''তোমরা যারা 'বিজ্ঞান বিজ্ঞান' করো- ০১''/ আরিফ আজাদ

'ডার্ক এনার্জি' আবিষ্কারের জন্য ২০১১ সালে একদল বিজ্ঞানীর একটি টিমকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
সেই টিমের একজন অন্যতম সদস্য হলেন Aleksey Filippenko। উনি যুক্তরাষ্ট্রের University Of California'র Astronomy'র একজন প্রফেসর। উনার একটি ইন্টারভিউ পড়ছিলাম।
ভদ্রলোক একজন এথেইষ্ট। উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো, - 'You maintain you do not need any divine help to explain how the universe came to be. So, what is your version?'
অর্থাৎ, উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে,- 'আপনি তো মনে করেন যে মহাবিশ্বের সৃষ্টির জন্য কোন ঐশ্বরিক শক্তির দরকার নেই। তাহল মহাবিশ্বের সৃষ্টি কিভাবে বলে আপনি মনে করেন?'
উনি খুব সুন্দর, খুব ভদ্রতার সহিত জবাব দিলেন। বললেন, - 'Let me start by saying that I am going to discuss the universe only from the perspective of a scientist, from an intellectual perspective. I am not going to be talking about whether there is spiritual God or a personal God or a purpose to the universe – these are questions that scientists can’t address. My own belief is that once you have the laws of physics the universe just keeps going on its own. And it could even be that the laws of physics are all that you need in order to get the universe to start from the very beginning – the “Big Bang”.
তিনি বললেন যে, তিনি যা বলবেন তা কেবল একজন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে। ইশ্বর আছে কী নেই- এই ধরণের প্রশ্ন কখনোই বিজ্ঞানীরা ডিল করেন না।
তিনি বললেন,- পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কার্যকর থাকলে এরকম মহাবিশ্ব তৈরি হতেই পারে, এবং এরকম একটি মহাবিশ্বকে বিং ব্যাং এর মতো শুরুর পর্যায় থেকে পাওয়ার জন্য যা দরকার, তা হলো- Laws Of Physics (পদার্থবিদ্যার সূত্র)।
এরপরে উনাকে প্রশ্ন করা হলো, 'ঠিক আছে। ধরে নিলাম যে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো ছিলো বলেই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, - পদার্থবিজ্ঞানের এই সূত্রগুলো কোথা থেকে এলো?'
এটা একটা চমৎকার প্রশ্ন। পদার্থ বিজ্ঞানীরা আসলে যা করে, তাকে উদ্ভাবন বলা যায় না। তাকে মোটাদাগে যা বলা যায় তা হলো- আবিষ্কার । আবিষ্কার আর উদ্ভাবনের মাঝে বিস্তর ফারাক আছে।
বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের সূত্র উদ্ভাবন করেন না। তারা কেবল বিজ্ঞানের সূত্রগুলোর আবিষ্কার করেন। অর্থাৎ, লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা সূত্রগুলোকে লোকসম্মুখে নিয়ে আসেন।
যেমন- আইনষ্টাইন কিন্তু E = mc2 নিজে বানান নি। এটা প্রকৃতিতে বলবৎ ছিলো। তিনি কেবল এটার রহস্য উদঘাটন করেছেন মাত্র।
তাই বিজ্ঞানী Aleksey Filippenko কে যখন জিজ্ঞেস করা হলো যে- পদার্থবিজ্ঞানের এই সূত্রগুলো কোথা থেকে এলো,
তিনি বাঙলা নাস্তিকদের মতোন ত্যানা প্যাঁচানী, ছল-ছাতুরি ইত্যাদির আশ্রয় না নিয়ে সরাসরিই বললেন, - 'That’s a great question – what is the origin of the laws of physics? I don’t know. That’s a question science can’t answer. I don’t think scientists will ever truly understand creation because I don’t think we will know where the laws of physics came from.
তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, - পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কোথা থেকে এবং কীভাবে এলো এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে না। বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীরা যে কোনদিন এর উত্তর দিতে পারবে- সেটাও তিনি মনে করেন না।
মজার ব্যাপার! বিজ্ঞান জানে না এই সূত্রগুলো কোথা থেকে এসেছে।
যেহেতু বিজ্ঞান জানেনা, তাই আমাদের কি ধরে নিতে হবে যে পদার্থবিদ্যার এই সূত্রগুলোর কোন উৎসস্থল নেই?
জ্বী নাহ! বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীরা সেরকম কোন কথাই বলেন না। সেরকম কথা বলে থাকেন কেবল আমাদের স্বদেশীয় ব্লগ বিজ্ঞানীরা।
এরকম আরো অনেক ব্যাপার আছে যার উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে না বা দিতে পারবেও না। আমার কথা না। বিজ্ঞানীদের কথা এটা।
আমাদের পুরো মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা কতোটুকু জানি জানেন? পুরো মহাবিশ্ব সম্পর্কে এখন পর্যন্ত আমরা কেবল ১০০ ভাগের মধ্যে ৪ ভাগ জানি মাত্র। কি অবাক হচ্ছেন?
উঠতে-বসতে যে 'বিজ্ঞান' দিয়ে ধর্ম, স্রষ্টা, বিশ্বাসকে ধুয়ে দেওয়া হয় রোজ, সেই বিজ্ঞানই কিনা চরম উৎকর্ষতার যুগে মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানেই মাত্র ৪% ।
হ্যাঁ। Aleksey Filippenko বলেছেন, - 'Scientists are only well-aware of 4 per cent of the universe – that is, we understand pretty well the nature of 4 per cent of the universe. The stuff that is made of atoms. Ninety-six per cent of the universe is made out of dark matter and dark energy. And although we know they are present we don’t know what their detailed properties are or why they are there. Or what exactly is going on.'
এই হচ্ছে এখন পর্যন্ত সেই বিজ্ঞান যা মহাবিশ্ব সম্পর্কেই জানে মাত্র ৪%, সেই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার কথা তো বাদই দিলাম 
যাহোক, বিজ্ঞান কি প্রকৃতির সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?
এ প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল স্যার উনার 'কোয়ান্টাম মেকানিক্স' বইতে লিখেছেন, - 'কাজেই যারা বিজ্ঞান চর্চা করে তারা ধরেই নিয়েছে আমরা যখন বিজ্ঞান দিয়ে পুরো প্রকৃতিটাকে বুঝে ফেলব তখন আমরা সবসময় সবকিছু সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবো। যদি কখনো দেখি কোনো-একটা-কিছু ব্যাখ্যা করতে পারছি না তখন বুঝতে হবে এর পিছনের বিজ্ঞানটা তখনো জানা হয়নি, যখন জানা হবে তখন সেটা চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারব। এক কথায় বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা বা ভবিষ্যদ্বাণী সবসময়েই নিখুঁত এবং সুনিশ্চত।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিজ্ঞানের এই ধারনাটাকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা সবিস্ময়ে আবিষ্কার করেছেন যে, প্রকৃতি আসলে কখনোই সবকিছু জানতে দেবে না। সে তার ভেতরের কিছু-কিছু জিনিস মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। মানুষ কখনোই সেটা জানতে পারবে না- সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে এটা কিন্তু বিজ্ঞানের অক্ষমতা বা অসম্পুর্ণতা নয়। এটাই হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানীরা একটা পর্যায়ে গিয়ে কখনোই আর জোর গলায় বলবেন না ‘হবে’, তারা মাথা নেড়ে বলবেন, ‘হতে পারে’।
স্যার বলেছেন, প্রকৃতি তার সব রহস্য আমাদের জানতে দেবে না।
প্রকৃতি যে আমাদের সব রহস্য জানতে দেবে না, সেটা আমার কথাও না, স্যারের কথাও না। এটা খোদ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কথা।
তো, প্রকৃতির যে রহস্য বিজ্ঞান ভেদ করতে পারবে না, আমরা কী সেসব বিশ্বাস করবো না? ধরে নেবো যে, বিজ্ঞান পারছে না বলে এসবের আদতে অস্তিত্বই নেই?
একদম না। বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা জেনে খোদ বিজ্ঞানীরাও এসবে স্রেফ 'বিশ্বাস' করে যান। ফলে, বিজ্ঞানীরা একটা সময়ে গিয়ে আর বলতে পারবেন না 'হবে', তাদের বলতে হবে- 'হতে পারে...'
''তোমরা যারা 'বিজ্ঞান বিজ্ঞান' করো- ০১''/ আরিফ আজাদ

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.