আল্লাহ্র অস্তিত্বের প্রমান।
আল্লাহ্র অস্তিত্বের প্রমানঃ
মোঃ নিয়ামত আলী
আল্লাহ বলেনঃ তাদের রাসুলগন
তাদেরকে বলেছিলেনঃ যে আল্লাহ্ নভোমণ্ডল ও ভু-মণ্ডল সৃষ্টি করেছেন তাঁর (অস্তিত্তের)
ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করছ ? (সুরা
ইব্রাহিম ১০) ।আল্লাহ্
বলেনঃ তারা কি নভোমণ্ডল ও ভু-মণ্ডল জগতরাজিতে এবং আল্লাহ্র সৃষ্ট অন্যান্য বস্তুসমূহে
চিন্তা গবেষণা করে না ? (সুরা আরাফা ১৮৫)
।আল্লাহ্
বলেনঃ তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে উট কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে,
নভোমণ্ডল কিভাবে উঁচু করা হয়েছে, পাহাড় কিভাবে
স্থাপন করা হয়েছে এবং পৃথিবী কিভাবে বিছানো হয়েছে ? অতপর তুমি
তাদের স্মরণ করিয়ে দেও, তোমার দায়িত্ব তো কেবল স্মরণ করিয়ে
দেওয়া ।
(সুরা গা-শিয়া আয়াত ১৭-২১) ।আল্লাহ্
বলেনঃ তোমাদের নিজেদের মধ্যেও (আল্লাহ্র নিদর্শন রয়েছে),
তোমরা কি তা দেখতে পাওনা?
(সুরা আয-যারিয়াতঃ২১)
উপস্থিত মণ্ডলীঃ
আজকের এ বৈঠকে আমি আমার
জ্ঞান অনুপাতে আল্লাহ্ পাকের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করতে চাই ।আল্লাহ্ পাক যেন আমাদের
সবাইকে বাস্তবতার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দান করেন এ দোয়াই করি।
দুনিয়ার বয়স তো আর কম
হয়নি ।
মানব সভ্যতার ইতিহাসও অনেক প্রাচীন ।প্রত্যেক যুগে শতাব্দিতে
এ পৃথিবীর বুকে মুশ্রিকদের সংখ্যা তো অনেক ছিল,এখন অসংখ্য রয়েছে ।
কিন্তু স্রষ্টার (আল্লাহ্র) অস্তিত্ব অস্বীকার
করে এমন লোকের সংখ্যা অতীতেও কম ছিল এবং এদের সংখ্যা বর্তমানেও তুলামূলক কম ।
বস্তুতঃ স্রষ্টার (আল্লাহ্র)
অস্তিত্ব স্বীকার করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রকৃতির অংশ । এ
কারনেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ পরবর্তী সভ্যতার উম্মেসের যুগ এবং যখন থেকে ইতিহাস লেখা শুরু
হয়েছে তখন থেকে পৃথিবীর নানা প্রান্তে যেখানেই সভ্যতা গড়ে উঠেছে সেখানেই মানুষ কোন
না কোন ভাবে মানুষ (স্রষ্টার) আল্লাহ্র অস্তিত্ব স্বীকার করেছে। আসিবিয়
সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা,
মায়া সভ্যতা, ভারতীয় ও গ্রীক সভ্যতা সবাই স্রষ্টার(আল্লাহ্র) অস্তিত্ব স্বীকার করত ।আমরা যদি প্রিথিবির দিকে
নজর দেই তাহলে এমন অনেক জনপদ ও লোকালয় দেখতে পাবো যেখানে কৃষ্টি ও সভ্যতা নেই,
শাসন ও শৃঙ্খলা নেই, জ্ঞান বিজ্ঞানের কোন
আলোকরশ্মি নেই, সুন্দর সুন্দর রাজপথ, দুর্গ ও ইমারত নেই ।কিন্তু
এমন জায়গা খুঁজে পাবো না, যেখানে
জগতের স্রষ্টার (আল্লাহ্ ) স্বীকার করার মত
কেও নেই ।
দুনিয়ার প্রাচীন বড় বড়
বিজ্ঞানী দার্শনিক ও চিন্তানায়ক যাদের দর্শন ও জ্ঞান গবেষণা নিয়ে বর্তমান প্রাচ্য ও
পশ্চাত্ব গর্ব করে থাকে, সে সব দার্শনিক
ও চিন্তানায়কদের কেউ সে মহান সত্তাকে অস্বীকার করতেন না ।এরিস্তেটল বলুন আর প্লেটো,
মনু কিংবা জরথ্রুস্ত এবং অন্য যোত দার্শনিক ছিলেন সবাই স্রষ্টার
(আল্লাহ) আরাধনা করতেন (অর্থাৎ স্রষ্টাকে বিশ্বাস করতেন) ।
স্রষ্টা সম্পর্কে সঠিক
ধরনা (আল্লাহ্ ) ঃ
তবে আল্লাহ্
পাকের সম্পর্কে ধরনা একমাত্র
ইসলামই দিয়েছে এবং নবীদের মাধ্যমেই মানুষ এ ধরনা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে । যারা
কেবল নিজেদের বুদ্ধি ও বিবেক বিবেচনার ওপর নির্ভর করে,
তারা বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত এ সত্যটি পর্যন্ত উপনীত হতে অনেক হোঁচট
খেয়েছে ।
এর ফলে অনেক বিভ্রান্তি ও বক্রচিন্তার পথ
তিরি হয়েছে।
ভাল মন্দ ও কল্যাণ অকল্যাণের
খোদা একজন হতে পারে এটা পারসিকদের মাথায় ধরেনি । তাই
তারা কল্যাণের খোদা হিসেবে "ইয়াজদান"কে এবং অকল্যাণের খোদা হিসেবে
"আহরামান"কে ধার্য করেছে।
খ্রিস্থানরা তিনের মাঝে
এক আর একের মধ্যে তিন এ গোলকধাঁধায় মানুষকে বিভ্রান্তি করে দিয়েছে। হিন্দুদের
ঈশ্বর তো কমপক্ষে তিনজন।
ভ্রম্ম,বিষ্ণু ও মহেশ্বর ।
আর অবতারের তো কোন সিমা রেখা নেই,কোটি কোটি ।শুদু
তাই নয়,মানুষের লজ্জাস্থান তথা
লিঙ্গ পূজাও তাদের ধর্মের অবিচ্চেদ্ধ অঙ্গ ।ইহুদিরা যদিও এক খোদার
প্রবক্তা কিন্তু খোদাকে এমনভাবে বিশেষায়িত করেছে যে, সে খোদা একজন সাধারন মানুষের উরধে নয়।
আরবের মুশ্রিকদের মাথায়ও
এ বিষয়টি ধরেনি যে সারা জাহানের এত কাজ একজন খোদা কিভাবে করবেন?কোন মাধ্যম ছাড়া তাঁকে পাওয়া কিভাবে সম্বভ? এজন্য
তারা প্রত্যেক কাজের জন্য আলাদা আলাদা দেবতা কল্পনা করে সেগুলোর মূর্তি তৈরি করে ঘরে
ঘরে সাজিয়ে রাখতো ।
হিন্দু হক ,খ্রিস্থান ,গ্রীক হোক বা রোমান ক্যাথলিক ,মিশরিও হোক বা আরয সবাই খোদাকে শরীরী সত্তারুপে কল্পনা করেছিল । এর
ফোলে তারা মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল।
এসব দর্শন ও ধর্ম যদিও ভ্রান্তিপূর্ণ ও
কল্পনা নির্ভর ছিল, কিন্তু এসব থেকে
একটি মৌলিক বিষয় প্রতিভাত হয়ে উঠে ,তা হল বিশ্বের সব জাতি
ই গোষ্ঠী কোন না কোনভাবে এক মহান স্রষ্টা ও অনুপম সত্তার অস্তিত্ব , স্বীকার করে।
একটি প্রশ্নঃ এখন কেও
কেও প্রশ্ন করতে পারেন যে , আল্লাহ্
পাক এর অস্তিত্ব প্রমাণাদি অনুধাবন করা যদি এতই সহজ ও সাবলীল হয়ে
থাকে তাহলে তা বুঝতে মানুষ এত জটিলতার সম্মুখীন কেন হয়ে থাকে ?
এর উত্তর হলঃ মানুষের
উপলব্ধি শুরু হয় পঞ্চেন্দ্রিয় এর মাধ্যমে।
অর্থাৎ মানুষ চক্ষু,
কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা
ও ত্বকের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তু উপলব্ধি করে। যে
বস্তু মানুষ চোখ দিয়ে দেখে, কান
দিয়ে শোনে , নাক দিয়ে গ্রান নিতে পারে, জিহ্বা দিয়ে জাত স্বাদ আস্বাদন করতে পারে কিংবা ত্বকের মাধ্যমে যার উপস্থিতি তের পায় তাই মানুষ
মেনে নেয়।তাই
পঞ্চেন্দ্রিয় এর সীমার বাইরের তথা অতীন্দ্রিয় কোন কিছু মেনে নেওয়া তার পক্ষে কঠিন। স্রষ্টা
(আল্লাহ্) তো এমন একক সত্তা যাকে মানবিক পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা সম্ভব নয়।(উদাহরন
সরূপ) মানুষের এ পঞ্চেন্দ্রিয়ের কাজের সীমা যেখানে শেষ হয়ে
যায় সেখান থেকে তার সূচনা ।
এজন্য আল্লাহ্
পাক কে অনুভব করা কিছুটা জটিলই বটে। কিন্তু
যার বাহ্যিক এ পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাথে সাথে সুপ্ত ও অন্তর্নিহিত ইন্দ্রিয়সমূহের অধিকারী
হয়ে তা কাজে লাগায় তাদের জন্য আল্লাহ্কে উপলব্ধি করা জটিল নয়
(অর্থাৎ তাকে যদি বিশ্বাস করা যায় তাহলে তাকে উপলব্দি করা সহজ তবে
স্বর্ণকে যদি আপনি অস্বীকার করেন তবে স্বর্ণের ক্ষতি হবে বরং মানুষেই আপনাকে মূর্খ
বলবে)।
তাই যারা (বিশ্বাসী স্রষ্টার প্রতি তারা) সাধনা, ধ্যানমগ্নতা ও এবাদত বিশেষের মাধ্যমে নিজের সুপ্ত ও অন্তর্নিহিত ইন্দ্রিয়সমূহকে
কার্যকর করতে পারেন তারা মহা বিশ্বের প্রতিটি অনু পরমাণু এবং রঙ ও রূপের মধ্যে আল্লাহ্
ছাড়াআর কিছুই দেখতে পারেন না ।
তাছাড়া এখানে আর একটি
বিষয় প্রনিধানযোগ্য,যে জিনিস জত বেশি
স্পষ্ট তার বোধ ও উপলব্ধি অনেক সময় ততবেসি অস্পষ্ট হয়ে থাকে।এ বিশ্ব চরাচরে সূর্যেরচেয়ে
আর কোন বস্তু বেশি উজ্জ্বল? কিন্তু
তা সত্তেও সূর্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা সবচেয়ে কঠিন। কেউ
যদি কসরত করে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেও পারে তাহলে রাজ্যের অন্ধকার তাকে ঘিরে নিবে
(অর্থাৎ সে খালি চোখে দেখতে পারবে না)
আল্লাহর অস্তিত্ব ও আধুনিক
বিজ্ঞানঃ
যেহেতু এখন চতুর্দিকে
বিজ্ঞানের জয়জয়কার তাই তথাকথিত অনেক মুক্তমনা মানুষ এমন বলে থাকেন যে,
বিজ্ঞান জ সিকার করবে এবং যার অস্তিত্ব বিজ্ঞানের আলোকে প্রমানিত
হবে আমরাও তা স্বীকার করব।
আর বিজ্ঞানের মাধ্যমে যার প্রমান পাওয়া
যাবে না আমরা তা স্বীকার করব না।
ধর্ম ও বিজ্ঞান একে ওপরের অনুকূল ন প্রতিকূল
যে বিষয়টি যেহেতু স্বতন্ত্র আলোচনার বিষয় তাই আমরা সে বিষয়ে আলোচনা আলাদা ভাবে করব। কিন্তু
এখানে ভূমিকা স্বরূপ কিছু কথা পেশ করছি।
প্রথম কথাঃ ধর্ম ও বিজ্ঞান
উভয়ের সীমারেখা ও ক্ষেত্র ভিন্ন ভিন্ন।
তাই যখন একটাকে অন্যটার মধ্যে টেনে আনার
চেষ্টা করা হয় তখনি ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। প্রত্যেকটাকে
যদি তার নিজস্ব সীমারেখায় সীমাবদ্ধ রাখা হয় তাহলে একটা কখন অন্যটাকে অস্বীকার বা উপেক্ষা
করে না।আমি
পরিপূর্ণ আস্থার সাথে বলতে পারি অন্যান্য ধর্মের মনোভাব যাই হোক ইসলাম বিজ্ঞানকে অস্বীকার
করার পরিবর্তে তা সাব্যস্ত করে এবং তার জন্য মৌলি নীতিমালা প্রধানকরে। সবচেয়ে
বড় কথাঃ বিজ্ঞানের ভিত্তি হল মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের ওপর । আর
ইসলাম মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করার জন্য অন্যান্য ধর্মের চেয়ে বেশি জোর দেয়
।
দ্বিতীয় কথাঃ কোন বিজ্ঞানী
আজ পর্যন্ত রমন দাবি করেনি যে , বিজ্ঞানীরা
মহাবিশ্বের সব গোপন রহস্য আবিষ্কার করে ফেলেছে। বরং
বাস্তবতা হল বিজ্ঞান যোতই উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করছে ততই আমাদের দুর্বলতা ও অসহায়ত্তের
অনুভুতি প্রকট হচ্ছে।
দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা স্বীকার করতে বাধ্য
হচ্ছে যে,আমরা এ মহাবিশ্বের যতটুকু
জেনেছি তার চেয়ে অজানা রহস্যের পরিমান অনেক বেশি।আমি নিচ্চিত করে বলতে
পারি,বিজ্ঞান যখন উন্নতি করতে করতে চূড়ান্ত
শিখরে যাবে তখন স্রষ্টার (আল্লাহ্র) অস্তিত্তের স্বীকারোক্তি বিজ্ঞানী সবচেয়ে বেশি দেবে। (কারন
বর্তমানেই অনেক বিজ্ঞানীই স্রষ্টার অস্তিত্তে বিশ্বাস করেন)।
তৃতীয় কথাঃবিজ্ঞানের উন্নতির
ফলে মানুষ চাদে যেতে সক্ষম হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা গ্রহ ও নক্ষত্রসমুহ নিবিড়ভাবে
পর্যবেক্ষণ করেছেন।
তারা ক্ষেপোনাস্র আবিষ্কার করেছেন। দ্রুতগামি
জাহাজ, বিমান ও ট্রেন বানিয়েছেন। অনেক
নতুন নতুন পদার্থ আবিষ্কার করেছেন।
তারা গবেষণার মাধ্যমে প্রথিবিকে ঘূর্ণয়নশীল
প্রমানিত করেছেন।
এখন আমার প্রশ্ন হলঃ এসবের মাধ্যমে কি স্রষ্টার
(আল্লাহ্র) অস্তিত্ব নেই এটা প্রমানিত হয়?
আল্লাহ্র একত্ববাদে কোন বিচ্যুতি প্রমানিত হয়? নবীদের নবুয়ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় ?
এগুলার একটাও যেহেতু প্রমাণিত
হয় না সেহেতু ইসলাম বিজ্ঞানকে কে ভয় পাবে? ইসলাম বিজ্ঞানের পথে কেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে? বিজ্ঞানকে ভয় পাবে সেসব মৃত ধর্ম যাদের কাছে যুক্তি প্রমানের অস্র নেই।যাদের কোন দালিলিক ভিত্তি
নেই।
ইসলাম তো সেরকম কোন ধর্ম নয় । ইলামের
প্রত্যেক আকিদার পক্ষে রয়েছে যুক্তি প্রমানের বিপুল সমাহার।
দার্শনিক যুক্তিঃ আজ যেমন
বিজ্ঞানের জয়জয়কার তেমনি একটা সময় যখন গ্রিক দর্শনের খুব প্রভাব ছিল। আজকের
মানুষ যেমন বিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রভাবিত তেমনি প্রাচীনকালে লোকজন গ্রিক দর্শনের প্রতি
দুর্বল ছিল।তখন
তারা যে কোন মতবাদ বা আকিদা বিশ্বাসকে সে দর্শনের কষ্টিপাথরে মেপে দেখত। আজকে
তাদের সে দার্শনিক বিশ্লেষণ দেখলে যদিও আমাদের হাসি পায় কিন্তু সে সময় এটাই ছিল অনস্বীকার্য
বাস্তবতা।যাই
হোক, সে সময়ের মুসলিম আলেম ওলামাগণ যুগের
ভাবধারা ও রুচি অনুযায়ী সে দর্শনের মূলনীতির মাধ্যমে ইসলামের প্রত্যেকটি আকিদা বিশ্বাসকে
প্রমাণিত করে দেখেয়েছেন যেন কার মনে কোন সন্দেহ সংশয় না থাকে। সে
সময়ে আল্লাহর (স্রষ্টার) অস্তিত্ব প্রমান করতে গিয়ে আলেম ওলামাগণ দার্শনিক তত্তের ওপর ভিত্তি করে
যে সব যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন সেগুলো হয়তো আজকের সাধারন মানুষ পুরোপুরি বুঝবেন না,
কিন্তু সে যুগের মানুষের ভাবধারা ও দার্শনিক যুক্তির রূপরেখা দেখানোর
জন্য এখানে যুক্তিবিদ্ধাগত কিছু দলিল পেশ করব।
দার্শনিক যুক্তির মাধ্যমে
আল্লাহ্র অস্তিত্ব প্রমান দিতে গিয়ে কেউ বলেছেন, এ বিশ্বজগত নশ্বর।
আর প্রত্যেক নশ্বর তার অস্তিত্তের জন্য
কার্যকরণের মুখাপেক্ষী।
আর সে কার্যকরণ হোল স্রষ্টা (আল্লাহ্)।
কেউ বলেছেনঃ পদার্থের
গুণ যেমন রং ও স্বাদ ইত্যাদি নশ্বর।
আর প্রত্যেক পদার্থে এ নশ্বর গুণ রয়েছে। আর
নশ্বর তার অস্তিত্তের জন্য কোন কার্যকরণের মুখাপেক্ষী অতএব এ বিশ্বজগত কার্যকরণের মুখাপেক্ষী। কেউ
বলেছেনঃ এ বিশ্বচরাচরের সবকিছু সঞ্চালিত।
আর প্রত্যেক সঞ্চালিত বস্তুর জন্য একজন
সঞ্চালক প্রয়োজন আর সে সঞ্চালক হলেন আল্লাহ্। কেউ
আবার এভাবে যুক্তি দিলেন যে, এ
মহাবিশ্বে যত পদার্থ ও শরীরী সত্তা আছে সব সমরূপীয় ও সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু
এগুলোর বৈশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন আর বৈশিষ্টের ভিন্নতার জন্য সেগুলো কার্যকরণের মিখাপেক্ষি
আর সে কার্যকরণ হলেন আল্লাহ্ ।
এসব যুক্তি প্রমান শুনে
আপনি হয়ত অনুমান করতে পেরেছেন যে, সাধারন
মানুষ তো অনেক দুরের কথা আলেমরাও এগুলো বুঝতে গলদঘর্ম হয়ে পড়বেন। বস্তুতঃ
যারা যুক্তিবিদ্ধা ও দর্শনশাস্রের পরিভাষার সাথে পরিচিত নন তারা এসব যুক্তিতর্কের আদি
অন্ত কিছুই বুঝবেন না। দার্শনিকদের
ভাষা দার্শনিকগণ বুঝতে পারেন ,অন্যরা
সাধারনত বুঝেন না ।যুক্তিবিদদের
ভাষা যুক্তিবিদগনই ভাল বুঝতে পারেন ।
মোটকথাঃ যেমনি ভাবে সূর্যের আলো সবার জন্য,
চাঁদের কিরণ সবার জন্য,মাটির কোল সবার জন্য
ঠিক তেমনি আল্লাহর হেদায়েতের কিতাব কোরানও সবার জন্য ।শুদু মানার আগ্রহ থাকতে
হবে ।
১ প্রমানঃ এ জগতের রূপ
বৈচিত্র এমন এক বস্তু, যা রুচিশীল প্রত্যেক
মানুষকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে।
এর প্রায় প্রতিটি বস্তু হতেই কোন না কোন
সৌন্দর্য উদ্ভাসিত হয়।
এমনও তো হতে পারত যে ,
পৃথিবী তো থাকত কিন্তু
তাতে সৌন্দর্যের আভা থাকতো না ।
গাছ থাকতো কিন্তু ডাল পালার সুন্দর বিন্যাস এবং রঙ বেরঙের ফুল ফল
থাকতো না ।যদি
এমন হতো যে পৃথিবী তো থাকতো কিন্তু তাতে নদী নালার কলকল রব,বাগবগিচা ও ঝর্ণাধারা থাকতো না ।তাড়কারাজি থাকতো কিন্তু
তার জ্যোতি থাকতো না ।ফুল
থাকতো কিন্তু তাতে সুগ্রান ও বিচিত্র থাকতো না। পাহাড়
পর্বত থাকতো কিন্তু নক্ষত্রের সমারোহ থাকতো না । ফসলের
মাঠ থাকত কিন্তু তাতে সবুজের চাদর থাকতো না ।চাঁদ থাকতো কিন্তু তাতে
জোছনা থাকতো না ।সূর্য
থাকতো কিন্তু তাতে আলোকরশ্মি থাকতো না ।
বুলবুলি পাখি থাকতো কিন্তু তার সুমধুর গান
থাকতো না ।
সবার চোখ থাকতো কিন্তু কেউই দেখার ক্ষমতা
থাকতো না ।
সবার কান থাকতো কিন্তু তাতে শ্রবন শক্তি
থাকতো না ।যদি
এমন হতো তবে কেমন হতো আর কেনই বা এমন হোল না?
মানুষের জ্ঞান বিবেক বিবেচনা আজও এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে নি বা সক্ষম
হয় নি যে, সৃষ্টির সাথে সৌন্দর্য কেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত? কোরান এর যথাচিত জবাব দিয়েছে । সৃষ্টির সাথে সৌন্দর্যের
প্রলেপ দেওয়া হয়েছে,যাতে মানুষ এই সৃষ্টি
জগতের অপার সৌন্দর্য দর্শন করে নিজের অজান্তে বলে উঠেঃ মহান আল্লাহ্ কতইনা উত্তম সৃষ্টিকর্তা
।এই অপার ও অগাত সৌন্দর্য শুদুমাত্র এজন্য যে যাতে মানুষ সৌন্দর্যের
সৃষ্টিকর্তা মহান স্রষ্টা পর্যন্ত যেতে এবং তাঁকে মেনে নিতে কোনরূপ দ্বিধান্বিত না
হয় ।হে মানুষ ! এ বিশ্বজগত এর সকল রুপ বৈচিত্র, সৌন্দর্য ও লাবণ্য কি একজন মহাপরাক্রমশালি সত্তার নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এমনিতেই অস্তিত্তে
এসে গেছে? মাটির শ্যামলিমা, নক্ষত্রের আলো, ফুলের সৌরভ এবং গাছগাছালির মনমাতানো রূপ, এসব কি নিজে নিজেই হয়ে গেছে? না বরং এর স্রষ্টা
রয়েছে যিনি আল্লাহ্।
২ প্রমানঃএই দুনিয়ায় চিরাচরিত বিধান অনুযায়ী পরস্পর বিরোধী দুই বস্তুর সংমিশ্রণ
অসম্ভব । কোন
এক শ্রেনির বস্তু দারা তার সমশ্রেণির বস্তুই প্রকাশ পায়। এক
শ্রেনির বস্তু দ্বারা তার বিপরীত শ্রেনির বস্তু
প্রকাশ পাওয়াটা স্বভাবসিদ্ধ নয়।কিন্তু
আমরা যখন এ বিশ্বজগতের দিকে তাকাই , তখন
এই বিধানের বিপরীত দেখতে পাই।
এখানে এক শ্রেনির বস্তু দ্বারা তার বিপরীত
শ্রেনির বস্তু প্রকা পেতে দেখি।
জীবিত থেকে মৃত এবং মৃত থেকে জীবিত বের
হচ্ছে।
অজ্ঞ থেকে জ্ঞানী এবং জ্ঞানী থেকে অজ্ঞ
জন্ম নিচ্চে।
বসন্তের কাল থেকে হেমন্ত আর হেমন্তের কাল
থেকে বসন্ত আসছে।
নিকষ কালো রাতের বুক চিরে ভোরের আলো এবং
দিনের উজ্জ্বলতার শেষে রাতের আধার প্রকাশ পাচ্ছে । কংকরময়
পতিত স্থান থেকে জীবিত পোকা মাকড় বের হচ্ছে।
হৃষ্টপুষ্ট,
সবুজ শ্যামল বৃক্ষ থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে। এগুলো
কি সবই নিজে নিজেই হচ্ছে ? যখন
সাধারন নিয়মের দাবি হোল এরুপ না হওয়া , তখন এরুপ ঘটনার বহিঃপ্রকাশ
এমন এক সত্তার অস্তিত্তের বার্তা বহন করে যিনি এসব নিয়ম কানুন ভেঙে সবকিছু নিজের ইচ্ছেমত
করেন ।
এত সুন্দর মাটি,
একই রকম আলো বাতাস, একই রকম পানি অথচ এ জগতে
অগণিত প্রকারের বৃক্ষলতা জন্মায়।
বিভিন্ন বর্ণের ফুল,
তাদের আকার আকৃতি ও সুন্দর গ্রান ভিন্ন ভিন্ন ।ফলের স্বাদ ও ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াও
বিভিন্ন ।
এসব বৈচিত্রপূর্ণ বস্তু কি আমাদের এক মহান
সৃষ্টিকর্তা ও সুদক্ষ, সুনিপুন কারিগরের
দিকে ইশারা করে না ?
৩ প্রমানঃ বিজ্ঞান আমাদেরকে
বলে যে, এ মহাবিশ্বজগত প্রায়
৫ মিলিয়ন (১০ লক্ষে ১ মিলিয়ন) ছায়াপথের
সমষ্টি দ্বারা গঠিত।
প্রতিটি ছায়াপথে প্রায় ১ লক্ষ মিলিয়ন নক্ষত্র
রয়েছে।এরা
সবাই উক্ত ছায়াপথ ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।
চাঁদ একটি উপগ্রহ যা ধারাবাহিক ভাবে প্রথিবি
নামক গ্রহকে কেন্দ্র করে গুরচে ।পৃথিবী
প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার মাইল বেগে আবর্তিত হচ্ছে।সূর্য ঘণ্টায় ৬ লক্ষ মাইল
বেগে আবর্তিত হচ্ছে ।কিছু
তারকা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮ লক্ষ মাইল বেগে
আবর্তিত হচ্ছে, কিছু তারকা প্রতি সেকেন্ডে
৩৩ এবং কিছু তারকা প্রতি সেকেন্ডে ৪৪ মাইল বেগে আবর্তিত হচ্ছে। যদি
এসব চলমান বস্তু গুলো পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরিত হয় তবে তো সমগ্র জগত নিশ্চিহ্ন
হয়ে যাবে।
যদি ঐ সব বস্তুর আবর্তনের গতির মধ্যে বিন্দুমাত্রও
তারতম্য দেখা দেয়,তবে আমাদের দিন রাত,
এমন কি ঋতু পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আমরা
প্রত্যক্ষ করি যে, বিভিন্ন শহরে প্রতিনিয়ত
গাড়ির মুখোমুখি সংঘরসে হাজার হাজার প্রান অকালে ঝরে যায় ।তার কারন এই যে,
সেগুলোতে কোন চালক ছিল না ? চালক তো ছিল
ঠিকই কিন্তু তার সামান্য অমনোযোগিতায়র কারনে দুর্ঘটনাগুল ঘটে থাকে ।যদি একজন চালকের এক মুহূর্তে
অসাবধানতার কারনে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে, তবে কি কারনে এ মহাবিশ্বজগৎে অবস্থিত হাজার কোটি নক্ষত্র ও তাড়কারাজি নিজ
নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হওয়া সত্তেও কেন দুর্ঘটনা ঘটছে না ? কেন
সংঘর্ষ হচ্ছে না ? এগুলো কি এমনিতেই যথাযথ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে
? না ,সব এমনিতেই পরিচালিত হচ্ছে না । একজন
মহান সত্তা যাবতিও বেবস্থাপনা স্বীয় কুদরতের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন ।
৪ প্রমানঃ সৃষ্টি জগতের
প্রতিটি সৃষ্টই আল্লাহ্ পাকের অস্তিত্তের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করছে । তবে
আল্লাহ্র অস্তিত্তের সর্বাধিক বড় সাক্ষী হচ্ছে মানুষ নিজে। মানুষের
স্নায়ুতন্ত্রের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন, তা কত সূক্ষ্ম ও সুসংহতভাবে বিন্যস্ত। মানুষের
দেহের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় কারজ পরিচালনার ভার মস্তিষ্কের উপর নেস্তু।মস্তিষ্কের মধ্যে প্রায়
১ হাজার মিলিয়ন স্নায়ুতন্ত্রী রয়েছে।
প্রতিটি তন্ত্রী থেকে অতি সূক্ষ্ম কিছু
উপশিরা বের হয়ে দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে আছে।
এই উপশিরার মাধ্যমে ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মাইল বেগে কোন সংবাদ গ্রহন করা
অথবা অন্য কোন অঙ্গকে কোন কাজের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে। এই
স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমেই আমরা খাবারের স্বাদ নেই, শ্রবন করি, দর্শন করি, যে কোন বিষয় অনুভব করি এবং সমস্ত কাজ সম্পাদন করি ।আমাদের জিহ্বার মাঝে প্রায়
৩ হাজার স্বাদ অনুভবের স্নায়ুতন্ত্রের রয়েছে ।যার প্রতিটা স্নায়ু স্বতন্ত্রভাবে
অতিসূক্ষ্ম তন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে । আমাদের
কানে প্রায় ১ লক্ষ্য শ্রবনতন্ত্রী রয়েছে ।ঐ
স্নায়ুতন্ত্রির মাধ্যমে একটি জটিল পক্রিয়ায় মাদের মস্তিস্ক শ্রবন করে থাকে।প্রতিত চোখের মধ্যে প্রায়
১৩০ মিলিয়ন স্নায়ুতন্ত্রি রয়েছে ।যার
মাধ্যমে প্রতিটি বস্তুর ছবি মস্তিস্কে প্রেরণ করা হয়ে থাকে ।আমাদের চামড়ার মধ্যে তথা
ত্বকের মাঝে অনুভব শক্তির যেন একটা জাল বিছানো রয়েছে । যদি
কোন উষ্ণ বস্তু তার সামনে আনা হয় তবে প্রায় ৩ হাজার স্নায়ুতন্ত্রি ঐ উষ্ণতাকে অনুভব
তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্কের নিকট সেই উষ্ণতার সংবাদ পোঁছে দেয় ।এমনিভাবে চামড়ার মধ্যে
প্রায় ২ লক্ষ্য ৫০ হাজার স্নায়ুতন্ত্রি রয়েছে , যারা মস্তিস্কে শীতলতার সংবাদ সরবরাহ করে থাকে ।এখন চিন্তার বিষয় হলঃ
এত সুশৃঙ্খল ও সুসংহত বেবস্থাপনা কি নিজে নিজেই অস্তিত্তে এসে গেল ?
আসলে আমরা যদি আমাদের দেহ নিয়ে গবেষণা করি তাহলেই স্রষ্টার অস্তিত্তের
অনেক প্রমান পাব ।
একটি বড় প্রমানঃ আল্লাহ্
পাকের অস্তিত্তের সবচেয়ে বড় প্রমান হচ্ছে স্বয়ং রাসুল (সা) । এখন
প্রশ্ন উঠতে পারে এটা কীভাবে ? এর
জবাবে আমি বোলবঃ এ জগতে এমন অনেক বস্তু রয়েছে যা আমি অথবা আপনারা কেউই নিজের চোখ দ্বারা
দেখি নাই ।
কিন্তু সৎ ও নির্ভরযোগ্য বেক্তি যখন আমাদের
সে বস্তু সম্পর্কে অবগত করে তখন আমরা নির্দ্বিধায় তা মেনে নেই । উদাহরণঃ
আমি কখন অ্যামেরিকার নিউইয়র্ক শহর দেখেনি তবে তার অস্তিত্ব মেনে নিয়েছি। আমি
কখন আগ্নেয়াগিরি দেখিনি তবে তার অস্তিত্ব মেনে নিয়েছি।আমি কখনো সমুদ্র হতে মনি মুক্তা সংগ্রহ করতে দেখিনি
তবুও তা বিশ্বাস করেছি।আমি
কখন স্বর্ণের খনি দেখিনি তবুও তার অস্তিত্ব মেনে নিয়েছি। আমরা
মানুষকে কখনো চাদে অবতরণ করতে দেখিনি তবুও তা বিশ্বাস করেছি ।আমরা কখনো এটম বোমা বিস্ফোরিত
হতে দেখিনি তবুও তাকে বিশ্বাস করি।আমরা
কখনো কুখ্যাত হালাকু খান ও চেঙ্গিস খাঁ কে দেখিনি , নিয়টন , আইনিস্তাইন , সহ যত বিজ্ঞানি রয়েছে বা ইতিহাস আমরা না দেখেও বিশ্বাস করেছি ।(কোন বাস্তব দলিল ছাড়াই
শুদু মুখের কথায় বিশ্বাস করেছি)।
আমরা উক্ত বিষয় গুলো কেন মেনে নিলাম ?
শুদুমাত্র নির্ভরযোগ্য সুত্রে ও সৎ বেক্তিদের মাধ্যমে আমরা জানতে
পেরেছি ।এজন্য
এগুলার সত্যতা আমরা স্বীকার করে নিয়েছি।এ
জন্যই আমি বলি , যদি আমরা সেই অদেখা
বস্তু বা বিষয়কে দুনিয়ার সাধারণ মানুষের কথার উপর ভিত্তি করে বাস্তব বলে মেনে নিতে
পারি , তবে যে মহান আল্লাহ্র অস্তিত্তের সাক্ষ্য লক্ষ্য লক্ষ্য
সত্যবাদী এবং পবিত্র মানুষ দিয়েছেন এবং জগতের প্রতিটি ধুলিকনা পর্যন্ত যার অস্তিত্তের
সাক্ষ্য দিচ্চে তার অস্তিত্তের কথা কি, না মেনে পারা যায় ?
যেহেতু আমরা উক্ত বস্তু
এবং বিষয় না দেখে বাস্তব বলে বিশ্বাস করেছি
ঠিক তেমনি ভবে আমরা কেন বিশ্বাস করতে পারব না যেঃ?!
হযরত আদম (আ) হলেন আল্লাহ্র নবি তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন
আল্লাহ্ আছেন আমরা না দেখে বিশ্বাস করেছি ।
একইভাবে হযরত ইসা (আ) ,
হযরত ইব্রাহিম (আ), হযরত মুসা (আ) ,
হযরত ইসমাইল (আ),হযরত দাউদ (আ), হযরত শিষ (আ), হযরত সুলাইমান (আ), এবং সর্ব শেষ নবি মোহাম্মদ (সা) ইত্যাদি যতো নবি রাসুল দুনিয়াতে এসেছেন
সবাই বলেছেন আল্লাহ্ আছে ।সুতরাং
আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস করা উচিত।
আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি সমস্ত নবী
রাসুলগনই ছিলেন চরম সত্যবাদী।
কে এই মোহাম্মদ (সা) ?
তিনি হলেন সেই মোহাম্মদ
(সা) যার সত্যবাদিতার ব্যাপারে তাঁর দুশমনদের পর্যন্ত পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল।যার আমানত ও দিয়ানতদারির
প্রশংসা তাঁর হিংসুকদের মুখে মুখেও ছিল।যাকে
তাঁর রক্ত পিপাসু দুশমনরা সিদ্দিক এবং আল আমিন উপাধি দিয়েছিল।যার মুখ নবুয়ত প্রাপ্তির
পূর্ব থেকেই সকল প্রকার মিথ্যা থেকে পবিত্র ছিল ।সেই সত্যবাদী বাদশা রাসুল
(সা) বলার পরেও কি আমরা আল্লাহ্র অস্তিত্ব কে স্বীকার না করে পারবো
?এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে যে, সাধারণ মানুষের কথায় আমরা হাজারও অদেখা বস্তুর অস্তিত্ব কে মেনে নিলাম অথচ
চরম সত্যবাদীর কথার উপর ভিত্তি করে আমরা ল্লাহর অস্তিত্ব কে মেনে নিতে পারছি না ।নিউটন এর মাথার উপর যে
আপেল পরছিল সেটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি যদিও কেউ দেখেনি । বরং
তাই আমাদের তো উচিত ছিল আর একধাপ এগিয়ে স্পস্থ করে বলা যে,যখন সত্যবাদী মোহাম্মদ (সা) বলেছেন যে, আল্লাহ্
পাকের অস্তিত্ব বিদ্ধমান,তখন আমাদের আর কোন দলিলের দরকারের
প্রয়োজন নেই ।রাসুল
(সা) এর মুখের কথাই আমাদের জন্য বরং সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য সর্বশেষ ও চূড়ান্ত দলিল,
আমি আরও সত্যের চরম বিশ্বাসের সাথে বলতে চাইঃ
আমরা কোনদিন আরশে মুয়াল্লা
দেখেনি কিন্তু বিশ্বাস করি।আমরা
কোনদিন ফেরেশতাদের দেখেনি কিন্তু বিশ্বাস করি।আমরা কোনদিন জান্নাত
, জাহান্নাম দেখেনি কিন্তু বিশ্বাস করি।আমরা কখনো সিদ্রাতুল মুন্তাহা
দেখেনি কিন্তু বিশ্বাস করি।
আমরা কোনদিন পুলসিরাত দেখেনি কিন্তু বিশ্বাস
করি ।আমরা
কখনো কবরের আজাব দেখেনি কিন্তু বিশ্বাস করি ।আমরা কখনো হাশরের ময়দান
দেখেনি কিন্তু বিশ্বাস করি, এবং
আমরা আল্লাহ্ কে মনে প্রানে চরমভাবে বিশ্বাস করি যদিও দেখেনি । একমাত্র
এই জন্যই বিশ্বাস করি যে, সত্যবাদী
নবী (সা) বলেছেন।
আমাদের সমাজে তথাকথিত
কিছু মানুষ রয়েছে তারা বলে যে, আল্লাহ্র
সত্তা ও তাঁর গুণাবলী আমাদের বুঝে আসে না,
আমরা এটাও বুঝি না যে ,আল্লাহ্ কি?
কথায় থাকে? কেমন আছেন? আমরা এটাও বুঝি না যে, যদি তাঁর অস্তিত্ব থেকেই
থাকে তবে তাঁর হাত পা নাক কান নেই কেন? এই কথার উত্তরে আমি
বলতে চাইঃ যদি এই কোথাই মূলনীতি হিসেবে মেনে নেওয়ার হয় যে ,যে বিষয় বা বস্তু আমাদের বুঝে আসবে না তা অস্বীকার করা, তবে তো আমাদের এ জগতে অনেক বিষয়কেই অস্বীকার করতে হবে।কত শত নব অবিস্কারিত বস্তু
রয়েছে যা লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ বুঝে না।
তবে কি ঐ সব বিষয়কে অস্বীকার করা হবে?
বন্ধুরা আমারঃ আল্লাহ্র অস্তিত্ব এর বিষয়টি বুদ্ধি বা বিবেকের সাথে
সম্পৃক্ত নয় বরং এটার সম্পর্ক অন্তরের সাথে। নিজের
মনকে জিজ্ঞেস করুন সে এক মহান সত্তার প্রয়োজন অনুভব করে কিনা
?কোন এক কবি কতইনা সুন্দর বলেছেনঃ
*""অস্তিত্ব তোমার হৃদয়ে আমার,
অন্য কথাও নয়,
তাই বুঝেছি আমি,
এটাই হোল তোমার পরিচয়"
আল্লাহ্ সবাইকে সত্য
গ্রহন করার যোগ্যতা দান করুক আমিন ।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.