ভার্চুয়ালে ‘চরিত্রহীন’ শব্দটা...আরিফ আজাদ

ভার্চুয়ালে ‘চরিত্রহীন’ শব্দটা...
আরিফ আজাদ

ভার্চুয়ালে ‘চরিত্রহীন’ শব্দটা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাসুদা ভাট্টি নামের কোন এক মহিলা সাংবাদিককে মঈনুল হোসেন নামের কেউ টকশোতে চরিত্রহীন বলায় পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছে, লেখালেখি হচ্ছে।

ব্যাপারটাকে মাঝখান থেকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে তসলিমা নাসরীন। অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো। মঈনুল হোসেন তো মাসুদা ভাট্টিকে কেবল ‘চরিত্রহীন’ বলেছেন, কিন্তু তসলিমা নাসরিন পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করে সেই শব্দটার সাথে ‘ভীষণ’ বিশেষণ লাগিয়ে দিয়েছে। মাসুদা ভাট্টি এই কয়দিন ছিলেন কেবল ‘চরিত্রহীন’, তসলিমা নাসরিন এসে মাসুদা ভাট্টিকে বানিয়ে দিয়েছে ‘ভীষণ চরিত্রহীন’। ব্যাপারটা জমে উঠেছে এভাবেই।

যাহোক, এসব ব্যাপারে আমার কিন্তু মোটেও আগ্রহ নেই। বন্ধু-বান্ধবরা এসব নিয়ে কথা বলছে আর লিখছে বলেই চোখে পড়ছে। আমার চোখ আটকেছে অন্য জায়গায়। মাসুদা ভাট্টিকে ‘ভীষণ চরিত্রহীন’ বলতে গিয়ে তসলিমা নাসরীন চরিত্রহীনের একটা সংজ্ঞা দাঁড় করিয়েছে। সেই সংজ্ঞার শুরুতেই তসলিমা নাসরীন ডিসক্লেইমার দিয়ে বলেছে, ‘চরিত্রহীন বলতে আমি কোনোদিন এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝিনা। চরিত্রহীন বলতে বুঝি অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি মিথ্যুক, অতি প্রতারক, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ, অতি ছোটলোক’।

অর্থাৎ, যেকারো সাথে রাত কাটানোটা তসলিমার কাছে কখনোই চরিত্রহীনতা নয়। নিজেকে ডিফেন্ড করার এই এক চমৎকার পদ্ধতি। আগে থেকেই সেইফ জোনে চলে যাওয়া। তসলিমা যা করতো (এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো) বা যা করে সেটাকে সে চরিত্রহীনতার সংজ্ঞার মধ্যে আনতে নারাজ। কারণ, যদি এটাকে চরিত্রহীনতার সংজ্ঞার মধ্যে আনে, তাহলে একই দোষে সেও দুষ্ট হয়ে পড়বে। আর সে জানে, ‘চরিত্রহীন’ তকমাটা বেশ বড় রকমের একটা অসম্মানের ব্যাপার।

তসলিমা নাসরীনের মতো এরকম চালাক, ধুরন্ধর লোকজন আপনি আপনার চারপাশে প্রায়ই দেখবেন। নিজেদের প্রয়োজনে এরা যেকোনকিছুর রূপ, সংজ্ঞা এমনভাবে পাল্টে দিবে যে, মনে হবে, ‘লোকটা তো আসলেই ভালো বলেছে!’
যেমন ধরুন মাঝে মাঝে কিছু লোকজন বলে উঠে, ‘রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি?’

রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে দেখতে ভালোবাসা এই লোকজনের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখুন, এই লোকগুলো নিজেরাই ধর্ম মানেনা। ছুপা নাস্তিক। নিজেরা যে ধর্ম মানেনা কিংবা ধর্মে যে তাদের বিশেষ বাতিক আছে, সেটা এই লোকগুলো বলবেনা। তাদের কাছে যখন রাষ্ট্রের সংজ্ঞা জানতে চাইবেন, তারা বলবে ‘রাষ্ট্র বলতে আমরা কোন বিশেষ ধর্মের বলয়ে গড়ে উঠা ভূখন্ডকে বুঝিনা। রাষ্ট্র বলতে যা বুঝি তা হলো একটি রাষ্ট্রের সবার জন্যে একটি নির্দিষ্ট ভাষা থাকবে, নির্দিষ্ট কিছু সংস্কৃতি থাকবে...’। ঠিক তসলিমা নাসরীনের কথার মতো, ‘চরিত্রহীন বলতে আমি কোনোদিন এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝিনা। চরিত্রহীন বলতে বুঝি অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি মিথ্যুক, অতি প্রতারক, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ, অতি ছোটলোক’।

আপনি আরো দেখবেন, কিছু কিছু লোক বলে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’।

বাক্যটি শুনলেই মনে হবে কি এক উদারতার সাগর যেন বুকের ভিতর পুষেন এরা। সেই সাগর থেকে উদারতা যেন উপচে উপচে পড়ছে। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখবেন দাঁড়ি-টুপি আর হিজাবের বিরুদ্ধে এই এরাই ক্যাম্পেইন করে, লেখালেখি করে। কথায় কথায় মুসলিমদের অন্ধ, গোঁড়া, সাম্প্রদায়িক, মূর্খ ট্যাগ দেয়। কিন্তু পূজো আর পার্বণ এলেই এরা হয়ে উঠে একেকজন মহাত্মা গান্ধী। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ বলে এরা মুসলিম যুবক-যুবতীদের পূজো মন্ডপে যেতে প্ররোচিত করে। কারণ, এরা খুব ভালো করেই জানে, এরা যে মিশন নিয়ে কাজ করে, সেই মিশনে সফল হতে হলে মুসলিম যুবক-যুবতীদের ধর্মের বাউন্ডারি থেকে বের করে আনতে হবে। আর সেটা করতে হলে এরকম সাধাসিধে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ টাইপ কথা আওড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। এদের কাছে উৎসবের সংজ্ঞা সেটাই যা এরা নিজেরা বুঝে। কিন্তু, আপনি যখন এদের কাছে আপনার ঈদ-কোরবানি উৎসবের মাহাত্ম্য বর্ণনা করবেন, এরা তখন নাক-মুখ সিঁটকিয়ে দূরে সরে যাবে। আপনারটা উৎসব নয়। ওরা আপনাকে যা উৎসব হিশেবে বেছে দিবে, সেটাই আপনাকে উৎসব হিশেবে মানতে হবে।

এদের অভ্যাসটাই এরকম। ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার’ টাইপ একটা প্রবাদ আছে। এরা সেরকমও না। এরা বিচার ছাড়াই তালগাছের দাবিদার।

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.