খাবারের হালাল হারাম । তানভীর আহমেদ শরীফ ।

খাবারের হালাল হারাম । (পর্ব ৭)
 ইসলাম এর পশু জবেহ পদ্ধতি প্রচলিত অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
লিংক দ্রষ্টব্য :
http://www.therevival.co.uk/…/islamic-method-slaughtering-a…
আস-সাফফাত 37:157
فَأْتُوا بِكِتَٰبِكُمْ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ
তোমরা সত্যবাদী হলে তোমাদের কিতাব আন।
হিন্দু মতে বিশ্বাসী / মুমিন কি এবং কারা?
হিন্দু মতে অবিশ্বাসী / কাফের কি এবং কারা?
হিন্দু মতে মাছ কি অবিশ্বাসী হতে পারে?
হিন্দু মতে পশু কি অবিশ্বাসী হতে পারে?
অহিন্দুর হত্যা করা / ধরা মাছ কি খাওয়া জায়েজ?
কাকড়া, কচ্ছপ, মাছ ত দেবতা শিব এর বাহন, খাওয়া জায়েজ আছে কি?
মৃত মাছ খাওয়া যায়েয কি?
হাস স্বরসতীর বাহন, খাওয়া যায়েয আছে কি?
#শুকর_শিবের_বাহন, খাওয়া যায়েয কি?
রাজহাস ব্রম্মার বাহন, খাওয়া যায়েয কি?
ইঁদুর গনেশের বাহন খাওয়া যায়েয কি?
শকুন, শনিদেবের বাহন খাওয়া জায়েজ কি?
বাঘ,সিংহ খাওয়া যায়েয কি?
বাঘ,সিংহ শিকারকৃত পশু খাওয়া যায়েয কি?
গলাটিপে হত্যা করা প্রানি যায়েয কি?
অপঘাতে মৃত প্রানী খাওয়া জায়েজ কি?
কোন উপায়ে পশুর রক্ত বাহির করে হত্যা করে খাওয়া যাবে?
দেব দেবীর নাম ব্যাতিত উৎসর্গিত পশু খাওয়া যায়েয কি?
রক্তা বাহির হওয়া ছাড়া মৃত প্রানী / পশুর মাংস হালাল কি?
পশু পশুর মধ্যে মারামারিতে মৃত পশু হালাল কি?
ভাগ্য নির্ধারক তীর, জুয়ার মাধ্যমে বন্টন কৃত পশুর মাংস হালাল কি?

আল-আম্বিয়া 21:52
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِۧ مَا هَٰذِهِ ٱلتَّمَاثِيلُ ٱلَّتِىٓ أَنتُمْ لَهَا عَٰكِفُونَ
যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেনঃ এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ।
আল-আম্বিয়া 21:53
قَالُوا وَجَدْنَآ ءَابَآءَنَا لَهَا عَٰبِدِينَ
তারা বললঃ আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের পুজা করতে দেখেছি।

#আসুন সন্দেহ মুক্ত কিতাব থেকে দেখে নেই।
আল-বাক়ারাহ 2:2
ذَٰلِكَ ٱلْكِتَٰبُ لَا رَيْبَۛ فِيهِۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

#কাফের_অর্থ_অবিশ্বাসী,মুমিন_অর্থ_বিশ্বাসী।
#কাফের_এর_সংগা
সুরা নিসা:৬৫
فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَہُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِہِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَ یُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا ﴿۶۵﴾
ফালা-ওয়ারাব্বিকা লা-ইউ’মিনূনা হাত্তা-ইউহাক্কিমূকা ফীমা-শাজারা বাইনাহুম ছু ম্মা লাইয়াজিদূফীআনফুছিহিম হারাজাম মিম্মা-কাদাইতা ওয়া ইউছালিলমূতাছলীমা-।
কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মুমিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়। [১]
[১] এই আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে সাধারণতঃ একজন মুসলিম ও একজন ইয়াহুদীর মাঝে বিবাদের ঘটনা বর্ণনা করা হয়। রসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে ফায়সালা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মুসলিম উমার (রাঃ)-এর কাছ থেকে ফায়সালা নেওয়ার জন্য যায়। ফলে উমার (রাঃ) এই মুসলিমের শিরচ্ছেদ করেন। কিন্তু সনদের দিক দিয়ে এ ঘটনা সঠিক নয়। ইমাম ইবনে কাসীরও এ (ঘটনা সঠিক না হওয়ার) কথা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সঠিক কারণ হল, রসূল (সাঃ)-এর ফুফুতো ভাই যুবায়ের (রাঃ) এবং অপর এক ব্যক্তির মধ্যে জমি সেচার নালা ও পানিকে কেন্দ্র করে ঝাগড়ার সৃষ্টি হয়। ব্যাপার নবী করীম (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছে। তিনি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে যে ফায়সালা দিলেন তাতে জিত যুবায়ের (রাঃ)-এরই হল। ফলে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলে উঠল যে, রসূল (সাঃ) এই ফায়সালা এই জন্য করলেন যে, যুবায়ের (রাঃ) তাঁর ফুফুতো ভাই হয়। এরই ভিত্তিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা নিসা) আয়াতের অর্থ হল, রসূল (সাঃ)-এর কোন কথা অথবা কোন ফায়সালার ব্যাপারে বিরোধিতা করা তো দূরের কথা সে ব্যাপারে অন্তরে কোন 'কিন্তু' রাখাও ঈমানের পরিপন্থী। কুরআনের এই আয়াত হাদীস অস্বীকারকারীদের জন্য তো বটেই এবং সেই সাথে অন্য এমন লোকদের জন্যও চিন্তা ও চেতনার দ্বার উদ্ঘাটন করে, যাঁরা তাঁদের ইমামের উক্তির মোকাবেলায় সহীহ হাদীসকে মানতে কেবল সংকোচ বোধই করেন না, বরং হয় পরিষ্কার ভাষায় তা মানতে অস্বীকার করেন, নতুবা বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন অপব্যাখ্যা করেন, নতুবা বিশ্বস্ত রাবী (বর্ণনাকারী)-কে যয়ীফ বা দুর্বল আখ্যা দিয়ে হাদীস প্রত্যাখ্যান করার নিন্দনীয় প্রচেষ্টা চালান।
But no, by your Lord, they can have no Faith, until they make you (O Muhammad SAW) judge in all disputes between them, and find in themselves no resistance against your decisions, and accept (them) with full submission.
সুরা আলে ইমরান৩ঃ১০২
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ حَقَّ تُقٰتِہٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ ﴿۱۰۲﴾
ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানুত্তাকুল্লা-হা হাক্কাতুকা-তিহী ওয়ালা-তামূতুন্না ইল্লা-ওয়া আনতুম মুছলিমূন।
হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর[১] এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
[১] এর অর্থ হল, ইসলামের যাবতীয় বিধান মেনে চলা, তার ওয়াজেব কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে পালন করা এবং যত নিষিদ্ধ বস্তু আছে, তার ধারে-কাছেও না যাওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, এই আয়াত নাযিল হলে সাহাবাগণ বড়ই বিচলিত হয়ে পড়েন। তাই মহান আল্লাহ [فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ] (তোমরা তোমাদের সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর।) আয়াত অবতীর্ণ করেন। তবে এই আয়াতকে উক্ত আয়াতের 'নাসিখ' (রহিতকারী) মনে না করে তার ব্যাখ্যাকারী মনে করাই বেশী সঠিক। কারণ, নাসখ তখনই মনে করতে হয়, যখন উভয় আয়াতের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধন সম্ভব না হয়। এখানে তো উভয় আয়াতের মধ্যে সমন্বয় ও সামঞ্জস্য সাধন করা সম্ভব। যেমন এইভাবে অর্থ করা,اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ مَاسْتَطَعْتُمْ "আল্লাহকে ঐভাবেই ভয় কর, যেভাবে স্বীয় সাধ্যমত তাঁকে ভয় করা উচিত।" (ফাতহুল ক্বাদীর)
O you who believe! Fear Allah (by doing all that He has ordered and by abstaining from all that He has forbidden) as He should be feared. [Obey Him, be thankful to Him, and remember Him always], and die not except in a state of Islam (as Muslims) with complete submission to Allah.

আল-আনআম ৬: ১২১
اَوَ مَنۡ کَانَ مَیۡتًا فَاَحۡیَیۡنٰہُ وَ جَعَلۡنَا لَہٗ نُوۡرًا یَّمۡشِیۡ بِہٖ فِی النَّاسِ کَمَنۡ مَّثَلُہٗ فِی الظُّلُمٰتِ لَیۡسَ بِخَارِجٍ مِّنۡہَا ؕ کَذٰلِکَ زُیِّنَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۲۲﴾
আওয়া মান কা-না মাইতান ফাআহইয়াইনা-হু ওয়া জা‘আলনা-লাহূনূরাইঁ ইয়ামশী বিহী ফিন্না-ছি কামাম মাছালুহূফিজজু লুমা-তি লাইছা বিখা-রিজিম মিনহা- কাযা-লিকা ঝুইয়িনা লিলকা-ফিরীনা মা-কা-নূইয়া‘মালূন।
যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমি পরে জীবিত করেছি এবং যাকে মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলোক দিয়েছি সেই ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির মত, যে অন্ধকারে রয়েছে এবং সে স্থান হতে বের হবার নয়?[১] এরূপে অবিশ্বাসীদের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্মকে শোভন করে রাখা হয়েছে।
[১] এই আয়াতে মহান আল্লাহ অবিশ্বাসী কাফেরকে মৃত এবং বিশ্বাসী মু'মিনকে জীবিত গণ্য করেছেন। কারণ, কাফের কুফরী ও ভ্রষ্টতার এমন অন্ধকারে ঘুরপাক খায়, যেখান হতে সে বের হতে পারে না, যার নিশ্চিত ফল ধ্বংস ও বিনাশ। পক্ষান্তরে মু'মিনের অন্তরকে আল্লাহ তাআলা ঈমান দ্বারা জীবিত করে দেন। যার ফলে জীবনের চলার পথ তার জন্য আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে যায় এবং সে ঈমান ও হিদায়াতের পথে চলতে থাকে। যার সুনিশ্চিত ফল হল, সফলতা ও কৃতকার্যতা। এটা ঐ বিষয়ই যা সূরা বাক্বারাহ ২:২৫৭, হূদ ১১:২৪, ফাত্বির ৩৫:১৯-২২ নং আয়াতগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে।
Is he who was dead (without Faith by ignorance and disbelief) and We gave him life (by knowledge and Faith) and set for him a light (of Belief) whereby he can walk amongst men, like him who is in the darkness (of disbelief, polytheism and hypocrisy) from which he can never come out? Thus it is made fair-seeming to the disbelievers that which they used to do.

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ "‏ إِنَّهُ لَيَسْتَغْفِرُ لِلْعَالِمِ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الْحِيتَانِ فِي الْبَحْرِ ‏"‏ ‏.‏
আবুদ-দারদা’ (উয়াইমির বিন মালিক) (রাঃ)
আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয় আসমান ও যমীনের অধিবাসীগণ জ্ঞানীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি সমুদ্রের মাছরা পর্যন্ত। [২৩৭]
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৩৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

আল-মায়েদা ৫: ৩
حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃُ وَ الدَّمُ وَ لَحۡمُ الۡخِنۡزِیۡرِ وَ مَاۤ اُہِلَّ لِغَیۡرِ اللّٰہِ بِہٖ وَ الۡمُنۡخَنِقَۃُ وَ الۡمَوۡقُوۡذَۃُ وَ الۡمُتَرَدِّیَۃُ وَ النَّطِیۡحَۃُ وَ مَاۤ اَکَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَکَّیۡتُمۡ ۟ وَ مَا ذُبِحَ عَلَی النُّصُبِ وَ اَنۡ تَسۡتَقۡسِمُوۡا بِالۡاَزۡلَامِ ؕ ذٰلِکُمۡ فِسۡقٌ ؕ اَلۡیَوۡمَ یَئِسَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ دِیۡنِکُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡہُمۡ وَ اخۡشَوۡنِ ؕ اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا ؕ فَمَنِ اضۡطُرَّ فِیۡ مَخۡمَصَۃٍ غَیۡرَ مُتَجَانِفٍ لِّاِثۡمٍ ۙ فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۳﴾
হুররিমাত ‘আলাইকুমুল মাইতাতুওয়াদ্দামুওয়া লাহমুল খিনঝীরি ওয়ামা-উহিল্লা লিগাইরিল্লাহি বিহী ওয়াল মুনখানিকাতুওয়াল মাওকূযাতুওয়াল মুতারাদ্দিইয়াতুওয়ান্নাতীহাতু ওয়ামা-আকালাছ ছাবু‘উ ইল্লা-মা যাক্কাইতুম ওয়ামা-যুবিহা ‘আলান নুসুবি ওয়া আন তাছতাকছিমূবিলআঝলা-মি যা-লিকুম ফিছকুন আল ইয়াওমা ইয়াইছাল্লাযীনা কাফারূমিন দীনিকুম ফালা-তাখশাওহুম ওয়াখশাওনি আলইয়াওমা আকমালতুলাকুম দীনাকুম ওয়া আত মামতু‘আলাইকুম নি‘মাতী ওয়া রাদীতুলাকুমুল ইছলা-মা দীনান ফামানিদতুররা ফী মাখমাসাতিন গাইরা মুতাজা-নিফিললিইছমিন ফাইন্নাল্লা-হা গাফূরুর রাহীম।
তোমাদের জন্য হারাম (অবৈধ) করা হয়েছে মৃত পশু, রক্ত ও শূকর-গোশত, আল্লাহ ভিন্ন অন্যের নামে উৎসর্গীকৃত পশু,[১] শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত জন্তু,[২] ধারবিহীন কিছু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত জন্তু,[৩] পতনে মৃত জন্তু,[৪] শৃঙ্গাঘাতে মৃত জন্তু[৫] এবং হিংস্র পশুর খাওয়া জন্তু;[৬] তবে তোমরা যা যবেহ দ্বারা পবিত্র করেছ তা ছাড়া।[৭] আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেওয়া হয় তা[৮] এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা,[৯] এ সব পাপকার্য। আজ অবিশ্বাসীগণ তোমাদের ধর্মের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় করো না, শুধু আমাকে ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। তবে যদি কেউ ক্ষুধার তাড়নায় (নিষিদ্ধ জিনিষ খেতে) বাধ্য হয়; কিন্তু ইচ্ছা করে পাপের দিকে ঝুঁকে না, তাহলে (তার জন্য) আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [১০]
[১] এখান থেকে ঐ সমস্ত নিষিদ্ধ বা হারামকৃত (পশুর) ব্যাপারে আলোচনা শুরু হচ্ছে, যার ইঙ্গিত সূরার প্রারম্ভে দেওয়া হয়েছে। আয়াতের এই অংশটুকু সূরা বাক্বারাতে উল্লেখ হয়েছে। (দেখুন আয়াত নং ২:১৭৩)
[২] যাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে অথবা নিজেই কোনভাবে ফাঁস লাগা অবস্থায় শবাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে, উভয় অবস্থায় এই মৃত (পশু ভক্ষণ) করা হারাম।
[৩] অর্থাৎ, পাথর অথবা লাঠি অথবা অন্য কোন জিনিস দ্বারা আঘাত করার কারণে বিনা যবেহতে মারা গেছে। জাহেলী যুগে এই সমস্ত পশুকে (হালাল মনে করে) ভক্ষণ করা হত। ইসলামী শরীয়তে তা নিষেধ করে দেওয়া হয়ছে। বন্দুকের শিকার; বন্দুক দ্বারা শিকার করা হয়েছে এমন পশুর ব্যাপারে উলামাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম শাওকানী (রঃ) বন্দুক দ্বারা শিকার করা পশুর ব্যাপারে একটি হাদীস থেকে প্রমাণ উল্লেখ করে তা হালাল বলেছেন। অর্থাৎ (শিকারী) যদি 'বিসমিল্লাহ' বলে গুলি ছুঁড়ে এবং যবেহ করার পূর্বেই শিকার মারা যায়, তাহলে তাঁর মতানুসারে তা ভক্ষণ করা বৈধ। (ফাতহুল ক্বাদীর) (অন্য মতে, যে বন্দুকের গুলি শিকারের দেহ ভেদ করে যায়, চামড়া কেটে ফেলে রক্তপাত ঘটায় সে বন্দুকের শিকার হালাল। পক্ষান্তরে ভেদ না করে কেবল আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে তা খাওয়া বৈধ নয়।) (সিলসিলাহ সহীহাহ ৫/৫১১)
[৪] (ঐ পশু) যে কোনভাবে পড়ে অথবা কেউ পাহাড় বা অন্য কোন উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা মারার কারণে পড়ে গিয়ে মারা যায়।
[৫] نطيحة , منطوحة ঐ পশুকে বলা হয়; যাকে অন্য পশু শিং দ্বারা ধাক্কা মেরেছে বা শিং-লড়ায়ে বিনা যবাইয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
[৬] অর্থাৎ সিংহ, চিতা ও নেকড়ে বাঘ ইত্যাদি (শিকারী বা ছেদক দাঁতবিশিষ্ট) হিংস্রজন্তু যদি কোন শিকারকে নিজে খাওয়ার উদ্দেশ্যে ধরার ফলে মৃত্যু হয়েছে (এমন পশু)। জাহেলী যুগে এই ধরণের মৃত জানোয়ার খাওয়া হত। (কিন্ত ইসলাম এই ধরণের মৃত পশু খাওয়া হারাম করে দিয়েছে।)
[৭] অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকটে এই ব্যতিক্রম পূর্বে উল্লিখিত শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত জন্তু, ধারবিহীন কিছু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত জন্তু, পতনে মৃত জন্তু, শৃঙ্গাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুর খাওয়া জন্তুর ব্যাপারে। অর্থাৎ, ব্যতিক্রম হল, যদি ঐ সকল পশুকে তোমরা এমন অবস্থায় পাও যে, তার মৃত্যু হয়নি; এখনো জীবিত আছে, তারপর তাকে শরয়ী পদ্ধতিতে যবেহ কর, তাহলে তোমাদের জন্য (ঐ পশু) খাওয়া বৈধ হবে। জীবিত থাকার চিহ্ন হল, যবেহ করার সময় যেন তার হাত-পা নড়ে ওঠে। কিন্তু ছুরি চালানোর সময় যদি এই অবস্থা না হয়, তাহলে জানতে হবে সে পশুটি মৃত। যবেহর শরয়ী পদ্ধতি হল, 'বিসমিল্লাহ' বলে ধারালো ছুরি দ্বারা এমনভাবে তার গলায় পেঁচাতে হবে যেন তার সমস্ত মোটা শিরাগুলি কেটে যায়। যবেহ ছাড়াও শরীয়তে 'নহর' করা বৈধ; যার পদ্ধতি হল, পশু দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সিনায় ছুরি (বা বর্শা) দ্বারা আঘাত করতে হবে; যাতে তার কণ্ঠনালী ও রক্তবাহী বিশেষ শিরা কেটে যায় এবং সমস্ত রক্ত প্রবাহিত হয়ে যায়।
[৮] মুশরিকগণ তাদের পূজ্যপ্রতিমার নিকটে পাথর বা অন্য কিছু স্থাপন করে একটি নির্দিষ্ট জায়গা বানিয়ে নিত; যাকে نصب (বেদী, থান বা আস্তানা) বলা হত। আর সেই স্থানে মানত ও নযর মানা পশু ঐ পূজ্যপ্রতিমার নামে বলি দিত। অর্থাৎ, এটি {وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللهِ} (গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ) এরই একটি ধরন। সুতরাং এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আস্তানা, কবরস্থান ও দর্গায় গিয়ে লোকেরা নিজের মনষ্কামনা পূরণ করার জন্য এবং কবরস্থ বুযুর্গের সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য যে পশু (মুরগী, ছাগল ইত্যাদি) যবেহ বা উৎসর্গ করে কিংবা পোলাও বা (সিন্নি, মিঠাই) খাবার বণ্টন করে, তা ভক্ষণ করা হারাম। আর এ সব আল্লাহর বাণীঃ {وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ} এর শামিল।
[৯] {وَأَن تَسْتَقْسِمُواْ بِالأَزْلاَمِ} এই অংশের দুটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে ; (ক) তীরের মাধ্যমে বণ্টন করা (খ) তীরের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করা। প্রথম অর্থের ব্যাপারে বলা হয় যে, জুয়া ইত্যাদিতে যবেহকৃত পশুর গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে উক্ত তীর (লটারী হিসাবে) ব্যবহার করা হত। যার ফলে কেউ প্রাপ্য অংশের চাইতে বেশী পেত, আবার কেউ সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হত। দ্বিতীয় অর্থের ব্যাপারে বলা হয় যে, বিশেষ তীর হত, তারা কোন কর্মের প্রারম্ভে তার মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করত। তারা তিন ধরণের তীর তৈরী করে রেখেছিল। তার মধ্যে একটিতে (افْعَلْ ) অর্থাৎ 'কর' এবং দ্বিতীয়টিতে (لاَ تَفْعَلْ ) অর্থাৎ 'করো না' লিখা থাকত। আর তৃতীয়টিতে কোন কিছু লেখা থাকত না। ভাগ্য পরীক্ষার সময় যদি প্রথম তীরটি (যাতে 'কর' লেখা আছে) বের হত, তাহলে তারা সে কর্মটি সম্পাদন করত, যদি দ্বিতীয় তীরটি (যাতে 'করো না' লেখা আছে) বের হত, তাহলে তারা সে কর্মটি সম্পাদন করত না, আর যদি তৃতীয় তীরটি (যাতে কোন কিছু লেখা থাকত না) বের হত, তাহলে তারা পুনরায় ভাগ্য পরীক্ষা করত। আর এটাও এক ধরণের গণকের কাজ এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট সাহায্য প্রার্থনারই একটি চিত্র মাত্র। এই জন্য (ইসলামে) একে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। استقسام এর অর্থ হল, ভাগ্য পরীক্ষা করা।
[১০] এখানে ক্ষুধার শেষ পর্যায়ের অবস্থায় উল্লিখিত হারাম খাদ্য ভক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ, তবে তাতে যেন আল্লাহর অবাধ্যাচরণ উদ্দেশ্য না হয় এবং সীমালঙ্ঘন করা না হয়। অর্থাৎ প্রাণ বাঁচানোর জন্য যতটুকু প্রয়োজন শুধুমাত্র ততটুকু ছাড়া বেশী যেন ভক্ষণ করা না হয়।
Forbidden to you (for food) are: Al-Maytatah (the dead animals - cattle-beast not slaughtered), blood, the flesh of swine, and the meat of that which has been slaughtered as a sacrifice for others than Allah, or has been slaughtered for idols, etc., or on which Allah's Name has not been mentioned while slaughtering, and that which has been killed by strangling, or by a violent blow, or by a headlong fall, or by the goring of horns - and that which has been (partly) eaten by a wild animal - unless you are able to slaughter it (before its death) - and that which is sacrificed (slaughtered) on An-Nusub (stone altars). (Forbidden) also is to use arrows seeking luck or decision, (all) that is Fisqun (disobedience of Allah and sin). This day, those who disbelieved have given up all hope of your religion, so fear them not, but fear Me. This day, I have perfected your religion for you, completed My Favour upon you, and have chosen for you Islam as your religion. But as for him who is forced by severe hunger, with no inclination to sin (such can eat these above-mentioned meats), then surely, Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.

সুরা বাকারা ২:১৭৩
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃَ وَ الدَّمَ وَ لَحۡمَ الۡخِنۡزِیۡرِ وَ مَاۤ اُہِلَّ بِہٖ لِغَیۡرِ اللّٰہِ ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۷۳﴾
ইন্নামা-হাররামা ‘আলাইকুমুল মাইতাতা ওয়াদ্দামা ওয়া লাহমাল খিনঝীরি ওয়ামা উহিল্লা বিহী লিগাইরিল্লা-হি ফামানিদতুররা গাইরা বা-গিওঁ ওয়ালা-‘আ-দিন ফালা-ইছমা ‘আলাইহি ইনাল্লা-হা গাফূরুর রাহীম।
নিশ্চয় (আল্লাহ) তোমাদের জন্য শুধু মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যে সব জন্তুর উপরে (যবেহ কালে) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়ে থাকে, তা তোমাদের জন্য অবৈধ করেছেন। [১] কিন্তু যে অনন্যোপায় অথচ অন্যায়কারী কিংবা সীমালংঘনকারী নয়, তার কোন পাপ হবে না। আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
[১] এই আয়াতে চারটি হারামকৃত জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এখানে إنما শব্দ দ্বারা সীমিতকরণে এই সন্দেহের সৃষ্টি হয় যে, হারাম কেবল এই চারটি জিনিসই। অথচ এ ছাড়াও আরো অনেক জিনিস হারাম আছে। তাই প্রথমতঃ এটা বুঝে নেওয়া উচিত যে, এই সীমিতকরণ বিশেষ কথা প্রসঙ্গে এসেছে। অর্থাৎ, মুশরিকরা হালাল জানোয়ারকেও হারাম করে নিত। তাই মহান আল্লাহ বললেন, হারাম শুধুমাত্র এইগুলো। কাজেই এই সীমিতকরণ তুলনামূলক। অর্থাৎ, এ ছাড়াও আরো হারাম জিনিস আছে যা এখানে উল্লিখিত হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ হাদীসে প্রাণীর হালাল-হারাম সংক্রান্ত দু'টি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। সেটাকে আয়াতের সঠিক তাফসীর হিসেবে সামনে রাখা উচিত। হিংস্র পশুর মধ্যে শিকারী দাঁত বিশিষ্ট পশু এবং পাখীর মধ্যে শিকারী নখ বিশিষ্ট পাখী হারাম। তৃতীয়তঃ যেসব পশুর হারাম হওয়ার কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত; যেমন গাধা, কুকুর ইত্যাদি, সেগুলোও হারাম। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, হাদীসও কুরআনের মত দ্বীনের উৎস এবং শরীয়তের দলীল। দুটোকে মেনে নিলেই দ্বীন পরিপূর্ণ হবে, শুধু কুরআন মানলে ও হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করলে দ্বীন পরিপূর্ণ হবে না। 'মৃত' বলতে, এমন হালাল পশু যা যথানিয়মে যবেহ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে অথবা কোন দুর্ঘটনায় (বিস্তারিত আলোচনা সূরা মায়িদাহ ৫:৩ নং আয়াতে আছে) মারা গেছে কিংবা শরীয়তের তরীকার পরিপন্থী নিয়মে যাকে যবেহ করা হয়েছে; যেমন, গলা টিপে অথবা পাথর ও লাঠির আঘাত ইত্যাদি দ্বারা মারা হয়েছে কিংবা বর্তমানের যান্ত্রিক যবেহ দ্বারা মারা হয়েছে যা আসলে আঘাত দিয়ে হত্যা করার শামিল (তা আসলে মৃত এবং হারাম)। তবে হাদীসে দু'টো মৃত প্রাণী বৈধ করা হয়েছে। আর তা হল, মাছ ও পঙ্গপাল। এ দু'টো মৃত হারাম হওয়ার বিধান থেকে স্বতন্ত্র। 'রক্ত' বলতে প্রবাহিত রক্ত। অর্থাৎ, যবেহ করার পর যে রক্ত বের হয়ে বয়ে যায়। গোশতের সাথে যে রক্ত লেগে থাকে, তা হালাল। এছাড়াও দু'টো রক্তকে হাদীসে বৈধ বলা হয়েছেঃ কলিজা (লিভার) এবং তিল্লী (প্লীহা)।
শুয়োর নিকৃষ্ট জানোয়ার; বিধায় আল্লাহ তাকে হারাম করেছেন। শরীয়তে এমন জানোয়ারও হারাম, যাকে গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা হয়েছে। যেমন, আরবের মুশরিকরা লাত এবং উয্যা ইত্যাদির নামে এবং অগ্নিপূজকরা আগুনের নামে (বা উদ্দেশ্যে) যবেহ করত। আর এরই আওতাভুক্ত হল সেই পশু, যাকে অজ্ঞ মুসলিমরা মৃত ওলীদের ভালবাসায়, তাদের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে অথবা তাদের ভয়ে এবং তাদের নিকট (কোন কিছু পাওয়ার) আশায় কবর ও আস্তানাসমূহে যবেহ করে বা আস্তানার খাদেমকে ওলীর নামে দান করে আসে। (যেমন, অনেক আউলিয়ার কবরে সাইনবোর্ড লাগানো আছে যে, 'দাতা' সাহেবের নামে দান করার জন্য গরু-ছাগল এখানে জমা করুন।) ওলীর নামে উৎসর্গীকৃত এই পশুগুলো আল্লাহর নামে যবেহ করা হলেও তা হারাম। কারণ, এ থেকে উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ নয়, বরং কবরবাসীর সন্তুষ্টি লাভ, গায়রুল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন অথবা তার (অতিপ্রাকৃত) ভয়ে বা তার নিকট (কিছু পাওয়ার) আশা করে করা হয়; যা শিরক।
অনুরূপ পশু ছাড়াও যেসব জিনিস গায়রুল্লাহর নামে মানত ও দান করা হয়, তা সবই হারাম। যেমন, কবরে নিয়ে গিয়ে অথবা সেখান থেকেই ক্রয় করে সেখানে উপস্থিত ফকীর-মিসকীনদের মাঝে ডেগচির খয়রাতী খাবার কিংবা মিষ্টি ও টাকা-পয়সা বণ্টন কিংবা নযরানার বাট্টে মানত ও দানের টাকা-পয়সা দেওয়া অথবা উরসের সময় সেখানে দুধ ইত্যাদি খাদ্য পাঠানো; এ সমস্ত কার্যকলাপ হারাম ও অবৈধ। কেননা, এ সবই গায়রুল্লাহর নামে মানত ও দান করা বিবেচিত হয়। মানত করাও নামায-রোযা ইত্যাদি ইবাদতের মত একটি ইবাদত। আর সর্বপ্রকার ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। এ জন্যই হাদীসে এসেছে যে, "সে অভিশপ্ত, যে গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করে।" (সহীহুল জা'মে আলবানী ২/১০২৪) তাফসীরে নিশাপুরীর হাওয়ালায় তাফসীরে আযিযীতে উল্লেখ হয়েছে যে, ((أَجْمَعَ الْعُلَمَاءُ لَو أَنَّ مُسْلِمًا ذَبَحَ ذَبِيْحَةً يُرِيْدُ بِذَبْحِهَا التَّقَرُّبَ إِلَى غَيْرِ اللهِ، صَارَ مُرْتَدًّا وَذَبِيْحَتُهُ ذَبِيْحَةً مُرْتَدٍّ)) 'আলেমগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেন যে, যদি কোন মুসলিম গায়রুল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যবেহ করে, তাহলে সে মুরতাদ (দ্বীন থেকে খারিজ) হয়ে যাবে এবং তার যবেহ করা পশু একজন মুর্তাদ্দের যবেহকৃত পশুর মত হবে। (তাফসীরে আযিযী ৬১১পৃষ্ঠা আশরাফুল হাওয়াশীর বরাতে)
He has forbidden you only the Maytatah (dead animals), and blood, and the flesh of swine, and that which is slaughtered as a scrifice for others than Allah (or has been slaughtered for idols, etc., on which Allah's Name has not been mentioned while slaughtering). But if one is forced by necessity without wilful disobedience nor transgressing due limits, then there is no sin on him. Truly, Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.

وَعَن أَبي يَعلَى شَدَّادِ بنِ أَوسٍ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: « إنَّ الله كَتَبَ الإحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإذَا قَتَلْتُم فَأحْسِنُوا القِتْلَة، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأحْسِنُوا الذِّبْحَةَ، وَليُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَه، وَلْيُرِح ذَبِيحَتَهُ ». رواه مسلم
আবূ ইয়া’লা শাদ্দাদ ইবনে আওস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ প্রতিটি কাজকে উত্তমরূপে (অথবা অনুগ্রহের সাথে) সম্পাদন করাটাকে ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যখন (কাউকে) হত্যা করবে, তখন ভালভাবে হত্যা করো এবং যখন (পশু) জবাই করবে, তখন ভালভালে জবাই করো। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, সে যেন নিজ ছুরি ধারাল করে নেয় এবং যবেহযোগ্য পশুকে আরাম দেয়।’’ (অর্থাৎ জবাই-এর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে।)
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৬৪৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

حَدَّثَنَا أَبُو مُصْعَبٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ أُحِلَّتْ لَنَا مَيْتَتَانِ الْحُوتُ وَالْجَرَادُ ‏"‏ ‏.‏
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাদের জন্য দু’টি মৃত জীব হালাল করা হয়েছেঃ মাছ ও টিড্ডি (এক প্রকারের বড় জাতের ফড়িং)। [৩২১৮]
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩২১৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ سَعْدٍ الْجَارِيِّ مَوْلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَنَّهُ قَالَ سَأَلْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ عَنْ الْحِيتَانِ يَقْتُلُ بَعْضُهَا بَعْضًا أَوْ تَمُوتُ صَرَدًا فَقَالَ لَيْسَ بِهَا بَأْسٌ قَالَ سَعْدٌ ثُمَّ سَأَلْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ.
উমার ইবনু খাত্তাব (রা)
এর আযাদকৃত গোলাম সা‘দুলজারী বর্ণনা করেন- যে সমস্ত মাছ পরস্পরকে হত্যা করে ফেলে বা শীতে মারা যায় সে ধরনের মাছ সম্পর্কে আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি তখন বললেন : উহা খাওয়াতে কোন দোষ নেই। পরে আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু আ’স (র)-কে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনিও অনুরূপ জবাব প্রদান করেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১০৫০
হাদিসের মান: অন্যান্য

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ نَاسًا مِنْ أَهْلِ الْجَارِ قَدِمُوا فَسَأَلُوا مَرْوَانَ بْنَ الْحَكَمِ عَمَّا لَفَظَ الْبَحْرُ فَقَالَ لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ وَقَالَ اذْهَبُوا إِلَى زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ فَاسْأَلُوهُمَا عَنْ ذَلِكَ ثُمَّ ائْتُونِي فَأَخْبِرُونِي مَاذَا يَقُولَانِ فَأَتَوْهُمَا فَسَأَلُوهُمَا فَقَالَا لَا بَأْسَ بِهِ فَأَتَوْا مَرْوَانَ فَأَخْبَرُوهُ فَقَالَ مَرْوَانُ قَدْ قُلْتُ لَكُمْ ১৮১৯-قَالَ مَالِك لَا بَأْسَ بِأَكْلِ الْحِيتَانِ يَصِيدُهَا الْمَجُوسِيُّ لِأَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الْبَحْرِ هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُهُ قَالَ مَالِك وَإِذَا أُكِلَ ذَلِكَ مَيْتًا فَلَا يَضُرُّهُ مَنْ صَادَهُ.
আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান (র)
মদীনার দিকে সমুদ্র তীরবর্তী গ্রাম জারের বাসিন্দাগণ মারওয়ান ইবনু হাকাম-এর নিকট এসে সমুদ্র-নিক্ষিপ্ত প্রাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করল। মারওয়ান বললেন : উহা আহার করায় কোন দোষ নেই। যাইদ ইবনু সাবিত ও আবূ হুরায়রা (রা)-কেও এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পার। তাঁরা কি বললেন আমাকে তা জানিয়ে যেও। তারা দুজনের নিকট এসে এতদসম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাঁরাও বললেন : এতে কোন দোষ নেই। মারওয়ানের নিকট তাঁদের এই জবাব শুনালে তিনি বললেন : আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে এই কথা বলে দিয়েছিলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
মালিক (র) বলেন : মজূসী (অমুসলিম) ব্যক্তি কর্তৃক শিকারকৃত মাছ আহার করা জায়েয। কারণ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সমুদ্রের পানি পাক এবং উহার মৃত প্রাণীও হালাল।
মালিক (র) বলেন : মৃত প্রাণীও যখন হালাল, তখন উহা শিকার করে যে-ই আনুক না কেন উহাতে ক্ষতি নেই।
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১০৫২
হাদিসের মান: অন্যান্য

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «لَا تَشْتَرُوا السَّمَكَ فِي الْمَاءِ; فَإِنَّهُ غَرَرٌ» رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَأَشَارَ إِلَى أَنَّ الصَّوَابَ وَقْفُهُ
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাছ পানিতে থাকা অবস্থায় ক্রয় করবে না- কেননা এটা একটা ধোঁকা বিশেষ। - আহমাদ এর সানাদকে মাওকূফ হওয়া সঠিক বলে ইঙ্গিত করেছেন। [৮৭৫]
বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৮২২
হাদিসের মান: অন্যান্য

وَعَن عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم سَبْعَ غَزَوَاتٍ نَأكُلُ الجَرَادَ وَفِي رِوَايةٍ : نَأكُلُ مَعَهُ الجَرَادَ متفق عليه
আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ)
তিনি বলেন, “আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে থেকে সাতটি যুদ্ধ করেছি, তাতে আমরা পঙ্গপাল খেয়েছি।”
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমরা তাঁর সাথে পঙ্গপাল খেয়েছি।’ (বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম ৫১৫৭নং)
*(অর্থাৎ, পঙ্গপাল খাওয়া হালাল এবং তা মাছের মতো মৃতও হালাল।)
আল লু'লু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ৩৫৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ سُلَيْمٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ سَلَمَةَ، أَنَّ الْمُغِيرَةَ بْنَ أَبِي بُرْدَةَ مِنْ بَنِي عَبْدِ الدَّارِ، أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ: سَأَلَ رَجُلٌ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا نَرْكَبُ الْبَحْرَ، وَنَحْمِلُ مَعَنَا الْقَلِيلَ مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ تَوَضَّأْنَا بِهِ عَطِشْنَا أَفَنَتَوَضَّأُ مِنْ مَاءِ الْبَحْرِ؟ فَقَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ، الْحِلُّ مَيْتَتُهُ»
আবূ হুরায়রা (রাঃ)
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্রে ভ্রমণ করি। আমাদের সঙ্গে অল্প পরিমাণ পানি নিয়ে থাকি। এ পানি দ্বারা যদি আমরা উযূ করি তবে (পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে) আমরা পিপাসায় কষ্ট পাবো। (এমতাবস্থায়) আমরা কি সমুদ্রের পানি দ্বারা উযূ করব? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং সমুদ্রের মৃত প্রাণীও হালাল। [১]
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ آدَمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ وَهْبِ بْنِ كَيْسَانَ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: «بَعَثَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ ثَلَاثُ مِائَةٍ، نَحْمِلُ زَادَنَا عَلَى رِقَابِنَا، فَفَنِيَ زَادُنَا حَتَّى كَانَ يَكُونُ لِلرَّجُلِ مِنَّا كُلَّ يَوْمٍ تَمْرَةٌ» فَقِيلَ لَهُ: يَا أَبَا عَبْدِ اللَّهِ، وَأَيْنَ تَقَعُ التَّمْرَةُ مِنَ الرَّجُلِ؟، قَالَ: «لَقَدْ وَجَدْنَا فَقْدَهَا حِينَ فَقَدْنَاهَا، فَأَتَيْنَا الْبَحْرَ، فَإِذَا بِحُوتٍ قَذَفَهُ الْبَحْرُ، فَأَكَلْنَا مِنْهُ ثَمَانِيَةَ عَشَرَ يَوْمًا»
জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ)
তিনি বলেনঃ আমাদের তিনশত ব্যক্তির একদলকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিহাদে পাঠান। আমরা আমাদের পাথেয় কাঁধে বয়ে নিচ্ছিলাম। এক সময় আমাদের পাথেয় নিঃশেষ হয়ে গেল। এমনকি আমাদের প্রত্যেকের একটি করে খেজুর মিলত। এক ব্যক্তি বললোঃ হে আবূ আবদুল্লাহ্! একজন লোকের একটি খেজুরে কী হয়? জাবির (রাঃ) বললেনঃ তাও যখন ফুরিয়ে গেল, তখন আমরা বুঝলাম, একটি খেজুরের মূল্য কী? অতঃপর আমরা সমূদ্র তীরে আসলাম এবং সেখানে এমন এক মাছ পেলাম, সমূদ্র যা তীরে নিক্ষেপ করেছে। তা আমরা আঠার দিন পর্যন্ত খেয়েছিলাম।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৩৫১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.