ইসলামে মোহর / আরিফ আজাদ
নতুন নতুন গজিয়ে উঠা তথাকথিত নারীবাদীদের প্রায় একটা অভিযোগ করতে দেখা যায়। সেটা হলো, ইসলাম বিয়ের সময় ‘মোহর’ নির্ধারণের মাধ্যমে নারীদের ‘পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে। বিয়ের সময় স্বামীরা ‘মোহর’ এর মাধ্যমে স্ত্রীদের কিনে নেয়। অর্থাৎ, টাকার বিনিময়ে যৌন সঙ্গী খরিদ করে নেওয়ার মতো। বিয়ের সময় ‘মোহর’ নির্ধারণের মাধ্যমে ইসলাম নারীদের খাটো করেছে, অপমান করেছে, তাকে পণ্য বানিয়ে ছেড়েছে।
আমাদের সমাজে নারীদেরকে যারা খোলামেলা করে ‘পণ্য’ বানানোর মিশনে নেমেছে, সেই সকল নারীবাদীদের মুখ যখন ‘ইসলাম নারীদের পণ্য বানিয়েছে’ টাইপ কথাবার্তা শুনি, তখন হাসি পায় বৈকি! নারীবাদীদের কাছে ‘বিয়ে’ কেবল শারীরিক চাহিদা মেটানোর একটা মাধ্যম মাত্র, আর কিছুই নয়। অথচ, ইসলামে বিয়ে মানে কেবল দু’জন নারী-পুরুষের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কই নয়, একটি নতুন অধ্যায়, একটি নতুন সংগ্রাম। ইসলামে বিয়ে মানে একজন অন্যজনের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, আবেগ, ত্যাগ। ইসলামে বিয়ে মানে সুন্দর আগামী প্রজন্ম বিনির্মানের সূচনা পর্ব। বিয়ে মানে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক, যেমনটা আল কোরআন বলছে,- ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ এবং তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের জন্য পোশাক স্বরূপ’।
কাপড়বিহীন আমাদের অবস্থা যেমন, স্ত্রীবিহীন আমাদের অবস্থাও তেমন। কোরআন স্ত্রীদের উপমা দিতে গিয়ে ‘পণ্য’ বলেনি, বলেছে লজ্জা নিবারণের বস্তু, সম্ভ্রম রক্ষার উপায়। ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ‘পার্টনার’ জাতীয় শব্দগুলোর সাথে এই উপমার তুলনা চলে?
কাপড়বিহীন আমাদের অবস্থা যেমন, স্ত্রীবিহীন আমাদের অবস্থাও তেমন। কোরআন স্ত্রীদের উপমা দিতে গিয়ে ‘পণ্য’ বলেনি, বলেছে লজ্জা নিবারণের বস্তু, সম্ভ্রম রক্ষার উপায়। ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ‘পার্টনার’ জাতীয় শব্দগুলোর সাথে এই উপমার তুলনা চলে?
‘মোহর’ মানে কি নারীদের কিনে নেওয়া?
বস্তুত, এমন ধারণা নারীবাদীদের মস্তিষ্কপ্রসূত। মোহর মানে কখনোই নারীদের কিনে নেওয়া নয়। ইসলামে একজন যুবকের জন্য বিয়ে করার পূর্বশর্ত হলো সামর্থ্যবান হওয়া। কারণ বিয়ে করার ফলে তার দায়িত্ব বেড়ে যায়। তার স্ত্রীর ভরণপোষণ, ভালো-মন্দ, দেখভাল সমস্তকিছু তখন পিতার কাঁধ থেকে স্বামীর কাঁধে চলে আসে। এজন্যই রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,- সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করো, নয়তো রোজা রাখো।
আপনি যখন ফিল করবেন যে আপনি নতুন একজন মানুষের দায়িত্ব নিতে পারবেন, তার থাকা-খাওয়া, তার ভরণ-পোষণ, তার ভালো-মন্দ, তার নিরাপত্তা সবকিছু দিতে পারবেন, তাহলে বিয়ে করুন। যদি মনে করেন যে আপনি এসব পালনে অক্ষম, তাহলে রোজা রাখুন। এতে করে ফিৎনা আপনাকে গ্রাস করবে না।
বস্তুত, এমন ধারণা নারীবাদীদের মস্তিষ্কপ্রসূত। মোহর মানে কখনোই নারীদের কিনে নেওয়া নয়। ইসলামে একজন যুবকের জন্য বিয়ে করার পূর্বশর্ত হলো সামর্থ্যবান হওয়া। কারণ বিয়ে করার ফলে তার দায়িত্ব বেড়ে যায়। তার স্ত্রীর ভরণপোষণ, ভালো-মন্দ, দেখভাল সমস্তকিছু তখন পিতার কাঁধ থেকে স্বামীর কাঁধে চলে আসে। এজন্যই রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,- সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করো, নয়তো রোজা রাখো।
আপনি যখন ফিল করবেন যে আপনি নতুন একজন মানুষের দায়িত্ব নিতে পারবেন, তার থাকা-খাওয়া, তার ভরণ-পোষণ, তার ভালো-মন্দ, তার নিরাপত্তা সবকিছু দিতে পারবেন, তাহলে বিয়ে করুন। যদি মনে করেন যে আপনি এসব পালনে অক্ষম, তাহলে রোজা রাখুন। এতে করে ফিৎনা আপনাকে গ্রাস করবে না।
মোহরের পেছনের রহস্য বোঝার আগে আমরা তখনকার আরবের জাহিলিয়াতকে একটু স্মরণ করি। সেই সময়টা, যখন জীবন্ত কন্যা সন্তানকে দাফন করা হতো, তাদেরকে ‘অশুভ’ ‘অপয়া’ ইত্যাদি মনে করা হতো, সেই সময়ে ইসলাম বাতলে দিলো নারীদের নিরাপত্তার জন্য যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ।
ইসলাম এসে বললো, নারীদের জীবন্ত দাফন করা যাবে না। পুত্র সন্তান-কন্যা সন্তানের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকা যাবে না। পুত্র সন্তানরা সৌভাগ্যবান, কন্যা সন্তান অপয়া- এমন ধারণাকে ইসলাম সমর্থন করেনা। ইসলাম বললো- মহিলারা পিতার সম্পত্তির অংশ পাবে, এবং সেই অংশ সে কোন খাতে খরচ করবে, সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার। এই ব্যাপারে তার বাবা, তার ভাই, তার স্বামী, তার সন্তান কেউই তাকে কোনরকম জোরজবরদস্তি করতে পারবে না। শুধু বাবার সম্পত্তিতেই নয়, স্বামীর সম্পত্তিতেও রয়েছে মহিলাদের অংশ, এবং সেই সম্পত্তিও সে কোন খাতে খরচ করবে তা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার।
মহিলারা নিজের ভরণপোষণ নিজে করবে না। মহিলারা মায়ের জাতি। রাণীর জাতি। রাণীরা বাইরে কাজ করে খাবে- এটা কি ভালো দেখায়? মোটেও না। ইসলাম মহিলাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বন্টন করে দিলো খুব সুন্দরভাবে। বিয়ের আগে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব তার বাবার। বিয়ের পরে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব তার স্বামীর এবং বৃদ্ধ বয়সে এই দায়িত্ব তার সন্তানের উপর। কিন্তু, সে যদি চায় উপার্জন করতে? সমস্যা নেই। পর্দার হুকুম মেনে সে চাইলে কাজ করতে পারে। ইসলাম তাকে বাঁধা দেয়না।
এরপর, বিয়ের সময় সে তার স্বামীর কাছ থেকে মোহর পেয়ে থাকে। কেনো এই মোহর? এই মোহর প্রদানের অর্থ হলো- এই মেয়েটার ভরণপোষণের দায়িত্ব যে নিচ্ছে, সে কী আসলেই মেয়েটার দায়িত্ব নিতে সক্ষম? সে যে মেয়েটার দায়-দায়িত্ব কাঁধে নিতে সক্ষম, এর প্রমাণস্বরূপ এই মোহর দেওয়া হয়। হতে পারে তার অনেক টাকা-পয়সা, ব্যাংক-ব্যালেন্স। কিন্তু সে কী মেয়েটার জন্য ব্যয় করতে কার্পণ্য করবে? সে যে কার্পণ্য করবেনা, সেটার প্রমাণস্বরূপ এই মোহর।
আচ্ছা, বিয়ের পরে তাদের সংসার যে সারাজীবন টিকবে, এরকম কোন গ্যারান্টি আছে? না, নেই। এই গ্যারান্টি ইসলামও দেয়না। ধরা যাক বিয়ের অল্পদিন বা অল্প কয়েক বছরের মধ্যে একটা সংসার ভেঙে গেলো। সেই মূহুর্তে মেয়েটা কি খুব অসহায় হয়ে পড়েনা? যদি তার বাবা না থাকে? যদি তার ভাইয়েরা তার দেখভাল না করে? যদি দুনিয়ায় তার কোন আপনজন অবশিষ্ট না থাকে? কি করবে সে? কার কাছে যাবে? কোথায় আশ্রয় নিবে? এমন মূহুর্ত যদি সামনে আসে, সেই মূহুর্তে মেয়েটা যাতে একেবারে সহায়-সম্বলহীন না হয়ে পড়ে, তার জন্যই এই মোহর...
এই ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে এমন যেকেউ এটার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। ইসলাম কোন নামকাওয়াস্তে ধর্মের নাম নয়। এটা একটা জীবনবিধান। কমপ্লিট লাইফ সল্যুশন। সুতরাং, এর বিধানগুলো এমন যেগুলো একজনের জীবনের জন্য, জীবন পরিচালনার জন্য উপযোগি।
এই ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে এমন যেকেউ এটার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। ইসলাম কোন নামকাওয়াস্তে ধর্মের নাম নয়। এটা একটা জীবনবিধান। কমপ্লিট লাইফ সল্যুশন। সুতরাং, এর বিধানগুলো এমন যেগুলো একজনের জীবনের জন্য, জীবন পরিচালনার জন্য উপযোগি।
যেসব নারীবাদীরা নারীর ‘সমান অধিকার’ এর জন্য চিল্লাপাল্লা করেন, তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই-
১। ইসলাম বিয়ের সময় নারীদের মোহর প্রদান পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে, অপরদিকে পুরুষের জন্য যৌতুক নেওয়া হারাম করেছে। অর্থাৎ, পুরুষরা দিবে, কিন্তু কিছুই পাবেনা। তাহলে এর অর্থ কি এটাই যে ইসলাম পুরুষের সাথে ন্যায়বিচার করেনি? সারাজীবন একজনের ভরণপোষণের দায়িত্বও নিলো, বিয়ের সময় মোহরও দিলো, নিজের সম্পত্তিতে ভাগও দিলো, কিন্তু বিনিময়ে...? এক্ষেত্রে কি ইসলাম পুরুষ বিদ্বেষী ধর্ম হয়ে গেলো?
১। ইসলাম বিয়ের সময় নারীদের মোহর প্রদান পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে, অপরদিকে পুরুষের জন্য যৌতুক নেওয়া হারাম করেছে। অর্থাৎ, পুরুষরা দিবে, কিন্তু কিছুই পাবেনা। তাহলে এর অর্থ কি এটাই যে ইসলাম পুরুষের সাথে ন্যায়বিচার করেনি? সারাজীবন একজনের ভরণপোষণের দায়িত্বও নিলো, বিয়ের সময় মোহরও দিলো, নিজের সম্পত্তিতে ভাগও দিলো, কিন্তু বিনিময়ে...? এক্ষেত্রে কি ইসলাম পুরুষ বিদ্বেষী ধর্ম হয়ে গেলো?
২। রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একজন লোক এলেন। জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমার বাবা-মা উভয়ে জীবিত। কার হক্ব আমার উপর বেশি?’ নবিজী উত্তরে বললেন, ‘তোমার মায়ের’।
- ‘এরপর?’
নবিজী বললেন, ‘তোমার মায়ের’।
-‘তারপরে?’
নবিজী আবার বললেন, ‘তোমার মায়ের’।
লোকটা আবার জিজ্ঞেস করলেন,- ‘এরপর?’
এবার নবিজী বললেন, ‘তোমার বাবার’।
আচ্ছা, আমাদের নারীবাদীদের কাছে প্রশ্ন- এই যে রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকারের ব্যাপারে তিন তিনবার নারীদের কথা বললেন, এতে করে কি প্রমাণ হয় যে ইসলামের নবী একজন পুরুষবিদ্বেষী?
- ‘এরপর?’
নবিজী বললেন, ‘তোমার মায়ের’।
-‘তারপরে?’
নবিজী আবার বললেন, ‘তোমার মায়ের’।
লোকটা আবার জিজ্ঞেস করলেন,- ‘এরপর?’
এবার নবিজী বললেন, ‘তোমার বাবার’।
আচ্ছা, আমাদের নারীবাদীদের কাছে প্রশ্ন- এই যে রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকারের ব্যাপারে তিন তিনবার নারীদের কথা বললেন, এতে করে কি প্রমাণ হয় যে ইসলামের নবী একজন পুরুষবিদ্বেষী?
৩। রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল পুত্র সন্তান শৈশবেই মারা যায়। তাঁর কন্যা সন্তানদের মাধ্যমেই পৃথিবীতে তাঁর বংশধারা রক্ষা করা হয়েছে। এতে করে কি প্রমাণ হয় যে আল্লাহ তা’লা তাঁর মেয়েদের বেশি ফেভার করেছেন আর ছেলেদের নিগৃহীত করেছেন? ছেলেরা বেঁচে থাকলে নবী নাহোক, অন্তত খলিফা তো হতে পারতো, তাইনা?
৪। হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম হয়েছে পিতা ছাড়াই। তার জন্মের জন্য কিন্তু ঠিকই মা তথা নারীর দরকার পড়েছে, কিন্তু বাবা তথা পুরুষের দরকার পড়েনি। এতে করে প্রমাণ হয় যে আল্লাহ তা’লা পুরুষদের এখানে খাটো করেছেন? ছোট করেছেন? অপমান করেছেন?
আমি জানি নারীবাদীদের কাছে এই প্রশ্নগুলোর কোন জবাব নেই। ইসলাম যার যেটা দরকার, তার জন্য সেটাই নির্ধারণ করেছে। যার জন্য যেটা নয়, তার জন্য সেটা হারাম করেছে। পুরুষদের সব প্রয়োজন নারীর জন্য নয়, আবার নারীর সব প্রয়োজন পুরুষের জন্য নয়। প্রকৃতিগতভাবেই তারা একজন অন্যজনের চেয়ে আলাদা।
আমাদের নারীবাদীদের বুঝতে হবে, সমান অধিকার সবসময় যথার্থ অধিকার নয়। ইসলাম সমান অধিকার নিশ্চিত না করে, যথার্থ অধিকারটাই নিশ্চিত করেছে।।
আমাদের নারীবাদীদের বুঝতে হবে, সমান অধিকার সবসময় যথার্থ অধিকার নয়। ইসলাম সমান অধিকার নিশ্চিত না করে, যথার্থ অধিকারটাই নিশ্চিত করেছে।।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.