বিষয়ঃ কুরআন সংকলন (সব সংশয় দূর করুন) / এম ডি আলী
বিষয়ঃ কোরআন সংকলন (সব সংশয় দূর করুন)
লিখেছেনঃএম ডি আলী
সামনে পিছনে কাট কুট করে অর্ধেক হাদিস বা অর্ধেক আয়াত দেখিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা ফাউ প্রমাণ করতে চান যে আল্লাহর কিতাব কুরআন নাকি বিকৃত (নাউজুবিল্লাহ) । তাদের এ অহেতুক ফাউ প্রমাণ যে আসলেও ফেউ সেটাই আজকে আমি প্রমাণ করে দেখিয়ে দিব সাথে কিছু প্রশ্ন জুড়ে দিব দেখি নাস্তিক ধর্মে প্রশ্ন করলে উত্তর আসে কিনা !!! যাই হক । কুরআন সংকলন ব্যাপারে তাদের বড় বড় যেই দাবি সমূহ তা হলঃ
১/ বর্তমানের কুরআনের সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়কার কুরআনের কোন মিল নাই অথবা কুরআন পরিপূর্ণ ছিল না ।
২/ নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময় যদি কুরআন থাকেও তাইলে সাহাবিদের কেন আবার কোরআন সংকলন এর দরকার হল ।
৩/ কুরআনের যেই সুরার বিন্যাস এটি রাসুল (সা) করেননি ।
৪/ কুরআন একেক স্থানে একেক ভাবে পড়ে এতে কি প্রমাণ হয় না কুরআন আসলে বিকৃত ।
(১)
+++বর্তমানের কুরআনের সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়কার কুরআনের কোন মিল নাই অথবা কুরআন পরিপূর্ণ ছিল না+++
*ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৮৮,পৃষ্ঠা ৩৭৫: হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) বলেন, নবী (সা) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,সমগ্র কুরআন খতম করতে তোমার কত সময় লাগে ?
*ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৮৯,পৃষ্ঠাঃ ৩৭৫: হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন নবী (সা) আমাকে বললেন , “একমাসে কোরআন খতম করো” । আমি বললাম , আমি এর চেয়ে বেশি করার শক্তি রাখি । তখন নবী (সা) বললেন ,তাহলে প্রতি সাত দিনে একবার খতম করো এবং এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে খতম করো না ।
* সম্পূর্ণ কোরআন খতম করার ব্যাপারে নবী (সা) এর বিশাল একটি হাদিসই আছে । বিস্তারিত দেখুন ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৮৭,পৃষ্ঠাঃ ৩৭৪,৩৭৫ ।
*ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৬৪ ,পৃষ্ঠাঃ ৩৬৩:......রাসুল (সা) তাঁকে (এক লোককে) ফিরে যেতে দেখে তাঁকে ডেকে আনালেন । যখন সে ফিরে আসল , নবী (সা) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্ত আছে ? সে উত্তরে বলল, অমুক অমুক সুরা মুখস্ত আছে । সে এমনিভাবে একে একে উল্লেখ করতে থাকলো । তখন নবী (সা) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি এ সকল সুরা মুখস্ত তিলওয়াত করতে পারো ? সে উত্তর দিল হ্যাঁ ! তখন নবী (সা) বললেন , যাও তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্ত রেখেছ উহার বিনিময়ে এ মহিলাটির তোমার সঙ্গে বিয়ে দিলাম ।
*ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬২১,পৃষ্ঠাঃ ৩৩২,৩৩৩: হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’লা নবী (সা) এর প্রতি ধারাবাহিকভাবে ওহি নাযিল করতে থাকেন এবং তাঁর ইন্তিকালের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ তা’লা তাঁর প্রতি সর্বাধিক পরিমাণ ওহি নাযিল করেন । এরপর তিনি ওফাত প্রাপ্ত হন ।
*ই;ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৩৫,পৃষ্ঠা ৩৪৪: ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন নবী (সা) কল্যাণের কাজে ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল , বিশেষভাবে রমজান মাসে । (তাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না)কেননা রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিব্রাইল (আ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন তেলওয়াত করে শোনাতেন । যখন জিব্রাইল (আ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের ব্যাপারে প্রবাহমান বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল হতেন ।
*ই’ফা,সহিহ বুখারি, খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৩৬,পৃষ্ঠাঃ ৩৪৫: আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ প্রতি বছর জিব্রাইল (আ) নবী (সা) এর সঙ্গে একবার কুরআন শরীফ দাওর করতেন । কিন্তু যে বছর তিনি ওফাত লাভ করেন সে বছর তিনি রাসুল (সা) এর সঙ্গে দুবার দাওর করেন । প্রতি বছর নবী (সা) রমযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন কিন্তু যে বছর তিন ওফাত লাভ করেন সে বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন ।
*ই’ফা,সহিহ বুখারি, খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৪১,পৃষ্ঠা ৩৪৭: কাতাদা (র) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইবন মালিক (রা) কে জিজ্ঞাসা করলাম নবী (সা) এর সময়ে কে কে কুরআন সংগ্রহ করেছেন ? তিনি বললেনঃ চারজন এবং তাঁরা চারজনই ছিলেন আনসারি সাহাবী । তাঁরা হলেনঃ উবায় ইবন কাব (রা), মুয়াজ ইবন জাবাল (রা), যায়দ ইবন সাবিত (রা) এবং আবু যায়দ (রা) ।
উপরের বিশুদ্ধ প্রমান থেকে আমরা জানলামঃ
১/ নবী মোহাম্মদ (সা) তাঁর সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলেন কুরআন খতম করতে কত সময় লাগে তোমার । এ থেকে প্রমাণ হয় নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়ই পরো কুরআন কমপ্লিট ছিল যদি নাই হত তাহলে তিনি কেন তাঁর সাহাবীকে কুরআন খতম এর ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন ???
২/ নবী মোহাম্মদ (সা) তাঁর সাহাবীদের কে কুরআন খতম এর ব্যাপারে অনেক উৎসাহ দিতেন বিশেষ করে রমজান মাসে তো আরও বেরে যেত ।
৩/ নবী মোহাম্মদ (সা) এর সাহাবী ছিল, যারা পুরো কুরআন এর হাফেজ ছিল । তাহলে হাফেজ কিভাবে হল যদি পুরো কুরআন সম্পূর্ণ না ছিল?
৪/ রমজান মাসে নবী মোহাম্মদ (সা) জিবরাইল (আ)কে পুরো কোরআন পড়ে শোনাতেন।
৫/ প্রতি বছর নবী মোহাম্মদ (সা) জিব্রাইলের (আ) কাছে কুরআন শরীফ একবার দাওর করতেন কিন্তু যে বছর নবী মোহাম্মদ (সা) এর ওফাত হবে সে বছর তিনি দুইবার কুরআন দাওর করেছেন । এ থেকে প্রমাণ হয় পুরা কুরআন জিব্রাইল (আ) নবী মুহাম্মদ (সা) কে শিক্ষা দিয়েছেন । দাওর মানে পুরো কুরআন বার বার পড়া অথবা প্রথমে একজন সুরা ফাতিহা পড়বে অপরজন সুরা বাকারা এভাবে কুরআন খতম করা আবার প্রথম জন সুরা ফাতিহা পড়বে দ্বিতীয়জন সুরা বাকারা এভাবে আবার কুরআন খতম করাকেই দাওর বলে।আর পুরা কুরআন যদি নাই থাকতো তাইলে জিব্রাইল (আ) কিভাবে রাসুল (সা) কে পুরো কুরআন দাওর করালেন ??
৬/ নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়েই সাহাবিরা কুরআন সংরক্ষণ শুরু করে দেন । মুখস্ত আকারে অথবা চামড়ায় লিখে ইত্যাদি ভাবে ।
(২)
+++নবী মোহাম্মদ (সা)এর সময় যদি কুরআন থাকেও তাহলে সাহাবিদের কেন আবার কোরআন সংকলন এর দরকার হল+++
*ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬২৬,পৃষ্ঠাঃ ৩৩৮: আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা) একবার উসমান (রা) এর কাছে এলেন । এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আজারবাইজান বিজয়ের ব্যাপারে সিরিয় ও ইরাকি যোদ্ধাদের জন্য রণ প্রস্তুতির কাজে বেস্ত ছিলেন । কুরআন পাঠে তাঁদের মতবিরোধ হুজায়ফাকে ভীষণ চিন্তিত করলো । সুতরাং তিনি উসমান (রা) কে বললেনঃ হে আমিরুল মু’মিনিন! কিতাব সম্পর্কে ইহুদী ও নাসারাদের মত মতপার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উম্মতকে রক্ষা করুন । তারপর উসমান (রা) হাফসা (রা)এর কাছে এক ব্যাক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের সহিফাসমুহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন,যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করতে পারি ।এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দিব । হাফসা (রা) তখন সেগুলো উসমান (রা)এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন । এরপর উসমান (রা) যায়দ ইবনে সাবিত (রা),আব্দুল্লাহ ইবন জুবায়র (রা), সাইদ ইবনে আস (রা) এবং আব্দুর রহমান ইবন হারিস ইবন হিশাম (রা)কে নির্দেশ দিলেন । তাঁরা মাসহাফে লিপিবদ্ধ করলেন । এ সময় হযরত উসমান (রা) তিনজন কুরাইশি ব্যাক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন বিষয়ে যদি যায়দ ইবন সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতপার্থক্য দেখা দেয়,তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে।কারন কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে । সুতরাং তাঁরা তাই করলেন । যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়ে গেল,তখন উসমান (রা) মূল লিপিগুলো হাফসা (রা) এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন ।তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ সমূহের একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এতদভিন্ন আলাদা আলাদা বা একত্রে সিন্নিবেশিত কুরআনের যে কপিসমুহ রয়েছে তা জালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন । ইবন শিহাব (র) খারিজা ইবন যায়দ ইবন সাবিতের মাধ্যমে যায়দ ইবন সাবিত থেকে বর্ণনা করেন যে , তিনি বলেছেন আমরা যখন গ্রন্থাকারে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সুরা আহযাবের একটি আয়াত আমার থেকে হারিয়ে যায়,অথচ আমি তা রাসুল (সা) কে পাঠ করতে শুনেছি । তাই আমরা অনুসন্ধান করতে লাগলাম । অবশেষে আমরা তা খুজায়মা ইবন সাবিত আনসারি (রা) এর কাছে পেলাম । আয়াতটি হচ্ছে এই, মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে ,তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরন করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে, তাঁরা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি ।(৩৩/২৩) । আমরা অতপর এ আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সুরার মাসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম ।
*উপরের হাদিস থেকে আমরা যা পাইঃ
১/ কুরআন পাঠে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায় । এই মতবিরোধ নিয়েই ইসলাম বিদ্বেষীরা নানান কারিশমা করে, মজার কথা হল আমরা যদি এই হাদিস জানি যেখানে, হযরত আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন যে,তিনি এক ব্যাক্তিকে আয়াত পাঠ করতে শুনলেন । নবী (সা) কে যেভাবে পাঠ করতে শুনতেন ,তার থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে সে পাঠ করছিল ,তখন ঐ বেক্তিকে তিনি নবী (সা) এর নিকট নিয়ে গেলেন । তখন নবী (সা) বললেন ,তোমরা উভয়ই সঠিকভাবে পাঠ করেছ । সুতরাং এভাবে কুরআন পাঠ করতে থাকো । নবী (সা) আরও বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমুহ ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পরস্পরের বিভেদের কারনে ।(ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৯৬,পৃষ্ঠা ৩৭৯ এবং পৃষ্ঠা ৩৬৮ এর ৪৬৭৬ নং হাদিসও দেখুন) - মূলত মতবিরোধ ছিল উপভাষায় । এই মতবিরোধ মানে এই না যে নতুন নতুন আয়াত একেক জন পড়ত আরেক জনে আরেক ভাবে পড়ত।
২/ হাফেজ সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করে হযরত উসমান (রা) কুরআন লিপিবদ্ধ করেন ।
৩/ “এতদভিন্ন আলাদা আলাদা বা একত্রে সিন্নিবেশিত কুরআনের যে কপিসমুহ রয়েছে তা জালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন” এই লাইন দেখিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা দাবি করে কুরআন নাকি জালিয়ে দেওয়া হয় হাহাহা । মজার ব্যাপার হল "আলাদা আলাদা" যেই সব কপি ছিল বা কমপ্লিট লিপিবদ্ধ যেগুলা ছিল না সেগুলা জালিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না এর আগেই কিন্তু সাহাবিরা পরামর্শ করে কুরআন সম্পূর্ণ কমপ্লিট লিপিবদ্ধ করে ফেলেছেন এমনকি সেগুলা বিভিন্ন প্রদেশেও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
৪/ নবী মোহাম্মদ (সা) এর যুগে কুরআন তো সম্পূর্ণ ছিলই কারন নবীজি পুরো কুরানের হাফেজ ছিলেন এবং তাঁর সাহাবিরাও তখন লিপিবদ্ধ করা হয়নি কুরআন, তাই সাহাবিরা পরে শুদু বই আকারে কমপ্লিট লিপিবদ্ধ করেছেন । আমরা একটি মোটা দাগে প্রশ্ন রাখতে পারি যখন হযরত উসমান (রা) কোরআন লিপিবদ্ধ এর কাজ শেষ করে ফেলেছিলেন তখন কি কোন হাফেজ সাহাবী এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেছিলেন যে কুরআন পরিপূর্ণ নেই ???
(৩)
+++কুরআনের মধ্যে সুরার এবং আয়াতের যেই শ্রেণীবিন্যাস এটি রাসুল (সা) করেন নি!
*ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৪০,পৃষ্ঠা ৩৪৭: মাসরুফ (র) থেকে বর্ণিত,আব্দুল্লাহ (রা) বলেন,আল্লাহর কসম!তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই,আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সুরা সম্পর্কেই আমি জানি যে,তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে তা কার সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।আমি যদি জানতাম যে,কোন ব্যাক্তি আল্লাহ্র কিতাব সম্পর্কে আমার চাইতে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট গিয়ে পৌঁছতে পারে তাহলে সওয়ার হয়ে আমি সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম । - সাহাবী নিজেই বলেছেন কুরআনের অবতীর্ণ প্রতিটি সুরা সম্পর্কেই সে জানে এমন কি তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পরকেও সে জানে যে তা কার সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে । এখানে একটি প্রশ্ন হল সাহাবী আব্দুল্লাহ (রা) কার থেকে কুরআনের যাবতীয় সব শিখেছেন ? উত্তরঃ নবী মোহাম্মদ (সা) এর থেকে । এখন কি আপনি বলতে চাচ্ছেন সুরার বিন্যাস এই সাহাবী জানত না ?
* আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশক্রমেই কুরআন এর সুরা বিন্যস্ত হয়েছে । কুরআনের বর্তমান তারতিব বা বিন্যাস আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ ক্রমেই সূচিত হয়েছে যা সাহাবীরা নিজেরা করেছেন । এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে *আল্লামা সুয়ুতি (রহ) বলেনঃ সন্দেহ নেই যে কুরআনের আয়াতগুলোর বিন্যাস ঐশী নির্দেশ ভিত্তিক । এ বিষয়ে ইজমা এবং সমার্থক দের্থ্যহীন বহু প্রমান রয়েছে । এ বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা অনেকেই বর্ণনা করেছেন । তাদের মধ্যে যারকাশী "বুরহানে" এবং আবু জাআফার ইবনে যোবায়ের তাঁর মুনাসাবাতে ইজমার কথা বলেছেন । তাঁদের বক্তব্য এই যেঃ সূরাগুলোতে আয়াত গুলোর বিন্যাস নবী (সা) এর নির্দেশক্রমেই সূচিত হয়েছে । তাঁর হুকুমে সুরাগুলোতে আয়াত গুলো সন্নিবেশিত করা হয় । এ বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে দ্বিমত নেই ।(ইতকান,খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৬০ আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন,পৃষ্ঠাঃ ৯৮” লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী,প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
*হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (রা) বলেনঃ তিনি একদা রাসুল (সা) এর নিকট বসা ছিলেন । দেখতে পেলেন রাসুলুল্লাহ তাঁর দৃষ্টি উপরের দিকে উঠালেন এবং নামিয়ে নিলেন । অতপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট জিব্রাইল এসেছিল । তিনি আমাকে এ আয়াতটি এ সুরার এ স্থানে স্থাপন করতে বলে গেলেন ।(ইতকান,খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৬০,আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ৯৮” লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন,দ্বীন হক প্রকাশনী,প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
*হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (রা) বলেনঃ তিনি একদা রাসুল (সা) এর নিকট বসা ছিলেন । দেখতে পেলেন রাসুলুল্লাহ তাঁর দৃষ্টি উপরের দিকে উঠালেন এবং নামিয়ে নিলেন । অতপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট জিব্রাইল এসেছিল । তিনি আমাকে এ আয়াতটি এ সুরার এ স্থানে স্থাপন করতে বলে গেলেন ।(ইতকান,খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৬০,আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ৯৮” লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন,দ্বীন হক প্রকাশনী,প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
*হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা) কে একবার প্রশ্ন করা হয় (একটি আয়াত দেখিয়ে যে) আয়াতটি রহিত (মানসুক) হয়েছে । অন্য আয়াত দ্বারা এটিকে মানসুক করা হয়েছে । এ আয়াত লিখলেন কেন ? এটিকে বাদ দিলেন না কেন ? হযরত উসমান (রা) উত্তরে বললেনঃ ওহে ভাতিজা ! কুরআনের কোনকিছুই যেখানে রয়েছে সেখান থেকে আমি সরাতে পারি না ।(ইতকানঃখণ্ড ১ ,পৃষ্ঠা ২০,আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন,পৃষ্ঠাঃ ৯৮”লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি ) - এসব বর্ণনা দ্বারা পরিস্কার প্রমানিত হয় যে কুরআন সুরা সমূহের মধ্যে আয়াতগুলো ঐশী নির্দেশেই সন্নিবেশিত হয়েছে । ওহি প্রাপ্ত হয়ে নবী করীম (সা) যে আয়াত যেখানে রাখতে বলেছেন সেখানেই রাখা হয়েছে । হযরত উসমান (রা) তা পরিবর্তন করেননি ।
*কাজী আবু বকর “আল ইনতিসার” গ্রন্থে বলেনঃ আয়াত সমূহের তারতিব (ক্রমবিন্যাস) একটি অবধারিত ব্যাপার । অনিবার্য নির্দেশ । কেননা হযরত জিব্রাইল (আ) বলে দিতেনঃ অমুক আয়াতটি অমুক স্থানে সন্নিবেশিত করো ।(ইতকানঃখণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৬১, আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ৯৮,৯৯।লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )।
* তাফসীরে জালালাইন, ২/৬২১ পৃষ্ঠা, মারিফুল কুরআন ৩/২৭৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলভি (রহ) এবং ফাতহুল বারী ৮/২৩৫ পৃষ্ঠাঃ ইমাম রাজী (রহ) লিখেছেনঃ সমস্ত আয়াত এবং সুরার তারতিব অর্থাৎ কোন সুরার পরে কোন সুরা বসবে এবং কোন আয়াতের পরে কোন আয়াত থাকবে এই সবও আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর রাসুল (সা) এর তরফ থেকেই হয়েছে ।
*মহানবী (সা) তাঁর জীবনদশায় নামাজে এবং নামাজের বাইরে কুরআন তিলওয়াত করেছেন । তখন তিনি সুরা সমূহের তারতিব রক্ষা করেছেন । সাহাবাগন তা অবগত ছিলেন । রমযান মাসে নাযিলকৃত কুরআনের খতম তারাবীহ পড়া হত । তখনও সুরাগুলোর ক্রমবিন্যাস ও তারতিবের প্রতি লক্ষ্য রেখে সাহাবাগণ নবী (সা) এর নিকট হতে অথবা তাঁর বর্তমানে তারাবীহর নামাজে যিনি ইমামতি করেছেন তাঁর নিকট হতে তারতিব মত সুরাগুলো শুনেছেন । আর হযরত ইবনে মাসউদ এবং হযরত উবাই ইবনে কাব প্রমুখ সাহাবী নবী (সা) এর সামনে একাধিকবার কুরআন খতম করেছিলেন । তখন তাঁরা সুরাসমূহের ক্রমবিন্যাস রক্ষা করেই কুরআন খতম করেছিলেন । এসব তথ্যের ভিত্তিতে সাহাবীগণ কুরআনের সুরার ক্রমবিন্যাস সাধন করেছেন আর এরুপ বিন্যাস ও তারতিব প্রতি সাহাবারা সকলেই একমত হয়েছেন । কাজেই নবী করীম (সা) এর পক্ষ হতে কুরআনের সুরা বিন্যাস ও তারতিব সমর্থিত বলেই মানতে হবে নবী (সা) এর সামনে পঠিত সুরা সমূহের ক্রমবিন্যাসের প্রতি রাসুল (সা)এর মৌন সমর্থনকে “হাদিসে তাকরিরি”র পর্যায়ে ফেলা যায় আর তিনি নিজে যে তারতিবে কুরআনের সুরা তিলওয়াত করেছেন তাকে “হাদিসে কউলি” বা “হাদিসে ফেলি”র পর্যায়ে ফেলা যায় । মুখে তিনি তারতিব রক্ষা করে কুরআন তিলওয়াত করেছেন বলে হাদিসে কউলি এবং কার্যতঃ তিনি তা পালন করেছেন বলে হাদিসে ফেলি এবং সাহাবাগণ তাঁর সামনে কুরআন তারতিব মত খতম করেছিলেন বলে হাদিসে তাকরিরি দ্বারা কুরআনের বর্তমান সুরা বিন্যাসকে সাব্যস্ত করা যায় । এজন্যই অনেকেই বলেছেনঃ কুরআনের সুরার আয়াত সমূহের ন্যায় সুরা সমূহের মাঝেও তারতিব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঐশী নির্দেশনার আলোকেই । (ইতকানঃখণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৬২,আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ১০০,১০১। লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী ,প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি)
* এছাড়া সুরাসমূহের বর্তমান তারতিব যে সকল মুসলমানের ঐকের মাধ্যমে ইজমাই উম্মত দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে এতে কারো কোন দ্বিমত নাই । সকলেই বর্তমান তারতিবেই কুরআন পড়েন । কুরআনের আয়াতের ন্যায় কুরআনের সুরা সমূহও নবী (সা) এর নির্দেশনায় ও সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত বলে মত প্রকাশ করে আল্লামা আম্বারি (রহ) বলেনঃ আল্লাহ তা’লা সমূদয় কুরআন একসঙ্গে নিন্মতম আসমানে নাযিল করেন । অতপর ২৩ বছর ব্যাপী পৃথকভাবে দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেন । বস্তুতঃ সুরা এবং আয়াত নাযিল হত কোন ব্যাপার দেখা দিলে । বিষয় অবগত হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশকারীর উত্তর থাকত তাতে । হযরত জিব্রাইল (আ) আয়াত ও সুরাসমূহের স্থান নবী (সা)কে অবগত করতেন । কাজেই সুরাসমূহের পরম্পরা অক্ষর ও আয়াতসমূহের ন্যায়ই পরস্পর সম্পৃক্ত । এসবই নবী (সা) হতে গৃহীত । কাজেই যে কেউ কোন সুরাকে স্বস্থান থেকে পেছনে আনবে বা আগে নিয়ে যাবে সে কুরআনের পরম্পরা গাঁথুনি বিনষ্ট করে দেবে ।(ইতকান,খণ্ড ১,পৃষ্ঠাঃ ৬২,আরও দেখুনঃ“তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ১০১,১০২। লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি)
সুতরাং প্রমাণ হয় কুরআনের সুরা সমূহের বিন্যাসে অবশ্যই নবী মোহাম্মদ (সা) এর আদেশ ছিল ।
(৪)
+++কুরআন একেক স্থানে একেক ভাবে পড়ে এতে কি প্রমাণ হয় না কুরআন আসলে বিকৃত
+++কুরআন একেক স্থানে একেক ভাবে পড়ে এতে কি প্রমাণ হয় না কুরআন আসলে বিকৃত
* ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেনঃ জিব্রাইল (আ) আমাকে একভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন । এরপর আমি তাকে অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অনুরধ করতে থাকলাম এবং পুনঃ পুনঃ অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অব্যাহতভাবে অনুরধ করতে থাকলে তিনি আমার জন্য পাঠ পদ্ধতি বাড়িয়ে যেতে লাগলেন । অবশেষে তিনি সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় তিলওয়াত করে সমাপ্ত করলেন ।(ই’ফা,সহিহ বুখারি খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬২৯,পৃষ্ঠাঃ ৩৪০)
* হযরত আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন যে , তিনি এক ব্যাক্তিকে আয়াত পাঠ করতে শুনলেন । নবী (সা) কে যেভাবে পাঠ করতে শুনতেন ,তার থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে সে পাঠ করছিল , তখন ঐ ব্যাক্তিকে তিনি নবী (সা) এর নিকট নিয়ে গেলেন । তখন নবী (সা) বললেন ,তোমরা উভয়ই সঠিকভাবে পাঠ করেছ । সুতরাং এভাবে কুরআন পাঠ করতে থাকো । নবী (সা) আরও বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমুহ ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পরস্পরের বিভেদের কারনে ।(ই’ফা,সহিহ বুখারি,খণ্ড ৮,হাদিস নং ৪৬৯৬,পৃষ্ঠা ৩৭৯ এবং পৃষ্ঠা ৩৬৮ এর ৪৬৭৬ নং হাদিসও দেখুন)
উদাহরণঃ এই বিষয় বুঝা একেবারেই সহজ । যেমন ধরেন ঢাকার বাংলাও "বাংলা" পুরান ঢাকার বাংলাও "বাংলা" । ঢাকার বাংলায় “আমাদের কোন সমস্যা নেই আমরা স্বাধীন” একই লাইন যদি পুরান ঢাকার স্টাইলে বলি তাহলে “আমাগো কোন শমসসা নাইক্কা আমরা শাধিন” কুরআনের এই বেপারটাও এরকমই । উপরের হাদিস খেয়াল করুন নবী মুহাম্মদ (সা) এর অনুরধে জিব্রাইল (আ) সাত আঞ্চলিক ভাষায় তিলওয়াত সমাপ্ত করেন । আরেক হাদিসে ভিন্ন পদ্ধতিতে পাঠ করা হলে রাসুল (সা) দুটিই সঠিক বলে ঘোষণা দিলেন । আমি যদি পুরান ঢাকার স্টাইলে (পদ্ধতিতে) কথা বলি সেটাও সঠিক আবার ঢাকার স্টাইলে কথা বললেও সেটাও সঠিক এখানে বিকৃতির কোন প্রশ্নই আসে না জনাব ।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা ইসলাম বিদ্বেষীদের সব কয়টি ভ্রান্ত দাবী পরিষ্কারভাবে খণ্ডন করেছি সাথে এটাও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে কুরআন রাসুলের সময় যেমন ছিল ঠিক বর্তমান কুরানের সাথে হুবহু মিল।কুরানের কোন পরিবর্তন হয়নি।কোন সন্দেহ নাই ।
প্রশ্ন উত্তর পর্ব
প্রশ্নঃ প্রশ্নঃ কুরআনের বড় সুরা হচ্ছে সুরা বাকারা । এখানে ২৮৬ টি আয়াত আছে । আর সুরা আহজাবে আছে ৭৩ টি । কিন্তু সাহাবী উবাই বিন কাব বলেছেন, সুরা আহজাবের আকার ছিল প্রায় সুরা বাকারার মত । অবশিষ্ট আয়াতের ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন যে , খলিফা উসমান এগুলো সংগ্রহ করতে ব্যার্থ্য হয়েছেন আবার কেউ কেউ বলেছেন, এ গুলো সম্ভবত আল্লাহর আদেশে রহিত হয়ে গেছে । (তাফসীরে ইবনে কাসির,১৫ খণ্ড,। আল ইতকানঃ২ খণ্ড ১৩ পৃষ্ঠা) - সূরা আহযাব নাকি একসময় সূরা বাকারার মত বড় সূরা ছিল।পরে অনেকগুলা আয়াত মানসূখ হতে হতে ছোট সূরা হয়েছে।তাহলে যে লাওহে মাহফুজে কুরআনটি আছে সেখানে কি মানসুখ আয়াতগুলা সহ রয়েছে।আমার মনে হয় না।আপনার কি মনে হয়?
জবাবঃ সুরা বাকারা ২: ১০৬ = আমি যে আয়াত রহিত করি কিংবা ভুলিয়ে দেই, তার চেয়ে উত্তম কিংবা তারমত আয়াত আনয়ন করি । তুমি কি জানো না যে, আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান । - আল্লাহ নিজেই বলছেন কুরানে তিনি কোন আয়াত রহিত করলে এর থেকে ভাল অথবা এর সমপরিমাণ আয়াত নাযিল করেন ।
*এখন সব থেকে বড় কথা হচ্ছে নবীজি যখন কুরানের হাফেজ হয়েছিলেন তখন অনেক সাহাবীও হাফেজ হয়েছিলেন। তাহলে উসমান যদি কিছু সংগ্রহ না করতেই তিনি ধরা খেয়ে যেতেন।।।সব থেকে বড় কথা এই গুলা অনুমান ভিত্তিক কথা।।।। আরেকটা কথা হলো কুরআন উসমান সংগ্রহ করেনি করেছে জায়েদ বিন সাবেত (রা) উসমান (রা) হুকুম দাতা ছিলেন একটা কমিটি ছিলো যেখানে উমর ছিলো হযরত আলী ছিলো। তাহলে উসমান যদি ঝামেলা করত কুরান সংগ্রহ নিয়ে, ভুল করতো, তাহলে আলী কি ছেরে দিতেন ? অথবা বাকি হাফেজরা?
* সুরা হিজর ১৫:৯ = আমি কুরআন নাযিল করেছি আর আমিই তার হেফাজতকারী । - যদি কুরআনের আয়াত বাদ দিয়ে সংগ্রহ করা হয় তাহলে আল্লাহ মিথ্যাবাদী হবেন এটা কখনো পসিবল না আপনি একি সাথে আল্লাহ কে মিথ্যাবাদী বলতে পারবেন ? উত্তর হল না ।
*কুরআন সংগ্রহ করা হলে উমর কি কখনো বলেছে যে তার হাফেজ এর সাথে এই কুরআন মিলছে না ???
উপরের কথা থেকে আমরা যা বুঝলামঃ
১/ ধরে নেই সুরা আহজাবের আকার ছিল বড়। কিন্তু আল্লাহ সেগুলা রহিত করে দিয়েছেন ।
২/ উসমান (রা) ব্যর্থ্য হয়েছেন এটি ঠিক নয় কারন রাসুলের যুগেই অনেক বড় বড় সাহাবী ছিলেন । যদি উসমান (রা) সফল নাই হবে তাহলে তাঁকে অবশ্যই বাকি সাহাবীরা সংশোধন করে দিতেন ।
৩/ কুরআন সংগ্রহ করা হলে উমর (রা) কি কখনো বলেছে যে তার হাফেজ এর সাথে এই কুরান মিলছে না ।
৪/ লউহে মাহফুজে মান্সুক আয়াত আছে কি নাই সেটা আমাদের জানা নাই সেটা আল্লাহই ভাল জানেন । এমনও হতে পারে যে বান্দার ভালর জন্য আল্লাহ কিছু আয়াত নাযিল করেছেন পরে সেগুলা রহিত করে দিয়েছেন । যেমনটি তিনি সুরা বাকারা ১০৬ আয়াতে বলেছেন ।
৫। মজার কথা হল এর দ্বারা কুরআন বিকৃত প্রমাণ হয় না কেননা রাসুলের যুগে এমনকি উসমান (রা) এর সময়েও অনেক হাফেজ ছিলেন । সুতরাং যদি আপত্তি আসত তাহলে সাহাবীরাই আগে আপত্তি করতেন ।
প্রশ্নঃ হযরত উসমান (রা) নাকি সুরা বারাহ (সুরা তওবার ) এর সাথে সুরা আনফাল মিলিয়েছেন এর উত্তর কি ?
উত্তরঃ সেই হাদিসটি হলঃ ihadis.com,জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ৩০৮৬, হাসান হাদিসঃ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কে বললাম, শত আয়াতের চাইতে ক্ষুদ্রতম সূরা আল-আনফালকে শত আয়াত সম্বলিত সূরা বারাআতের পূর্বে স্থাপন করতে কিসে আপনাদেরকে উদ্দ্বুদ্ধ করল? যার ফলে আপনারা এই দু’টি সুরাকে একত্রে মিলিয়ে দিলেন, অথচ উভয়ের মাঝখানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বাক্যটি লিখেননি এবং এটিকে সপ্ত দীর্ঘ সূরার মধ্যে রেখে দিয়েছেন। আপনাদের এরুপ করার কারণ কি? ‘উসমান (রাঃ) বললেন, একই সময়কালে রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর অনেকগুলো সূরা অবতীর্ণ হত। অতএব তাঁর উপর কোন আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি লেখকদের কাউকে ডেকে বলতেন, এ আয়াতগুলো অমুক সূরায় যোগ কর যাতে এই বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। অতএব তার উপর আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি বলতেন, ঐ সূরাতে এ আয়াতটি শামিল কর যাতে এই এই বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। সূরা আল-আনফাল ছিল মাদীনায় অবতীর্ণ প্রাথমিক সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর বারাআত ছিল (নাযিলের দিক হতে) কুরআনের শেষ দিকের সূরা। সূরা বারাআতের আলোচ্য বিষয় সূরা আল-আনফালের আলোচ্য বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। তাই আমার ধারণা হল, এটি (বারাআত) তার অন্তর্ভুক্ত। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেন। অথচ তিনি আমাদের স্পষ্ট করে বলে যাননি যে, এ সূরা (বারাআত) আনফালের অন্তর্ভুক্ত কি না। তাই আমি উভয় সূরাকে একত্রে মিলিয়ে দিয়েছি এবং সূরা দুটোর মাঝখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বাক্যও লিখিনি, আর এটিকে সপ্ত দীর্ঘ সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি।
১/ মনোযোগের সাথে উপরের হাদিস পড়ুন । খেয়াল করুনঃ সাহাবী প্রশ্ন করেছেঃ কেন আপনি সুরা বারাআতের (সুরা তওবার) আগে সুরা আনফালকে স্থাপন করলেন ? যার ফলে এই দুটি সুরাকে একত্রে মিলিয়ে দিলেন অথচ উভয়ের মাঝে বিসমিল্লাহ দেন নি ? উত্তরে ওপর সাহাবী বললেনঃ রাসুল (সা) অফাত হয়েছে অথচ এই বিষয় কিছুই বলে যাননি তাই আমি মিলিয়ে দিয়েছি অর্থাৎ সুরা বারাআতের আগে সুরা আনফাল স্থাপন করেছি । বিসমিল্লাহ যুক্ত করা হয়নি কারন নবীজি বলেননি ।
২/ "দুটি সুরাকে মিলিয়ে দেওয়া" এই শব্দ থেকে অনেকেই ভুল বুঝে যে "মনে হয় এক সুরার আয়াত আরেক সুরার মধ্যে প্রবেশ করানো হয়েছে" এটা ভুল । এখানে মিলিয়ে দেওয়া মানে হচ্ছে সুরা বারাআত এর আগে সুরা আনফালকে স্থাপন করা হয়েছে তথা মিলিয়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু এর দুটির মধ্যখানে বিসমিল্লাহ লেখা হয়নি । উপরের হাদিস প্রশ্ন যে করেছেন সেই সাহাবির প্রশ্ন ধরন খেয়াল করলেই এই কথা সহজেই বুঝা যায় ।
৩/ তাফসীরে জালালাইন ২/ ৬২০ পৃষ্ঠাঃ ইমাম কুসাইরি (রহ) বলেনঃ প্রকৃত অবস্থা এই যে, এই সুরা (সুরা তওবা) শুরুতে বিসমিল্লাহ এ জন্য লিপিবদ্ধ হয়নি যে হযরত জিবরাইল (আ) এই সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ নিয়ে অবতরন করেননি, যা সাধারন নিয়ম ছিল। - যেহেতু নবী (সা) বলেননি তাই হাফেজ সাহাবীরা বিসমিল্লাহ লিখেন নাই । সহজ কথা ।
৪/ তাফসীরে জালালাইন ২/৬১৯ পৃষ্ঠাঃ হযরত ওমর (রা) একটি ফরমানে লিখেছিলেন, তোমরা নিজেরা সুরা তওবা শিখ আর তোমাদের স্ত্রীলোকদের সুরা নুর শিক্ষা দেও । এর কারন সুরা তওবাতে জিহাদের জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে আর সুরা নুরে পর্দা বিধানের উৎসাহ দেয়া হয়েছে । - এই হাদিস থেকে এটা বুঝা যায় সুরা তওবা সম্পূর্ণই ছিল কারন হযরত ওমর (রা) পুরো সুরা তওবা শিখতে বলেছেন অর্ধেক নয়।
৫/ তাফসীরে জালালাইন, ২/৬২১ পৃষ্ঠা, মারিফুল কুরআন ৩/২৭৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলভি (রহ) এবং ফাতহুল বারী ৮/২৩৫ পৃষ্ঠাঃ ইমাম রাজী (রহ) লিখেছেনঃ সমস্ত আয়াত এবং সুরার তারতিব অর্থাৎ কোন সুরার পরে কোন সুরা বসবে এবং কোন আয়াতের পরে কোন আয়াত থাকবে এই সবও আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর রাসুল (সা) এর তরফ থেকেই হয়েছে । এ সম্পর্কে অন্য কারো মত বা ইচ্ছার কোন প্রশ্নই উত্থিত হয় না। এ জন্যই হুজুর (সা) সুরা আনফালের পরে সুরা তওবা লেখার নির্দেশ দিয়েছেন আর সুরা তওবা শুরুতে বিসমিল্লাহ লিপিবদ্ধ না হওয়াও আল্লাহ্ পাকের ওহী মুতাবেকই হয়েছে, সাহাবায় কেরাম তারই অনুসরন করেছেন।
৬/ তাফহিমুল কুরআন, সুরা তওবার তাফসীরঃ ইমাম রাজী (রহ) বক্তব্যটি বিশুদ্ধ । তিনি লিখেছেন নবী (সা) নিজেই সুরা তওবা শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখাননি,কাজেই সাহাবায়ে কেরামও লেখেননি এবং পরবর্তী লোকেরাও এ রীতির অনুসরন বজায় রেখেছেন। পবিত্র কুরআন যে নবী (সা) থেকে হুবহু ও সামান্যতম পরিবর্তন পরিবর্ধন ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছিল এবং যেভাবে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই তাকে সংরক্ষণ করার জন্য সর্বচ্চ পরিমান সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এটি তার একটি প্রমান ।
৭/ তাফসীরে সুরা তওবা। ডঃ. শহীদ আবদুল্লাহ আযযাম (রহ), অনুবাদঃ মাও নাসিম আরাফাত, পৃষ্ঠাঃ ১৯ = ইমাম কুরতুবি (রহ) বলেনঃ সুরা তওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ লিখা হয়নি তার কারন জিবরাইল (আ) তা নিয়ে অবতীর্ণ হননি। রাসুল (সা) নিজের পক্ষ থেকে কিছুই লিখতেন না । জিবরাইল (আ) নিয়ে এলে তবেই তিনি লিখতেন। এখানে জিবরাইল (আ) বিসমিল্লাহ নিয়ে আসেননি তাই তা লিখা হয়নি ।
প্রশ্নঃ সুরা ফাতিহা থেকে সুরা নাস পর্যন্ত সিরিয়াল করে কুরআনের সব আয়াত কেন নাজিল হয়নি, ধাপে ধাপে কেন নাজিল হয়েছে যেমনঃ সুরা আলাকের আয়াত আগে নাজিল হলেও কেন সুরা ফাতিহা আগে ! ?
উত্তরঃ কুরআন কমপ্লিট আছে লওহে মাহফুজে । বান্দার সুবিধার জন্য আল্লাহ্ ধিরে ধিরে যখন যেখানে যতটুকু দরকার তখন সেখানে নাজিল করেছেন । যেমন, ক্লাসে একটি সিলেবাস কমপ্লিট থাকে, কিন্তু টিচার এক সাথে সব পড়ায় না, ধিরে ধিরে পড়ায় প্রত্যেক ক্লাসে যাতে ছাত্ররা পড়া ভাল ভাবে বুঝতে পারে । ঠিক একই ভাবে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের সুবিধার জন্য ধিরে ধিরে কুরআন নাজিল করেছিলেন ।
কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে কিন্তু কেনঃ
১/ সুরা আনআম ৬:৬৭ = প্রত্যেক সংবাদের নির্ধারিত সময় রয়েছে এবং অচিরেই তোমরা জানবে ।
২/ সুরা নাহল ১৬:১ = আল্লাহ্র আদেশ এসে গেছে সুতরাং তার জন্য তাড়াহুড়া করো না ।
৩/ সুরা বনী ইসরাইল ১৭:১০৬ = কুরআন আমি নাজিল করেছি কিছু কিছু করে যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারো ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাজিল করেছি পর্যায়ক্রমে ।
৪/ সুরা ফুরকান ২৫:৩২ = কাফেররা বলে নবীর উপর পরো কুরআন একসাথে কেন নাজিল করা হল না ? এটা এ জন্য যে আমি এর মাধ্যমে তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় করব। আর আমি তা আবৃত্তি করেছি ধীরে ধীরে ।
৫/ সুরা ফুরকান ২৫:৩৩ = তারা তোমার কাছে যে কোন বিষয় নিয়ে আসুক না কেন আমি এর সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা তোমার কাছে নাজিল করেছি ।
৬/ সুরা ইনসান ৭৬:২৩ = অবশ্যই আমি তোমার প্রতি পর্যায়ক্রমে কুরআন নাজিল করেছি ।
প্রশ্নঃ কুরআন কেন নাজিল হয়েছে ?
উত্তরঃ কুরআন নাজিলের কারনঃ
১/ সুরা ইউসুফ ১২:২ = অবশ্যই আমি একে আরবি কুরআন রুপে নাজিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পারো ।
২/ সুরা ইবরাহীম ১৪:১ = এই কিতাব যা আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতি দিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনো,পরাক্রমশালী সর্বপ্রশংশীতের পথের দিকে ।
৩/ সুরা জুমার ৩৯:২৭,২৮ = অবশ্যই আমি এই কুরআনে মানুষের জন্য প্রত্যেক প্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে । বক্রতামুক্ত আরবি কুরআন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে ।
৪/ সুরা ফুসসিলাত ৪১:৩,৪ = এমন এক কিতাব, যার আয়াত গুলো জ্ঞানী কওমের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন আরবি ভাষায় সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। অতপর তাদের অধিকাংশি মূর্খ ফিরিয়ে নিয়েছে, অতএব তারা শুনবে না ।
৫/ সুরা শুরা ৪২:৭ = আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কুরআন নাজিল করেছি যেন আপনি সতর্ক করেন মক্কাবাসীদেরকে এবং তার আশেপাশের মানুষদেরকে এবং সতর্ক করেন কিয়ামত দিন সম্পর্কে যার সংঘটন সম্পর্কে কোন সন্দেহ নাই ।
৬/ সুরা আহকাফ ৪৬:১২ = কুরআন সত্যায়নকারী কিতাব, আরবি ভাষায় যাতে এটা যালিমদের সতর্ক করতে পারে এবং তা ইনসাফকারীদের জন্য সুসংবাদ ।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.