উটের মুত্র / ওদের প্রতারণা


উটের মুত্র / ওদের প্রতারণা
মোঃ নিয়ামত আলী

মনোযোগ দিয়ে শুনুন নাস্তিকরা দুটি কাজ ছাড়া তাদের ভিত্তি টিকিয়ে রাখতে পারবে না প্রথম হল কোরানের আয়াতকে সামনের ও পিছনের কথা বাদ দিয়ে একটি কথা তুলে ধরে দাবি করবে যে দেখো এখানে ভুল আছে দ্বিতীয় কথা হল হাদিসকেও ভুল ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়া তাই আমাকে কোরআন ভাল করে পড়তে হবে বুঝতে হবে সাথে হাদিস ব্যাপারে ভাল করে জানতে হবে বিশেষ করে উসুল এর ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হতেই হবে
তাই আমরা যদি কোরআন ও সুন্নাহ বিষয়ে পড়াশোনা করি বিজ্ঞ আলেমদের কাছে যাই তাহলে আশা করা যায় মিথ্যাবাদীরা মুসলিমদের ধোঁকা দিতে পারবে না ইন শা আল্লাহ্‌

টাইটেল দেখে বুঝতেই পারছেন কি নিয়ে আলোচনা করব
ফেসবুকে এক নাস্তিক দেখলাম লিখেছে "মোহাম্মদ উটের মুত খেত" (নাউজুবিল্লাহ)

আমি বললামঃ ""মোহাম্মদ উটের মুত খেত"" - এ শব্দে একটি সহিহ হাদিস লাগবে না তুমি জঈফ হাদিসই আমাকে দেখাও চ্যালেঞ্জ দিলাম নিজের নোংরা চিন্তা দিয়ে অন্যকে মাপ্লে হবে না নাস্তিক
নাস্তিকঃ অন্যকে খেতে হলে নাই ?
আমিঃ তুমি দাবি করেছ "মোহাম্মদ উটের মুত খেত" - তাই এ শব্দে একটি সহিহ হাদিস লাগবে না আমাকে জঈফ হাদিস দেখাও আবারো চ্যালেঞ্জ দিলাম

নাস্তিকঃ এই দেখোঃ আনার (রা) তিনি বলেন উরাইনা ও উকল গোত্রের একদল লোক নবী (সা) এর নিকট হাজির হয়ে ইসলাম গ্রহন করলো কিন্তু মদিনার আবহাওয়া তাদের অনুকূলে হল না তাই তিনি তাদেরকে সদাকাহর উটপালের কাছে গিয়ে সেগুলোর প্রস্রাব ও দুধপান করার আদেশ করলেন তারা তাই করলো ফলে তারা সুস্থ হয়ে গেল শেষে তারা দ্বীন ত্যাগ করে উট পালের রাখালদেরকে হত্যা করে সেগুলো নিয়ে চলল এ দিকে তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন তাদেরকে (ধরে) আনা হল আর তাদের হাত পা কাটলেন ও লোহার শলাকা দিয়ে তাদের চোখগুলো ফুঁড়ে দিলেন কিন্তু তাদের ক্ষতস্থানে লহা পুড়ে দাগ দিলেন না  শেষ তারা মারা গেল (১)

হেসে দিয়ে আমি বললামঃ আচ্ছা এই হাদিসে কথায় আছে "মোহাম্মদ উটের মুত খেত" তোমার দাবি যে মিথ্যা এই হাদিসই বিশাল প্রমান

নাস্তিকঃ অন্যকে কিভাবে খেতে বলে নিজে না খেলে ?

আমিঃ আমার অসুখ না হলে আমি কেন ঔষধ খাব! যাই হোক তুমি হাদিস দেখাও তোমার ঐ দাবীর পক্ষে নিজের ভুল স্বীকার করে নেও আগে ত্যানা পেচাও কেন আজকের মিথ্যা কথা সবার সামনে প্রকাশ হয়েছে আর তোমাদের চরম শিক্ষা হয়েছে কারন তুমি নিজেই জানো যে এই শব্দে কোন হাদিস নাই এতেই প্রমান হয় নাস্তিকরা মিথ্যাবাদী সত্যের সাথে এদের সম্পর্ক নাই
এরপরে ঐ নাস্তিককে বহু চ্যালেঞ্জ দেওয়ার পরেও কিছু বলে নি আর বলবেই বা কিভাবে নিজের ভুল ধরা পরে গেছে এর জন্যই আমি একটি কথা প্রাই বলি অহংকার মানুষ সত্য থেকে অনেক দূরে থাকে যাদের মধ্যে বিনয় আছে, আছে নম্রতা তারা সত্যকে দেখার সাথে সাথে গ্রহন করে ফেলে

উটের বিষটি এখন পর্যালোচনা করিঃ

নাস্তিকরা প্রশ্ন করে এত কষ্ট করে মারা হল তাদের কেন ? ইস কত দরদ এই নাস্তিকদের ! চোরে না শুনে ইসলামের সত্যতা!
 হাদিস থেকে আমরা যা বুঝতে পারি টা হল , কিছু লোক আসলো পরে ইসলাম গ্রহন করলো এবং মদিনার আবহাওয়া তাদের অনুকূলে না হওয়াতে তাদের "সুস্থতার জন্য" উটের দুধ ও পেশাব পান করতে বলা হয় পরে তারা সেটা খেয়ে (ঔষধ হিসেবে) ভাল হয়ে যায় অর্থাৎ "সুস্থ হয়ে যায়"
যাইহোক উটের দুধ নিয়ে নাস্তিকদের খাউজানি নাই চুলকানি হল উটের পেশাব নিয়ে কারন উটের পেশাব নোংরা জিনিস তো রাসুল (সা) কেন এটি খেতে বললেন ?

ইসলামী আইনশাস্ত্র অনুযায়ী মানে হানাফি ও শাফেয়ী ফিকহ অনুযায়ী উটের পেশাব অপবিত্র এবং হারাম এটা শুদুমাত্র ঐ সময়ের হালাল হবে যখন এটি কোন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যাবহার করা হবে এবং যখন সেই রোগের অন্য কোন হালাল ঔষধ থাকবে না (২)

বিখ্যাত হানাফি ফকিহ আল্লামা বাদরুদ্দিন আল আইনি (রহ) তাঁর বিখ্যাত সহিহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ উমদাতুল কারী গ্রন্থে ঐ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন , হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা তখনই হালাল হবে যখন তার মধ্যে আরোগ্য আছে এটা জানা যাবে এবং অন্য ঔষধ থাকবে না  এটি সেই অবস্থার মত , যখন খাবারের এবং পানির অভাবে মৃত্যু সময় যথাক্রমে হারাম মাংস হালাল এবং মদ পান করা হালাল হয়ে যায় (৩)

হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ) তাঁর বিখ্যাত সহিহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারি গ্রন্থে ঐ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এরকম ঔষধের ব্যাবহার শুদুমাত্র তখনই হালাল হবে যখন অন্য কোন চিকিৎসা থাকবে না (৪)

উপরোক্ত বিখ্যাত হাদিস ব্যাখ্যাকারদের থেকে জানতে পারলাম উটের পেশাব হারাম তবে শুদুমাত্র তখনই হালালা হবে যখন বেক্তির রোগের জন্য অন্য কোন ঔষধ পাওয়া যাবে না ঐ হাদিসেই কিন্তু আছে যে উটের দুধ ও পেশাব পান করে তারা সুস্থ হয়েছিল এ থেকে পরিস্কার বুঝা যায় উটের পেশাব ছিল ঔষধ স্বরূপ এ ছাড়া রাসুল (সা) জীবনেও কখনোই কাউকে উটের পেশাব খেতে বলেননি

বর্তমানে অনেক পশুর পেশাব হতে ঔষধ তৈরি করা হয় গর্ববতী ঘোটকীর পেশাব থেকে ইষ্টোজেন আলাদা করা হয় এবং সেটা ক্যান্সার সব বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয় সেটা ট্যাবলেট হিসেবে আমরা মুখে দিয়েই কিন্তু খাই বাজারে যেটা প্রিমারিন নামে পাওয়া যায় উটের দুধ ও মুত্র দিয়েও ঔষধ তৈরি করা হচ্ছে (৫)

এখন প্রশ্ন আসে কেন রাসুল (সা) রাখালকে হত্যা করার জন্য এত কঠিন শাস্তি দিয়েছিল ?
উরাইনা, উকল গোত্রের দুটি অপরাধ ছিল
* দায়িত্তে থাকা রাখলকে হত্যা করা
* উট চুরি করে পালিয়ে যাওয়া

তারা বাহ্যিকভাবে ইমান আনলেও তারা ছিল মুনাফিক আর যেহেতু রাসুল (সা) রাষ্ট্রনেতা ছিলেন তাই অবশ্যই বিচার কাজে শাস্তি প্রধান করা তাঁর অধিকার আর রাসুল (সা) যদি তাদের শাস্তি না দিতেন তবে মুনাফিকরা কাফেররা এত বড় অপরাধ করার পরেও মুক্তি পেয়েছে সুতরাং আর বেশি অপরাধ প্রবন হয়ে যেত আর মজার কথা হল এরকম অপরাধ এরাই প্রথম করেছিল তাই এ বড় অপরাধকে কঠোর শাস্তির দ্বারা বন্ধ করা হয়েছে তা না হলে মদিনায় মুসলিমদের পুনর্বাসন অসম্ভব হয়ে পড়ত কাফের মুনাফিকরা আরও সুযোগ পেয়ে যেত অপরাধ করার এ জন্যই শাস্তি দেয়া হয়েছে

উরাইনা , উকল গোত্রের লোকেরা উটের দায়িত্তে থাকা রাখালকে খুব নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ইবনে জারুদ (রহ) তাঁর লিখত আল মুনতাকা গ্রন্থে, তাদের চোখে গরম লোহা ঢুকিয়ে দেওয়ার কারন হিসেবে আনাস (রা) হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন হাদিসে বলা হয়েছে যে, ঐ গোত্রের লোকগুলা উটের দায়িত্তে থাকা রাখালের চোখেও কাটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল (৬)

এ ছাড়াও "জুরকানি" নামক গ্রন্থে আছে , উরাইনা, উকল গোত্রের লোকজন উটের দায়িত্তে থাকা রাখালের চোখে জিহ্বায় কাটা ঢুকিয়ে দেয় তার হাত পা কেটে দেয় তারপর তাদের জবাই করে (৭)

এজন্যই কোরানে বর্ণিত হদ এবং কিসাসের মূলনীতি অনুযায়ী তাদের চোখেও গরম লোহা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল তাদের হাত পা কেটে দেয়া হয় এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় (৮)
আর এই ঘটনার পরে আর কখনো এভাবে কাউকে হত্যার আদেশ রাসুল (সা) দেননি বরং এভাবে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন (৯)

সুতরাং তাদের নিজস্ব কর্মের কারনেই তাদের উপর এরকম কঠোর শাস্তি আরোপ করা হয়েছিল আর এখন আর এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন নেই আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দিক আমিন

রেফারেন্সঃ
১/ সহিহ বুখারি , হাদিস নং ১৫০১, ihadis.com
২/ কিতাব আল-মাবসুত, (ইমাম আবু বকর আল-সারাখশি রহ) খণ্ড - ১ , পৃষ্ঠা ৬০-৬১ , অধ্যায়ঃ ওজু এবং গসল
৩/ উমদাতুল কারী , খণ্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ৬৪৯
৪/ ফাতহুল বারি খণ্ড ১ ,পৃষ্ঠাঃ ৪৪১
৬/ আল মুনতাকা, খণ্ড ১ , পৃষ্ঠা ২১৬  , হাদিসঃ ৮৪৭
৭/ সহিহ বুখারি (বাংলা অর্থ এবং ব্যাখ্যাঃ মাওঃ শামসুল হক ফরিদপুরি (রহ), ১৩ম সংস্করণ ,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড , খণ্ড=৩, পৃষ্ঠাঃ ২২৩
৮/ কিসাসের আয়াত সমূহঃ সুরা মায়িদা আয়াত ৪৫ , সুরা বাকারা ১৭৮
৯/ ই.ফা: তাফসীরে ইবনে কাসির , খণ্ড ৩ , পৃষ্ঠা ৫২১

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.