদুইন বলল , " সেটা কি ইয়া রাসুলুল্লাহ ? " রাসুল সাঃ বললেন , বার্ধক্য[৩] ।
প্রথম হাদিস
عَنْ حُمَيْدٍ قَالَ سُئِلَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ عَنْ كَسْبِ الْحَجَّامِ فَقَالَ احْتَجَمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَجَمَهُ أَبُو طَيْبَةَ فَأَمَرَ لَهُ بِصَاعَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَكَلَّمَ أَهْلَهُ فَوَضَعُوا عَنْهُ مِنْ خَرَاجِهِ وَقَالَ إِنَّ أَفْضَلَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ الْحِجَامَةُ أَوْ هُوَ مِنْ أَمْثَلِ دَوَائِكُم-
হুমাইদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আনাস বিন মালিক (রাঃ)-এর নিকট হিজামার উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিজামা লাগিয়েছেন। আবু তায়বা তাকে হিজামা করেছেন। তিনি তাকে দুই ছা‘ (প্রায় ৫ কেজি) খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং তার মালিকদের সাথে আলোচনা করেন। এতে তারা তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সেগুলোর মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক’[৪]
অর্থাৎ আমরা এখন যে সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারি তা হল
কোন লোক যদি সাপের কামড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে সে শুধু ঝারফুক করবে বা ঝাড়ফুঁক ছাড়া অন্য কিছু করতে পারবেনা অথবা ঝারফুক তার জন্য ফরয এমনটা নয় । সে ঝারফুকের পাশাপাশি দুনিয়াবি চিকিৎসা বা মেডিকেল চিকিৎসাও নিতে পারে । কেননা দুটোই মুস্তাহাব । এবং রাসুল সাঃ দুটোই গ্রহণ করেছেন । এবং সকল স্কলার এই ব্যাপারে একমত । ঠিক সেইভাবে কোন মানুষের যদি চেহারায় কালো দাগ পরে তবে দেখতে হবে সেটা বদনজরের জন্য নাকি এভাবেই স্বাভাবিক দাগ সেই দিক বিবেচনা করে রুকইয়া অথবা মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেবে অথবা দুটোই নিতে পারে । এটা যার যার বাক্তিগত ব্যাপার । কেননা একটি হাদিস আছে যেখানে দেখা যায় যে , রাসুল সাঃ ঝাড়ফুঁক এবং চিকিৎসা দুটিই নিয়েছেন একসাথে একই মুহূর্তে হাদিসটি হল
روى ابن أبي شيبة في " مسنده " ، من حديث عبد الله بن مسعود قال : ( بينا رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يصلي ، إذ سجد فلدغته عقرب في أصبعه فانصرف رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وقال : " لعن الله العقرب ما تدع نبيا ولا غيره " ، قال : ثم دعا بإناء فيه ماء وملح [ ص: 166 ] فجعل يضع موضع اللدغة في الماء والملح ، ويقرأ : ( قل هو الله أحد ) والمعوذتين حتى سكنت ) .
ইবনে আবী শায়বা তার মুসান্নাফে ভিতরে আব্দুল ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে একটি হাদীস। এনেছেন। যেখানে বলা হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লামকে একটি বিচ্ছু সেজদারত অবস্থায় দংশন করে।তারপর তিনি অভিশাপ দেন।তারপর একটি পাত্রে কিছু পানি এবং লবণ আনতে বলেন এবং দংশিত স্থানে পানি এবং লবণ লাগাতে থাকেন এবং সূরা এখলাছ, নাছ এবং ফালাক পড়তে থাকেন। অতঃপর তা প্রশমিত হয়।[৫]
আশা করি উত্তর পেয়েছেন
তথ্যসুত্রঃ
১। https://questionsonislam.com/article/what-mustahab
https://en.wikipedia.org/wiki/Mustahabb
২। Haashiyat Ibn ‘Aabideen, 5/215, 249; al-Hidaayah Takmilat Fath al-Qadeer, 8/134; al-Fawaakih al-Dawaani, 2/440; Rawdah al-Taalibeen, 2/96; Kashshaaf al-Qinaa’, 2/76; al-Insaaf, 2/463; al-Aadaab al-Shar’iyyah, 2/359ff, Haashiyat al-Jumal, 2/134).
৩। al-Tirmidhi, 4/383, no. 1961. He said: This is a saheeh hasan hadeeth. See also Saheeh al-Jaami’, 2930
৪। মুসলিম হা/৩৯৩০
৫। মিশকাতুল মাছাবীহ:4567


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.