'চিন্তার ভিন্নতা'/ আরিফ আজাদ

আচ্ছা, এই যে এই এতো বিশাল মহাবিশ্ব, এই মহাবিশ্বের মধ্যে কতো বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। এই গ্যালাক্সি গুলো আকারে এতোই বিশাল যে, এর যেকোন একটি গ্যালাক্সির তুলনায় আমাদের পৃথিবীটা সাগরের তলার একটি ক্ষুদ্র বালির মতো।
এমতাবস্থায়, আপনাদের মহা ক্ষমতাশীল আল্লাহ এতো বিশাল মহাবিশ্ব রেখে পৃথিবীর মতো ক্ষুদ্র একটা গ্রহে মানুষের মতো ক্ষুদ্র কিছু প্রাণী নামাজ পড়ছে কী পড়ছেনা, জ্বিকির করছে কী করছেনা, রোজা রাখছে কী রাখছেনা, কোরআন তিলাওয়াত করছে কী করছেনা, পর্দা করছে কী করছেনা এসব নিয়ে পড়ে আছেন কেনো? এতো বিশাল মহাবিশ্বে উনার ভাবার মতো, কনসার্নড হওয়ার মতো কী আর কিছুই নাই?"
অনেক আগে এক নাস্তিক এই প্রশ্নটা করেছিলো।
বর্তমানেও অনেকে করে। শুনলেই মনে হবে, আসলেই তো! এভাবে তো ভাবিনি আগে। মহাবিশ্বের তুলনায় কতো ক্ষুদ্র আমরা! আমরা কী করছি না করছি তা নিয়ে উনার এত্তো কী আসে যায়? এতো বিশাল মহাবিশ্ব রেখে উনি আমাদের নিয়েই কেনো এতো ব্যতিব্যস্ত?
মূলত, এতো বিশাল মহাবিশ্ব নিয়ে যে উনি কনসার্নড নন, এইটা একটা ভুল ধারণা।
এই বিশাল মহাবিশ্ব উনি এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, এর একটা অন্যটার সাথে লিঙ্কড আপ।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমন ধরুন জুপিটার। জুপিটার হলো আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এটা আমাদের পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১১ গুন বড়। ১১-১২ টা পৃথিবীকে গিলে খেয়ে ফেলার মতো ক্ষমতা (স্পেস) রাখে এই গ্রহ দানব জুপিটার।
আপাতঃদৃষ্টিতে জুপিটারকে বেকার মনে হলেও, জুপিটারের কাঁধে কিন্তু বিশাল একটা দায়িত্ব রয়েছে।
কী সেই দায়িত্ব? বলছি....
বিভিন্ন সৌরজগতের অনেক নক্ষত্র মাঝে মাঝে আমাদের গ্যালাক্সিতে চলে আসে। এদের বলা হয় Hot Jupiters...
নতুন ঢুকে পড়া এই নক্ষত্রদের সাথে তখন আমাদের গ্যালাক্সির কিছু কিছু নক্ষত্রদের সংঘর্ষ তথা ধাক্কাধাক্কি লাগে। একটা পর্যায়ে গিয়ে উভয় নক্ষত্র ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে।
এই টুকরোগুলোকে আমরা বলি- ধূমকেতু।
এই টুকরোগুলোর কোনটার সাইজ একটা পৃথিবীর সমান, আবার কোনটার সাইজ পৃথিবীর চেয়ে হালকা ছোট।
সংঘর্ষের ফলে আলাদা হওয়া টুকরোগুলো তখন দিক্বিদিক ছুটতে থাকে।
কিছু টুকরো গিয়ে সূর্যের মধ্যে পড়ে, কিছু অন্যান্য গ্রহের দিকে ছুটে যায় এবং কিছু ছুটে আসে আমাদের পৃথিবীর দিকে।
কিন্তু, আমাদের পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা টুকরোগুলোকে জুপিটার আমাদের দিকে আসতে দেয় না।
সে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে। যখনই কোন টুকরো আমাদের পৃথিবীর দিকে ছুটতে থাকে, তখন জুপিটার সেই বিশাল সাইজের টুকরোটাকে তার দিকে টেনে নিয়ে যায়।
ব্যাপারটা এমন, জুপিটার আমাদের বড় ভাই। জুপিটারের দায়িত্ব আমাদের দেখভাল করা। এখন কেউ যদি আমাদের এ্যাটাক করতে আসে, জুপিটার তখন বলে- 'অই, কই যাস অইদিকে? তোর সাহস তো কম না! আমার ছোট ভাইরে মারতে যাস? দিমু এক থাবড়ানি! এদিক আয়....'
এভাবেই আমাদের দিকে ছুটে আসা বিশাল বিশাল এই টুকরোগুলোকে জুপিটার নিজের দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে আমাদের প্রটেক্ট করে।
নক্ষত্রদের এই টুকরোগুলো যদি আমাদের পৃথিবীকে আঘাত করে, আমাদের পৃথিবী পাউডারের গুড়া হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যাবে।
কিন্তু জুপিটারের কিছুই হয় না। কারণ এই দৈত্য গ্রহ দানবের এতো বিশাল শরীর যে, এরকম কয়েক 'শ টুকরো সে অনায়েশে হজম করে ফেলতে পারে।
ভাবুন তো, জুপিটার না থাকলে আমাদের ঠিক কী হতো?
যারা বলে, মহা শক্তিশালী আল্লাহ কেনো আমরা নামাজ পড়ছি কীনা, জ্বিকীর করছি কীনা, রোজা রাখছি কীনা এসব ব্যাপারে এতো সিরিয়াস।
আরে বাপু! শুধু এটাই দেখলেন?
এই মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ যে আপনারে জুপিটারের মাধ্যমে পাউডারের গুঁড়া হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাচ্ছেন সেই খেয়াল কী আপনার আছে?
আপনি নামাজ পড়ছেন কীনা কেবল সেই ব্যাপারে উনি সিরিয়াস নন, উনিই আপনার খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন। সামান্য বীজকে মহীরুহ বৃক্ষে পরিণত উনিই করেন।
উনি যদি গ্র্যাভিটির ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আপনার সাধের পৃথিবী যে কতো আগেই প্যাকেট হয়ে সূর্যের পেটে চলে যেতো, তার হিসেব নেই।
উনিই সূর্যকে পৃথিবী থেকে এমন একটা দূরত্বে সেট করেছেন, যার চেয়ে দূরত্ব একটু বেশি হলে আপনার মধুর পৃথিবী রাত্রি বেলা একদম ফ্রিজ হয়ে যেতো।
তখন পৃথিবীর অবস্থা হতো এন্টার্কটিকা মহাদেশের মতো। পৃথিবীতে তখন পেঙ্গুইন ছাড়া কিছুই আর এক্সিস্ট করতো না।
আর, দূরত্ব এখন যা আছে, তারচেয়ে যদি একটু কম হতো, সূর্যটা যদি পৃথিবীর আরেকটু নিকটে হতো, তাহলে সবকিছু কাঠকয়লার মতো পুঁড়ে ছাঁই হয়ে যেতো কবেই।
সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি। এটার ফলে স্কীন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক কিছু রোগের সম্ভাবনা ছিলো।
কিন্তু, বায়ুমণ্ডলে তিনি 'ওজোন স্তর' দিয়ে এমন একটা পরিশোধক সিস্টেম তৈরি করে দিলেন যে, সব রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে ঢুকার অনুমতি পেলেও অতিবেগুনি রশ্মি ঢুকার অনুমতি পায় না। ওজোন স্তর তাকে আটকে দেয়।
এই যে আপনাদের এতো ক্ষুদ্র এই পৃথিবী, সেই ক্ষুদ্র পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী মানুষের জন্য মহাবিশ্বে তিনি যে এতো চমৎকার প্রটেক্টিভ সিস্টেম করে রেখেছেন, কখনো এরজন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন কী?
খালি উনার ইবাদাত করার বেলায় অভিযোগ তুলেন, উনি যে এতো এতোভাবে আপনার মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবকে লালন পালন করছেন মাটি, অক্সিজেন, পানি দিয়ে, আপনাকে যে চারপাশের ভয়ঙ্কর বিপদাপদ থেকে রক্ষা করছেন, সেগুলো কী আপনাকে একটিবার ভাবায় না?
মহাবিশ্বের এতো এতো দিক সামলানোর পরেও উনি যে আপনার নিশ্বাঃস নেওয়ার জন্য অক্সিজেন সাপ্লাইটা বন্ধ করে দেন না, অন্তত সে ব্যাপারে তো একটু ভাবতে পারেন।
চিন্তাটা একটু ভিন্নভাবে করুন। কৃতজ্ঞ হোন। কৃতজ্ঞ হওয়া ভালো।
'চিন্তার ভিন্নতা'/ আরিফ আজাদ

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.