ইনশাআল্লাহ্ / আরিফ আজাদ
একবার আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে বললো,- 'আগামীকাল কী আসবি?'
আমি বললাম,- 'ইনশাআল্লাহ'।
সে বললো,- 'আরেহ! ইনশাআল্লাহ বললে হবে না। প্রমিস কর যে আসবি......'
আমি বললাম,- 'ইনশাআল্লাহ'।
সে বললো,- 'আরেহ! ইনশাআল্লাহ বললে হবে না। প্রমিস কর যে আসবি......'
আচ্ছা, একজন মুসলিমের জন্য 'ইনশাআল্লাহ'র চেয়ে বড় প্রমিস আর কী হতে পারে?
প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি বাক্যে, প্রতিটি কর্মের জন্য 'ইনশাআল্লাহ' 'আলহামদুলিল্লাহ্' 'সুবাহানআল্লাহ' বলাটা যে কতোটা তৃপ্তির, কতোটা প্রাপ্তির তা কেবল একজন প্রকৃত মুসলিম যে নিজের জীবনে দ্বীনকে প্রতিফলিত করতে পেরেছে, কেবল সে-ই অনুধাবন করতে পারে।
প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি বাক্যে, প্রতিটি কর্মের জন্য 'ইনশাআল্লাহ' 'আলহামদুলিল্লাহ্' 'সুবাহানআল্লাহ' বলাটা যে কতোটা তৃপ্তির, কতোটা প্রাপ্তির তা কেবল একজন প্রকৃত মুসলিম যে নিজের জীবনে দ্বীনকে প্রতিফলিত করতে পেরেছে, কেবল সে-ই অনুধাবন করতে পারে।
তাফসীর পড়তে গিয়ে 'ইনশাআল্লাহ' বলা নিয়ে একটি ঘটনা পড়েছিলাম। কোন কাজ করার পূর্বে বা কোন ওয়াদা দেওয়ার সময় যে 'ইনশাআল্লাহ' বলাটা যে একজন মুমিনের অবশ্য কর্তব্য, সেটা বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন।
ঘটনাটি এরকম-
ঘটনাটি এরকম-
একবার রাসূল (সাঃ) এর নবুয়্যাতের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য মক্কার কুরাঈশরা নযর বিন হারিছ এবং ওকবা বিন আবু মঈতকে মদীনার ইহুদী আলেমদের কাছে পাঠালো। তাদেরকে বলে দেওয়া হলো,- 'তোমরা মদীনায় যাও এবং মুহাম্মদের ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো। তোমারা তাদেরকে মুহাম্মদের গুণাগুণ এবং সে যা যা আমাদের বলছে, সে সম্পর্কেও বলো। কেননা তারা আহলে কিতাব (পূর্বের কিতাব যেমন তাওরাত, ইঞ্জিলের অনুসারী)। তাদের কাছে নবী-রাসূলদের সম্পর্কে এমন জ্ঞান আছে, যা আমাদের কাছে নেই।
নযর বিন হারিছ এবং ওকবা মদীনায় গিয়ে ইহুদী আলেমদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তারা ইহুদী আলেমদের কাছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বৈশিষ্ট্য এবং তিনি যে দ্বীনের প্রচার শুরু করেছেন, সে সম্পর্কেও কিছু তথ্য দিলো। নযর বিন হারিছ এবং ওকবা তাদের বললো,- 'আপনারা তাওরাতের অধিকারী। তাই আমরা আপনাদের কাছে আমাদের গোত্রের একজন (মুহাম্মাদ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছি। আমাদেরকে তার সম্পর্কে কিছু সংবাদ দিন এবং এমন কিছু বিষয় শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আমরা তাঁকে পরীক্ষা করতে পারি।'
নযর বিন হারিছ এবং ওকবার'র কথা শুনে ইহুদী আলেমরা বললো,- 'তোমরা তাঁকে তিনটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে।
১) তোমরা তাকে ঐ সমস্ত যুবকদের সম্পর্কে (আসহাবে কাহাফ) জিজ্ঞেস করো, যারা অতীত কালে দ্বীন নিয়ে পলায়ন করেছিল। তাদের অবস্থা কী হয়েছিল? কেননা তাদের ঘটনাটি ছিল সত্যিই বিস্ময়কর।
২) তোমরা তাকে আল্লাহর সেই মুমিন বান্দা (যুল কারনাইন) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো, যিনি পূর্ব ও পশ্চিমের সব দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। তার খবর আসলে কী ছিলো?
৩) তোমরা তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। এটি কী?
৩) তোমরা তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। এটি কী?
সে যদি তোমাদের প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারে, তাহলে সে একজন সত্য নবী। তোমরা তার অনুসরণ করো। আর যদি সে উত্তর দিতে না পারে, তাহলে ধরে নেবে সে একজন মিথ্যুক।
তোমরা তার ব্যাপারে যে কোন সিদ্বান্ত নিতে পারো।
তোমরা তার ব্যাপারে যে কোন সিদ্বান্ত নিতে পারো।
প্রশ্নগুলো নিয়ে নযর এবং ওকবাহ মক্কার কুরাইশদের নিকট ফেরত আসল। এসেই তারা কুরাইশ নেতাদেরকে বললো,- 'আমরা মুহাম্মদ ও আমাদের মাঝে ফয়সালাকারী একটি বিষয় নিয়ে এসেছি। কুরাইশ নেতারা উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলো।
তারা প্রশ্নগুলো সম্পর্কে কুরাইশ নেতাদেরকে জানালো এবং বললো,- 'মদীনার ইহুদী আলেমগণ আমাদেরকে বলেছে, আমরা যেন এই প্রশ্নগুলো মুহাম্মদের সামনে পেশ করি।'
তারা প্রশ্নগুলো সম্পর্কে কুরাইশ নেতাদেরকে জানালো এবং বললো,- 'মদীনার ইহুদী আলেমগণ আমাদেরকে বলেছে, আমরা যেন এই প্রশ্নগুলো মুহাম্মদের সামনে পেশ করি।'
তারা সবাই মিলে রাসূল (সাঃ) এর নিকট আগমণ করলো এবং সেই প্রশ্ন তিনটি করলো। তাদের প্রশ্ন তিনটি শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন,- 'আগামীকাল আমি তোমাদেরকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিব।'
উত্তরটা দিতে গিয়ে রাসূল (সাঃ) 'ইনশাআল্লাহ্' শব্দটা বলতে ভুলে গেলেন। কাফেররাও আগামীকাল উত্তর পাওয়ার ওয়াদা নিয়ে চলে গেলো।
কিন্তু, ওয়াদা করার সময় 'ইনশাআল্লাহ্' না বলার কারণে সেদিন থেকে পরের পনেরো দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও এ ব্যাপারে (প্রশ্ন তিনটির ব্যাপারে) কোন ওহীই আসলো না।
এবং জীবরাঈল (আঃ) ও আগমন করেননি।
মুশরিকরা মনে করলো রাসূল (সাঃ) হয়তো এসবের উত্তর জানে না। এজন্যই বিলম্ব করছে।
ওইদিকে রাসূল (সাঃ) ও চিন্তায় পড়ে গেলেন। কী হলো? এই প্রশ্নগুলো এমন যে, এগুলোর উত্তর আল্লাহ তা'লা ছাড়া আর কেউই জানেন না। তিনি ওহী না পাঠানো অবধি রাসূল (সাঃ) ও কোন উত্তর দিতে পারছেন না। অবশেষে ঠিক পনেরো দিন পরেই এসব ব্যাপারে ওহী আসলো। আল্লাহ তা'লা আসহাবে কাহাফ, যুলকারনাঈন, রূহ সহ বিভিন্ন রহস্যময় ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) কে জানিয়ে দিলেন। যে সূরায় এসব নিয়ে বলা হয়েছে সূরাটির নাম- সূরা আল কাহাফ।
কিন্তু, ওয়াদা করার সময় 'ইনশাআল্লাহ্' না বলার কারণে সেদিন থেকে পরের পনেরো দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও এ ব্যাপারে (প্রশ্ন তিনটির ব্যাপারে) কোন ওহীই আসলো না।
এবং জীবরাঈল (আঃ) ও আগমন করেননি।
মুশরিকরা মনে করলো রাসূল (সাঃ) হয়তো এসবের উত্তর জানে না। এজন্যই বিলম্ব করছে।
ওইদিকে রাসূল (সাঃ) ও চিন্তায় পড়ে গেলেন। কী হলো? এই প্রশ্নগুলো এমন যে, এগুলোর উত্তর আল্লাহ তা'লা ছাড়া আর কেউই জানেন না। তিনি ওহী না পাঠানো অবধি রাসূল (সাঃ) ও কোন উত্তর দিতে পারছেন না। অবশেষে ঠিক পনেরো দিন পরেই এসব ব্যাপারে ওহী আসলো। আল্লাহ তা'লা আসহাবে কাহাফ, যুলকারনাঈন, রূহ সহ বিভিন্ন রহস্যময় ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) কে জানিয়ে দিলেন। যে সূরায় এসব নিয়ে বলা হয়েছে সূরাটির নাম- সূরা আল কাহাফ।
চিন্তা করে দেখুন। তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল। শুধুমাত্র ওয়াদা দেওয়ার ক্ষেত্রে 'ইনশাআল্লাহ' বলতে ভুলে যাওয়ায় আল্লাহ তা'লা পনেরো দিন ওহী পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। মুশরিকদের সাময়িক একটা বিজয়োল্লাসের সুযোগ করে দিলেন। কেনো এমনটি হলো?
কেবলমাত্র ওয়াদা দেওয়ার ক্ষেত্রে 'ইনশাআল্লাহ' বলতে ভুলে যাওয়ায়।
কেবলমাত্র ওয়াদা দেওয়ার ক্ষেত্রে 'ইনশাআল্লাহ' বলতে ভুলে যাওয়ায়।
প্রতিদিন কতো রকম ওয়াদা আমরা করি। এই ওয়াদাগুলো করার সময় আমরা কী 'ইনশাআল্লাহ' বলি?
আসুন, ওয়াদা করার ক্ষেত্রে আমরা 'ইনশাআল্লাহ' বলি। বলার অভ্যাস না থাকলে প্র্যাকটিস করি।
আসুন, ওয়াদা করার ক্ষেত্রে আমরা 'ইনশাআল্লাহ' বলি। বলার অভ্যাস না থাকলে প্র্যাকটিস করি।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.