তাদের করুন অবস্থা । আরিফ আজাদ

আমার জন্য আসিফ মহিউদ্দীনের সমবেদনামূলক আজকের 'অনলাইনে কথিত মুক্তমনা নাস্তিকদের প্রতি' শিরোনামের লেখাটি একটু আগেই চোখে পড়লো। প্রথমে ভেবেছিলাম, - থাক, কিছু লিখবো না। আবার ভাবলাম, - নাহ, সে যেহেতু আমার ব্যাপারে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সেগুলোর জবাবে কিছু অন্ততপক্ষে লেখা দরকার।
সে লিখেছে,
' কিছুদিন আগে এক ইসলামপন্থী ছেলে একটা বই প্রকাশ করেছে। মাঝে মাঝেই এরকম বই বের হয়। দজ্জাল আসছে, দজ্জাল কীভাবে সত্য, বা পৃথিবীর চারিদিকেই আসলে সূর্য ঘোরে, বা মানুষ চাঁদে যায় নি, বা নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে ইসলাম কবুল করেছিল, বা কোরানে পাতায় পাতায় বিজ্ঞান, বা নাসায় কোরান স্ট্যাডি করে বিজ্ঞান আবিষ্কার হয় ইত্যাদি নানা বই প্রতি বছরই বের হয়। লোকজন হুমড়ি খেয়ে কেনেও।'
প্রথমত, দাজ্জাল কোনভাবেই বিজ্ঞানের টার্ম না। তবে, 'পৃথিবীর চারদিকে আসলেই সূর্য ঘুরে' 'মানুষ চাঁদে যায়নি' 'নীল আর্মষ্ট্রং চাঁদে গিয়ে ইসলাম কবুল করেছে' এই মর্মে কোন মোল্লার লেখা বাঙলা বই সম্পর্কে আমি জানি না। ইতোপূর্বে কোনদিন দেখিওনি। এরকম আজগুবি তথ্য আসিফ মহিউদ্দীন কোথায় পেয়েছে এবং কবে লোকজন এসব হুমড়ি খেয়ে কিনেছে তার উল্লেখও সে করে নি। তবে, 'মানুষ যে চাঁদে যায়নি' এই মর্মে কোন বাঙালি মোল্লার কিতাবাদি না থাকলেও, খোদ আমেরিকান বিজ্ঞানীদের বিশাল একটি অংশ এখন তথ্য, দলিল, প্রমাণ দিয়ে দাবি করছেন যে নীল আর্মষ্ট্রংদের চাঁদে যাওয়ার সেই কাহিনীটা আসলেই ভূয়া। এইটা ছিলো ২১ শতাব্দীতে মানুষকে গিলানো শ্রেষ্ঠ কিছু মিথ্যাচারের একটি। আসিফ মহিউদ্দীনরা এতো বেশিই ইসলাম বিদ্বেষীতা করে যে, বাইরের দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত কি ঘটে চলেছে তার খবর নেওয়ার ফুসরতই পায় না।
আসিফ মহিউদ্দীন কিছু অবান্তর টপিক টেনে এবং অবিজ্ঞানমনস্কতার দোহাই দিয়ে, ব্যঙ্গ করে লিখেছে যে এসব মানুষ হুমড়ি খেয়ে কিনেও থাকে।
আসিফ মহিউদ্দীন নিশ্চই জানে, এদেশে কেবল এরকম অবৈজ্ঞানিক (!) বইপত্রই মানুষ হুমড়ি খেয়ে কিনতে যায়না, নামকরা প্রফেসরেরা যখন সাইন্স ফিকশনের নাম করে মহাবিশ্বের বাইরে মানুষের সাথে এলিয়েনের প্রেমালাপ ঘটায়, মানুষে-এলিয়েনে যুদ্ধ লাগায়, পৃথিবীর বাইরের ১০ হাত ওয়ালা অক্টোপাসের সাথে যখন পৃথিবীর 'নীরা'র প্রেমকাহিনী ফাঁদে, এদেশের মানুষ তখন সেসবও গিলে এবং হুমড়ি খেয়ে কিনতে যায়।
আসিফ লিখেছে,
'অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিতদের দেশে এরকমই স্বাভাবিক। এর জন্যে আমরাও খানিকটা দায়ী। কারণ আমরা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারি নি।'
একদম ঠিক কথা। আসিফের সাথে আমি মোটাদাগে একমত। অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিতদের দেশে এরকম ঘটনার জন্য আসিফরা খানিকটা নয়, পুরোপুরিভাবে দায়ী। কারণ, বিজ্ঞানের ইজারা নিয়ে বসে থাকা সম্প্রদায় যখন সারাদিন 'বিজ্ঞান' করার বদলে 'বিজ্ঞানমনস্কতা' করে, 'বিজ্ঞান' চর্চা করার বদলে 'ধর্ম বিদ্বেষীতা' করে, তখন এদেশের মানুষ আর কি করবে বলে আসিফ মহিউদ্দীনেরা চিন্তা করে?
সে লিখেছে,
'ছেলেটা (এখানে ছেলেটা মানে, আমি) বেশ কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত আমার প্রোফাইলে এসে গালাগালি করতো। আমি খুব বেশি গুরুত্ব বা পাত্তা দিই নি।'
হা হা হা। খুব মজা পেলাম। আসিফ হয়তো আমাকে অনলাইন আস্তিক-নাস্তিক গ্রুপের ফেইক নিকওয়ালা নাস্তিকদের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। যাহোক, আমি ঠিক কবে, কখন, তার কোন লেখায় তাকে গালাগালি করেছি তার কোন প্রমাণ সে দেয়নি। প্রমাণ দেওয়ার আহ্বান রইলো।
সে লিখেছে,
'সম্প্রতি সে একটা বই ছেপেছে, বইটিতে খুবই হাস্যকর কিছু যুক্তি তুলে ধরেছে। একটা দুইটা চ্যাপ্টার আমাকে ইনবক্সে কেউ কেউ পাঠিয়েছে। একেবারেই হাস্যকর সেগুলো। জবাব দেয়ারও দরকার মনে করি নি।'
এই লাইনগুলো আমাকে সত্যিই খুব মজা দিয়েছে। কারণ, আসিফ বলেছে আমার বইটিতে খুব হাস্যকর কিছু যুক্তি দেওয়া।তাই সে আমার যুক্তিগুলোর জবাব দেওয়ারও দরকার মনে করেনি।
অথচ, আমার বইটা প্রকাশ হবার পরে এই আসিফ মহিউদ্দীন আমাকে এবং আমার বই নিয়ে দু দুটি স্যাটায়ার লিখেছে। শুধু যে স্যাটায়ার লিখেছে তা নয়। আমার বই প্রকাশের এক সপ্তাহের মাথায় বিজ্ঞানযাত্রা নামের একটি নাস্তিক্যবাদী পেইজ যখন 'বিবর্তবাদ নিয়ে আরিফ আজাদের মিথ্যাচার' শিরোনামে ইয়ায়ায়ায়া লম্বা গল্প ফাঁদে, তখন সেই গল্প ইয়ায়ায়ায়া লম্বা ক্যাপশন দিয়ে আসিফ মহিউদ্দীন শেয়ার করেছে (আমার কাছে স্ক্রীনশটও আছে)।
অথচ, সে দাবি করেছে, সে নাকি আমার যুক্তিগুলোর জবাব দেওয়ারই দরকার মনে করে না।হাহাহাহা। একেই বলে ডাবল ষ্ট্যান্ডবাজি। সোজা বাংলায় 'ভন্ডামি....'
পরিশেষে, যেসব নাস্তিক আমার বইয়ের পিডিএফ করেছে, তাদের প্রতি আসিফ খুব ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে এটা অন্যায় হয়েছে। কপিরাইট লঙ্ঘন করেছে। আসিফ বলেছে, লেখার জবাব লেখা দিয়ে দিন। অন্যায়ের মাধ্যমে না।'
প্রিয় আসিফ মহিউদ্দীন, আপনি হয়তো জানেন না, তাদের তৈরি সেই পিডিএফে তারা আমার বইয়ের যুক্তিগুলোকে একেবারে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।
তাদের রিফিউট করা দুইটা যুক্তি নিচে দিচ্ছি। (লেখা বেশি দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় বাকিগুলো লিখছিনা। লিখতে গেলে আরেকটা বই হয়ে যাবে।)
তারা দাবি করেছে, 'আমি ধর্ষণের শাস্তি কি হবে সাইন্স থেকে তার দলিল চেয়েছি। তারা পাল্টা যুক্তি ছুঁড়ে বলেছে, দুনিয়ায় ক্রাইম সাইন্স বলে একটা জিনিস আছে।
এটা দেখে খুব হেসেছিলাম। লিখেছিলামও। দুনিয়ায় ক্রাইম সাইন্সও এক প্রকার সাইন্স, পলিটিক্যাল সাইন্স, সোশ্যাল সাইন্সও একপ্রকার সাইন্স, হিসাববিজ্ঞানও একপ্রকার বিজ্ঞান 
তারা আমার বইয়ের 'মুসলমানদের কোরবানি ঈদ এবং একজন মাতব্বরের অযাচিত মাতিব্বরি' গল্প থেকে একটি ভুল বের করেছে। ভুলটি হলো, 'আমি বলেছি, প্রকৃতির ব্যালেন্স বজায় রাখার জন্য হলেও মানুষের গরু খাওয়া উচিত।তাই মুসলিমদের গরু জবাই অযৌক্তিক না।
নাস্তিকদের পাল্টা যুক্তি- 'তাহলে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মুসলিমরা ইঁদুর খায় না কেনো?'
হাহাহা। এই সমস্ত থার্ডক্লাশ নাস্তিকদের দেখছি খাদ্যজাল নিয়ে কোন জ্ঞানই নেই।নতুন করে 'খাদ্যজাল' পড়াতে হবে। ইঁদুর খাওয়ার জন্য প্রকৃতিতে আরো অনেক প্রাণী (বিড়াল, সাপখোপ ইত্যাদি) আছে, কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ উৎপাদিত গরু হজম করার জন্য কি আছে ভাঈ? 
এই হলো নাস্তিকদের যুক্তিখন্ডন পর্ব 
যাহোক, আসিফ মহিউদ্দীনের একটি ব্যাপার জোশ লেগেছে। সে তার লেখায় নাস্তিক আর মুক্তমনা শব্দের আগে 'কথিত' শব্দ ব্যবহার করেছে। আসলেই, অনলাইনে প্রকৃত মুক্তমনা আর প্রকৃত নাস্তিক মেলা ভার। সবগুলাই ভন্ড। অসৎ। সে ইউরোপের রিচার্ড ডকিন্স হোক বা বাঙলার প্রয়াত অভিজিৎ রায়। 'কথিত' শব্দ ব্যবহার করে ভালোভাবে নিজেদের রিপ্রেজেন্ট করার জন্য আসিফ মহিউদ্দীনকে এত্তোগুলো ধন্যবাদ। 

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.