জিজিয়া কর


নাস্তিকদের দাবিঃ অমুসলিম হবার কারনেই তাদের জিজিয়া কর দিতে হয় এটা অন্যায় অমানবিক ?
ডাঃ শামসুল আরেফিন
জবাবঃ আপনাদের দাবি মিথ্যা শুদুমাত্র অমুসলিম হবার কারনেই যে তাদের জিজিয়া কর দিতে হয় ব্যাপারটা তা নয় যেহেতু অমুসলিমরা সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দায়িত্তে থাকে যা ইসলামি রাষ্ট্রের মুল কথা

ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিমরা যাকাত দেয় , উৎপন্ন ফসলের উপর উশর দেয়, ফেতরা দেয়  ইত্যাদি অমুসলিম নাগরিকেরা শুদু জিজিয়া দেবে "আর কিছু না" জিজিয়া এর বাংলা করলে হয় "বিনিময় কর" কিসের বিনিময় ? প্রত্যেক সক্ষম মুসলিম নাগরিককে ইসলামী রাষ্ট্রের হয়ে যুদ্ধে যেতে হবে,যুদ্ধের ডাক আসলে এখনো অনেক দেশে সব যুবকদের বাধ্যতামূলক মিলিটারি সার্ভিস দিতে হয় একে বলে কন্সক্রিপশন বাংলাদেশ সহ ১০৫ টা দেশে এই নিয়মটা নাই বাকি দেশ গুলোতে বিভিন্ন মেয়াদে এই বাধ্যতামূলক সামরিক সার্ভিস দিতে হয় যেমনঃ

রাশিয়া, সুইডেন, মঙ্গোলিয়া, তুরস্ক, গ্রীস, ল্যাটিন অ্যামেরিকান দেশগুলোতে ১ বছর কম্বোডিয়া , লাওস, জর্জিয়া , কুয়েত , মিশরে দের বছর আফ্রিকার দেশগুলোতে ২ বছর ইসরায়েলে পুরুষের ৩২ মাস মেয়েদের ২ বছর   উত্তর করিয়ায় পুরুষের ১১ বছর, মেয়েদের ৭ বছর দক্ষিন করিয়ায় ৬ বছর প্রমানঃ  (  https://en.wikipedia.org/wiki/military-service  )

১/ এখন এই কন্সক্রিপশন যদি কেউ না করতে চায় তবে অনেক দেশে এককালীন ফী জমা দিতে হয় যেমন তুরস্কে ৫৫০০ ডলার প্রমানঃ $8.700 will let young turks "buy out " their military service http://www.al-monitor.com/pulse/originals/2014/12/turkey-compulsory-military-service-buy-exemption.html ) .

২/আর্মেনিয়াতে মিনিমাম সেলারির ১০০ গুন জমা দিয়ে অব্যাহতি নিতে হয় প্রমানঃ http://jurist.am/en/havenotcompletedmandatory
  cases of avoidance from doing the mandatory military service the sizes of payments for the exemption from the liability of military service for each not celled-up (avoiding) citizen . 1. the citizen has reached age 27 and, without qualifying for an exemption, has not done the mandatory military service: - a sum one hundred times the minimum salary...

ইসলামী রাষ্ট্রেও এই বাধ্যতামূলক সামরিক সার্ভিস থেকে অব্যাহতির বিনিময় হিসেবে এই বিনিময় কর তুমি অমুসলিম তুমি যদি চাও আমাদের সাথে যুদ্ধে যেতে পারো আর সক্ষম হয়েও যদি না যাও তবে জিজিয়া কর দিয়ে অব্যাহতি নাও এ জিজিয়া কোন পঙ্গু, বৃদ্ধ, সন্ন্যাসী , নারী বা শিশু থেকে নেয়া হবে না কেবল কর্মক্ষম যুবক অমুসলিমদের থেকে নেয়া হবে প্রমানঃ (হিদায়া ইঃফা ২ খন্দ ৪৭৬ পৃষ্ঠা )

অমুসলিম জিম্মি বাসিন্দাদের পসুপাল , ফল এবং কৃষিক্ষেত্রে কোনরুপ ট্যাক্স ধার্য করা যাবে না প্রমানঃ (মুওয়াত্তা মালিক,ইঃফা খণ্ড ১, অধ্যায়ঃজাকাত পৃষ্ঠা ৩৪৯) মানে তারা কোন ট্যাক্স দেবে না শুদু যুদ্ধ করতে সক্ষম পুরুষরা বিনিময়ে কর দিবে ফলে ইসলামী রাষ্ট্রে তারা একজন মুসলিমের মতই সমান সুবিধা ভোগ করবে

প্রশ্ন আসতে পারেঃ ট্যাক্স দিয়ে সমান মর্যাদা নিতে হবে কেন ? দেখেন, মুসলিমরা ট্যাক্স দিবে , যুদ্ধে যাবে , আর অমুসলিমরা ট্যাক্সও দেবে না, যুদ্ধেও যাবে না, আবার সমান সুবিধাও পাবে তা তো  হয় না এই কর দেওয়ার কারনে যুদ্ধের সময় ইসলামী রাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে বাধ্য থাকবে মজার বেপার হলঃ বহিঃশত্রুর আগ্রাসনের সময় অমুসলিমরা যদি নিজেদের সম্পদ রক্ষা না করে পালিয়েও যায় তবুও মুসলিমরা তাদের সম্পদ পাহারা দিতে এবং যে কোন মুল্লে রক্ষা করতে বাধ্য থাকবে

আবু বকর (রা) এর খিলাফতকালে আবু উবাইদাহ (রা) ৬৩৪ সালে বাইজান্তাইন শহর হিমস জয় করলেন জয়ের পর মুসলিমরা জিজিয়ার বিনিময়ে অমুসলিমদের সকল অধিকার নিচ্চিত করলো বছর খানিকের মাথায় রোমান সম্রাট বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে শহর পুনর্দখল করতে আসলো কৌশলগত কারনে মুসলিম বাহিনি হিমস থেকে পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নিল হিমস ছাড়ার আগে মুসলিম বাহিনী বিগত সময়ের সকল জিজিয়া ফেরত দিয়ে দিল আবু উবাইদাহ (রা) জবাবে বললেন, তোমাদের কাছ থেকে জিজিয়া আমরা নিয়েছিলাম তোমাদেরকে নিরাপত্তা প্রদানের শর্তে আজ আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না আর তাই এই জিজিয়া ফেরত দিচ্ছি এভাবে সিরিয়ার যে সকল স্থান মুসলিম বাহিনী ত্যাগ করলো , তাদের সবার জিজিয়া ফেরত দেওয়া হল অভিভূত  খৃস্টানরা আফসস করে বলল, স্বজাতি রোমানদের শাসনের চেয়ে বরং বিজাতীয় মুসলিমদের শাসনই বেশি প্রিয় প্রমানঃ ( walker arnold, thomas (1913), preaching of islam: a history of the propagation of the muslim faith , constable & robinson Ltd. )

এখন শোনেন জিজিয়ার পরিমাণটা কত এটা দুই রকম

১/ অমুসলিম রাষ্ট্র সন্ধি সাপেক্ষে মুসলিম ভূখণ্ডে একীভূত হলে দুই পক্ষের আলোচনায় জিজিয়া নির্ধারণ হবে বিনিময়ে ইসলামী রাষ্ট্র তাদের প্রতিরক্ষা বেবস্থা নিচ্চিত করবে তাদের যুদ্ধে আসতে হবে না অনেকটা ফেডারেল রাষ্ট্রের মত বাৎসরিক একটা এমাউন্ত কেন্দ্রে জবা দেবে প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের হাতে (আল হিদায়া ২/ ৪৭৪)

২/ যদি যুদ্ধের মাধ্যমে দখল হয় তবে তা মুসলিমরা নির্ধারণ করবে বুখারি শরীফের বর্ণনায়, মৃত্যুকালে খলীফা উমার (রা) বলেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এর জিম্মিদের (অর্থাৎ জিম্মাধিন সংখ্যালগু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয় (তারা কোন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে) তাদের পক্ষাবলম্বন করে যেন যুদ্ধ করা হয় তাদের শক্তি সামরথের অধিক (কর) যেন চাপানো না হয় / (বুখারি , ইঃফা খণ্ড ৬, হাদিস নং ৩৪৩৫)

হানাফি ফিখহ অনুসারে ধনি অমুসলিমরা বার্ষিক  ৪৮ দিরহাম মানে ৭০৩৭ টাকা, মধ্যবিত্তরা ২৪ দিরহাম মানে ৩৫১৮ টাকা , আর দরিদ্ররা বছরে ১২ দিরহাম মানে ১৭৫৯ টাকা দেবে মানে মাসে যথাক্রমে ৫৮৬ টাকা, ২৯৩ টাকা, ও ১৪৬ টাকা দেবে (আল হিদায়া ২/৪৭৪)

দেখুন ভাই, রাষ্ট্রের নাগরিক রাষ্ট্রকে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা কর দিবে তাই নিয়ে কত প্রশ্ন আপনাদের ইসলাম খারাপ , ইসলাম অমানবিক ইত্যাদি কত কাহিনি ! একজন অমুসলিম যুবক নিজের নিরাপত্তা , যুদ্ধে নিহত হওয়া এবং পঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থেকে মুক্তি পাচ্চে এই নামে মাত্র টাকার বিনিময়ে জিজিয়া হল মিলিটারি সার্ভিস না দেওয়ার ফাইন ফাইনের বিনিময়ে আবার কত সুবিধা মুসলিমরা এসে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে আরও সুবিধা আছে যারা জিজিয়া দেয় তারা হল "জিম্মি" মানে ইসলামী রাষ্ট্রের জিম্মায় আছে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় মানে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিরাপত্তায়
* মহানবী (সা) বলেছেন যে বেক্তি কোন জিম্মিকে হত্যা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না আর জান্নাতের ঘ্রাণ ৪০ বছরের দুরত্ত থেকে পাওয়া যাবে (বুখারি হাদিস নং ৩৯১, ihapp hadis নং ৩১৬৬)

* মহানবী (সা) বলেছেন, তোমাদের যে কেউ কোন জিম্মিদের উপর অত্যাচার করবে বা তার হক নষ্ট করবে কিংবা তার সামর্থ্য এর বাইরে তাকে কষ্ট দিবে অথবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে (জোরপূর্বক) তার কোন জিনিস নিবে , আমি কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩০৫২ ihapp)

* মহানবী (সা) বলেছেনঃ যে কোন জিম্মিকে আঘাত করে সে যেন আমাকে আঘাত করে, আর যে আমাকে আঘাত করে সে আল্লাহকে রাগান্বিত করে (তাবারানি আওসাত)

এজন্যই বললাম, ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা হল আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিরাপত্তায় শুদু দেশের প্রতি যে দায় ছিল সেই দায় থেকে মুক্ত হবে জিজিয়া নামক একটা নামমাত্র ফর্মালিটি করে আর রাষ্ট্র তাকে জিম্মি মর্যাদা দিবে সে এক্সট্রা কেয়ার পাবে রাষ্ট্র থেকে , এক্সট্রা প্রটেকশন, সে পালিয়ে গেলেও তার সম্পদ পাহারা দিবে রাষ্ট্র
                                                                           (সমাপ্ত)

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.