“অলৌকিক ঘটনার বয়ান” হুমায়ুন আহমেদ


অলৌকিক ঘটনার বয়ান” হুমায়ুন আহমেদ তাঁর মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে দৈনিক প্রথম আলোতে একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকার দিযে গিয়েছিলেন অনেকেই হয়তো সাক্ষাতকারটি পড়েছেন যাঁরা পড়েছেন বা যাঁরা পড়েননি সবার জন্যই সাক্ষাতকারটির চুম্বক অংশ নীচে বিধৃত করলাম:-
প্রশ্ন: প্রেমের মতো স্রষ্টা নিয়েও আপনার ভাবনা আছে?

হুমায়ূন: আমি মনে করি, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে আমি স্টিফেন হকিংয়ের একটা লেখা পড়লাম প্রকৃতির মধ্যে কিছু নিদর্শন তো আছেই তোমাকে একটা যুক্তি দিই, শোনো এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় যুক্তি তুমি মঙ্গল গ্রহে গিয়েছ সেখানে গিয়ে তুমি দেখলে পাহাড়,পর্বত, পাথর পাথর দেখে তুমি বলবে,বহুকাল থেকে, সেই আদ্যিকাল থেকে পাথরগুলো এভাবেই আছে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তুমি দেখতে পেলে একটা নাইকন ক্যামেরা তুমি সেটা হাতে নেবে তখন তোমাকে বলতেই হবে, এর একজন স্রষ্টা আছে

ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে তুমি এ কথা ভাবতে পারবে না যে শূন্য থেকে এটা আপনা-আপনি এসে হাজির হয়েছে কারণ, এটা একটা জটিল যন্ত্র এবার, আরেকটু এগিয়ে গেলে কোত্থেকে একটা খরগোশ বেরিয়ে এসে তোমার দিকে তাকাল নাইকন ক্যামেরা কী করে? ছবি তোলে
খরগোশ কী করে? অনেক কাজই করে খরগোশের একটা কাজ হলো দেখা এই খরগোশের চোখ নাইকন ক্যামেরার চেয়ে হাজার গুণ বেশি জটিল নাইকন ক্যামেরাটা দেখে তোমার যদি মনে হয় যে এর একটা নির্মাতা থাকা দরকার,তাহলে খরগোশের বেলায় এটা তোমার মনে হবে না কেন?

আমার প্রথম যুক্তি যদি গ্রহণ করো, আমার দ্বিতীয় যুক্তিটাও তোমাকে গ্রহণ করতে হবে মানুষের সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ে একটা বৈজ্ঞানিক যুক্তি ছিল এ রকম অণু-পরমাণুতে ধাক্কাধাক্কির ফলে একটা জটিল অণুর জন্ম হয়েছে একসময় এটা এত দূর জটিল হয়ে উঠছে,সেটা একেবারে নিজের মতো আরেকটা জিনিস তৈরি করতে শুরু করেছে তারপর তৈরি হলো মানুষ অসম্ভব ধীমান একটি প্রাণী

একটা গোলাপ ফুল দেখে যে মানুষ তারিফ করতে পারে, একটা পরম শৃঙ্খলা ছাড়া শুধু ধাক্কাধাক্কি করে কি এটা সম্ভব হতে পারে? এবং এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে অণু-পরমাণুর ধাক্কাধাক্কির ফলে আমরা গোলাপ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি?
এই পৃথিবীর সবকিছু পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনে চলে প্রোটন হবে ইলেকট্রনের চেয়ে ১,৮৩৬ গুণ বড় সমস্ত তত্ত্ব, সংখ্যা ধ্রুব এই ধ্রুবত্ব কে নির্ধারণ করেছে? বিজ্ঞান কোনো বিষয় সম্পর্কে হুট করেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না তার একটা বিশেষ পদ্ধতি আছে কিন্তু এই পদ্ধতি তো শুরু থেকে ছিল না যেমন—

অ্যারিস্টটল বলছিলেন, মানুষের মস্তিষ্কের কাজ হলো শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা কথাটা অ্যারিস্টটল বলেছিলেন বলেই আমরা এক হাজার বছর পিছিয়ে গেছি এখন বিজ্ঞান অনেক অদ্ভুত কথা বলছে যেমন—মানুষের শরীরের মধ্যে যে ডিএনএ থাকে, তার মৃত্যু নেই
তাই আমি মনে করি, আমরা এখনো খুব অল্প বিষয়ই জানতে পেরেছি একজন পদার্থবিজ্ঞানীর পক্ষে রসায়ন সম্পর্কে বেশি কিছু জানা সম্ভব না জ্ঞানের পরিধি অনেক অনেক বড় যুগে যুগে যেসব ধর্মপ্রচারক এসেছেন—তাঁরা কিন্তু একটা সামগ্রিক ধারণা রাখতেন জগত বিষয়ে আল্লাহ তাঁদের কাছে সব সময় সরাসরি জ্ঞান দেন নাই তাঁরা সব সময় যে সরাসরি ওহি পেয়েছেন তা তো না? জিবরাইল কি সব সময় সশরীরে এসে ওহি পৌঁছে দিয়েছেন? না অনেক সময় শব্দের মাধ্যমে, অনেক সময় আলোর মাধ্যমেও ওহি পাঠানোর ব্যপারটা ঘটেছে এ কারণে আমার মনে হয়, মানুষের ক্ষুদ্র জ্ঞানে সৃষ্টিকর্তাকে পুরোপুরি কখনো জানা সম্ভব না

সৃষ্টিকর্তা মানুষের মতো এটা ধরে নিয়ে কিন্তু আমি চিন্তা করছি না আমি চিন্তা করছি এমন একটা অস্তিত্ব নিয়ে, যে সর্বব্যাপী তাকে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র কল্পনাশক্তি দিয়ে কল্পনা করতে পারছি না তিনি আমাদের কল্পনাসীমার বাইরে অনেক সূরায় নানাভাবে এসেছে এ প্রসঙ্গ সূরা এখলাসও এ বিষয়েই কিন্তু আমি সৃষ্টিকর্তাকে জানতে চাই আমার নিজের জীবনে নানা ঘটনা বিভিন্ন সময়ে আমাকে ভাবিয়েছে (অসমাপ্ত)

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.