স্টিফেন... স্টিফেন... স্টিফেন...’/ আরিফ আজাদ

স্টিফেন... স্টিফেন... স্টিফেন...’
লারা চিৎকার করে ডাকছে। স্টিফেন হাতে একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছুটছে। এই মূহুর্তে লারার দিকে তাকানোর মতো যথেষ্ট সময় তার হাতে নেই। সে ছুটছে রবার্টের কাছে। আজকের আগ অবধি রবার্ট তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু ছিলো। কিন্তু একটু আগে স্টিফেনের আরেক বন্ধু ডেভিড তার সাথে একটি ভিডিও শেয়ার করেছে। ভিডিওটি দেখে স্টিফেনের রক্ত মাথায় চড়েছে। স্টিফেন ভিডিওটি মাঝপথে থামিয়ে দিলো। এই ভিডিও পুরোটা দেখার মতো ধৈর্য্য তার নেই। সে গোঙানোর মতো কয়েকবার বিড় বিড় করে বললো, - Robert, you, the son of bi..h. The cheater… I’ll kill you today….
স্টিফেনের রক্ত মাথায় চড়ার কারণ হচ্ছে, তার গার্লফ্রেন্ড লারা এবং তার নিকটতম বন্ধু রবার্ট। ডেভিড স্টিফেনের কাছে যে ভিডিওটি পাঠিয়েছে তাতে ক্লিনটন পার্কে রবার্ট এবং লারাকে খুব অন্তঃরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে। এই দৃশ্য স্টিফেন সহ্য করতে পারেনি। সে ধারালো অস্ত্র হাতে ছুটছে রবার্টের কাছে। লারা তাকে থামানোর চেষ্টা করেছে। স্টিফেন লারাকে পাত্তা দেয়নি। সে মনে মনে বলেছে,- ‘তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি...’
মাউন্টেইন স্ট্রীটে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় একটি লাশ পড়ে আছে। রবার্টের লাশ। তাকে একটু আগে খুন করা হয়েছে। খুনীর নাম স্টিফেন জনসন।
রবার্ট যখন খুন হচ্ছে, তখন আশপাশে অনেক লোকজন ছিলো। এই ঘটনা তেমন কাউকে হতবিহ্বল করে তুলেনি। স্টিফেন যখন ধারালো অস্ত্রটি দিয়ে রবার্টের গায়ে আঘাত করছে, তখন পাশ থেকে এক সাদা চামড়ার তরুণী কেবল ‘O my goodness’ বলে চশমার ফ্রেম ঠিক করতে করতে চলে গেলো।
পরেরদিন। স্টিফেনের বাসা থেকে আরেকটি লাশ উদ্ধার হলো। এই লাশটা লারার। লারাও খুন হয়েছে স্টিফেনের হাতে। লারার লাশকে যখন টেনে রুম থেকে বের করা হচ্ছিলো, তখন স্টিফেন গলায় টাই লাগাতে লাগাতে লাশটার কাছে এলো। এসেই জোরে লাশটাকে দিলো এক লাথি। লাথি দিয়েই সে বিড় বিড় করে মৃত লারাকে গালি দিতে দিতে বেরিয়ে গেলো।
সিটি কর্পোরেশন থেকে যে লোকগুলো লাশ সামলানোর দায়িত্ব পেয়েছে, তারা স্টিফেনকে সাইড দিলো। স্টিফেন তাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো অফিসে।
পত্রিকার পাতায় বড় বড় করে স্টিফেনের ছবি ছাপা হয়েছে। পাশে রবার্ট এবং লারার লাশের ছবিও আছে। অফিসে স্টিফেনের পাশের ডেস্কে বসে ফার্নান্দেজ। সে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছে আর কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। ধারালো অস্ত্র হাতে স্টিফেনের ছবিটা দেখে ফার্নান্দেজ স্টিফেনের দিকে তাকালো। বললো,- ‘Brave you are, Stephen…’
স্টিফেন মুচকি হাসলো। তার মোবাইল বেজে উঠেছে। ক্যামেলিয়ার ফোন। ক্যামেলিয়া তার দু নম্বর গার্লফ্রেন্ড। আজকে তাদের ডেটিংয়ের ডেইট আছে। স্টিফেন উঠে চলে গেলো।
ছোট্ট ছেলেটার নাম রিচার্ড। সে তার বাবাকে পত্রিকায় অস্ত্র হাতে স্টিফেনের ছবিটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, - ‘ড্যাড, এই লোকটা দুটো লোককে কেনো মেরে ফেলেছে?’
রিচার্ডের বাবার কাছে তার ছেলের প্রশ্নটাকে তেমন যুতসই কিছু বলে মনে হলো না। প্রশ্নটার উত্তর রিচার্ড আরেকটু বড় হলেই পেয়ে যাবে। তবুও, রিচার্ডের বাবা ছেলেকে বলতে লাগলেন, - ‘মাই ডিয়ার, প্রশ্নটার উত্তর তুমি আরেকটু বড় হলেই জানতে পারবে। তবুও, তোমার প্রশ্নের প্রেক্ষিতেই বলা, শোনো- মানুষ নিয়ন্ত্রিত হয় Gene দ্বারা। এই জিনই হচ্ছে মানুষের নিয়ন্ত্রণের ধারক এবং বাহক। বড় হয়ে যখন তুমি বায়োলজি ক্লাসে যাবে, তখন জানতে পারবে বিস্তারিত। এরকম একটি Gene এর নাম হচ্ছে Crime Gene । এই Crime Gene যাদের মধ্যে থাকে, তারা এরকম মারামারি, খুনোখুনি করে থাকে। তোমার স্টিফেন আঙ্কেলের মধ্যেও এরকম Crime Gene আছে। তাই তিনি এরকম কাজ করেছেন’।
রিচার্ড জিজ্ঞেস করলো,- ‘এটা কী অপরাধ না ড্যাডি?’
- ‘নাহ, মাই সান। এটা কোন অপরাধ নয়। তোমার স্টিফেন আঙ্কেল তো এটা নিজ থেকে করেন নি। এই কাজ করার জন্য তাঁর Gene তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই Gene যেহেতু তিনি জন্মগতভাবে লাভ করেছেন, তাই এখানে তো তার কোন হাতই নেই। আর যেখানে তার কোন হাতই নেই, সেটা কখনোই অপরাধ নয়। এটা প্রাকৃতিক। প্রাকৃতিক কোনকিছুতেই অপরাধ নেই মাই ডিয়ার’।
ছোট্ট রিচার্ড বুঝলো ব্যাপারটা। খুনটা স্টিফেন আঙ্কেল স্বেচ্ছায় করেন নি। তার ভিতরে থাকা Crime Gene তাকে এটা করতে বাধ্য করেছে। সে হিসেবে, যারাই স্টিফেন আঙ্কেলের মতো অপরাধ করে, তারা আসলে কেউই স্বেচ্ছায় এসব করেনা। তাদের মধ্যে থাকা Crime Gene তাদেরকে এসব করতে বাধ্য করে। সুতরাং, এসব কাজে ব্যক্তির কোন দোষ নেই। এই খুনের দায়ে স্টিফেন আঙ্কেলকে কেউ খুনী বলবে না। কেউ উনার নামে খুনের মামলা দায়ের করবে না। উনাকে জেলে পুরা হবে না। রিমান্ডে নেওয়া হবেনা। প্রাকৃতিক পৃথিবীর নীতি হচ্ছে ‘যেমন ইচ্ছে তেমন করো’।
রিচার্ড ভাবছে তার ভিতরও এরকম Crime Gene আছে কীনা। থাকলে মন্দ হয়না। ভালোই তো...!
‘এক টুকরো নাস্তিকতাবান্ধব পৃথিবী’/ আরিফ আজাদ
নোটঃ বিবর্তনবাদ তথা নাস্তিক্যবাদী দুনিয়ায় সবকিছুকে ‘বস্তুবাদী’ দৃষ্টিকোণ থেকে মাপা হয়, যার ফলে তারা চায় পৃথিবীতে মানুষ যা করবে সব ‘ন্যাচারাল’ বা ‘এডাপ্টিভ’ বলে ধরে নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বিজ্ঞানের নামে মাঝে মাঝে কিছু রসাত্মক গল্প মানুষকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে।
Crime Gene’র ব্যাপারটাও এরকম। তারা চায়, অপরাধগুলো ভ্যালিডিটি পাক। অপরাধ আর অপরাধ হিসেবে গন্য না হোক। যেহেতু পরকালে তারা বিশ্বাসী না, তাই অপরাধের ভয়ে লাইফ এনজয় করা থেকে তারা বিরত হবে কেনো? যেমন খুশি তেমন করো। এরকম আরো আছে Homo Gene বা Gay Gene, যেটা দিয়ে তারা সমকামীতাকে প্রাকৃতিক বলে দাবি করে থাকে। এমনকি, অনেক বিবর্তনবাদী নাস্তিকের কাছে ধর্ষণ কোন অপরাধই নয়। এটাকে তারা বিবর্তনের ধারায় জাস্ট ‘এডাপ্টিভ’ হিসেবে গণ্য করে। ধর্ষণকে প্রাকৃতিক বলে তারা বইপত্রও লিখেছে। এক্ষেত্রে বিবর্তনবাদী Randy Thornhil এর লেখা বই ‘A Natural history of rape’ পড়া যেতে পারে। সেখানে খুব সুন্দর করে ধর্ষণকে ন্যাচারাল বলে চালানো হয়েছে। ভাবুন তো এমন একটা পৃথিবীর কথা, যেখানে খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি কোন অপরাধ বলে গন্য হচ্ছেনা। গা শিউরে উঠছে না?

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.