হাদিস কি বলে নারীর বীর্য আছে ? এবং যার বীর্য আগে যায় শিশু তার মত হয় ?

সহায়ক গ্রন্থ - সত্যকথন - https://bit.ly/2VBXPIy
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
হাদিস কি বলে নারীর বীর্য আছে ? এবং যার বীর্য আগে যায় শিশু তার মত হয় ?
************************************************
মূলত নাস্তিক সমাজে এতদিন ধরে কুরআনে বিজ্ঞান সম্পর্কিত অভিযোগ তারা দাড় করিয়ে যাচ্ছিল । অতঃপর আমাদের মুসলিম ভাই - বোনদের কাউন্টার দেয়ায় তারা এখন বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চুপ । এখন কোন নাস্তি কে বিজ্ঞান - কুরআন নিয়ে আলোচনা করতে প্রায় দেখাই যায় না । এখন চলে দাস - দাসি , নারীবাদী এইসব । তাই বিজ্ঞানের মার্কেট কে তাজা করার জন্য আগমন ঘটেছে একদল নাস্তিকের যারা হাদিসে বৈজ্ঞানিক ভুল খুজে বেড়ায় ।
বলতে গেলে এই হাদিসটি তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । হাদিসটি হলঃ
⦁ حَدَّثَنَا عَبَّاسُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، أَنَّ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، حَدَّثَهُمْ أَنَّ أُمَّ سُلَيْمٍ حَدَّثَتْ أَنَّهَا، سَأَلَتْ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْمَرْأَةِ تَرَى فِي مَنَامِهَا مَا يَرَى الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِذَا رَأَتْ ذَلِكِ الْمَرْأَةُ فَلْتَغْتَسِلْ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ وَاسْتَحْيَيْتُ مِنْ ذَلِكَ قَالَتْ وَهَلْ يَكُونُ هَذَا فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ نَعَمْ فَمِنْ أَيْنَ يَكُونُ الشَّبَهُ إِنَّ مَاءَ الرَّجُلِ غَلِيظٌ أَبْيَضُ وَمَاءَ الْمَرْأَةِ رَقِيقٌ أَصْفَرُ فَمِنْ أَيِّهِمَا عَلاَ أَوْ سَبَقَ يَكُونُ مِنْهُ الشَّبَهُ ‏"‏ ‏.‏
⦁ ৬০৩। আব্বাস ইবনুল ওয়ালদী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সেই মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে ঘূমে পুরুষ যা দেখে তাই দেখতে পায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মেয়ে লোক যখন ঐরুপ দেখবে তখন সে গোসল করবে। উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, এ কথায় আমি লজ্জাবোধ করলাম। তিনি বললেন, এ রকমও কি হয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তা না হলে ছেলে মেয়ে তার সদৃশ কোত্থেকে হয়? পুরুষের বীর্য গাড় সাদা আর মেয়েলোকের বীর্য পাতলা, হলুদ। উভয়ের মধ্য থেকে যার বীর্য ওপরে উঠে যায় অথবা আগে চলে যায় (সন্তান) তারই সদৃশ হয়। [১]
এই পুরো হাদিস পড়ার পরে নাস্তিক সমাজ দুটি অভিযোগ তোলে সেই দুটি অভিযোগ হল
⦁ নারীদের আবার বীর্য কিভাবে হয় ?
⦁ আর এটা দিয়ে কি বোঝানো হল ? উভয়ের মধ্য থেকে যার বীর্য ওপরে উঠে যায় অথবা আগে চলে যায় (সন্তান) তারই সদৃশ হয়।
সর্বপ্রথম প্রথম পয়েন্ট নিয়ে কথা বলা যাক ।
নারীদের বীর্য আছে ?
*************
আপনারা যদি সমগ্র আরবি ইবারত টা ভালোভাবে পড়েন সেখানে (বীর্য) শব্দটিই নেই । বাংলা অনুবাদে অনুবাদকরা এই ব্যাপারে বারাবারি করেছেন ।
সেখানে যে আরবি শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে সেটি হল (مَاءَ) যার অর্থ হল শুধুমাত্র (পানি) [২] । সেটা হতে পারে সমুদ্রের পানি , নদীর পানি , ময়লা পানি , পরিষ্কার পানি । তবে এর আসল অর্থ হচ্ছে শুধুমাত্র পানি । বীর্য নয় । বীর্য থাকলে সেখানে মাআ বা (مَاءَ) এই শব্দ না থেকে থাকতো (المني) আল মানি বা মানি । যা বলতে শুধুমাত্র বীর্য বোঝায় ।
অর্থাৎ এক্ষেত্রে রাসুল সাঃ গোটা হাদিসে কোথাও বলেন নি যে , মহিলাদের বীর্য আছে । বরং তিনি বলেছেন যে , ছেলে মেয়ে উভয়ের স্বপ্ন দোষ হয় এবং উভয়ের যৌনাঙ্গ থেকে একধরনের পানি নির্গত হয় ছেলেদের টা হয় সাদা এবং গাড় এবং মেয়েদের টা পাতলা, হলুদ । রাসুল সাঃ কোথাও বীর্য শব্দ ব্যাবহার করেন নি ।
এখন অনেকে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বলে পারে যে , " তাহলে আপনি অনুবাদকদের থেকে বেশি জেনে ফেলেছেন ? " জি ... কখনই না এখানে আমি ইংরেজি অনুবাদ দিয়ে দিচ্ছি গোটা ইংরেজি অনুবাদে ( Semen ) শব্দ আসেনি ।
ইংরেজি অনুবাদ
***********
Anas b. Malik reported that Umm Sulaim narrated it that she asked the Messenger of Allah (ﷺ) about a woman who sees in a dream what a man sees (sexual dream). The Messenger of Allah (may peace be upon bi m) said:
In case a woman sees that, she must take a bath. Umm Sulaim said: I was bashful on account of that and said: Does it happen? Upon this the Messenger of Allah (ﷺ) said: Yes (it does happen), otherwise how can (a child) resemble her? Man's discharge (i. e. sperm) is thick and white and the discharge of woman is thin and yellow; so the resemblance comes from the one whose genes prevail or dominate.[৩]
এখানে তারা নিজেরা আলাদাভাবে (Bracket) চিনহ দিয়ে Sperm লিখেছে তবে সেটা পুরুষের ক্ষেত্রে মহিলার ক্ষেত্রে তারা স্থানটি ফাকা রেখেছে অর্থাৎ সেখানে অনুবাদকরা (Sperm) বা (Semen) শব্দ ব্যাবহার করেননি । বরং সুনানে ইবনে মাজাহ এর ষষ্ঠ সংস্করনের মাঝে তারা (Bracket) এ উল্লেখ করেছেন ( ovum central portion )[৪]
সুতরাং এইটা মিথ্যাচার যে রাসুল সাঃ সেখানে বীর্য শব্দ উল্লেখ করেছেন আশা করি এই সমস্যাটি মিটেছে ।
এখন প্রশ্ন হল এটা দিয়ে কি বোঝানো হল ? উভয়ের মধ্য থেকে যার বীর্য ওপরে উঠে যায় অথবা আগে চলে যায় (সন্তান) তারই সদৃশ হয়।
*********************************************************
মূলত ইফাবার অনুবাদে তালগুল পাকানো হয়ে গেছে। সহজ অনুবাদটা এমন-
"পুরুষের মাআ এর রং সাদা এবং নারীর মাআ এর রং হলুদ রঙের হয়ে থাকে। নারীপুরুষের সহবাসের পর যখন বীর্যপাত ঘটে, তখন পুরুষ (মানি) এবং মহিলা (মানি) র মাঝে যার (মানি) বেশি প্রাধান্য লাভ করে শিশু তার সদৃশ হয়
এছাড়া বর্তমানে সুনান ইবন মাজাহ সহ বেশ কিছু ইংরেজি অনুবাদে মহিলাদের (মানি) দিয়ে Ovum বা ডিম্বানু বুঝানো হয়েছে । [৪ নম্বর তথ্যসুত্র দেখুন ]
এমনকি ইবনে তাইমিয়া উক্ত হাদিসে এই অংশ ( উভয়ের মধ্য থেকে যার বীর্য ওপরে উঠে যায় অথবা আগে চলে যায় (সন্তান) তারই সদৃশ হয়। ) কে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন [৫]
অর্থাৎ এই পর্যন্ত আমরা এই দাবি করতে পারি যে , নারীর ডিম্বানুতে এমন কোন পানি নির্গত হয় যা বংশবিস্তারে সাহায্য করে অথবা এটা দ্বারা ডিম্বানু কিংবা ডিম্বানু কে ঘিরে রাখা কোন পানি অথবা ডিম্বানুর এমন কোন অংশ যা এই পানি নির্গত করে যেকোন কিছুই হতে পারে এই ব্যাপারে আল্লাহ ভালো জানেন তবে উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায় যে ,
ডিম্বানুতে এক প্রকার পানি বা লিকুইড থাকে যা চিটচিটে এবং হলুদ রঙ এর যেটা পুরো ডিম্বানুকে ঘিরে রাখে অর্থাৎ এটি ডিম্বানুর একটি অংশ [৬] অথবা এও বুঝাতে পারে যে , ডিম্বানুর xx ক্রমোসোম
অথবা বুঝানো যেতে পারে এমন পানি যা ক্রমসোম বহন করে । অর্থাৎ এই ব্যাপারে আল্লাহ সর্বজ্ঞ । তবে অন্যান্য সহিহ হাদিস এবং স্বয়ং কুরআনের আয়াত থেকে জানা যায় যে , নারী - পুরুষের শুক্রানুর মাধ্যমেই সন্তান জন্ম নেয় ।
আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا
অর্থঃ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু থেকে, তাকে আমি পরীক্ষা করব এইজন্য তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।
(কুরআন, দাহর(ইনসান) ৭৬:২)
.
উপরের আয়াতে نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ বা “সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু” দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? প্রাচীন তাফসিরকারকরা কিভাবে কুরআনের এই আরবি বুঝতেন? তাঁরা কি এই আয়াতের ক্ষেত্রে এটা বুঝতেন যে - মানবসৃষ্টিতে নারীর ডিম্বাণুর কোন ভূমিকাই নেই যেমনটি অভিযোগকারীরা দাবি করে থাকে? চলুন দেখি।
.
ইমাম তাবারী(র) কুরআনের সব থেকে প্রাচীন তাফসিরকারকদের একজন।
সুরা দাহরের ৭৬নং আয়াতের তাফসিরে ইমাম তাবারী(র) বলেনঃ আল্লাহ মানুষকে এমন অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন যে তার নিকৃষ্টতা ও দুর্বলতার কারণে সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। তিনি তাকে পুরুষ ও নারীর মিলিত শুক্রের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত করার পর তাকে বর্তমান রূপ ও আকৃতি দান করেছেন।
(তাবারী ২৪/৮৯)
[সূত্রঃ তাফসির ইবন কাসির(হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, মার্চ ২০১৪ সংস্করণ), ৮ম খণ্ড, সুরা দাহর(ইনসান) এর ২নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৬৮৫]
এখানে নর ও নারীর মিশ্র বীর্য বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি পুরুষ ও নারীর দু’টি আলাদা বীর্য দ্বারা হয়নি {অর্থাৎ আলাদা আলাদাভাবে ২টি বীর্য থেকে হয়নি}। বরং দু’টি বীর্য সংমিশ্রিত হয়ে যখন একটি হয়ে গিয়েছে, তখন সে সংমিশ্রিত বীর্য থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে।এটিই অধিকাংশ তাফসিরকারকের মত।
[বাগভী, কুরতুবী, ইবন কাসির,ফাতহুল কাদির]
[সূত্রঃ কুরআনুল কারীম(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ড.আবু বকর জাকারিয়া, ২য় খণ্ড, সুরা দাহরের ২নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৭৩৭-২৭৩৮]
এখানে আমরা বেশ কয়েকজন প্রাচীন তাফসিরকারকের মতামত দেখলাম। তাঁরা সকলেই এই আয়াতে نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ বা “সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু” দ্বারা এটা বুঝতেন যে পুরুষ ও নারীর উভয়ের ভূমিকার দ্বারা মানবসৃষ্টির সূচনা হয়। অভিযোগকারীরা এরিস্টল, গ্যালেনের অভিমত ও প্রাচীন ভারতীয় ভ্রূণবিদ্যার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে কুরআনে মানবসৃষ্টিতে নারীর ডিম্বাণুর ভূমিকা উল্লেখ করা হয়নি। অথচ আমরা দেখছি যে কুরআনের প্রাচীন তাফসিরকারকরা মোটেও প্রাচীন ভ্রূণবিদ্যার ভুল তত্ত্বগুলোর ন্যায় নারীর ভুমিকার তথা ডিম্বাণুর কথা অস্বীকার করেননি।
.
নুতফা (نُطْفَةٌ) অর্থ আমরা বিখ্যাত সব অ্যারাবিক টু ইংলিশ ডিকশনারিতে খুঁজলে প্রধাণত দু’টি অর্থ পাবো। সেগুলো হলো- ‘Drop of fluid of parents’ এবং ‘Sperma (seed) of man and of a woman’। অর্থাৎ, পানির ফোঁটা যা পিতা-মাতা থেকে নির্গত হয় বা পুরুষ অথবা নারীর বীজ। বীজ এর বৈশিষ্ট্য গাছ উৎপাদন করা। সুতরাং, নুতফা শব্দ দিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, এই শব্দ দিয়ে পুরুষ এবং নারীর যথাক্রমে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং ‘কুরআনে শুধু শুক্রাণুর কথা বলা হয়েছে কিন্তু ডিম্বাণুর কথা নেই।’ - এই অভিযোগ ভুল।”
আশা করি উত্তর পেয়েছেন
তথ্যসুত্রঃ
*******
1. সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) হাদিস নম্বর ৬০৩
2. একাধিক রেফারেন্সঃ
i. Al-Mawrid; By Dr. Rohi Baalbaki; Dar As-Salam Publication; Page: 933
ii. https://en.wiktionary.org/wiki/%D9%85%D8%A7%D8%A1
iii. https://www.almaany.com/…/a…/%D9%85%D9%8E%D8%A7%D8%A1%D9%8E/
3. https://hadithbd.com/hadith-link.php?hid=8392
4. https://books.google.com.bd/books…
5. I‘laam al-Muwaqqi‘een (4/269)
6. Fahiminiya, S; Gérard, N (June 2010). "[Follicular fluid in mammals]". Gynecologie, obstetrique & fertilite. 38 (6): 402–4. doi:10.1016/j.gyobfe.2010.04.010. PMID 20576551.
[সুত্রঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Follicular_fluid]
7.



No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.