ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার দেয়া হয়নি ?

ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার দেয়া হয়নি ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

= মানুষের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করাঃ হক সে অমুসলিম

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না তাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও দয়া করেন না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৩, হাসান হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবুল কাসিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

= প্রতিবেশির অধিকার হক সে অমুসলিম

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এতে আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট সঙ্গীদের মাঝে উত্তম সঙ্গী হল সেই ধরনের ব্যক্তি যে তার নিজ সঙ্গীর নিকট উত্তম। আল্লাহ্‌ তা‘আলার দৃষ্টিতে প্রতিবেশীদের মাঝে উত্তম হল সেই ধরনের প্রতিবেশী যে তার নিজের প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৭২, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় নীরব থাকে।

=উপহার আদান প্রদান করা,উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হক সে অমুসলিম

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৩, সহিহ হাদিসঃ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপহার নিতেন এবং বিনিময়ে উপহার প্রদান করতেন।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের প্রতি যে লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, আল্লাহ্‌ তা‘আলার প্রতিও সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮১১, সহিহ হাদিসঃ নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অথবা যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।

= সবার সাথে এমনকি অমুসলিমদের সাথে ভাল ব্যাবহার করা, মানুষদের পানি পান করানো

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৮৭, হাসান হাদিসঃ আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভয় কর, মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কর, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৮৪, হাসান হাদিসঃ সা’দ বিন উবাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন প্রকারের দান সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ পানি পান করানো

= কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত মানুষ এলে তাঁকে সম্মান করা হক সে অমুসলিম

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭১২, হাসান হাদিসঃ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের নিকট কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি এলে তোমরা তাকে যথাযথ সম্মান করো ।

= মানুষের সাথে মিলে মিশে বসবাস করা,ঝগড়া না করা হক সে অমুসলিম

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩৫, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন তখন তাকে নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা লোকদেরকে সুসংবাদ দিবে, দূরে ঠেলে দিবে না, আর সহজ করবে, কঠিন করবে না।

= অনুমতি নিয়ে বসা, দয়া করা হক সে অমুসলিম

* সুনানে আবু দাউদ। হাদিসঃ ৪৮৪৪, হাসান হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উভয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ দু’ব্যক্তির মাঝখানে বসবে না ।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯৪১, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দয়াশীলদের উপর করুণাময় আল্লাহ্‌ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

= অমুসলিমদের সাথে ঝগড়া বিবাদ না করা

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ২৪১১, সহিহ হদিসঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, দু’ ব্যক্তি একে অপরকে গালি দিয়েছিল। তাদের একজন ছিল মুসলিম, অন্যজন ইয়াহূদী। মুসলিম লোকটি বলল, তাঁর কসম, যিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফযীলত প্রদান করেছেন। আর ইয়াহূদী লোকটি বলল, সে সত্তার কসম, যিনি মূসা (‘আঃ)-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফযীলত দান করেছেন। এ সময় মুসলিম ব্যক্তি নিজের হাত উঠিয়ে ইয়াহূদীর মুখে চড় মারল। এতে ইয়াহূদী ব্যক্তিটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে তার এবং মুসলিম ব্যক্তিটির মধ্যে যা ঘটেছিল, তা তাঁকে অবহিত করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা আমাকে মূসা (‘আঃ)-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। কারণ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তাদের সাথে আমিও বেহুঁশ হয়ে পড়ব। তারপর সকলের আগে আমার হুঁশ আসবে, তখন (দেখতে পাব) মূসা (‘আঃ) আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তিনি বেহুঁশ হয়ে আমার আগে হুঁশে এসেছেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা যাঁদেরকে বেহুঁশ হওয়া হতে রেহাই দিয়েছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন।
* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪৫৭, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে।

=বেচা কেনার সময় কাউকে ধোঁকা না দেয়া হক সে অমুসলিম

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪১৪, সহিহ হাদিসঃ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে এক ব্যক্তিকে ধোঁকা দেয়া হত। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি যখন বেচা-কেনা কর তখন বলে দেবে যে, ধোঁকা দিবে না। অতঃপর সে অনুরূপ কথাই বলত।

= অমুসলিমদের সাথে কেনা বেচা জায়েজ, অমুসলিমদের কাছে কিছু ধার নিলে তা ফিরিয়ে দেয়া

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪১৬, সহিহ হাদিসঃ ‘আবদুল্লাহ্‌ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলিমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে, তা হলে সে আল্লাহর সমীপে এমন অবস্থায় হাযির হবে যে, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন। আশ‘আস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! এটা আমার সম্পর্কেই ছিল, আমার ও এক ইয়াহূদী ব্যক্তির সাথে যৌথ মালিকানায় এক খন্ড জমি ছিল। সে আমার মালিকানার অংশ অস্বীকার করে বসল। আমি তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে গেলাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তোমার কোন সাক্ষী আছে কি? আমি বললাম, না। তখন তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] ইয়াহূদিকে বললেন, তুমি কসম কর। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সে তো কসম করবে এবং আমার সম্পত্তি নিয়ে নেবে। তখন আল্লাহ তা’আলা (এ আয়াত) নাযিল করেন: “যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে …. আয়াতের শেষ পর্যন্ত”- (আল্‌ ইমরান ৭৭)।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৩৯৬, সহিহ হাদিসঃ জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁর পিতা একজন ইয়াহুদীর কাছে হতে নেয়া ত্রিশ ওসাক (খেজুর) ঋণ রেখে ইন্তিকাল করেন। জাবির (রাঃ) তার নিকট (ঋণ পরিশোধের জন্য) সময় চান। কিন্তু সে সময় দিতে অস্বীকার করে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কথা বললেন, যেন তিনি তার জন্য ইয়াহুদীর কাছে সুপারিশ করেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এলেন এবং ইয়াহুদীর সাথে কথা বললেন, ঋণের বদলে সে যেন তার খেজুর গাছের ফল নিয়ে নেয়। কিন্তু সে তা অস্বীকার করল। এরপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাগানে প্রবেশ করে সেখানে গাছের (চারদিকে) হাঁটাচলা করলেন। তারপর তিনি জাবির (রাঃ)-কে বললেন, ফল পেড়ে তার সম্পূর্ণ প্রাপ্য আদায় করে দাও। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে আসার পর তিনি ফল পাড়লেন এবং তাকে পূর্ণ ত্রিশ ওসাক (খেজুর) দিয়ে দিলেন এবং সত্তর ওসাক (খেজুর) অতিরিক্ত রয়ে গেল। জাবির (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বিষয়টি অবহিত করার জন্য ইচ্ছা করলেন। তিনি তাঁকে আসরের সালাতরত অবস্থায় পেলেন। তিনি সালাত শেষ করলে তাঁকে অতিরিক্ত খেজুরের কথা অবহিত করলেন। তিনি বললেন, খবরটি ইবনু খাত্তাব (উমর)- কে পৌঁছাও। জাবির (রাঃ) ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে খবরটি পৌঁছালেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বাগানে প্রবেশ করে হাঁটাচলা করলেন, তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম যে, নিশ্চয় এতে বরকত দান করা হবে।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪০০, সহিহ হাদিসঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা যুলুম।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪০১, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এক লোক (ঋণ পরিশোধের) তাগাদা দিতে আসল এবং কড়া কথা বলল। সাহাবীগণ তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হলে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হাক্বদারের (কড়া) কথা বলার অধিকার আছে।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৫১৩, সহিহ হাদিসঃ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ইয়াহুদী হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তার কাছে নিজের বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।

= অন্যায়ভাবে কারো কাছ থেকে কিছু নেয়া নিষেধ হক সে অমুসলিম

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪০৮, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপছন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা।

= অনুমতি ছাড়া কারো জিনিস ধরা যাবে না হক সেটা অমুসলিমের

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪৩৫, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অনুমতি ব্যতীত কারো পশু কেউ দোহন করবে না। তোমাদের কেউ এটা কি পছন্দ করবে যে, তার (তোশাখানায়) ভান্ডারে কোন ব্যক্তি এসে ভান্ডার ভেঙ্গে ফেলে এবং ভান্ডারের শস্য নিয়ে যায়? তাদের পশুগুলোর স্তন তাদের খাদ্য সংরক্ষিত রাখে। কাজেই কারো পশু তার অনুমতি ব্যতীত কেউ দোহন করবে না।

= সবার সাথে এমনকি অমুসলিমদের সাথে এই ৪ টি কাজ কয়া যাবে না

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪৫৯, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে মুনাফিক অথবা যার মাঝে এ চারটি স্বভাবের কোন একটা থাকে, তার মধ্যেও মুনাফিকির একটি স্বভাব থাকে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করে। (১) সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে (২) যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে (৩) যখন চুক্তি করে তা লঙ্ঘন করে (৪) যখন ঝগড়া করে অশ্লীল বাক্যালাপ করে।

= অমুসলিমদের সাথে ন্যায় বিচার করা

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৯২, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৭০৭, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের প্রতিটি হাতের জোড়ার জন্য তার উপর সদকা রয়েছে। সূর্য উঠে এমন প্রত্যেক দিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সদকা।’

= অমুসলিমরা মুসলিম রাষ্ট্রে কাজ করতে পারবে

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৭২০, সহিহ হাদিসঃ ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার ইয়াহূদীদেরকে দিলেন এ শর্তে যে, তারা তাতে কাজ করবে এবং তাতে ফসল ফলাবে, তাতে যা উৎপন্ন হবে তার অর্ধেক তারা পাবে।

= অমুসলিমরা কেউ যদি ক্ষুদার্থ হলে তাকে আহার দেয়া

* সহিহ বুখারি, ৫৬৪৯, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর ।

= অমুসলিম কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া
* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৬৫৭, সহিহ হাদিসঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ইয়াহূদীর ছেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সেবা করত। ছেলেটির অসুখ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তাঁর অসুখের খোঁজ নিতে এলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। সে ইসলাম গ্রহণ করল। সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহ:) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ ত্বলিব মারা গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে এসেছিলেন ।

= অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান, মুসলিম রাষ্ট্রে স্বাধীনতা

* সুরা বাকারা ২:২৫৬ = ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নাই । - কথাটি খুবই স্পষ্ট এবং পরিষ্কার । আল্লাহ্‌ বলে দিয়েছেন ধর্মের ব্যাপারে কোন চাপাচাপি নাই । আপনি হিন্দু ধর্ম পালন করতে চান অথবা খৃষ্টান বা ইহুদী বা নাস্তিক ধর্মই আপনি সেটি অবশ্যই পারবেন । ইসলাম এই ক্ষেত্রে আপনাকে বিন্দুমাত্র বাধা দিবে না ।
* সুরা কাফিরুন ১০৯:৬ = তোমাদের ধর্ম তোমাদের কাছে আমাদের ধর্ম আমাদের কাছে ।

* তাবাকাতে ইবনু সাদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৮: নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাজরান অর্থাৎ খৃষ্টানদের ভূমি এবং তার শাসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের জীবন, তাদের ভূমি, তাদের সম্পদ, তাদের উপাসনালয়য় সব কিছুরই নিরাপত্তা দেয়া হবে। কোন যাজককে তার কাজ হতে কোন অফিসারকে তার চাকরি থেকে চাকরীচ্যুত করা হবে না ।

=অমুসলিমদের সাথে ন্যায় বিচার করা

* সুরা নিসা ৪:৫৮ = নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তাদের প্রাপকদের পৌঁছে দিতে । তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তখন ন্যায় পরায়নতার সাথে বিচার করবে ।

= সবার সাথে এমনকি মুসলিমদের সাথে ভাল ব্যাবহার করা

* সুরা বাকারা ২:১৯৫ = তোমরা তোমাদের নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেও না আর মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যাবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ভাল ব্যাবহারকারীদের ভালবাসেন ।

=অমুসলিমদের সঙ্গে উঠাবসা, কথাবার্তা উঠাবসা এমন কি তাদের মসজিদে বসা অনুমতি আছে

*মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস : ৮৫৭৬,৮৭৭৪,হাদিস সহিহঃ হযরত হাসান বলেন, যখন সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি রাসূল (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়, তখন তারা মসজিদের শেষ প্রান্তে অবস্থিত গম্বুজের কাছে অবস্থান করে। যখন নামাযের সময় হলো, দলের একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নামাযের সময় হয়েছে অথচ এরা একদল অমুসলিম মসজিদে আছে। তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘অমুসলিমদের কারণে জমিন নাপাক হয় না।’

= অমুসলিমদের প্রতি জুলুম করা নিষিদ্ধ

* মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১২৫৭৭, ১২৫৪৯, সহিহ হাদিসঃ নবী করীম (সা.) কারো ওপর জুলুম করতে নিষেধ করেছেন,যদিও মজলুম অমুসলিম হয় : হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মজলুমের বদদু’আ থেকে বেঁচে থেকো, যদিও সে কাফের হয়। তার মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা নেই (অর্থাৎ তার বদদু’আ দ্রুত কবুল হয়ে যায়)।

*কানযুল আমাল, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৫৫: একবার মিশরের এক মুসলিম শাসক একজন অমুসলিমকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিয়েছিল । এই খবর যখন খলিফা উমর (রা) জানতে পারলেন, তখন তিনি সেই অমুসলিমকে নির্দেশ দিলেন, মুসলিম শাসককে ঠিক সেইভাবেই শাস্তি দেয়ার জন্য যেভাবে অমুসলিম ব্যাক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। তিনি তখন রাগে মুসলিম শাসককে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন, কখন থেকে মানুষকে তুমি তোমার দাস ভাবা শুরু করেছ ?

= অমুসলিম মৃতদের সম্মান করা

* সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩১২,সহিহ হাদিসঃ হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবি লায়লা থেকে বর্ণিত, সাহল ইবনে হুনাইফ ও কায়েস ইবনে সাদ কাদেসিয়াতে বসা ছিলেন।তখন তাঁদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে কিছু লোক অতিক্রম করল। তাঁরা দুজন দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁদের বলা হলো, ইনি হলো কাফের।তাঁরা বললেন, মহানবী (সা.)-এর পাশ দিয়ে একসময় এক জানাযা নেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন।তাঁকে বলা হলো, এটা তো এক ইহুদির জানাযা। তখন তিনি বললেন, এটা কি প্রাণী নয় (মানব নয়)?

=অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়া,তাদের সেবা করা,কষ্ট না দেয়া এবং ইসলামের দাওয়াত দেয়া

* বুখারী শরীফ, হাদীস : ১৩৫৬,সহিহ হাদিসঃ হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ইহুদি বালক নবী করীম (সা.)-এর খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হলো, তখন মহানবী (সা.) তাকে দেখতে গেলেন, তার মাথার দিকে বসলেন আর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো! তখন সে তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ করো, ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন নবী (সা.) এই বলে বের হলেন, আল্লাহর শোকর, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন।’
* জামে সাগির, খণ্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ৪৭৩: নবী (সা) বলেছেন যে লোক অমুসলিম নাগরিককে কোন রকম কষ্ট দিবে। আমি নিজেই কিয়ামতের দিন ঐ মুসলিমের বিপক্ষে দাঁড়াবো ।

= অমুসলিমদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা নিষিদ্ধ

*বায়হাকী, হাদীস : ১৫৯৩৪, সহিহ হাদিসঃ ইমাম বায়হাকি (রহ.) সুনানে কুবরা নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন,হযরত আবু জানুব আসাদি (রহ.) থেকে বর্ণিত, আলী (রা.)-এর দরবারে এক মুসলিমকে হাজির করা হয়, যে একজন অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করেছে। এ হত্যার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তখন তিনি তাকে কেসাস হিসেবে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় মৃত ব্যক্তির ভাই এল এবং বলল, আমি তাকে ক্ষমা করছি।তখন তিনি বললেন, হয়তো তার পরিবার তোমাকে ধমক দিয়েছে, ভীতি প্রদর্শন করেছে, হুমকি দিয়েছে। সে বলল, না। কিন্তু তাকে হত্যা করলে আমার ভাই ফিরে আসবে না। আর তারা আমাকে ‘দিয়াত’ (রক্তপণ) দিয়েছে। তাই আমি রাজি হয়েছি।আলী (রা.) বললেন, ‘তুমি ভালো করেই জানো, যেসব অমুসলিম আমাদের রাষ্ট্রে নাগরিক হিসেবে থাকবে, তাদের জীবন আমাদের মতো, তাদের রক্তপণ আমাদের রক্তপণের মতো।’

* বুখারী, হাদীস : ৩১৬৬, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করল, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুগন্ধি ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’

* মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২০৬৪৮,২০৩৭৭, সহিহ হাদিসঃ হযরত আবু বাকারা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেবেন।’

* আবূ দাঊদ : ৩০৫২, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেনঃ সাবধান!যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকারখর্ব করে,তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়,তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপনকরব।

* সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিসঃ২৬৮৬, সহিহ হাদিসঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম যিম্মীকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ অবশ্যই চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে।

=অমুসলিম হলেও পিতামাতার সাথে ভাল ব্যাবহার করে

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৯৭৮, সহিহ হাদিসঃ আবূ বাক্‌র (রাঃ) -এর কন্যা আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন, হাঁ। ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের ক’রে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।” (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০:৮)

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৯৭৯, সহিহ হাদিসঃ আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।


উপরের বিশুদ্ধ তথ্য প্রমান থেকে আমরা শিখলাম ইসলামই রাষ্ট্রে একজন অমুসলিমকে যা যা অধিকার দেয়া হয়েছে তা হলঃ

১/ সকল মানুষের প্রতিই দয়া অনুগ্রহ করা, হক সে অমুসলিম

২/ প্রতিবেশি সে অমুসলিম হলেও তার অধিকার রয়েছে, যেমন আপনি কিছু রান্না করলে তাকে কিছু দিলেন ।

৩/ উপহার আদান প্রদান করা,উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, হক সে অমুসলিম ।

৪/ সবার সাথে এমনকি অমুসলিমদের সাথে ভাল ব্যাবহার করা, মানুষদের বা অমুসলিমদের পানি পান করানো ।

৫/ কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত মানুষ এলে তাঁকে সম্মান করা, হক সে অমুসলিম ।

৬/ মানুষের সাথে মিলে মিশে বসবাস করা,ঝগড়া না করা, হক সে অমুসলিম ।

৭/ অনুমতি নিয়ে বসা, দয়া করা, হক সে অমুসলিম ।

৮/ অমুসলিমদের সাথে ঝগড়া বিবাদ না করা ।

৯/ বেচা কেনার সময় কাউকে ধোঁকা না দেয়া, হক সে অমুসলিম ।

১০/ অমুসলিমদের সাথে কেনা বেচা জায়েজ, অমুসলিমদের কাছে কিছু ধার নিলে তা ফিরিয়ে দেয়া ।

১১/ অন্যায়ভাবে কারো কাছ থেকে কিছু নেয়া নিষেধ, হক সে অমুসলিম ।

১২/ অনুমতি ছাড়া কারো জিনিস ধরা যাবে না, হক সেটা অমুসলিমের ।

১৩/ সকল মানুষের সাথে এমনকি অমুসলিমদের সাথে সত্য কথা বলতে হবে । ওয়াদা ভঙ্গ করা যাবে না । কোন চুক্তি করলে তা ভাঙ্গা যাবে না । ঝগড়া করা যাবে না ।

১৪/ অমুসলিমদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা নিষেধ ।

পরিশেষে কিছু কথা

যারা বলেন ইসলামে নাকি অমুসলিমদের অধিকার দেয়া হয়নি তাদের উচিৎ এই লেখাটি পড়া । এতে আশা করা যায় তাদের মনে যেই অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে সেটা দূর হয়ে যাবে যদি তারা সত্যবাদী হয়। এখন আসি নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীর কাছে ! আমরা জানি নাস্তিক মানে হল স্রস্টায় অবিশ্বাসী শুদু এটাই না আরও আছে তা হলঃ দুনিয়া থেকে ধর্ম তথা ইসলামকে পুরো ভেনিস করতে চায় যারা এদেরকেও নাস্তিক ধর্মের অনুসারী বলা যায় । এখন যেহেতু এরা ইসলামকে দুনিয়া থেকে মুছে দিতে চায় তাই এদের নাস্তিক ধর্মের রাষ্ট্রে যদি কোন অনাস্তিক মানুষ বসবাস করে তাহলে এরা "ইসলাম যেই অধিকার দিয়েছে সেটার বিপরীত আচরন" এরা (নাস্তিকরা) করবে কারন এরা ইসলাম বিদ্বেষী । তাহলে এবার ভাবুন এই নাস্তিক ধর্ম কত বর্বর একটি সভ্য আদর্শ সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ পরিবার এর জন্য ।

আপনি যদি নাস্তিক ধর্মের অনুসারী হতে চান তাহলে আপনাকে উপরের সব কটি কথা অস্বীকার করতে হবে নাইলে আপনি একজন খাটি নাস্তিক ধর্মের মুরিদ হতেই পারবেন না । এখন আপনি ভাবেন যে আপনি নাস্তিক ধর্মের মুরিদ হবেন কিনা ?

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.