বিজ্ঞানের যৌক্তিক ভাবনা/ সংগ্রহেঃ মোঃ নিয়ামত আলী


বিজ্ঞানের যৌক্তিক ভাবনা
সংগ্রহেঃ মোঃ নিয়ামত আলী

(১)
অন্ধের মতো কোনো কিছুকে বিশ্বাস করার নাম- অন্ধ বিশ্বাসমাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, যারা জন্মান্ধ, তারা যে সকল বিষয়সমূহ বিশ্বাস করে তাকে কি বলব? ‘জন্মান্ধ বিশ্বাস’? তাহলে তো কোনো জন্মান্ধের জন্য প্রত্যক্ষবাদ খাটে নাঅর্থাৎ যাদের ইন্দ্রিয় দুর্বল, ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা পরিপূর্ণভাবে বিকল, তাদের দ্বারা কি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতকে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা সম্ভব? জন্মগতভাবে অন্ধ হয়ে সূর্যের অস্তিত্বে ঈমান আনা তো সম্ভব নয়এখন কোনো জন্মান্ধ যদি বলে- আমি যা দেখি না, তা বিশ্বাস করি না’, তবে শুনতে কেমন লাগবে?

জন্মান্ধের অভিজ্ঞতার স্বাদ কেমন হতে পারে? একটি গল্প বলিএক ছাত্র তার শিক্ষকের কাছে তার মায়ের তৈরি পায়েস নিয়ে গেছেশিক্ষকটি ছিলেন জন্মান্ধ! শিক্ষক তার ছাত্রকে জিজ্ঞাস করলেন, পায়েস দেখতে কেমন? ছাত্র বলল- সাদাশিক্ষক বলল- সাদা দেখতে কেমন? বালক সাদা একটি বকপক্ষী ধরে নিয়ে তার হাতে দিলএবং বলল- সাদা দেখতে ঠিক এটার মতনজন্মান্ধ শিক্ষক আতঁকে উঠে বলল- এই জিনিস আমি খাবো কিভাবে? যাও নিয়ে যাও!

গল্পটির বাকি অংশ আর না বললামকেননা, বাকি অংশটি প্রাসঙ্গিক নয়এটুকু গল্প থেকে আমরা যা বুঝি, তা হলো- কোনো বস্তু দ্বারা জন্মান্ধকে রংয়ের বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া সম্ভব নয়তাছাড়া বকপক্ষী বালকের কাছে সাদার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলে মনে হয়েছেএ থেকে বোঝা যায়, সবসময় অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধি দিয়েও সঠিক বস্তুর পরিচয় লাভ সম্ভব নয়একটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আরেকটি ইন্দ্রিয়ের কাজ কি সম্ভব?

এখন প্রশ্ন হলো- এই জন্মান্ধের জন্য কোন পথটি বেশী ভাল- অবিশ্বাস, সন্দেহ, নাকি বিশ্বাস? প্রত্যেকটি বিষয়ে যদি সে অবিশ্বাস করা শুরু করে তবে সে চলবে কি করে? যদি বলি সন্দেহ, তবে ঐ জন্মান্ধের পায়েস খাওয়ার মতো অবস্থা হবেআর যদি বলি- বিশ্বাস, তবে ঠকবারও সম্ভাবনা রয়েছেকোনটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ?

যে ব্যক্তি কোনো পথ চেনে, কিংবা সে পথ সম্পর্কে তার বিশ্বাস থাকে, তবে সে নিশ্চিন্তে পথ চলতে পারে! পদে পদে তাকে সন্দেহ কিংবা অবিশ্বাসের মতো কন্টকাকীর্ণ পথ মাড়াতে হয় নাঠিক এমন একটা কথা এক মনিষী চমৎকার করে বলেছেনতিনি বলেছেন-

If a man wishes to be sure of the road he treads on, he must close his eyes and walk in the dark.”

Saint John of the Cross

ঠিক একই রকম কথা আরেক মনিষী বলেছেন, (আমি তার নাম জানি না),

Faith is seeing light with your heart when all your eyes see is darkness.”

তাহলে কি এটা বলাটা ঠিক হবে যে, চোখ বন্ধ করে অন্ধবৎ চলার নামই অন্ধত্ব’? কিংবা অন্ধের মতো কোনো কিছুকে বিশ্বাস করার নাম- অন্ধ বিশ্বাস? আমার মনে হয় সেটা বলা বোকামী হবে!

বিশ্বাসের গুণ এমনই, সত্যিকারর্থে কোনো বিশ্বাসী ব্যক্তি নিরাশ কিংবা হতাশাগ্রস্ত হয় নাকবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চমৎকার বলেছেন-

Faith is the bird that sings when the down is stilldark.”

Rabindranath Tagore

অতএব, অন্ধবিশ্বাস বলে কেবল ধর্মবিশ্বাসকে যারা কটাক্ষ করতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- সত্যকে অগ্রাহ্য করার নামই প্রকৃত অন্ধত্বএখন প্রশ্ন আসবে- সত্য কি? What it truth? তা আরেকদিনের জন্য না হয় তোলা থাক!

(২)
জ্যোতিবিজ্ঞান-
বিশ্ব সৃষ্টিঃ বিগ ব্যাঙ বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে জ্যোতিবিদগণ কর্তৃক প্রদত্ত যে ব্যাখ্যাটি ব্যাপকভাবে গ্রহণ যোগ্য একটি বিস্ময়কর বিষয়, যা বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব হিসেবে সুপরিচিত যুগ যুগ ধরে নভোচারী জ্যোতিবিদগণ কর্তৃক সংগৃহীত পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা মূলক তথ্যের মাধ্যমে ধারনাটি সমর্থিত হয়েছে বিগ ব্যাঙ (মহা বিস্ফোরণ) তত্ত্ব মতে আদিতে পুরো বিশ্বটি একটা বড় পিন্ড আকারে ছিল তারপর সেখানে একটা মহা বিস্ফোরণ ঘটে (দ্বিতীয়ত পর্যায়ের বিচ্ছিন্নতা) যার ফলে ছায়াপথ তৈরি হয় এগুলো পরবর্তীতে গ্রহ, তারা, সূর্য, চাঁদ ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয় বিশ্বের উৎপত্তি ছিল এক অনন্য ঘটনা এবং অলৌকিকভাবে ইহা ঘটার আদৌ কোন সম্ভাবনা নেই বিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে আল-কুরআনে নিচের আয়াত রয়েছে---
√√ সূরা আম্বিয়া:30 - কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম
কুরআনের আয়াত বিগ ব্যাঙ এর মধ্যে বিস্ময়কর সাদৃশ্যতা সত্যিই এটাই প্রমাণ করে যে, কুরআন আল্লাহর বানী
ছায়াপথ সৃষ্টির পূর্বে প্রাথমিক গ্যাস-
বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছে যে, বিশ্বে ছায়াপথ সৃষ্টির পূর্বে আকাশ সম্পর্কীয় বস্তুগুলো প্রাথমিকভাবে গ্যাস জাতীয় পদার্থের আকারে ছিল সংক্ষেপে বুঝা যায়, ছায়াপথ তৈরির পূর্বে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস পদার্থ অথবা মেঘ বিদ্যমান ছিল আকাশ সম্পর্কীয় প্রাথমিক পদার্থকে বর্ণনা করতে ধোঁয়া শব্দটি গ্যাসের চেয়ে বেশি উপযুক্ত আল-কুরআনের নিচের আয়াতে ব্যবহৃত দুখা- শব্দটি দ্বারা বিশ্বের এই অবস্থাকেই বুঝায় যার অর্থ ধোঁয়া আল-কুরআনে বলেছে---
√√ সূরা হা-মীম সেজদাহ:11 - অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম
তাছাড়া বিগ ব্যাঙ এর স্বাভাবিক পরিণতি হলো এই ঘটনা
(৩)

যুক্তির কষ্টি পাথরে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমান
******************************
এখন বিজ্ঞানের যুগ আমরা সবাই বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে সবকিছু বোঝার বা বোঝানোর চেষ্টা করি বিজ্ঞানের অবদান আমরা কখনো অস্বীকার করতে পারবো না কেননা বর্তমানের সবকিছুই বিজ্ঞানের অবদান এখন আমি যেটা নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো আল্লাহর/সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে
নাস্তিক সম্পর্কে কিছু কথা: যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তাদের আমরা নাস্তিক বলে থাকি এরা খুবই যুক্তিবাদি আর বাস্তববাদী হয়ে থাকে এরা নিজেদের অনেক জ্ঞানী মনে করে এরা সাধারণত উচ্চ শিক্ষিত হয়ে থাকে এরা অনেক মডার্ন চলাফেরা করে এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে তবে আমাদের দেশে বাংলা ব্লগ/ওয়েবসাইটে অনেক নাস্তিক পাওয়া যায় যারা মোটেও যুক্তিবাদি না এরা ধর্ম নিয়ে কথা শুনলে খুব সুন্দর করে উপহাস করতে পারে এরা জ্ঞানীও নয় উচ্চ শিক্ষিত ও নয় আর বিজ্ঞান সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান রাখে সেটা নাই বললাম এরা বড় বড় নাস্তিকদের (লেখক/বিজ্ঞানি) অনুসরন করে

শুরু করার আগে একটা কথা বলে রাখা ভালো আপনারা জানেন যে বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান আজ যা বলে কাল সেটা ভুল ও প্রমাণিত হতে পারে যেমন: কুর্আনে বলা হয়েছে যে সূর্য ঘূর্ণায়মান কিন্তু বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিল যে পৃথিবী ঘূর্ণায়মান সূর্য স্থির তখন তারা কুর্আনকে নানা ভাবে অবমাননা করে কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছে যে মহাবিশ্বের কোন কিছুই স্থির না এমনকি সূর্য কাউকে না কাউকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তবে কষ্টের কথা এটাই যে এই পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানের তত্ত্ব দিয়েই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি দিতে হয় কারণ কুর্আন যেটা বলে আমরা সেটা বিশ্বাস করি না কিন্তু বিজ্ঞান বললে সেটা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি

(৪)
জীববিদ্যা
Aya No
Aya
15,19
َﺍﻟََْْ َََْﺎﻫَ ََََْْ ِﻴﻬَ ََﺍﺳَِ ََََْْ ِﻴﻬَ ِْ ُِّ ٍَْ َُْﻭﻥٍ
আমি ভু-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি
And the earth We have spread out (like a carpet); set thereon mountains firm and immovable; and produced therein all kinds of things in due balance.
15,20
ََََْ َُْ ِﻴﻬَ ََﺎﻳَِ ََْ َُْْ َُ َِﺍﺯِِﻴﻦَ
আমি তোমাদের জন্যে তাতে জীবিকার উপকরন সৃষ্টি করছি এবং তাদের জন্যেও যাদের অন্নদাতা তোমরা নও
And We have provided therein means of subsistence,- for you and for those for whose sustenance ye are not responsible.
15,21
َِْ ِْ ٍَْ َِّ ََِْ ََﺍﺋُُِ ََ َُُُِّ َِّ ٍََِ َُْﻮﻡٍ
আমার কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার রয়েছে আমি নির্দিষ্ট পরিমানেই তা অবতরণ করি
And there is not a thing but its (sources and) treasures (inexhaustible) are with Us; but We only send down thereof in due and ascertainable measures.
15,22
ََََْْ ﺍﻟﺮَِّﺎﺡَ ََﺍﻗَِ ََََْْ َِ ﺍﻟﺴََّﺎﺀِ َﺎﺀً ََََْْﺎﻛُُﻮﻩُ ََ َُْْ َُ َِﺎﺯِِﻴﻦَ
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই
And We send the fecundating winds, then cause the rain to descend from the sky, therewith providing you with water (in abundance), though ye are not the guardians of its stores.
15,26
َََْ َََْ ﺍﻟَِْْﺎﻥَ ِْ ََْﺎﻝٍ ِْ ٍََ َُْﻮﻥٍ
আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি
We created man from sounding clay, from mud moulded into shape;
15,28
َِْ َﺎﻝَ ََُّ ََِْﺎﺋَِِ ِِّ َﺎﻟٌِ ًََ ِْ ََْﺎﻝٍ ِْ ٍََ َُْﻮﻥٍ
আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব
Behold! thy Lord said to the angels: "I am about to create man, from sounding clay from mud moulded into shape;
15,33
َﺎﻝَ َْ َُْ ََُِْ ٍََِ َََُْ ِْ ََْﺎﻝٍ ِْ ٍََ َُْﻮﻥٍ
বললঃ আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন
(Iblis) said: "I am not one to prostrate myself to man, whom Thou didst create from sounding clay, from mud moulded into shape."
16,4
َََ ﺍﻟَِْْﺎﻥَ ِْ ٍَُْ ََِ َُ َِﻴﻢٌ ُِﻴﻦٌ
তিনি মানবকে এক ফোটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন এতদসত্বেও সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী হয়ে গেছে
He has created man from a sperm-drop; and behold this same (man) becomes an open disputer!


(৫)

থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্রঃ

শক্তি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে কিন্তু তা সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যাবে না পৃথিবীর মোট শক্তি এবং পদার্থ সবসময় ধ্রুব থাকবে

এখন প্রশ্ন """""প্রতিটি জীবেরই জীবন আছেজীবনের কারনে আমরা কথা বলি, চলাফেরা করি ইত্যাদি
কিন্তু আমরা যখন মারা যাই তখন আর কথা বলতে পারি না,চলাফেরা করতে পারি না
তাহলে আমাদের মধ্যে এমন কোনো এক শক্তি আছে যার দারা আমরা এসব কাজ করতে পারি
আর মৃত্যুর পর করতে পারি না,কেনণা তখন আমাদের মাঝে সে শক্তিটা আর থাকে না

তাহলে সে শক্তি গেল কোথায়,কার কাছে,কোন অবস্থার রুপ নিল,কোথায় আছে??? """"""""

আশা করি উত্তর দেবেন নাস্তিক ভাইয়েরা

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.