'A reply to Christian Missionary'/ আরিফ আজাদ

ভদ্রলোকের তারুণ্যদীপ্ত একটা চেহারা। দেখলেই মনে হবে, ভদ্রলোকের হঠাৎ করেই বয়স বেড়ে গেছে। কিন্তু চেহারার মধ্যে একটা তারুণ্যের ছাপ স্পষ্ট।
এই মূহুর্তে তিনি খুব মন খারাপ করে আমার সামনাসামনি বসে আছেন। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের মুখ ভারি থাকলে আশপাশের চঞ্চল পরিবেশটাও গুমোট আকার ধারণ করে। ভদ্রলোকও সেরকম। মন খারাপ অবস্থাটা উনার সাথে একদমই যাচ্ছে না।
ভদ্রলোকের ফোনটা বেজে উঠলো। উনি ফোনের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকালেন। মনে হয় উনি এই মূহুর্তে খুবই বিরক্ত। ফোনটা বাজতে বাজতেই বন্ধ হয়ে গেলো।
উনি আমার দিকে তাকালেন। আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করলেন। কৃত্রিম হাসিটাতে ভদ্রলোককে একদম মানায় নি।
আমি প্রশ্ন করলাম,- 'তো, আপনি খ্রিস্টান মিশনারীদের কোথায় পেলেন?'
আমার প্রশ্ন শুনে উনি কিছুটা স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলেন। বোতল থেকে চুকচুক করে পানি পান করলেন। একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,- 'আমার এক বৃটিশ বন্ধু লন্ডনে মিশনারীদের একটা দাওয়া প্রোগ্রামে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো। সেখানেই।'
আমি বললাম,- 'আপনার বন্ধুটা কী মুসলিম?'
- 'নাহ। খ্রিস্টান।'
- 'ও আচ্ছা।'
উনার সমস্যাটা সম্পর্কে বলে নিই। উনি সম্প্রতি খ্রিস্টান মিশনারীদের কাছ থেকে একটি তথ্য জানতে পেরেছেন। এই তথ্যটা এতোটাই বিদঘুটে যে, এর সত্যাসত্য না জানা অবধি ভদ্রলোক শান্তি পাচ্ছেন না।
তথ্যটা হলো- কোরআনে স্পেসেফিক বলা নেই হজরত ইব্রাহীম (আঃ) সেদিন ঠিক কাকে কোরবানি করার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন।
ইসমাঈল (আঃ) কে? নাকী ইসহাক (আঃ) কে।
হাদীসেও এটার তেমন কোন সদুত্তর পাওয়া যায় না। কিন্তু মুসলিমরা নাকী অন্ধভাবেই বিশ্বাস করে যে- ইব্রাহীম (আঃ) সেদিন ইসমাঈল (আঃ) কেই কোরবানি করতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
কোরআন এই ইস্যুতে কোন স্পেসেফিক নাম ব্যবহার না করলেও, বাইবেলে উল্লেখ পাওয়া যায় যে, সেদিন ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পুত্র হজরত ইসমাঈল (আঃ) কে নয়, হজরত ইসহাক (আঃ) কেই কোরবানি করতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
আমাদের আলাপ আরো কিছুদূর গড়ালো। আমি বললাম,- 'তো, আপনি কী বিশ্বাস করছেন?'
ভদ্রলোক আমার কথার কোন উত্তর দিলেন না। সম্ভবত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
এরই মধ্যে আমাদের মাঝে সাজিদ এসে উপস্থিত।হাতে একগাদা বই। লাইব্রেরি থেকেই ফিরছে।
এসেই সে আমার পাশে ধপাস করে বসলো। তাকে কিছুটা ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
কাঁধ থেকে ব্যাগ টেবিলে রাখতে রাখতে সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,- 'আচ্ছা, তোকে যদি বলি, ক্লাসিক্যাল একটা সীরাতের নাম বলতে, তুই কোনটার কথা বলবি?'
তার চুল উসকোখুসকো। চশমার ফ্রেম ঠিক করতে করতে সে উত্তর পাবার আশায় আমার দিকে তাকালো।
আমি বললাম,- 'ইবন ইসহাক অথবা ইবন হিশামের সীরাত গ্রন্থ। যদি আরো আপডেটেড সীরাতের কথা জানতে চাস তো, হাল আমলের আর রাহীখুল মাখতূমের কথা বলতে পারি।'
সাজিদ একটা জোরে নিঃশ্বাস ফেললো। বললো,- 'হুম, আমি জানতাম তুই এই উত্তরই দিবি। কেবল তুই না, ৯৫ ভাগ শিক্ষিত বাঙালী মুসলিম একই উত্তর দেবে।'
আমি বললাম,- 'তুই কী বলতে চাচ্ছিস ঠিক বুঝতে পারছি না।'
সে আবার আমার দিকে তাকালো। বললো,- 'সীরাতের নাম উঠলেই লাফ দিয়ে ইবনে ইসহাক অথবা ইবনে হিসামে চলে যাস। কিন্তু বাংলা ভাষায় যে অত্যন্ত ক্লাসিক্যাল সীরাত মজুদ আছে, সেটা জানিস?'
আমি কয়েক মূহুর্ত ভাবলাম। বাংলা ভাষায় সীরাত। তাও আবার ক্লাসিক্যাল পর্যায়ের। ঠিক মনে করতে পারছিনা। হয়তো বা আমার জানা নেই। আমি বললাম,- 'না তো। কোনটার কথা বলছিস?'
- 'মাওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁর "মোস্তফা চরিত"....'
বইটার কথা আমি অনেক শুনেছি। কখনো পড়া হয়নি অবশ্য। এটা যে সীরাত, এটাও জানতাম না।তাও আবার ক্লাসিক পর্যায়ের।
আমি বললাম,- 'বলিস কী, এটা যে সীরাত, তাও তো জানতাম না। তুই পড়েছিস?'
সাজিদ উত্তর দেয়নি। আমি জানতাম সে উত্তর দেবে না। সে অবশ্যই পড়েছে। নাহয় সে বলতো না এটার ব্যাপারে। পাশে বোমা ফাটলেও যার মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না, সে এসেই যখন এত্তোবড় লেকচার দিয়ে দিলো, তাহলে নিশ্চিত দেয়ার মাস্ট বি সামথিং.........
আমাদের আলাপের মাঝখানে ভদ্রলোক কথা বলে উঠলেন। ও হ্যাঁ, ভদ্রলোকের নাম বলা হয়নি। উনার নাম আহসান আবদুল্লাহ।
আহসান সাহেব বললেন,- 'তুমিই কী সাজিদ?'
এতোক্ষণ পরে সাজিদ উনার দিকে তাকালো।
সে মনে হয় এতোক্ষণ খেয়াল করেনি। বললো,- 'আসসালামু আলাইকুম। জ্বী, আমিই সাজিদ।'
ভদ্রলোক ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে হাত বাড়ালো তার দিকে।
আমি বললাম,- 'সাজিদ, আহসান আঙ্কেল সেই সকাল দশটা থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছেন।'
সাজিদ বললো,- 'তুই কী গতকাল উনার কথাই বলছিলি?'
- 'হ্যাঁ।'
সাজিদ আহসান আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললো, - 'স্যরি আঙ্কেল! আমার আসলে আজকে বেশি ক্লাস ছিলো। তাই লেইট হয়ে গেলো।'
- 'না না! ইট'স ওকে'- আহসান আঙ্কেল বললেন।
এরপর নানান আলাপের মাধ্যমে আহসান আঙ্কেল উনার মনের খচখচানির ব্যাপারটাও জানালেন।
বললেন,- 'আসলে খ্রিস্টান মিশনারীদের পাল্লায় পড়ে খুব শঙ্কায় আছি। তারা বলতে চায় যে ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে নয়, ইসহাক (আঃ) কেই সেদিন কোরবানি দিতে গিয়েছিলেন।'
সাজিদ সবকিছু শুনলো। এরপর বললো,- 'বাইবেলের যে জায়গায় ইসমাঈল (আঃ) নয়, ইসহাক (আঃ) এর কথা বলা আছে, তা আপনি পড়েছিলেন?'
- 'হ্যাঁ'- আহসান আঙ্কেল বললেন।
- 'মনে আছে সেই অংশটুকু?'
- 'হ্যাঁ'
- 'বলুন তো......'
আহসান আঙ্কেল বলতে লাগলেন- 'বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের জেনেসিস অধ্যায়ে বলা আছে- '' And He (God) said, 'Take now thy son, thine only (son) whom thou lovest, and get thee into the land of Moriah; and offer him there for a burnt offering upon one of the mountains which I will tell thee of''
(Genesis, chapter 22:2)''
সাজিদ বললো,- 'আঙ্কেল, দেখুন, এখানে বাইবেল বলছে- 'ইশ্বর ইব্রাহীম (আঃ) কে আদেশ দিচ্ছেন যে, তাঁর (ইব্রাহীম আঃ এর) একমাত্র সন্তান, যাকে তিনি প্রাণাধিক ভালোবাসেন, তাকে নিয়ে ইশ্বরের দেখানো পর্বতে গিয়ে কোরবানি দিতে।'
আহসান আঙ্কেল বললেন,- 'হ্যাঁ। কিন্তু বাইবেল এও বলছে সেই পুত্র ইসমাঈল (আঃ) নয়, ইসহাক্ব (আঃ)...'
সাজিদ বললো,- 'সেদিকে আমরা একটু পরে আসছি। আগে আপনি এই অংশটুকু খেয়াল করুন। এখানে ইব্রাহীম (আঃ) কে আদেশ করে বলা হচ্ছে 'Take your only son'...
বাইবেলের এই শব্দচয়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা বোঝার জন্য। মূল হিব্রুতে 'Only'র জন্য যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি হলো- 'yachiyd'..
হিব্রুতে yachiyd অর্থ এবসলিউট সিঙ্গুলারিটি বুঝায়। Just One....'
আমি আর আহসান আঙ্কেল মনোযোগ দিয়ে শুনছি।
সাজিদ বলে যাচ্ছে-
'তাহলে, ইশ্বর যখন ইব্রাহীম (আঃ) কে এই নির্দেশ দিচ্ছে (তোমার একমাত্র পুত্রকে নিয়ে যাও.....), তখন আসলে কাকে বুঝানো হচ্ছে? ইসমাঈল? না, ইসহাক?'
আমাদের দু'জনেই চুপ করে আছি। কারো মুখে কোন কথা নেই।
সাজিদ আবার বলতে শুরু করলো,- 'এর উত্তর পেতে হলে আমাদের এর পেছনের ইতিহাস দেখতে হবে। ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলিম- অর্থাৎ আব্রাহামিক ধর্মের সকল স্কলারগণ এই ব্যাপারে একমত যে- ইব্রাহীম (আঃ) জীবনের অধিকাংশ সময় সন্তানহীন ছিলেন। তখন তাঁর স্ত্রী ছিলেন সারা (আঃ)। যখন সারা (আঃ) ইব্রাহীম (আঃ) কে সন্তান উপহার দিতে পারছিলেন না, তখন তিনি (সারা আঃ) তাঁর একজন দাসীর (হাজেরা আঃ) সাথে হজরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বিয়ের বন্দোবস্ত করেন। রাইট?'
- 'হু'- আমি বললাম।
- 'হাজেরা (আঃ) কে বিয়ের পরে, ইব্রাহীম (আঃ) এর বয়স যখন ৮৬, তখন হাজেরা (আঃ) শিশুপুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে জন্ম দেন।'
- 'আহসান আঙ্কেল মাথা নাড়লেন।'
সাজিদ বলতে লাগলো- 'অর্থাৎ, ইহুদী, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মের স্কলারগন এই ব্যাপারে একমত যে- ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রথম পুত্র। ইসমাঈলের বয়স যখন ১৪, তখন হজরত সারা (আঃ), অর্থাৎ ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রথম স্ত্রী, গর্ভবতী হোন, এবং পরে হজরত ইসহাক (আঃ) কে জন্ম দেন। মোদ্দাকথা, হজরত ইসহাক (আঃ), হজরত ইসমাঈল (আঃ) এর চেয়ে ১৪ বছরের ছোট। আরো ক্লিয়ারলি, হজরত ইসমাঈল এবং হজরত ইসহাক এর মধ্যে ১৪ বছরের একটা 'টাইম গ্যাপ' আছে। এতোটুকু কী ক্লিয়ার?'
- 'আহসান আঙ্কেল হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন।'
- 'তাহলে, এখান থেকে,অর্থাৎ বাইবেল থেকে এটা পরিষ্কার যে- ইসহাক (আঃ) এর জন্মের আগ পর্যন্ত, অর্থাৎ ইসমাঈল (আঃ) এর জন্মের পরে আরো ১৪ বছর পর্যন্ত ইব্রাহীম (আঃ) কেবল একজন সন্তানের পিতা ছিলেন। মানে, কেবল তখন তাঁর সন্তান ছিলো- ইসমাঈল। রাইট?'
- 'হু'- আমি বললাম।
- 'এখন, আমরা আবার বাইবেলের অই অংশে ফিরে যাই, যে অংশে বলা হচ্ছে- 'তোমার পুত্রকে, তোমার একমাত্র পুত্রকে নিয়ে যাও আমার দেখানো পর্বতে.....'
দেখুন আঙ্কেল, বাইবেল খুব স্পষ্ট করেই বলছে- 'তোমার একমাত্র পুত্রকে'.... যদি খ্রিস্টান মিশনারীদের কথামতো ধরে নিই যে, এখানে ইসমাঈল (আঃ) নয়, ইসহাক (আঃ) কে বুঝানো হচ্ছে, তাহলে 'তোমার একমাত্র পুত্রকে' বলার কারণ কী? ইসহাক (আঃ) এর জন্মের পর তো ইব্রাহীম (আঃ) এর দুটো সন্তান হয়ে গেলো মোট।
এখানে বলা উচিত 'তোমার পুত্রদের মধ্য থেকে', অথবা, 'তোমার দুই পুত্রের মধ্য থেকে' ইত্যাদি।
কারণ, এই ঘটনায় যদি ইসহাক (আঃ) কে টানি, তাহলে ইব্রাহীম (আঃ) এর সন্তান সংখ্যা দাঁড়ায় ২ জন। তাহলে দু'জন সন্তান থাকা সত্ত্বেও এখানে বাইবেল কেনো 'তোমার একমাত্র পুত্রকে' বললো?
কারণ, এই একমাত্র পুত্র হজরত ইসমাঈল (আঃ)।
কারণ, এই ঘটনা (অর্থাৎ, সন্তান কোরবানির ঘটনা) যখন ঘটছে, তখন ইসহাক (আঃ) এর জন্মও হয়নি। তখন কেবল ইব্রাহীম (আঃ) এর একটিই সন্তান- হজরত ইসমাঈল (আঃ)।
সুতরাং, বাইবেল এবং বাইবেলীয় ইতিহাস মতে, ইবরাহীম (আঃ) সেদিন ইসহাক (আঃ) কে নয়, ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানি দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।'
এতোটুকু বলে সাজিদ থামলো। আহসান আঙ্কেল বললেন,- 'কিন্তু খ্রিস্টানরা ইসমাঈল (আঃ) কে নবী হিসেবে এবং ইব্রাহীম (আঃ) এর বৈধ পুত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। কারণ, ইসমাঈল (আঃ) এর জন্ম একজন দাসীর গর্ভে, তাই....'
সাজিদ হাসলো।এরকম সিরিয়াস ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে সে কখনো হাসেনা।আজ তার ব্যতিক্রম ঘটলো। সে হাসি থামিয়ে বললো,- 'কিন্তু আঙ্কেল, বাইবেল যে ভিন্ন কথা বলে।'
- 'যেমন?'- আহসান আঙ্কেলের উৎসুক প্রশ্ন।
- 'বাইবেল বলছে, হাজেরা (আঃ) হজরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বৈধ স্ত্রী ছিলো। বাইবেলের জেনেসিস ১৬ অধ্যায়ের ২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে- 'Sara, Abram’s wife, took Hagar the Egyptian, her slave-girl, and gave her to her husband Abram as his wife'
অর্থাৎ, 'সারা, যিনি ইব্রাহীম (আঃ) এর স্ত্রী ছিলেন, তাঁর দাসী হাজেরাকে ইব্রাহীম (আঃ) এর কাছে দিলেন স্ত্রী হিসেবে।'
এখান থেকে স্পষ্ট যে হাজেরা (আঃ),ইব্রাহীম (আঃ) এর বৈধ স্ত্রী ছিলো।'
- 'আঙ্কেল মাথা নাড়লেন।'
- 'তাছাড়া, ইব্রাহীম (আঃ) শুধু মুসলিম নয়, খ্রিস্টান এবং ইহুদীদের কাছেও একজন সম্মানিত প্রফেট। তাহলে, তারা এটা কীভাবে ভেবে নিতে পারে যে, এরকম সম্মানিত একজন প্রফেটের কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকতে পারে? এবং, সেখানে অবৈধ সন্তানও আসতে পারে কীভাবে?'
সাজিদের কথায় ভীষণ যুক্তি আছে। আসলেই তো। যাকে নবী হিসেবে মানে, তার বিরুদ্ধে এরকম ধারণা কীভাবে পোষণ করে এরা?
আহসান আঙ্কেল বললেন,- 'তারা বলে, ইসমাঈল ইব্রাহীম (আঃ) এর সন্তান হিসেবে ততোদিন স্বীকৃত ছিলো, যতোদিন ইসহাক জন্মায় নি। ইসহাক জন্মানো মাত্র ইসমাঈল ইব্রাহীম (আঃ) এর সন্তানের মর্যাদা হারায়....'
সাজিদ একটু থামলো। গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি গিলে নিলো। এরপর বললো,- 'এটাও বাইবেল বিরোধী ঈমাণ আঙ্কেল।'
আহসান আঙ্কেল অবাক হলেন। সাথে আমিও। বলে কী ও?
আহসান আঙ্কেল বললেন,- 'কীভাবে?'
সাজিদ বলতে লাগলো,- 'আঙ্কেল, এই যে বললেন, যতোদিন ইসহাক (আঃ) জন্মায়নি, ততোদিন ইসমাঈল (আঃ) ইব্রাহীম (আঃ) এর পুত্র ছিলো। ইসহাক (আঃ) এর জন্মের সাথে সাথে ইসমাঈল (আঃ) পুত্রের মর্যাদা হারায়।'
- 'হ্যাঁ। তারা এরকমই বলে'- আঙ্কেল বললেন।
- 'কিন্তু বাইবেল কী বলে জানেন?'
- 'কী?'
- 'বাইবেল জেনেসিস এর ২৫ অধ্যায়ের ৯ নম্বর পরিচ্ছেদে বলছে- 'And his sons Isaac and Ishmael buried him (Abraham) in the cave of Machpelah'
অর্থাৎ- 'ইব্রাহীমের পুত্র ইসহাক এবং ইসমাঈল ইব্রাহীমকে দাফন করলো মাকপেলাহ নামক গুহায়...'
দেখুন, ইব্রাহীম (আঃ) এর মৃত্যুর পরেও বাইবেল বলছে- 'And his sons Isaac and Ismael'।
লক্ষ্যণীয়, বাইবেল কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ) এর মৃত্যুর পরেও ইসমাঈল (আঃ) কে তাঁর পুত্র বলেই স্বীকৃতি দিচ্ছে, আর খ্রিস্টান মিশনারীরা কীনা ইসহাক (আঃ) এর জন্মের পরেই ইসমাঈলকে ইব্রাহীম (আঃ) এর পুত্রের খাতা থেকে বাতিল করে দিচ্ছে। হাহাহা। এ যেন খোদার উপরে খোদাগিরি!!'
আসলেই তো! সাজিদের কথা শুনে খ্রিস্টান মিশনারীরা বাইবেলটাই ভালোমতো পড়েছে কীনা সন্দেহ জাগে আমার।
আহসান আঙ্কেল বললেন,- 'বেশ যৌক্তিক আলোচনা। কিন্তু মিশনারীরা বলে, কোরআনও নাকী ইসমাঈল নয়, ইসহাক (আঃ) এর দিকেই ইঙ্গিত করে।'
আমি অবাক হলাম। কোরআন এটা কীভাবে বলতে পারে?
সাজিদ বললো,- 'কী রকম?'
আহসান আঙ্কেল বলতে লাগলেন-
সূরা আস-সাফফাতের ৯৯ থেকে ১১২ নম্বর আয়াতগুলো দেখোঃ
(৯৯)- ''সে (ইব্রাহীম) বললো,- 'আমি আমার র'বের পথেই চলবো। তিনি নিশ্চই আমাকে পথ দেখাবেন''
(১০০)- ''হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সৎকর্মশীল একটি পুত্র দান করুন''
(১০১)- ''এরপর, আমি তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সু-সংবাদ দিলাম।''
(১০২)- ''অতঃপর সে (পুত্র সন্তানটি) যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছালো, তখন ইবরাহীম (আঃ) বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবেহ করছি।এখন বলো, তোমার অভিমত কী? সে বলল, 'হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন।আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন।''
(১০৩)- ''দু’জনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিল। আর ইবরাহীম তাকে উপুড় ক’রে শুইয়ে দিল।''
(১০৪)- ''আমি তাকে ডাক দিলাম- 'হে ইব্রাহীম!'
(১০৫)- 'তুমি তোমার ওয়াদা পূর্ণ করেছো। নিশ্চই, আল্লাহ এভাবে সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করেন।"
(১০৬)- ''এটি ছিলো একটি সু-স্পষ্ট পরীক্ষা।''
(১০৭)- "এবং আমি এক তাকে এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিলাম।''
(১০৮)- ''এবং আমি তাকে পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম।''
(১০৯)- ''ইব্রাহীমের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক।''
(১১০)- ''এভাবেই আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের পুরস্কৃত করেন''
(১১১)- ''সে (ইব্রাহীম) ছিলো সৎকর্মশীলদের একজন।''
(১১২)- ''আর, তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের- যে ছিল সৎকর্মশীল বান্দাহদের অন্তর্ভুক্ত একজন নবী।''
এখান থেকে খ্রিস্টান মিশনারীরা বলতে চায় যে, আয়াতের প্রথম দিকে ইব্রাহীম (আঃ) কে একজন ধৈর্য্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তাঁর নাম উল্লেখ করা নেই।
সূরাটিতে আর কিছুদূর পরে এসে সুসংবাদ সম্বলিত পুত্রের কথা আবারও বলা হয় তাঁর নাম উল্লেখ করে। তিনি হলেন ইসহাক (আঃ), ইসমাঈল (আঃ) নয়। অর্থাৎ, কোরআন থেকেই সুস্পষ্ট যে, সেদিন ইব্রাহীম (আঃ) ইসমাঈল (আঃ) কে নয়, ইসহাক (আঃ) কেই কোরবানি করার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন।'
সাজিদ বললো,- 'আঙ্কেল, মিশনারীদের এই যুক্তি অত্যন্ত দূর্বল।'
- 'কীভাবে?'
- 'প্রথমত, সূরা আস-সাফফাতের ১০০ নম্বর আয়াতটি খেয়াল করুন। আয়াতে বলা হচ্ছে-
''হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সৎকর্মশীল একটি পুত্র দান করুন''
ইব্রাহীম (আঃ) এই প্রার্থনা কবে করেছিলেন? যখন তিনি সন্তানহীন ছিলেন। আগেই বলেছি, জীবনের দীর্ঘ ৮৬ টি বছর তিনি কোন সন্তানের মুখ দেখেন নি। ঠিক?'
- 'হ্যাঁ'- আমি বললাম।
- 'এর পরের আয়াত দেখুন- ''এরপর, আমি তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সু-সংবাদ দিলাম।''
খেয়াল করুন, সন্তানহীন অবস্থায় তিনি একজন সন্তানের জন্য প্রার্থনা করলেন। এরপর আল্লাহ তাকে একটি পুত্র সন্তান দান করলেন? সে কে তাহলে? ইহুদি, খ্রিস্টান, ইসলাম- তিন ধর্মের স্কলারগণ এই ব্যাপারে একমত যে- প্রার্থনার পরে প্রথম প্রাপ্ত সন্তানটি ইসমাঈল (আঃ)।
তাহলে, ঘটনার পরম্পরা এবং ইতিহাস বলছে- এটা ইসহাক (আঃ) নয়, ইসমাঈল (আঃ)। এইটুকু কী ক্লিয়ার?'
- 'আমরা উভয়ে মাথা নাড়লাম।'
- 'সাজিদ আবার বলতে লাগলো- এরপরের আয়াতে যান। বলা হচ্ছে- ''অতঃপর সে (পুত্র সন্তানটি) যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছালো, তখন ইবরাহীম (আঃ) বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবেহ করছি।এখন বলো, তোমার অভিমত কী? সে বলল, 'হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন।আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন।''
আগের দুই আয়াত থেকে ক্লিয়ার যে- সন্তানটি ছিলো ইসমাঈল (আঃ), ইসহাক (আঃ) নয়।
এবং, যাকে কোরবানি করার স্বপ্ন ইব্রাহীম (আঃ) দেখলেন, সেও তাহলে ইসমাঈল (আঃ)। আর, তখন কিন্তু ইসহাক (আঃ) এর জন্মও হয় নি।
কথাগুলোকে আমরা প্রশ্নাকারে সাজাই। দেখুন কী পাই-
ইব্রাহীম (আঃ) সন্তানের জন্য কখন প্রার্থনা করলেন?
- যখন তিনি সন্তানহীন ছিলেন।
- আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে যখন তাঁকে একজন পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দেন, সে কী প্রথম সন্তান না দ্বিতীয়?
- প্রথম সন্তান।
- ইব্রাহীম (আঃ) প্রথম সন্তানের নাম কী?
- ইসমাঈল (আঃ)
- আয়াতে কোন সন্তানকে কোরবানি করার কথা বলা আছে?
- দোয়া কবুলের পর সুসংবাদ প্রাপ্ত সন্তানকে।
- সেই সন্তান কে ছিলেন?
- ইসমাঈল (আঃ)
সুতরাং, এখান থেকে এটি প্রমাণ হলো যে, আয়াতে উল্লিখিত সন্তান ইসমাঈল (আঃ), ইসহাক (আঃ) নয়।
এতোটুকু বলে সাজিদ একটু থামলো। এরপর আবার বলতে শুরু করলো-
'এবার আসি মিশনারীদের লজিকে। তারা বলছে,- কোরআন প্রথমে একটি পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছে, কিন্তু কারো নাম উল্লেখ করেনি। কিছুদূর এসে, কোরআন আবারো সুসংবাদ সহ ইসহাক (আঃ) এর নাম উল্লেখ করেছে। এখান থেকে তারা ধরে নিচ্ছে যে, কোরবানি করতে নিয়ে যাওয়া পুত্র ইসহাক ছিলো, ইসমাঈল নয়।
কিন্তু, ইতোপূর্বে আমরা এই আয়াতগুলো থেকে এটা প্রমাণ করে দেখিয়েছি যে, এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট ইসমাঈল (আঃ) এর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, ইসহাক (আঃ) এর নয়।
যদি তাদের দাবি মেনে নিই, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়? ধরে নিই যে এখানে ইসমাঈল নয়, ইসহাক (আঃ) এর কথাই বলা হচ্ছে। তাহলে আয়াতের পরম্পরা অনুযায়ী দেখুন তো কেমন দেখায় ব্যাপারটা-
'প্রথমে পুত্র ইসহাকের সুসংবাদ দেওয়া হলো। এরপর, সেই ইসহাককে কোরবানি করার স্বপ্ন দেখলো, ইসহাক রাজি হলো। ইসহাককে কোরবানি করতে নিয়ে যাওয়া হলো। কোরবানি করতে উদ্যত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাকে বাঁচিয়ে নিলো........
এরপর-
আরো নিচে এসে আবার ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হলো.........
দেখুন তো, একবার তার জন্মের সুসংবাদ। এরপর তার বেড়ে উঠার কাহিনী। এরপর তাকে কোরবানি করার কাহিনী। এরপর তাকে বাঁচিয়ে নেওয়ার কাহিনী। আবার এসে তার জন্মের কাহিনী। কেমন না ব্যাপারটা?'
আমি বললাম,- 'হ্যাঁ, পুরোই বিদঘুটে ব্যাপার।'
- 'ইসহাক (আঃ) কে এখানে বসাতে হলে কোরআন নিজেই তার বাচনভঙ্গি থেকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু কোরআন এখানে ইসহাক (আঃ) কে নয়, ইসমাঈল (আঃ) কেই বুঝিয়েছে....
তাছাড়া, আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজের জীবন এভাবে উৎসর্গ করে দিতে সর্বোচ্চ ধৈর্য লাগে। কোরআনের অনেক জায়গায় ইসমাঈল (আঃ) কে ধৈর্যশীল (সূরা আল-আম্বিয়ার ৮৫ নম্বর আয়াত দ্রষ্টব্য) বলে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্যদিকে ইসহাক (আঃ) কে উল্লেখ করা হয়েছে জ্ঞানবান (সূরা আয-যারি'আত- ২৮ নম্বর আয়াত দ্রষ্টব্য) হিসেবে। এখান থেকেও উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে, সেদিনের ঘটনায় ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে পুত্র ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন, ইসহাক (আঃ) নয়।
এছাড়াও, ইবন কাসীর (রহঃ) উনার বিখ্যাত 'আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া' গ্রন্থে লিখেছেন- 'ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,- সেদিন ইব্রাহীম (আঃ) যে পশু দিয়ে কোরবানি করেছিলেন (ইসমাঈলের পরিবর্তে আল্লাহ যে পশুকে স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন) তার শিং ক্বাবা শরীফের মধ্যে সুদীর্ঘকাল ধরে সংরক্ষিত ছিলো।'
এখান থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, তাহলে অই ঘটনায় সেদিন ইসমাঈল (আঃ)-ই ছিলেন, ইসহাক (আঃ) নয়। কারণ, সকল ইতিহাসবিদেরা একমত যে, কেবলমাত্র ইসমাঈল (আঃ)-ই মক্কায় অবস্থান করেছিলেন। ইসহাক (আঃ) কখনোই মক্কায় আসেন নি। তিনি ছিলেন মিশরে। সুতরাং, মহানবী (সাঃ) এর জন্মেরও হাজার বছর আগ থেকে আরবরা জানতো- এখানে ইব্রাহীম (আঃ) হজরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানি দিতে এনেছিলেন। তাই ইসমাঈল (আঃ) এর সেই স্মৃতি রক্ষার্থে তারা যুগ যুগ ধরে সেটা সংরক্ষণ করে রেখেছিলো। যদি ইসমাঈলের জায়গায় ইসহাক (আঃ) হতেন, তাহলে পশুর এই শিং প্রাচীন মক্কার আরবদের পাওয়ার কথাই না। এ থেকে এটা স্পষ্ট যে, সেদিন ঘটনাস্থলে ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন, ইসহাক (আঃ) নয়।
আহসান আঙ্কেল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। উনি কিছু বলার আগেই সাজিদ আবারো বলে উঠলো- 'আঙ্কেল Encyclopedia Judaica তে কী বলা আছে আপনি জানেন?
আহসান আঙ্কেল বললেন,- 'কী বলা আছে?'
সাজিদ বললো,- 'বলা আছে- ''It is related that a renowned traditionalist of Jewish origin, from the Qurayza tribe, and another Jewish scholar, who converted to Islam, told that Caliph Omar Ibn
Abd al- c Azîz (717-20) that the Jews were well informed that Ismail was the one who was bound, but that they concealed this out of jealousy''
অর্থাৎ- ইহুদীরাও খুব ভালোভাবে জানতো যে, সেদিনকার ঘটনায় ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে ইসমাঈল (আঃ)-ই ছিলো, ইসহাক (আঃ) নয়। কিন্তু, ঈর্ষাণ্বিত ইহুদীরা এটা খুব সুকৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।'
আমি বললাম,- 'এটা স্বীকার করে নিলে তাদের ক্ষতি কী রে?'
সাজিদ আমার দিকে তাকালো। বললো,- 'ইহুদী এবং খ্রিস্টানরাও খুব ভালোভাবে জানতো যে শেষ যামানায় একজন ইশ্বরের দূত (নবী) আসবে। তারা আশা করে রেখেছিলো, সেই দূত হবে ইসহাক (আঃ) এর বংশধরদের মধ্য থেকে। কারণ, ইসহাক (আঃ) ছিলো হজরত সারা (আঃ) এর গর্ভের, যিনি একজন স্বাধীন নারী ছিলেন। পক্ষান্তরে, ইসমাঈল (আঃ) জন্মেছেন হজরত হাজেরা (আঃ) এর গর্ভে,যিনি আবার একজন দাসী ছিলেন। অর্থাৎ, একজন দাসীর পেটে জন্ম নেওয়া সন্তানের বংশে ইশ্বর এরকম একজন সম্মানিত দূত পাঠাবে, এটা অহংকারী ইহুদী-খ্রিস্টানরা মেনে নিতে পারেনি, তাই......'
এতোটুকু বলে সাজিদ তাঁর হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো। সে বললো,- 'ইশ! আমার আরো একটি ক্লাস আছে। উঠতে হবে যে..'
সে টেবিলে রাখা বইগুলো হাতে তুলে নিচ্ছে। আমি দেখলাম বইগুলোর মধ্যে মাওলানা আকরাম খাঁ'র 'মোস্তফা চরিত'ও আছে। আমি টান দিয়ে সেটা তার হাত থেকে নিয়ে নিলাম। এতো ক্লাসিক্যাল বাংলা সীরাত, পড়তে হবে তো।
সাজিদ উঠে দাঁড়ালো। আহসান আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললো,- 'আঙ্কেল, আজ তাহলে আসি?'
আহসান আঙ্কেল আরেকবার হাত বাড়িয়ে দিলেন তার দিকে।
হ্যান্ডশেক করা হলে আহসান আঙ্কেল সাজিদের চোখে চোখ রেখে বললেন,- 'Live long my son.....'
সাজিদ মুচকি হাসলো। তার ক্লাসের তাড়া আছে। সে সালাম দিয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে ছুটলো।
সাজিদ চলে যাবার পরে আমি আহসান আঙ্কেলের দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে, এই লোকটার বয়স হওয়া উচিত ৩০, কিন্তু লোকটা ৫০ এর কোঠা পার করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই।
উনার চেহারা থেকে বিরক্তির আভাটুকু চলে গেছে।
উনাকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে.......
রেফারেন্সঃ
১/ জেনেসিস- ২২:২
২/ জেনেসিস ১৬:৩
৩/ জেনেসিস ২৫:৯
৪/ সূরা আস-সাফফাত (৯৯-১১২)
৫/ আল - আম্বিয়া ৮৫
৬/ আয-যারি'আত ২৮
৭/ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১ম খন্ড, পৃষ্টা ১৫৭
৮/ Encyclopedia Judaica, Volume 9
'A reply to Christian Missionary'/ আরিফ আজাদ
(লেখাটি কোরবান রিলেটেড বলে দিয়ে দেওয়া হলো। সাজিদের দ্বিতীয় খন্ডে থাকবে ইনশাআল্লাহ)

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.