সংশয়বাদীদের জন্য কিছু মলম প্রদান

সংশয়বাদীদের জন্য কিছু মলম প্রদান
লিখেছেনঃ Mahdi Islam Prince
সত্য যখন মিথ্যা!?!
------------------
Self-refuting/ Self-defeating বা স্বপরাজিত বিবৃতি হলো সেই ধরণের বিবৃতি, যা নিজেই নিজের বিবৃতির বিরুদ্ধে যায়।
অর্থাৎ, 'A যদি সত্য হয়, তাহলে A মিথ্যা'- এরকম।
যুক্তির একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সামঞ্জস্য বা সঙ্গতিপূর্ণতা। আর স্বপরাজিত সেই বিবৃতিগুলো যুক্তির এই নীতিগুলোকে একদম বাজেভাবে বলাৎকার করে দেয়, যা অনেকসময় আমরা বুঝি, আবার অনেক সময় বুঝেও না বোঝার ভান করি।
ধরুন, আমি লিখলাম "আমি বাংলা লিখতে পারিনা" অথবা "I Can't write english", তাহলে আমার এই লেখা কি ধোপে টিকলো? যুক্তিসম্মত হলো?
অথবা, বললাম " আমি এখন মিথ্যা বলছি", "আমার আব্বু-আম্মুর কোনো সন্তান ছিল না", "সব বাঙালী বদজাত" ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঠিক এই রকমভাবে, বিশ্বাসী/অবিশ্বাসী/সংশয়বাদী/অজ্ঞেয়বাদীরা তাদের জীবদ্দশায় প্রচুর প্রচুর স্ববিরোধী দাবী-যুক্তি উপস্থাপন করে নিজেদের অবস্থানকে শক্ত এবং নিজেদের ভিউকে ভ্যালিড প্রমাণ করে।
তাই, এখন আমরা তাদের খুবই কমন কিছু স্ববিরোধী বিবৃতি (self-refuting statement) দেখবো যেগুলো এই যুগে প্রবলভাবে প্রচলিত এবং খুব কনফিডেন্স সহকারে উত্থাপন করা হয়। তার সাথে দেখবো এই রেটোরিকগুলোর একদম এক কথায় (প্রশ্নের ভিত্তিতে) প্রত্যুত্তর-
‌‌‌☞সত্য বলে কিছু নেই।
⇨এই বিবৃতিটা কি সত্য?
‌‌
☞কারো পক্ষে সত্য জানা সম্ভব নয়।
⇨এই বিবৃতিটি কি করে জানা সম্ভব হলো?
☞আপনি কখনোই সত্য জানতে পারবেন না।
⇨আপনি কি এর সত্যতা জানেন?
☞এটা আপনার জন্যে সত্য, আমার জন্যে না।
⇨আপনার এই বিবৃতিটা কি সবার জন্যে সত্য?
☞সকল সত্য আপেক্ষিক।
⇨এই সত্যটা কি আপেক্ষিক?
☞কারও কাছে সত্য বলে কিছু নেই।
⇨ আপনি তাহলে কি বলছেন?
⇨ তাহলে আপনার কাছে এই সত্য কিভাবে এবং কোথা থেকে এলো?
☞ আপনাদের নৈতিকতা কখনোই আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়।
⇨এই নৈতিকতাটা আমার ওপর বা অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়া কি উচিত?
☞ বিশ্বাসের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
⇨ এই বিশ্বাসটির যৌক্তিকতা কতটুকু?
☞মুক্তমনের অধিকারীরা প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করেনা
⇨আপনি কি এই বিবৃতি প্রমাণসহ বিশ্বাস করেছেন?
☞ধ্রুব বা পরম বলতে কিছু নেই।
⇨এই বিবৃতিটা কি ধ্রুব বা পরম?
☞এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের সবকিছু অর্থহীন।
⇨এই বিবৃতির দ্বারা কি বুঝালেন?
⇨এই বিবৃতির অর্থ কি?
☞আপনার কাউকে জাজ করা উচিত নয়।
⇨এটা কি জাজমেন্ট না?
☞সবকিছুকে সন্দেহ করা উচিত।
☞সন্দেহ দিয়ে সবকিছু শুরু করা উচিত।
⇨আমার কি এই বিবৃতিকে সন্দেহ করা উচিত?
⇨এই বিবৃতিটাকে কি তাহলে সন্দেহ করতে শুরু করা উচিত না?
☞অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনার সহনশীল হওয়া উচিত।
‌⇨আপনি কি আমার দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর সহনশীলতা প্রদর্শন করছেন?
‌⇨আমার দৃষ্টিভঙ্গী তাহলে আপনার সহ্য হচ্ছেনা কেন?
‌☞আপনার নিজেকে নিয়ে আগে চিন্তা করা উচিত।
⇨তাহলে তো আমার এই বিবৃতিটি শোনা উচিত না, তাইনা?
☞আপনার বিশ্বাস আপনার কাছে রাখুন। একজনের বিশ্বাস আরেকজনের ওপর চাপানো উচিত না।
⇨তাহলে এই বিশ্বাসটি আমার ওপর চাপাচ্ছেন কেন?
☞ধর্মে কোনো সত্য নেই। যা আছে কেবল বিজ্ঞানে।
⇨এটা কি বৈজ্ঞানিক সত্য? (এই উক্তিটির কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। এটা দার্শনিক বা অধিবিদ্যামূলক অনুমান (Metaphysical assumption)
☞বিজ্ঞান হলো একমাত্র ভ্যালিড পদ্ধতি, যার মাধ্যমেই কেবল সত্যকে জানা সম্ভব।
⇨এই উক্তিটির সত্যতা কি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বারা জেনেছেন?
☞বিজ্ঞান একসময় সব জেনে যাবে।
⇨বৈজ্ঞানিকভাবে জানলেন?
⇨সব জেনে যাওয়ার হিসেব কি বিজ্ঞান দিয়ে দিয়েছে?
☞ইতিহাস সঠিকভাবে জানা সম্ভব না।
⇨এই বিবৃতিটা কি একটু আগে ইতিহাস হয়ে গেল না?
☞পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা যা লাভ করা যায় না, তার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই।
⇨আপনার এই উক্তিটির ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোনো অস্তিত্ব আছে কি?
(লিখিত বা শ্রবণকৃত উক্তি কন্ঠস্বর বা কলমের কালির প্যাটার্নের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। উক্তিটির অস্তিত্বের নয়)
⇨আপনি যে চিন্তাজগত থেকে বিবৃতিটি দিলেন, তার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারবেন?
☞দর্শন, অধিবিদ্যা, আধ্যাত্মিকতা ভুয়া জিনিস। অবৈজ্ঞানিক এবং অপ্রমাণিত। কেবল বিজ্ঞানই বিশুদ্ধ।
⇨বিজ্ঞান নিজে কি বৈজ্ঞানিক?
⇨বিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করুন তো?


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.