‘আগে নিজে শুদ্ধ হোন’/ আরিফ আজাদ
একবার এক লোক ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর কাছে এলো। লোকটা ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বললো, ‘হে ইবনে আব্বাস! আমি লোকদেরকে ভালো কাজের দিকে ডাকতে চাই, উদ্বুদ্ধ করতে চাই এবং মন্দ কাজ থেকে তাদেরকে নিষেধ করতে চাই’।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘ভালো তো। কিন্তু, আগে আপনি নিজে কি সেই লেভেলে পৌঁছেছেন?’
লোকটা বললো, ‘মনে হয়’। তখন ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘ঠিক আছে। আপনি যদি আল্লাহর নাযিল করা তিনটা আয়াত দ্বারা নিজেকে ভেরিফাই করতে পারেন, তাহলে আপনি অবশ্যই যা করতে চাচ্ছেন, তা করতে পারেন’। লোকটা তখন অবাক হয়ে বললো, ‘কোন তিনটা আয়াত?’
ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন প্রথম আয়াতটা তিলাওয়াত করলেন-
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘ভালো তো। কিন্তু, আগে আপনি নিজে কি সেই লেভেলে পৌঁছেছেন?’
লোকটা বললো, ‘মনে হয়’। তখন ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘ঠিক আছে। আপনি যদি আল্লাহর নাযিল করা তিনটা আয়াত দ্বারা নিজেকে ভেরিফাই করতে পারেন, তাহলে আপনি অবশ্যই যা করতে চাচ্ছেন, তা করতে পারেন’। লোকটা তখন অবাক হয়ে বললো, ‘কোন তিনটা আয়াত?’
ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন প্রথম আয়াতটা তিলাওয়াত করলেন-
“তোমরা কি মানুষকে সৎকর্ম করার জন্য নির্দেশ দাও কিন্তু (সৎকর্ম সম্পাদনে) নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব (কোরআন) পাঠ করো। তবে কি তোমরা তা বুঝো না?’ [আল বাক্বারা-৪৪]
আয়াতটা তিলাওয়াত করে ইবনে আব্বাস (রাঃ) লোকটাকে বললেন, ‘নিজের জীবনে এই আয়াতের অর্থ বাস্তবায়ন করেছেন কি?
লোকটা বললো, ‘জ্বী না’।
এবার ইবনে আব্বাস (রাঃ) দ্বিতীয় আয়াত তিলাওয়াত করলেন-
লোকটা বললো, ‘জ্বী না’।
এবার ইবনে আব্বাস (রাঃ) দ্বিতীয় আয়াত তিলাওয়াত করলেন-
“হে মুমিনগণ! তোমরা এমনসব কথা কেনো বলো যা আদতে নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা খুবই নিন্দনীয় ব্যাপার যে তোমরা এমন সব কথা প্রচার করে বেড়াও যা তোমরা নিজেরাও করো না’। [আস-সফ ২-৩]
ইবনে আব্বাস (রাঃ) লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘নিজের জীবনে এই আয়াতের অর্থ বাস্তবায়ন করেছেন?’
লোকটা বললো, ‘জ্বী না’।
লোকটা বললো, ‘জ্বী না’।
এরপর ইবনে আব্বাস (রাঃ) তৃতীয় আয়াত তিলাওয়াত করলেন যেখানে শুয়া’ইব (আঃ) তার ক্বওমকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,-
‘আর আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যা আমি করতে নিষেধ করছি পরে তা নিজেই করে বসবো’। [সূরা হুদ- ৮৮]
ইবনে আব্বাস (রাঃ) লোকটাকে বললেন,- ‘এই আয়াতের অর্থ কি বাস্তবায়ন হয়েছে নিজের জীবনে?’
লোকটা বললো, ‘জ্বী না’।
তখন ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘তাহলে আগে নিজেকে শুধরে আসুন’।
লোকটা বললো, ‘জ্বী না’।
তখন ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘তাহলে আগে নিজেকে শুধরে আসুন’।
ঘটনাটা আমাদের সময়ের জন্যও খুব প্রাসঙ্গিক। আজকাল আমরা পুরোদমে ঘটনার লোকটার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছি। ভাগ্যিস আয়নার সামনে দাঁড়ালে আমাদের কপটতা আর ভন্ডামি প্রকাশ পায়না। আজকাল উঠতে আর বসতে আমরা মানুষকে উপদেশ দিয়ে বেড়াই। আমরা কথায় কথায় দ্বীনের কথা বলি, অথচ দিনশেষে নিজেরা যে কতোটা দ্বীনের মধ্যে আছি, সে হিসেব ক’জন রাখি,বলুন? কারো ‘আমানতের খিয়ানত করা পাপ’ এই কথা আমাদের লেখা বইতে থাকে, আমাদের ছাপানো বইতে থাকে। অথচ, হিসেব আছে আমি অন্যের আমানতের কতোটুকু মর্যাদা রেখেছি? আমরা কথায় কথায় আল্লাহর হক্ব আর বান্দার হক্ব বোঝাতে বোঝাতে নিজেদের ক্লান্ত করে ফেলি। লেকচার-বক্তব্য দিয়ে মাঠ আর অডিটোরিয়াম গরম করে ফেলি। কিন্তু, আমি যে অন্যের হক্বকে কিভাবে নষ্ট করে দিচ্ছি, তার খেয়াল আছে? ‘গীবত করা পাপ’, ‘গীবত করা মানে মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া’ এই কথাগুলো আমাদের লিখিত, প্রকাশিত, প্রচারিত বইপত্রে জায়গায় জায়গায় দেখা যায়। কিন্তু পর্দার আড়ালে, একান্ত আলাপে আমি যে অন্যের একটু ভুল, একটু ত্রুটি, একটু বিচ্যুতি নিয়ে যে খোশগল্পে মেতে উঠি, সে ব্যাপারে কি আমরা আদৌ ওয়াকিবহাল?
নিজেরা কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলি। অথচ অন্যকে উপদেশ দিই সত্য কথা বলার জন্য। নিজেরা আগাগোঁড়া ডুবে আছি পাপের মধ্যে। কিন্তু ফেইসবুকে ইয়া বড় বড় কলাম লিখে জাতিকে শুদ্ধ করার মিশনে নেমেছি। হায়, আমাদের সময়ে ইবনে আব্বাসের মতোন কেউ নেই। থাকলে আমাদের কপটতা আর ভন্ডামি ধরিয়ে দিয়ে বলতো, ‘ব্যাটা, আগে নিজে শুদ্ধ হ। এরপর নাহয় অন্যকে শুদ্ধ হতে বলিস...’
নিজেরা কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলি। অথচ অন্যকে উপদেশ দিই সত্য কথা বলার জন্য। নিজেরা আগাগোঁড়া ডুবে আছি পাপের মধ্যে। কিন্তু ফেইসবুকে ইয়া বড় বড় কলাম লিখে জাতিকে শুদ্ধ করার মিশনে নেমেছি। হায়, আমাদের সময়ে ইবনে আব্বাসের মতোন কেউ নেই। থাকলে আমাদের কপটতা আর ভন্ডামি ধরিয়ে দিয়ে বলতো, ‘ব্যাটা, আগে নিজে শুদ্ধ হ। এরপর নাহয় অন্যকে শুদ্ধ হতে বলিস...’
‘আগে নিজে শুদ্ধ হোন’/ আরিফ আজাদ
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.