নারীবাদী । আরিফ আজাদ ।

নারীবাদী!!! 
আরিফ আজাদ
আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম তখন দেখতাম যে, আমাদের মা-চাচীরা যখন কোন পাত্রী দেখতে যেতেন তখন পাত্রীকে বলতেন, 'দেখি, সামনে দিয়ে একটু হেঁটে যাও তো মা'।
মা-চাচীদের আবদার শুনে পাত্রী নরম নরম পায়ে তাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতো। মা-চাচীদের আরো নানাবিধ আবদার থাকতো। পাত্রীর দাঁত দেখা, চোখ দেখা, চুল দেখা ইত্যাদি.....

যাহোক, সে যুগ আমরা পার করে এসেছি অনেক আগেই। আমাদের ভগিনীরা এখন খুব স্মার্ট। উত্তর আধুনিক সময়ে এসে আমাদের মা-চাচীদের সময়ের ঘটনাগুলো শুনলেই ভগিনীদের শরীর গুলিয়ে আসে। নিজের ভিতর নিজেই যেন গুটিয়ে যায়। তারা আমাদের মা-চাচীদের হয়তো ডাইনি, রাক্ষসী, বজ্জাতী সহ নানানরকম অভিধায় ফেলে দেয়।
তারা ভাবে, 'কি বিশ্রী ব্যাপার! আমরা কি টাকায় কেনা পণ্য যে আমাদের দাঁত, চুল, চোখ, নখ চেক করা লাগবে? নাকি আমরা কোরবানির হাটের গরু যে আমাদের হাঁটাচলা পরীক্ষা করে দেখা লাগবে আমাদের পায়ে খোঁড়া রোগ আছে কিনা? যত্তোসব আনকালচারড, ক্ষ্যাত, অশিক্ষিত, মূর্খের দল কোথাকার'।

নাহ, আমি অবশ্যই আমাদের মা-চাচীদের পক্ষ হয়ে উকালতি করছিনা, এবং এও বলছিনা যে, আমাদের মা-চাচীদের করা কাজগুলো ভালো এবং যৌক্তিক। এই কাজগুলো অবশ্যই অযৌক্তিক এবং বিদঘুটে। কিন্তু, এই কাজগুলোর জন্যে যে ভগিনীকূল আমাদের মা-চাচী সম্প্রদায়কে আনকালচারড, ক্ষ্যাত, অশিক্ষিত আর মূর্খ বলে ডাকে, সেই কালচার থেকে তারা কি আদৌ মুক্তি পেয়েছে? নারী স্বাধীনতা কি তাদের মুক্তি দিয়েছে আদৌ? নাকি আবদ্ধ করেছে আরো বৃহৎ, আরো মজবুত, আরো রঙিন কোন শৃঙখলে?

আমাদের দেশে একটা প্রতিযোগিতা হয়। সুন্দরী প্রতিযোগিতা। নাম হচ্ছে 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ'।
অদ্ভুত কিছিমের এই প্রতিযোগিতায় যারা অংশ নেয়, বিচারকেরা তাদের প্রশ্ন করে, 'দেখি একটু হেঁটে দেখাও তো...?'
প্রশ্ন শুনে আমাদের সুন্দরী রমনীকূল বেশ অঙ্গভঙ্গি করে, হেলেদুলে তাদেরকে হেঁটে দেখায়।
এই প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হতে হলে তাদের চোখ সুন্দর হতে হয়, নাক সুন্দর হতে হয়। সুন্দর হতে হয় চুল, নখ ইত্যাদি ইত্যাদি.....
এই যে স্টেইজ ভরা দর্শকের সামনে হেঁটে দেখানো, কোমর দুলিয়ে হেলেদুলে হাঁটা, চোখ-কান-নাক-মুখের পরীক্ষা দেওয়া, এগুলোকে আমাদের ভগিনীকূল আনকালচারড মনে করেনা। যারা বিচারকের আসনে বসে থাকে, তারা ক্ষ্যাত নয়, মূর্খ নয়।

আমাদের মা-চাচীরা যে প্রশ্ন, যে কাজ বদ্ধ ঘরে করতেন, সেই কাজ বিচারকের আসনে বসে থাকা লোকগুলো হাজার হাজার দর্শকের সামনে করছে। তবুও তারা সভ্য, শিক্ষিত, ভদ্র।

হাজার হাজার পুরুষের সামনে তাদেরকে সুন্দর করে হেঁটে দেখাতে হচ্ছে। নিজের শরীরের আদ্যোপান্ত প্রদর্শন করে তাদেরকে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে তারা সুন্দরী। তাদের নাক, চুল, চোখ, গায়ের সৌন্দর্যের সার্টিফিকেট দিচ্ছে কিছু পুরুষ। সেই সার্টিফিকেট পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা হচ্ছে। আহা! নারীকে পণ্য বানানোর সে কি ডিজিটালাইজেশান!
নারী মুক্তির নামে এভাবেই আমাদের নারীকূল বন্দী হচ্ছে আরো বড় পিঞ্জরে। নিজের সহজাত বৈশিষ্ট্যকে বিসর্জন দিয়ে তারা যে স্বাধীনতার দিকে ছুটছে, সেটা যে দিনশেষে তাদেরকে প্রদর্শনীর বস্তু আর মার্কেটের পণ্য বানিয়ে ছাড়ে, সেটা তাদের কে বোঝাবে?

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.