হোমোসেক্সুয়ালিটি............আরিফ আজাদ

হোমোসেক্সুয়ালিটি
আরিফ আজাদ
'হোমোসেক্সুয়ালিটি' বা 'সমকামিতা' ইস্যুটিকে এখন নয়, সেই ২০১২ সাল থেকেই ডিল করে যাচ্ছি যখন নাস্তিকদের ব্লগগুলোর রমরমা অবস্থা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সমকামিতাকে একেবারে শুরুর দিকে 'Sexual Preference' দাবি করা হতো। অর্থাৎ, 'কারো ভালো লাগছে বলেই করছে'। কিন্তু, এরা বুঝতে পারলো এই দাবি নিয়ে আসলে বেশিদূর যাওয়া যাবেনা এবং বেশিদিন টিকে থাকাও সম্ভব হবেনা। কারণ- প্রেফারেন্স তথা ভালো লাগে বলেই যদি কোনোকিছু করার বৈধতা পাওয়া যায়, তাহলে সেরকম অনেককিছুকেই 'ভালো লাগে' বলে চালিয়ে দিলে আপনি কাউকে দোষারোপ করতে পারবেন না। যেমন- আপনি খুন করে বলবেন, 'আমার ভালো লাগে বলেই খুন করেছি, ব্যস'।

যেহেতু 'সমকামিতাকে' সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স হিশেবে দেখালে শক্ত গ্রাউন্ড পাওয়া যাচ্ছেনা, তাই বস্তুবাদী ধর্মবিদ্বেষী মহল ভাবতে লাগলো কিভাবে এটিকে একটা শক্তপোক্ত গ্রাউন্ড দেওয়া যায়। ঠিক এরই ভিত্তিতে এরা নিয়ে আসলো নতুন কাহিনী। কিছু সো কল্ড সাইন্টিস্টকে দিয়ে বাজারে একটা খবর চড়াও করানো হলো। বলা হলো- সমকামিতার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। সমকামিতা আর সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স তথা পছন্দের বিষয় নয়, এটা প্রাকৃতিক। একটা মানুষ জন্মগতভাবেই 'সমকামী' হয়ে জন্মাতে পারে। তারা জনগনকে মূলা হিশেবে একটি 'Gay Gene' আবিষ্কারের গল্প শোনালো।

ব্যস, তখন থেকেই সমকামিতা 'সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স' থেকে 'সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টাশান' হয়ে গেলো।
বস্তুবাদীরা এরকমই। এরা দুনিয়ার সবকিছুকে 'বিজ্ঞান' এর মোড়কে বাজারজাত করে। ওদের কাছে যেটা 'ভালো' লাগবে, সেটা দুনিয়াশুদ্ধ মানুষকে গিলাতে আসবে 'বিজ্ঞানের' নাম দিয়ে।
শুধু কি সমকামিতা? এরা বাজারে আরো চড়াও করেছে যে, 'ক্রাইম' তথা 'অপরাধ' আসলে কোন অপরাধ নয়। একটা মানুষ নাকি নিজের ইচ্ছাতে কোন অপরাধ করেনা, বরং জিনগতভাবেই নাকি এটা হয়। এই তত্ত্ব গিলানোর জন্য তারা বাজারে নিয়ে আসলো 'Crime Gene'। অর্থাৎ, যার ভিতরে এই জিন থাকে, সে ওই জিনের দ্বারা অপরাধ করে বেড়ায়। এতে ব্যক্তির কোন হাত নেই।
ধরুন, আপনার ভিতর এই সো কল্ড 'Crime Gene' আছে। এখন আপনি কাউকে খুন করে ফেললেও আপনাকে দোষ দেওয়া যাবেনা। কারণ- খুনটা করতে আপনাকে আপনার Gene উদ্বুদ্ধ করেছে। আর এই Gene আপনি প্রাকৃতিকভাবে পেয়ে থাকেন। যা কিছু প্রাকৃতিক, তাতে কোন অপরাধ নেই।
বুঝতে পারছেন ভেল্কিবাজিটা?
শুধু তাই নয়। এরা 'ধর্ষণ' কে অপরাধ বলতে নারাজ। এদের মতে ধর্ষণও প্রাকৃতিক। এ ব্যাপারে বিখ্যাত এক নাস্তিকের একটা বইও আছে।

সে যাহোক, সমকামিতা যে বিজ্ঞানের মোড়কে একটি অপবিজ্ঞান, সেটা আজকে উল্লেখ করছিনা।
সে ব্যাপারে আমাদের একটি বই শীঘ্রই Somokalin Prokashon থেকে প্রকাশিত হবে, ইন শা আল্লাহ। বইটিতে তাদের সমস্ত দাবিকে নিরেট বিজ্ঞানের আলোতে 'ভুল' এবং 'অপবিজ্ঞান' প্রমাণ করা হবে, ইন শা আল্লাহ।
তবে, কিভাবে মানুষ সমকামী হয়, সে ব্যাপারে একটু বলি। সমকামিতা মূলত অপ্রাকৃতিক এবং অবৈজ্ঞানিক। আপনি যদি প্রাকৃতিক সকল সিস্টেমের দিকে তাকান, দেখবেন প্রত্যেকটা সিস্টেমের মূল বিষয় হলো নিজেদের 'অস্তিত্ব রক্ষা' করা। যেমন- নারী-পুরুষের দৈহিক মিলন। এটা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক। এতে করে যে কেবল দৈহিক সুখ লাভ হয় তা নয়, এতে করে মনুষ্য প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার সূচনাও হয়। একই ব্যাপার প্রকৃতির সবকিছুর মধ্যেই। মৌমাছি যে ফুল থেকে মধু শুষে নেয়, তা কেবল মধুর উৎপাদনের জন্যে নয়, এতে করে ওই ফুলের পরাগায়ন, বংশবিস্তার সহ অনেককিছুই এটার সাথে সম্পর্কিত। প্রকৃতির কোথাও আপনি এর ভিন্নতা দেখবেন না।
কিন্তু, সমকামিতা এমন একটা ব্যাপার, যেটা প্রকৃতির এই নিয়মের সম্পূর্ণ বিপরীত। এরা আসলে এটাকে যতোই ন্যাচারাল, প্রাকৃতিক দাবি করুক, এটা কোনোভাবেই প্রাকৃতিক নয়, অপ্রাকৃতিক।
তাহলে, মানুষ সমকামী হয় কিভাবে?

এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে কারণটা সবচেয়ে বেশি সামনে এসেছে তা হলো- যারা সমকামী হয়, তারা শৈশব বা কৈশোরে একই লিঙ্গের কারো না কারো মাধ্যমে প্ররোচিত হয়। অর্থাৎ, তারা যে বয়সটায় এই সেক্সুয়াল ব্যাপারে ধারণা লাভ করতে শুরু করে, ঠিক সেই সময়ে তারা তাদের লিঙ্গেরই কারো না কারো মাধ্যমে এই অভিজ্ঞতা পায়। পরে, তার মনে সেটাই গেঁথে যায় এবং ভালো লাগতে শুরু করে। যেহেতু সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেইশানের জন্য ওই সময়টা প্রাইম একটা সময়, তাই, ওই সময় তার যেটাকে ভালো লাগতে শুরু করে, সেটাই পরে তার ভিতর প্রোথিত হয়ে পড়ে। এর বাইরে অন্যসব ওর কাছে বিস্বাদ লাগে। সে হয়ে পড়ে সমকামী। তবে, এটা একটা ম্যান্টাল ডিজিজ। এটাকে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়।

আরেকটা কারণ হলো, পরিবার ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত হওয়া। পরিবারে অবাধ যৌনতার বিস্তার, খোলামেলা যৌনতা এবং পরিবারের কোন সদস্য যদি সমকামে আক্রান্ত হয়, তাহলে অন্য সদস্যদেরও সেদিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বেশি হয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো পর্ণোগ্রাফি। পর্ণোগ্রাফিতে আক্রান্তদের মধ্যে এদিকে ঝুঁকে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি।
মোদ্দাকথা, সমকামিতা একটা মানসিক রোগ। বস্তুবাদী মহল এটাকে 'বিজ্ঞান' বলে চালিয়ে দিতে চাইছে এ কারণেই যে, প্রধান প্রধান সকল আব্রাহামিক ধর্মে (ইসলাম, খ্রিস্টানিটি, জুডাইজম) এটা একটা গুরুতর পাপ, এজন্যে। ধর্মের সাথে যুদ্ধে মেতে উঠা বস্তুবাদী মহলের এই চক্রান্ত নতুন কিছু নয়।

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.