মানব ক্লোনিং / Rajib Hasan .

মানব ক্লোনিং
Rajib Hasan .

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের নাস্তিক মহলে একটি বিষয়ের প্রচার খুব জোরেশোরে হচ্ছে আর সেটা হচ্ছে মানবক্লোনিং নিয়ে.তাদের ধারনা খুব শীর্ঘই পৃথিবীতে মানব ক্লোনিং শুরু হচ্ছে আর সেই প্রকৃয়ায় পুরুষের শরীরের বীর্যের কোন প্রয়োজন নেই.শরীরের যে কোন অংশের সামান্য সেল বা কোষ সংগ্রহ করে সেই সেল থেকেই ক্লোন করে ডিম্বাণুর সাথে নিষিক্ত করে মানব শিশুর জন্ম দেয়া হবে.আর তখন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত যে আদিম প্রকৃয়া দুজনের মিলনের ফলে নতুন শিশুর জন্ম হয় সেই সিস্টেম টাকে পরাস্ত করে জয় হবে আধুনিক বিজ্ঞানের!

এখন দেখা যাক যদি সত্যিই এভাবে মানব ক্লোনিং শুরু হয় তাহলে সেটা কি সত্যিই সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করবে?

এর উত্তরে যাবার আগে আমরা একেবারে মানব সৃষ্টির প্রারম্ভে চলে যাই.আমরাজানি আল্লাহতায়ালা যখন আদম আঃ কে সৃষ্টি করেন তখন জান্নাতে তার একাকিত্ব দূর করার জন্য হাওয়া আঃ কে সৃষ্টি করেন.এ ব্যাপারে আল্লাহ কোরআনে বলেন,

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْمِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ‘


তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টিকরেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকেবানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, ’ (সূরা আলআরাফ :১৮৯.) 

এছাড়াও আমরা বিভিন্ন হাদিস থেকেও জানি যে আল্লাহতায়ালা মা হাওয়া আঃ কে হজরত আদম আঃ এর বাম পাজরের বাকানো হাড়ের অংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন.সুতরাং এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে মানুষের শরীরের কোন সামান্য অংশ দিয়েও অন্য মানব বা মানবী সৃষ্টি সম্ভব.আর এটা সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ নয় বরং ১৪০০ বছর আগে কোরআনে বর্নিত আল্লাহর সৃষ্টি ফর্মুলাকেই বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃতি দেয়া.এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষনীয় আর সেটা হচ্ছে, আমরাজানি মানুষের শরীরে মোট ২৩ যোরা ক্রোমোজম থাকে এর মধ্যে দুই যোরা ক্রমোজমকে বলা হয় সেক্স ক্রোমোজম.যার উপর নির্ভর করে গর্ভের সন্তান পুরুষ হবে নাকি নারি.পুরুষের শরীরে থাকে যেখানে XY নারীর শরীরে থাকে সেখানে XX.এখন কথা হচ্ছে আদম আঃ থেকে হাওয়া আঃ সৃষ্ট তাই আদম আঃ এর শরীরে থাকা X ক্রোমোজম হাওয়া আঃ এর শরীরে বিদ্যমান.আর যদি প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফলে মানুষের বংশানুক্রম চলতে থাকে আর নারী পুরুষের জন্মদাতা হয় তাহলে পুরুষের আলাদা বৈশিষ্ট্যের সেই Y ক্রোমোজম কিভাবে পুরুষের শরীরে আসলো যেটা নারীর শরীরে নেই?


এইযে মানুষের শরীরের ২৩ যোরা ক্রোমোজম যার উপরে নির্ভর করে তার দৈহিক গঠন,সে কিরম হবে বা কেমন হবে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এসবই লিখা থাকে এই ক্রোমোজমগুলোতে.আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন,


إِنَّا خَلَقْنَا ٱلْإِنسَٰنَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَٰهُ سَمِيعًۢا بَصِيرًا


ইন্না-খালাকানাল ইনছা-না মিন নুতফাতিন আমশা-জিন নাবতালীহি ফাজা‘আলনা-হু ছামী‘আম বাসীরা- ।


আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।

সূরা আল-ইনসান :২


আল্লাহ বলছেন যে মানূষকে মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে.আচ্ছা ১৪০০ বছর আগে কোন বিজ্ঞানী জানত যে মায়ের গর্ভে যে ভ্রুন গঠিত হয় সেটা পুরুষের শরীর থেকে একযোরা XX বা XY এবং নারীর শরীর থেকে একযোরা XX ক্রোমোজমের মিশ্রন থেকে.এই আয়াতে আরো বলা হয়েছে যে মানুষকে এভাবে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন যে পরিক্ষা করবেন.অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি প্রকৃয়ায় মায়ের গর্ভেই আল্লাহতায়ালা তার চারিত্রিক প্রকৃয়া নির্ধারণ করে দিয়েছেন.ঐ ২৩ যোরা ক্রমোজমের ভেতরেই লিখা আছে যে মানুষ ভালো ইমানদারও হতে পারে আবার ওখানেই লিখা আছে সে বড় হয়ে চোরও হতে পারে.অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের যাবতীয় চারিত্রিক প্রকৃয়াই ওই ক্রোমোজমে কোড আকারে লিখা.আপনি জানেন ওই সমস্ত লিখাগুলোর পরিমাণ কিরকম? একটি বই আকারে প্রকাশ করলে সেটা কত বড় হতো?ধরুন যদি ছয়টি অক্ষর দিয়ে প্রতিটি শব্দ লিখা হয় আর প্রতিটি পাতায় এরকম তিনশত শব্দ থাকে আর ঐ বইটিকে বড় আকারের করে ছাপা হয় যার পৃস্টা সংখ্যা হবে পাঁচশত.তাহলে এরকম দুইহাজার বই লাগবে একজন মানুষের দেহের ডি এন এর সমস্ত তথ্য এক করতে.এ বিশাল তথ্য ভান্ডার আল্লাহ একজন মানুষের শরীরের ভেতর চারিত্রিক গুনাবলীতী সংযোজন করছেন.



তাহলে এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে মানুষের চরিত্রের গুনাবলীতে ঐ খারাপ গুনাবলী সংবলিত ডি এন এ কোড না রাখলেই তো পারতেন.তাহলে আর কোন মানুষ পাপী হতোনা.আসলে এজন্যেই আল্লাহতায়ালা এই আয়াতে বলেছেন যে আমি মানুষকে এভাবে সৃষ্টি করেছি যে পরিক্ষা করবো.তাই আমার ডি এন এ কোডে যদি লিখাও থাকে আমি বড় হয়ে চুরি করতে পারি কিন্তু আমি চাইলে সেটাকে এভয়েডও করতে পারবো,আর সেটাও লিখা আছে ঐ ডি এন এ কোডে.আল্লাহতায়ালা পরের আয়াতেই বলেন,


إِنَّا هَدَيْنَٰهُ ٱلسَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا

ইন্না-হাদাইনা- হুছছাবীলা ইম্মা- শা- কিরাওঁ ওয়া ইম্মা- কাফূরা- ।

আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।

অর্থাৎ মানুষ ভালো চারিত্রিক গুনাবলী বেছে নেবে নাকি খারাপগুলো সেটা তার সম্পুর্ন নিজস্ব ইচ্ছা শক্তির ব্যাপার.এখানে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কোন বাধ্যবাধকতা নেই. তাহলে এখন যদি প্রশ্ন করেন এখানে আল্লাহতায়ালা কোন পথের কথা বলছেন এবং মানবজাতি কোন পথের অনুসারী হবে?এ প্রশ্ন বরং আল্লাহতায়ালাকেই করা হোক?সাথে সাথে আল্লাহতায়ালার পক্ষথেকে জবাব আসবে,

ذَٰلِكَ ٱلْكِتَٰبُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ

যা-লিকাল কিতা-বুলা-রাইবা ফীহি হুদাল লিলমুত্তাকীন।

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

সূরা আল বাকারা.আয়াত ২.

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.