'ভ্যালেন্টাইনে.......যাইনে' / আরিফ আজাদ

আমি যাদের চিনি, অর্থাৎ আমার আশপাশের বেশি পরিচিত, মধ্যম পরিচিত এবং কম পরিচিতদের কেউই 'ভ্যালেন্টাইন ডে' কে সাপোর্ট করেনা। ভ্যালেন্টাইনের নাম শুনলেই নাক সিটকায়। বলে,- 'ধুর! ভালোবাসা দিবস না ছাঁই। নোংরামি করার পাঁয়তারা... যত্তসব.....'
ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে তাদের আপত্তির বিষয়টা মূলত ধর্মকেন্দ্রিক। ভ্যালেন্টাইন ডে'র দিন প্রচুর যুবক-যুবতী যিনার মতো পাপ কাজে লিপ্ত হয়। যেহেতু যিনা আমাদের ধর্মে একটি গুরুতর পাপ, তাই আমার আশপাশের পরিচিত সেসব ভাই-বোনগুলো ভ্যালেন্টাইন ডে' কে পছন্দ করেনা।
'ভ্যালেন্টাইনের দিন ঘরে থাকুন', 'ভালোবাসা দিবসকে ঘুম দিবসে পরিণত করুন', 'বিজাতীয় সংস্কৃতিকে না বলি', 'একদিনের ভালোবাসাকে না বলি' টাইপ নানারকম নাসীহাহ তাদের কাছ থেকে শুনতে পাই।
কিন্তু, আমার সেসকল পরিচিত, আধ পরিচিত মানুষগুলো, যারা ভ্যালেন্টাইন বর্জন কর্মসূচি, কর্মপন্থা নির্ধারণে ব্যতিব্যস্ত থাকে, তাদের সম্পর্কে যদি খোঁজ নিই, দেখা যাবে তাদের ৯০ ভাগই কোন না কোনভাবে 'রিলেশানশীপ'- এ জড়িত।
অর্থাৎ, বিবাহ বহিঃভূত, বিবাহপূর্ব সম্পর্কের জালে আবদ্ধ। এদের কারো প্রেমিকা ঢাবিতে পড়ে, কারো প্রেমিকা চবি তে। কারো প্রেমিক ঢামেকে পড়লে, কারো প্রেমিক বুয়েটে। কারো প্রেমিকা ডাক্তার, কারো প্রেমিক ইঞ্জিনিয়ার....
এরা, আই মিন এই 'ভ্যালেন্টাইন বর্জন' শ্রেণীটা ভ্যালেন্টাইন ডে কে পছন্দ করেনা, কারণ সেদিন অবাধ মেলামেশা হয়। অবাধ যৌনাচার হয়।
এরা 'ভালোবাসা দিবস'কে সমর্থন করেনা, কিন্তু বিয়ের পূর্বে রিলেশানশীপে বিশ্বাস করে। এরা ভালোবাসা দিবসের দিন অবাধ মেলামেশাকে পছন্দ করেনা, কিন্তু প্রেমিকার সাথে রাতভর চ্যাটিংয়ে মজে থাকতে খুব পছন্দ এদের।
এরা ভালোবাসা দিবসের দিন ঘটা যৌনাচারকে ঘৃণা করে, কিন্তু প্রেমিকার সাথে ফোনে মধুর আলাপন, সেই আলাপনে একে অন্যের প্রতি আসক্ততা, অনুরক্ততা, 'তোমায় ছাড়া বাঁচবো না' টাইপ আবেগি কথাবার্তা আদান-প্রদানে এদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু।
এরা দেখা সাক্ষাতও করে। ভ্যালেন্টাইন ডে'র দিন না হোক, বছরের অন্য অনেকদিন তারা ঘুরতেও বের হয়।
তাদের কাছে এটা একপ্রকার 'হালাল' প্রেম।
আদতে, ইসলামে বিবাহ বহিঃভূত দু'জন নন মাহরামের মধ্যে যেকোন সম্পর্কই হারাম। ইসলাম এখানে খুব কঠোর। মধ্যম পন্থার কোন চান্স নেই।
মদ খাওয়া যেমন হারাম, সুদ খাওয়া যেমন হারাম, যিনা-ব্যভিচার যেমন হারাম, ঠিক সেভাবে বিবাহপূর্ব এসমস্ত রিলেশানও হারাম। যেখানে একজন নারী একজন নন মাহরামের সামনে পরিপূর্ণ পর্দা ছাড়া আসারই হুকুম নেই, সেখানে আপনি কিভাবে একজনের সাথে পার্কে যাওয়া, রিক্সায় করে ঘুরে বেড়ানোকে 'হালাল' বলে চালাতে চান?
চোখেরও পর্দা আছে। সব জিনিস দেখার হুকুম আপনাকে দেওয়া হয়নি। পর্দা আছে কানেরও। সব জিনিস শোনার অনুমতিও আপনার নেই। এমনকি আপনার কন্ঠ, আপনার চাল-চলনেরও একটা পর্দা আছে। একটা পর্যায় আছে। বলতে পারেন, কারো দিকে তাকালেই কি পাপ হয়ে যায়? তার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন- আপনার তাকানোর উদ্দেশ্যটা কি?
এবার নিচের দু'টি হাদীস পড়ুন-
১। আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) বলেন,- 'আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উপর যে ব্যাপারে বেশী ভয় করি তা হচ্ছে যিনা ও গোপন প্রবৃত্তি’ (আত-তারগীব হাদীস- ৩৪১৯)
২। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,- 'মানুষের দু’চোখের যিনা হলো (খারাপ জিনিস) 'দেখা'। দু’কানের যিনা হলো (খারাপ কথা) 'শোনা'। জিহ্বার যিনা হলো (অশ্লীল) কথা বলা। হাতের যিনা হলো 'স্পর্শ করা'। পায়ের যিনা হলো 'যিনার পথে হাঁটা' আর অন্তরের যিনা হচ্ছে 'আকাঙ্ক্ষা করা'। লজ্জাস্থানই এসবের সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে’। (মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়)
খেয়াল করুন, প্রথম হাদীসে যিনার সাথে সাথে একটি 'গোপন প্রবৃত্তি'র কথা আছে এবং দ্বিতীয় হাদীসে অন্তরের যিনার ব্যাপারে আছে আকাঙ্ক্ষা করার কথা।
এই দুইটা হলো এমন- দু'জন প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেদের মধ্যে যে ইচ্ছাটা লালন করে। একান্তে এসব ভাবে এবং সেটা লিখে বা কথায় প্রকাশ করে। ফোন বা চ্যাটে যা হয়, তাই প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। তাই আকাঙ্ক্ষা। আর, সেটাই যিনা। ব্যভিচার।
এসবের ব্যাপারে ধর্ম যেখানে এরকম অবস্থানে, সেখানে প্রেমিকার সাথে রাতভর চ্যাটালাপ, ফোনালাপ আর দিনভর ঘোরাঘুরি করে এসে যদি আপনি ভ্যালেন্টাইন ডে'র বিপক্ষে অবস্থান নেন, তাহলে সেটা খুবই হাস্যকর দেখায়।
আসলে, আপনি নিজেই তো প্রতিদিন ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করে চলেছেন। অথচ বলে বেড়াচ্ছেন,- 'ভ্যালেন্টাইনে........ যাইনে.....।
'ভ্যালেন্টাইনে.......যাইনে' / আরিফ আজাদ

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.