অন্য আলোয় কোরআন-০১’/ আরিফ আজাদ

ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো বর্ণনার ক্ষেত্রে বাইবেল (যেটা বিকৃত ভার্সন) যে ভুলটা করেছে তা হলো দিন-তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া।
যেমন,- নূহ (আঃ) কোন সময়ে পৃথিবীতে ছিলেন, কখন ‘মহা প্লাবন’ হয়েছিলো ইত্যাদির স্পেসিফিক ‘সময়’ উল্লেখ করাতে বাইবেল বিতর্কিত। কারণ, বাইবেল বলছে যে নূহ (আঃ) পৃথিবীতে ছিলেন 2000 BC (Before Christ) এর কাছাকাছি সময়ে। আবার, সাথে বাইবেল এও বলছে যে, নূহ (আঃ) এর সময়কার সেই মহাপ্লাবন হয়েছিলো পৃথিবীব্যাপী। অর্থাৎ, পুরো পৃথিবীই তাতে ডুবে গিয়েছিলো। কিন্তু, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে দেখা যাচ্ছে, খ্রিষ্টপূর্ব 2000 শতাব্দীর দিকে এমন অনেক সাম্রাজ্য, অনেক সভ্যতা বহাল তবিয়তেই বর্তমান ছিলো পরের কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত। এখন, বাইবেলের নির্ধারণ করে দেওয়া ‘সময়’ কে বিশ্বাস করতে হলে বিজ্ঞানকে বুড়ো আঙুলি দেখাতে হয়, আবার বিজ্ঞানে বিশ্বাস করতে হলে বাইবেলকে বুড়ো আঙুল দেখাতে হয়।
কিন্তু, কোরআন এক্ষেত্রে অন্যরকম। কোরআন নূহ (আঃ) এবং তাঁর সময়কার মহাপ্লাবনের কথা বলেছে, কিন্তু স্পেসেফিক ‘সময়’ উল্লেখ করে দেয়নি। বাইবেল যেমন 2000 BC টাইপ একটা নির্ধারিত সময়ের কথা বলে, কোরআন সেরকম কিছুই বলেনি। আবার, বাইবেল যেমন নির্দিষ্ট করেই বলে সেই মহাপ্লাবনে পুরো পৃথিবী ডুবে গিয়েছিলো, কোরানিক টেক্সটে সেরকম কোনকিছু পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, এই মহাপ্লাবনে কী পুরো পৃথিবীই ডুবে গিয়েছিলো, নাকী কেবল নূহ (আঃ) এর অবাধ্য ক্বওমরা ডুবে গিয়েছিলো, সে ব্যাপারে কোরআন নীরব।
তবে, ইবনে কাসীর (রহঃ) সহ বেশকিছু প্রসিদ্ধ তাফসীর কারকের মত হচ্ছে, সেই মহাপ্লাবনে পুরো পৃথিবী ডুবে গিয়েছিলো। এখন, যদি ধরে নিই যে সেই মহাপ্লাবনে পুরো পৃথিবী ডুবে গিয়েছিলো, তাতেও কোরআনের সাথে বিজ্ঞানের দ্বন্ধ নেই। কারণ, কোরআন কিন্তু স্পেসেফিক ‘সময়’ উল্লেখ করেনি। যেহেতু কোরআন ‘সময়’ উল্লেখ করেনি, তাই এটা কী খ্রিষ্টপূর্ব ৯৩৭ শতাব্দীর কোন ঘটনা, নাকী এরও আগের তা বোঝার উপায় নেই।
যেহেতু কোরআন কোন নির্দিষ্ট সময়োল্লেখ করে দেয়নি, তাই আধুনিক বিজ্ঞানের প্রস্তাবিত পদ্ধতি দিয়ে কোরআনকে এক্ষেত্রে এ্যাটাক করার সুযোগটা নেই।
আবার, খ্রিষ্ট্রিয়ান ওয়ার্ল্ডভিউ অনুসারে পৃথিবীর বয়স খুব একটা বেশি না। বড়জোর ৬ হাজার বছরের মতো। এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে তারা ‘Young Earth’ নামে একটা থিওরির কথা বলে যেখানে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা চালায় যে পৃথিবীর বয়স ৬ হাজার বছর কিংবা তারচেয়ে একটু কম-বেশি। তারা মনে করে, আদম (আঃ) এর পৃথিবীতে আগমনের সাথে সাথে পৃথিবীর জন্ম।
কিন্তু, আধুনিক বিজ্ঞানের প্রাপ্ত, লব্ধ সমস্ত ডাটা, সমস্ত গবেষণা বলছে যে পৃথিবীর বয়স বিলিয়ন বিলিয়ন বছর।
আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে খ্রিষ্টানিটির এইখানেও একটা দ্বন্ধ আছে।
খ্রিষ্টিয়ান ওয়ার্ল্ডভিউতে পৃথিবী বা আদম (আঃ) এর সময়কাল আজ থেকে ৬ হাজার বছর আগে হলেও, কোরআন কিন্তু এই জায়গাতেও বেশ অনন্য। কারণ, কোরআন এই জায়গাতেও কোন স্পেসেফিক ‘সময়’ উল্লেখ করেনা।
অর্থাৎ, আদম (আঃ) ঠিক কোন সময়ে পৃথিবীতে আসেন বা পৃথিবীর বয়স কতো সেসব ইস্যুতে কোরআন চুপ।
খ্রিষ্ট্রিয়ান ওয়ার্ল্ডভিউতে আদম (আঃ) এর পৃথিবীতে আগমনের সময়কালটাকেই পৃথিবীর বয়স ধরে নিলেও, কোরআন কিন্তু সেটা স্বীকার করেনা। কীভাবে? বলছি...
আল্লাহ সুবাহান ওয়া’তালা যখন পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির কথা ফেরেশতাদের জানালেন, তখন ফেরেশতারা কী বলেছিলো? তারা বলেছিলো,- ‘আপনি কী এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা পৃথিবীতে দাঙ্গা হাঙ্গামা ও রক্তপাত ঘটাবে?’
ফেরেশতাদের এই ধারণার পেছনে কারণ কী? ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন,- পৃথিবীতে মানুষের আগে জ্বীনেরা বসবাস করতো। জ্বীনেরা সুদীর্ঘ সময় পৃথিবীতে বসবাস করে। একটা সময় তারা নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামা , রক্তপাত ঘটালে তারা পৃথিবীতে বসবাসের অনুমতি হারিয়ে ফেলে।এসব ফেরেশতারা দেখেছিলো। এজন্যই, তারা ধরেই নিয়েছিলো যে, পৃথিবীতে যারাই বসবাস করে, তারাই এরকম দাঙ্গা হাঙ্গামা করবে। এজন্যই তারা সেদিন আদম (আঃ) এর ব্যাপারে এই সন্দেহ করেছিলো।
তাহলে, এই ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কোরানিক ওয়ার্ল্ডভিউতে আদম (আঃ) এর পৃথিবীতে সূত্রপাতই পৃথিবীর জন্ম না। বরং, আদম (আঃ) এর জন্মের বহু বহু ( নির্দিষ্ট সময় বলা নেই) সময়কাল থেকেই পৃথিবী এক্সিস্ট করে আছে। সুতরাং, খ্রিষ্ট্রিয়ান ওয়ার্ল্ডভিউ যেখানে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে, কোরআন সে জায়গায় অদম্য। দেখা যাচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান বাইবেল বা খ্রিষ্টানিটিকে এ্যাটাক করতে পারলেও, কোরআনকে এ্যাটাক করার রসদ তার কাছে নেই।
কম্পারেটভলি, এখানেই কোরআনের অন্যন্যতা, আলহামদুলিল্লাহ!
‘অন্য আলোয় কোরআন-০১’/ আরিফ আজাদ

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.